Source
stringclasses
15 values
Headlines
stringlengths
10
177
Category
stringclasses
5 values
Article
stringlengths
337
11.8k
Aspect
stringclasses
4 values
Sentiment
stringclasses
3 values
প্রথম আলো
ইসলামে শিশু নির্যাতন হারাম
ইসলাম ধর্ম
শিশুরা পবিত্রতার প্রতীক। শিশুরা নিষ্পাপ। শিশুরা আনন্দের উপকরণ ও প্রেরণার উৎস। তাই শিশুদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করা জরুরি। কোরআন মজিদে বর্ণিত হয়েছে: ‘আল্লাহ তোমাদের থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবন উপকরণ দিয়েছেন। (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৭২)। শিশু মানবজাতির অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শৈশবেই মানুষের জীবনের গতিপথ নির্ধারিত হয়। তাই শৈশবকাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়ে ওঠার জন্মগত অধিকার রয়েছে। শিশুদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু দেখা যায়, আমাদের সমাজে শিশুরা অহরহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশুদের শারীরিক শাস্তি একটি সামাজিক ব্যাধি শিশুদের শারীরিক শাস্তি আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অঘোষিতভাবে অনুমোদিত হয়ে রয়েছে। এটি পারিবারিক নেতিবাচক মূল্যবোধ থেকে সৃষ্ট ও সামাজিক নৈতিক অবক্ষয়ের কুফল। শিশুর পিতা, মাতা ও অভিভাবকেরা নিজেরা এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং তাঁরা শিক্ষকসহ অন্যদের এ বিষয়ে উৎসাহ প্রদান ও সহযোগিতা দান করে থাকেন। আমাদের সমাজে অনেক শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সমাজের সব স্তরের মানুষের একটি বড় অংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত না থাকলে এত শিশু শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা নয়। শিশুদের শারীরিক শাস্তি ও মানসিক নির্যাতন বর্তমানে একটি সামাজিক ব্যাধিরূপে আবির্ভূত হয়েছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়; এর আশু নিরসন প্রয়োজন। শিশুদের শারীরিক শাস্তির মতো বর্বর সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সামাজিক উদ্যোগ। শিশুদের সুশাসন বনাম শারীরিক নির্যাতন ইসলামের বিধানগুলো যৌক্তিক ও মানবিক। শিশুর সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার জন্য পিতা, মাতা, শিক্ষক ও অভিভাবকের সুশাসন অবশ্যই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু শাসনের নামে নির্যাতন ইসলাম অনুমোদন করে না। এটি অমানবিক জুলুম। শিশুরা বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। সাধারণত শারীরিক শাস্তিটা পরিবারে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বেশি হয়। গড়ে শিশুর ৩ বছর থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে শারীরিক শাস্তি বেশি দৃশ্যমান হয়ে থাকে; এর মধ্যে বয়স ৭ বছর থেকে ১১ বছর সময়ে শারীরিক শাস্তিটা বেশি পরিলক্ষিত হয়। নাবালেগ মাসুম (নিষ্পাপ) শিশুদের শাসনের নামে এমন শাস্তি প্রদান যাতে শরীরের কোনো অংশ কেটে যায়, ফেটে যায়, ছিঁড়ে যায়, ভেঙে যায়, ফুলে যায়, ক্ষত হয়, বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় অথবা মানসিক ক্ষতি হয়; ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক, কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে এবং ফিকহের বিধানমতে সম্পূর্ণরূপে হারাম, নাজায়েজ, অবৈধ, অনৈতিক, অমানবিক ও বেআইনি এবং কবিরা গুনাহ বা বড় পাপ; যা তওবা ছাড়া মাফ হবে না। তা সত্ত্বেও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাবালেগ মাসুম শিশুদের শারীরিক শাস্তির হার সর্বাধিক। শিশুর পিতা, মাতা বা অভিভাবকের অনুমতি বা নির্দেশক্রমেও শিশুদের শারীরিক শাস্তি প্রদান শিক্ষক বা অন্য কারও জন্য জায়েজ নয়। কারণ পিতা, মাতা বা অভিভাবক নিজেই তাঁর নিজের নাবালেগ সন্তানকে (শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে এমন প্রচণ্ড ও কঠিন আঘাতের মাধ্যমে) শাস্তি দানের অধিকার রাখেন না। সুতরাং, তিনি অন্যকে এই অধিকার দিতে পারেন না। (ফাতাওয়ায়ে শামি, ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি। নিজ ঘরে শিশুদের শারীরিক শাস্তি নিবারণ নিজের ঘর শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। মাতৃকোল শিশুর পরম শান্তির নিবাস। মায়ের যথাযথ শিক্ষা না থাকায় এখানেই শিশু প্রথম বঞ্চনা ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। কুসংস্কার ও অজ্ঞতার কারণে শাল দুধ ফেলে দিয়ে শিশুর ক্ষতি করা হয়। অভাবের সংসারে এবং অনেক মা কর্মব্যস্ততার কারণে মেজাজ বিগড়ে গেলে শিশুদের মারধর করেন। কর্মজীবী বা শ্রমজীবী পিতারা শিশুদের খেলাধুলা ও চঞ্চলতার জন্যও মেরে থাকেন, যা আদৌ কাম্য হতে পারে না। সুশিক্ষা, সচেতনতা সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে এ পর্যায়ে শিশুর শারীরিক শাস্তি ও জুলুম বন্ধ করা সম্ভব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক শাস্তি নিবারণ শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। সুশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই, যা আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে, তা–ই শিক্ষা। শিক্ষা তথা সুশিক্ষার জন্য রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাঁরা শিক্ষা প্রদানে ব্যাপৃত থাকেন, তাঁরা নিজেরাই অনেক ক্ষেত্রে তেমন শিক্ষিত নন বা প্রশিক্ষিত নন। কোথাও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের আদর্শ অনুপাত যেখানে ১: ১০ থেকে ১: ২০-এর মধ্যে (প্রতিজন শিক্ষকের জন্য ১০ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী) হওয়ার কথা, সেখানে দেখা যায় এই অনুপাত ১: ৫০ থেকে ১: ১০০ (শিক্ষকপ্রতি শিক্ষার্থী ৫০ জন থেকে ১০০ জন) পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর সঙ্গে উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ না থাকা ও যথাযথ শিক্ষা উপকরণের অভাব, শিক্ষার্থীদের বয়সের তারতম্য, মেধা ও রুচির পার্থক্য, পারিবারিক বিভিন্ন স্তরের শিশুর অসম অবস্থানসহ নানা প্রভাবক শিক্ষককে শিশুদের শারীরিক শাস্তি প্রদানে প্রভাবিত ও উদ্বুদ্ধ করে। এর সমাধানের জন্য প্রয়োজন গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষক, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত আদর্শ অনুপাতের কাছাকাছি আনা, শিক্ষকদের বিনোদনের সুযোগ প্রদান, শিক্ষকদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা পূরণ ও মানসম্মত জীবনযাত্রা নিশ্চিতকরণ এবং শিক্ষকদের আধুনিক আন্তর্জাতিক বিশ্বশিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। কর্মক্ষেত্রে শিশুদের শারীরিক শাস্তি নিবারণ কর্মক্ষেত্রে শিশুরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, অবহেলার শিকার হয়; এমনকি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুশ্রমিক বা শ্রমজীবী শিশুরা কম বয়সেই বেশি নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়। এ ক্ষেত্রে গৃহকর্মী শিশুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও বঞ্চিত হয়ে থাকে। এই গৃহকর্মীরা প্রায় কন্যাশিশু। এদের বয়স ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে গৃহকর্ত্রী ও গৃহমালিকের সন্তানদের দ্বারাই বেশি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি প্রয়োজন। জালিম ও মজলুমকে সাহায্য করো যাদের দ্বারা নির্যাতন (জুলুম) সংঘটিত হয়, তারা জালিম। যারা নির্যাতিত হয়, তারা মজলুম। হাদিস শরিফে রয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘উনছুর আখাকা জালিমান আও মাজলুমান।’ অর্থাৎ তোমরা তোমার ভাইকে (সব মানুষকে) সাহায্য করো; হোক সে জালিম বা মজলুম। এক সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), যখন কেউ মজলুম হবে, আমরা তার সাহায্য করব; কিন্তু জালিমের (নির্যাতনকারীর) সাহায্য করব কীভাবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জালিমকে জুলুম থেকে বিরত রাখবে, এটাই তাকে সাহায্য করা। (বুখারি, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি)। আদর্শ শিখনপদ্ধতি আমরা নিরন্তর শিখছি, শিশুরাও শিখছে অহরহ, অবিরত। শিশুদের শিক্ষা নিয়ে আমরা সদা উদ্গ্রীব থাকি। আমরা ভাবি, আমরা যা শেখাই (যা বলি), শিশুরা তা শেখে। আসলে শিশুরা আমাদের শেখানোটা (বলাটা) হয়তো শেখে; কিন্তু শিশুরা আমাদের দেখে দেখে (আমাদের আচরণ থেকে) তার চেয়ে বেশি শেখে। কারণ, শিশুরা অনুকরণপ্রিয়; তারা যা দেখে তা আত্মস্থ করে। আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি তাদের কোমল মনে স্থায়ীভাবে রেখাপাত করে। এর প্রতিফলন ঘটে তাদের কর্মক্ষেত্রে বা কাজে-কর্মে, সারা জীবনের আচার-আচরণে। যেমন ধৈর্য বা সহিষ্ণুতার উপদেশ যদি আমরা অসহিষ্ণুভাবে উপস্থাপন করি; তবে শিশু এখান থেকে দুটো বিষয় শিখবে: এক. ধৈর্য বা সহিষ্ণুতার বাণী বা বুলি; দুই. অধৈর্য বা অসহিষ্ণু আচরণ। এখন আমাদের ঠিক করতে হবে, আমরা শিশুদের কী শেখাতে চাই। আমাদের সেভাবে আচরণ করতে হবে।
ধর্মীয় শিক্ষা
Negative
ভোরের পাতা
পুরুষদের জন্য সোনা ব্যবহার করা কি বৈধ?
ইসলাম ধর্ম
পুরুষের জন্য সোনার চেইন, ঘড়ি, আংটি, বোতাম, কলম ইত্যাদি ব্যবহার বৈধ নয়। তবে নারীদের জন্য স্বর্ণ-রোপা সবই বৈধ। পুরুষের স্বর্ণ ব্যবহার নিয়ে হাদীসে এসেছে, আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রা.) হতে বর্ণিত। নবী ( সা.) বলেছেন, স্বর্ণ ও রেশমের ব্যবহার আমার উম্মাতের নারীদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে। (তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত ৪৩৪১ নং) ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিন লোকের হাতে একটি সোনার আংটি লক্ষ্য করে সেটি খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেন, তোমাদের মাঝে কেউ কেউ আগুনের টুকরা জোগাড় করে তার হাতে রাখে। রাসূলুল্লাহ (সা.) সে স্থান ত্যাগ করলে ব্যক্তিটিকে বলা হলো, তোমার আংটিটি উঠিয়ে নাও। এটি দিয়ে উপকার হাসিল করো। সে বলল, না। আল্লাহর কসম! আমি কখনো ওটা নেব না। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) তো ওটা ফেলে দিয়েছেন। (মুসলিম ২০৯০ নং) প্রকাশ থাকে যে, ব্যতিক্রমভাবে পুরুষের জন্য সোনার নাক বাঁধার অনুমতি রয়েছে ইসলামে।'আবদুর রহমান ইবনু ত্বরাফাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত, কুলাবের যুদ্ধে তার দাদা' আরফাজাহ্ ইবনু আস’আদ-এর নাক কাটা গিয়েছিল। তিনি রূপার দ্বারা একটি নাক তৈরি করেছিলেন। ফলে তাতে দুর্গন্ধ দেখা দিলো। অতঃপর নবী (সা.) তাকে স্বর্ণের নাক তৈরি করতে নির্দেশ করলেন। (আহমাদ ১৮৫২৭, আবূ দাঊদ ৪২৩২, তিরমিযী ১৭৭০, নাসাঈ ৫১৬১ নং) প্রয়োজনে সোনার তার দিয়ে দাঁত বাঁধতে অথবা সোনার দাঁত বাঁধিয়ে ব্যবহার করাতেও অনুমতি আছে শরীয়তে। পক্ষান্তরে চার আনা সোনার আংটি ব্যবহারের বৈধতা শরীয়তে নেই। বিপদ প্রয়োজনে যে কোনো স্বর্ণটুকরা হাতে না রেখে সঙ্গেও তো রাখা যায়। প্রকাশ থাকে যে, সোনা দিয়ে পালিশ করা জিনিসেও যেহেতু সোনা থাকে, সেহেতু টা পুরুষের জন্য ব্যবহার বৈধ নয়। (ইবনে জিবরীন)
ধর্মীয় শিক্ষা
Neutral
ভোরের কাগজ
ধর্ম রাজনীতির হাতিয়ার হতে পারে না
অন্যান্য
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি বলেছেন- বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলেছে। তাতে ধর্ম রাজনীতির হাতিয়ার হতে পারে না। গত ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মেট্রোরেল এর শুভ উদ্বোধনসহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করেছে। অব্যাহত থাকবে উন্নয়নের ধারায়, দেশ অন্ধকার থেকে এবার আলোয় পরিনত হবে। তিনি আরো বলেন- বিএনপি-জামায়াত ধর্মের নামে একত্র হয়ে যে রাজনীতির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে, তাতে কোন লাভ হবে না। তবে দলীয় কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সরকারের নামে শক্তির অপব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। উপজেলা প্রশাসন আয়োজনে শনিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে বাঘা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অন্তঃধর্মীয় সর্ম্পক ও সামাজিক বন্ধনকে সুসংহত রাখা, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধনকে এগিয়ে নিতেও উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ,সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। এ সময় অন্যাদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, পৌর মেয়র একরামুল হক, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বিপ্লব, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুল হাসান মামুন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন, চারঘাট মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুল আলম, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল মামুন তুষার, সাধারণ সম্পাদক রায়হেনুল হক রানাসহ সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি পাচঁজন ছাত্রছাত্রীর মাঝে বাইসাইকেল ও বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদেও উপবৃত্তি টাকা প্রদান করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
দৈনিক ইনকিলাব
মুসলিম উম্মাহর জন্য মসজিদে আকসা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ-৩
ইসলাম ধর্ম
বাইতুল মাকদিসের মতো পবিত্র ভূখণ্ডের সান্নিধ্যে কিছু সময় যাপন করতে পারাই তো সৌভাগ্যের বিষয়। উপরন্তু বসবাসের জন্য যদি এক টুকরো মাটি পাওয়া যায়, তাহলে এটা তো আরো অনেক বড় প্রাপ্তি। এ কারণেই হাদিস শরীফে বাইতুল মাকদিসের কাছাকাছি বসবাসের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আবু যার (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : অচিরেই এমন সময় আসবে, যখন কোনো ব্যক্তি যদি ঘোড়ার রশি পরিমাণ জায়গাও পেয়ে যায়, যেখান থেকে বাইতুল মাকদিস দেখা যায়, তাহলে এটা তার জন্য সমগ্র দুনিয়া থেকে বেশি উত্তম হবে। (মুসতাদরাকে হাকেম ৪/৫০ : ৮৫৫৩)। পবিত্র ভূখণ্ডে জীবন অতিবাহিত করার পাশাপাশি মৃত্যুবরণ করাও একজন মুমিনের পরম কাক্সিক্ষত বিষয়। বাইতুল মাকদিস যেহেতু পবিত্রতম স্থান, তাই তো হযরত মূসা (আ.) এই মাটিতে মৃত্যুর আরজি পেশ করেছিলেন। রাসূলে কারীম (সা.) হযরত মূসা (আ.)-এর মৃত্যুর ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন : তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, যেন তাঁকে পবিত্র ভূখণ্ডের এতো কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখান থেকে একটি পাথর নিক্ষেপ করলে পবিত্র ভূখণ্ডে পতিত হবে। যদি আমি সেখানে থাকতাম, তবে লাল টিলার কাছে রাস্তার পাশে আমি তোমাদেরকে তাঁর কবর দেখিয়ে দিতাম। (সহীহ বুখারী : ১৩৩৯)। এই হাদিসে পবিত্র ভূখণ্ড দ্বারা বাইতুল মাকদিস উদ্দেশ্য করা হয়েছে। আহলে হকের অবস্থানস্থল। বাইতুল মাকদিস এবং আশপাশের অঞ্চলে সর্বদা এমন একটা জামাতের উপস্থিতি থাকবে, যারা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আবু উমামা বাহিলী (রা.) বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন : আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা সত্যের ওপর অবিচল থাকবে। তাদের দুশমনদের ওপর বিজয়ী থাকবে। তাদের সঙ্গ ত্যাগ করে কেউ তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। অবশেষে আল্লাহর নির্দেশ আসবে আর তারা এভাবেই থেকে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, এই দলটির অবস্থান কোথায় হবে? তিনি বললেন, বাইতুল মাকদিস ও তার আশপাশে। (আল মুজামুল কাবীর, তবারানী : ৭৬৪৩)। পৃথিবীতে মানব জাতির যাত্রালগ্ন থেকেই শুরু হয়েছে হক ও বাতিলের লড়াই, সত্য ও মিথ্যার সংঘাত। এটা অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে হক-বাতিলের চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণী লড়াই হবে বাইতুল মাকদিস অঞ্চলে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) বলেন : কিয়ামত কায়েম হবে না, যতক্ষণ না মুসলিমগণ ইহুদিদের সাথে লড়াই করবে আর মুসলিমগণ তাদের হত্যা করবে। এমনকি ইহুদিরা যে পাথর বা গাছের পেছনেই আত্মগোপন করবে, সে পাথর বা গাছও বলে উঠবে, হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা! এই যে আমার পেছনে ইহুদি আছে। এসো তাকে হত্যা করো। তবে গারকাদ গাছ কিছু বলবে না; কারণ এটা ইহুদিদের গাছ। (সহীহ মুসলিম : ২৯২২)। ইমাম নববী (রাহ.) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘গারকাদ’ একধরনের কাঁটাদ্বার গাছ, যা বাইতুল মাকদিসে প্রচুর পরিমাণে হয়। আর সেখানেই দাজ্জাল ও ইহুদি বধের ঘটনা ঘটবে। (দ্র. শরহে মুসলিম, নববী ১৮/৪৫) উপরের আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল, আল আকসা বা বাইতুল মাকদিস ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা তাৎপর্যপূর্ণ আর মুসলিম উম্মাহর জন্য কতই না গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গোটা মুসলিম উম্মাহ আল আকসার বিষয়ে দায়িত্বহীনতার শিকার হয়ে পড়েছে। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন এবং আল আকসার মুক্তির জন্য আবারো জেগে ওঠার তাওফীক দান করুন। (আমীন)। ইয়া রাব্বুল আলামীন।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
আত্মহত্যা রোধে ইসলামের সতর্কতা
ইসলাম ধর্ম
বর্তমানে বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ২০টি কারণের মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হল আত্মহত্যা। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশ্বের কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ আত্মহত্যা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বছরে প্রায় আট লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশেষতঃ ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী যুবক-যুবতীরা বেশি আত্মহত্যা করে বলে জানা গেছে। যা মানবতার জন্য এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। দক্ষিণ এশিয়ায় দশম। প্রতি বছরই আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে এবং গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন করে আত্মহত্যা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহত্যার পেছনে অন্যতম কারণগুলো হল মানসিক হতাশা ও বিষণনতা, দাম্পত্যজীবনে কলহ কিংবা যেকোনো সম্পর্কে অনৈক্য, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতা ও পারিপার্শ্বিক অসহযোগিতা আর ২০০৩ সাল থেকে দিবসটি পালন করা শুরু হলেও ২০১১ সালে প্রায় ৪০টি দেশ এই দিবসটি উদযাপন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘প্রিভেন্টিং সুইসাইড: অ্যা সোর্স ফর মিডিয়া প্রফেশনালস ২০১৭’ জরিপ বলছে, ‘প্রতিবছর বিশ্বে ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে একটি।’ আরও একটি জরিপ বলছে, ‘গত ৪৫ বছরে আত্মহত্যার ঘটনা ৬০ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বে বর্তমানে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে আত্মহত্যা।এতো গেল বিশ্বের কথা। বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা- ২০২৩’ শিরোনামের এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন ইউনিটে ৩০ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত অভিযোগ জমা পড়ে ৩৪ হাজার ৬০৫টি। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ২৬ হাজার ৫৯২। লিঙ্গভিত্তিক তুলনামূলক পরিসংখ্যানে সাইবার অপরাধে ভুক্তভোগীদের মধ্যে নারীর হার ৫৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এই বিশাল সংখ্যার নারীর অনেকের মধ্যে দেখা দিয়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা। সাইবার অপরাধে ভুক্তভোগী নারীদের এই উচ্চ হার জানিয়ে দিচ্ছে, প্রযুক্তির অপব্যবহার, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি করছে ব্যাপক মাত্রায়। এদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা ৬৯ জন নারী। যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা ১০ জন, ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন এবং যৌতুকের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৫ জন নারী। দেশের পত্রপত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী আত্মহত্যায় শীর্ষে ঢাকা। বিভাগটিতে আত্মহত্যা ২৩.৭৭ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ যা ১৭.২৭ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগ যা ১৬.৮১ শতাংশ। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ১৪.১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮.৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮.৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬.২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪.৪৮ শতাংশ স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছেন।পরিসংখ্যান বলছে নারীদের আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী রয়েছেন ৬০ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং পুরুষ রয়েছেন ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যাকারী নারী শিক্ষার্থীর পরিমাণ ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ। শুধু কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যাকারী নারী ৫৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ রয়েছে ।আত্মহত্যার পেছনের কারণ হিসেবে মান-অভিমানকে দেখানো হয়েছে। জরিপে উঠে আসা এমনই বেশ কিছু কারণের মধ্যে দেখা যায়, অভিমান তাদের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমান করে। এদের বড় অংশই অভিমান করেছিল পরিবারের সদস্যদের ওপর। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে প্রেমঘটিত কারণ, পারিবারিক কলহসহ নানা কারণ। পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ শুধু ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে।বর্তমানে নানা কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। এ হার প্রতি লাখে ৮ দশমিক ৫ জন। এটি আমরা ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ৫ ও ২০৩০ সালে ২ দশমিক ৮ জনে নামিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। তবে এটা কারোর একার পক্ষে সম্ভব নয়, সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জোর দিতে হবে। আত্মহত্যা জীবনে সবচেয়ে বড় কাপুরুষতার পরিচয়”- উক্তিটি জগদ্বিখ্যাত নেপোলিয়ন বোনাপার্টের। ভারতবর্ষের মহান সাধক ফকির লালন সাঁই জীবনকে দেখেছেন আশ্চর্য এক সাধনার মঞ্চ হিসেবে। সেই জীবনের টানেই জীবনানন্দ দাশ কবিতার পঙক্তিতে ঢেলেছেন সুরিয়ালিস্টিক ভাবধারা। মনীষীরা মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করে জীবনকেই করেছেন মহিমান্বিত। তবে কেন এ আত্মহনন? কেন এ জীবনবিমুখতা? চিকিৎসাবিজ্ঞান আত্মহত্যার চেষ্টাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে দেখেন। বিশ্বের অনেক দেশ আত্মঘাতকদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ বলছে, প্রতিবছর বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে এর মধ্যে আত্মহত্যা ১৩তম প্রধান কারণ। বিবিএস সূত্র জানায়, বর্তমানে (২০২০ সালের জরিপ) প্রতি লাখে ৮ দশমিক ৫ জন আত্মহত্যা করেন। সে সময়ে দেশের মোট জনসংখ্যা ধরা হয় ১৭ কোটি ১৬ লাখ। ২০২০ সালে সারাদেশে মোট ১৩ হাজার ৮১৪ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের গড় প্রায় সমান। ২০১৯ সালে প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তখন দেশের মোট জনসংখ্যা ধরা হয়েছিল ১৬ কোটি ৫৯ লাখ। সে হিসাবে ওই সময়ে দেশে মোট জনসংখ্যার ১২ হাজার ৯৫৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছিলেন। এতেই স্পষ্ট হয়, দেশে আত্মহত্যার হার বাড়ছে। ২০১৫ সালে দেশে প্রতি লাখে ৭ দশমিক ৬৮, ২০১৬ সালে ৭ দশমিক ৮৪, ২০১৭ সালে ৩ দশমিক ৭৯ ও ২০১৮ সালে ৭ দশমিক ৬৮ জন আত্মহত্যা করেছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত লাখে আত্মহত্যার হার ৭ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এটা এখন ৮ জনের ওপরে চলে এসেছে। বিবিএস সূত্র জানায়, ২০২১ সালের প্রথম ১০ মাসে দেশে মোট মৃত্যুর কিছু কারণ খুঁজে বের করে বিবিএস। ১০ মাসে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ৫ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তখন ১১ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। মহামারির এ সময়ে দেশে শুধু হার্ট-অ্যাটাক, হার্ট-ফেইলিওর ও হৃদরোগে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে ৮ লাখ লোক আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬ জন। ২০১৪ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন। আর পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে, বছরে গড়ে ১০ হাজার মানুষ ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। এর বাইরে ঘুমের ওষুধ সেবন, ছাদ কিংবা উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়া কিংবা রেললাইনে ঝাঁপ দেওয়ার মতো ঘটনাগুলোও বিরল নয়। বয়স্ক মানুষ হার্ট অ্যাটাকে বেশি মারা যাচ্ছে, বাড়ছে আত্মহত্যাও: ৬০ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুহার হিসাব করলে হার্ট অ্যাটাক প্রথমে। মোট মৃত্যুর ২৩ দশমিক ৮ শতাংশই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এর পরে রয়েছে ব্রেন স্ট্রোক ১১ দশমিক ৫, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ১১, হার্ট ডিজিস ৬, অ্যাজমা ৫ দশমিক ২, হাই ব্লাড প্রেশার ৩ দশমিক ৭, ডায়াবেটিস ৩ দশমিক ৩, কিডনি রোগে ২ দশমিক ৯, লিভার ক্যানসার ২ দশমিক ৮, প্যারালাইসিসে ২ দশমিক ২, ব্লাড ক্যান্সারে ১ দশমিক ৯, নিউমোনিয়া ১ দশমিক ৫ ও স্টমাক ক্যান্সারে ১ শতাংশ মানুষ মারা যান। এসব রোগের বাইরে অন্য কারণে দেশের দশমিক ২ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। পরিশেষে বলতে চাই, কুরআন সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী হতাশা কিংবা যে কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে নিমিষেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া যাবে না। বরং এক আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য ও নিজের মেধা খাঁটিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়; বরং আবেগতাড়িত হয়ে নিজের ভূলে নিজের জীবনকে চিরতরে নিঃশেষ করে দেওয়া মারাত্মক ভুল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।আল্লাহ তাআলা সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুক। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে ধর্মীয় অনুশাসন মানার বিকল্প নেই। এ মহাপাপ থেকে বাঁচতে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর ভরসা এবং সবরের আমল করতে হবে। সব ধরনের দুশ্চিন্তা, দুঃখ-কষ্ট এবং ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত, দুরূদ পাঠ, জিকির ও ইস্তিগফার করতে হবে।আত্মহত্যার মতো মারাত্মক অপরাধ ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
ছিলেন পর্নো তারকা, বর্তমানে ধর্ম প্রচারক!
খ্রীষ্টান ধর্ম
ছিলেন পর্নো তারকা। হয়ে গেলেন খ্রীষ্টান ধর্মযাজক। সাবেক পর্নো তারকা ক্রিসি আউটল এভাবেই নিজেকে পাল্টে ফেলেছেন। দীর্ঘদিনের পেশাকে ছেড়ে এবার চার্চের যাজক হিসেবেই নিজেকে দেখতে চান তিনি। পর্নো দুনিয়া থেকে চার্চের কর্মী হওয়ার ক্রিসির এমন সিদ্ধান্তে অবাক অনেকেই। তবে তিনি জানান, যে ঈশ্বরই তাকে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে পর্ন দুনিয়া ছেড়ে তাকে চার্চের কাজে যোগ দিতে। তাই নিজের এতদিনকার পেশা ছেড়ে দিলেন ৪১ বছরের এই পর্নো তারকা। ক্রিসি এখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন যে, তার মতো যেন অন্য মেয়েরা এই পর্নো দুনিয়াতে এসে ভুল না করেন। এমনকি এখন তিনি অ্যান্টি-পর্নো ওয়েবসাইটের হয়েও কাজ করছেন। অতীতে প্রায় ৫০টির বেশি পর্নো ছবিতে অভিনয় করেছেন ক্রিসি।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইসলামী অভিবাদন সালামের ফজিলত
ইসলাম ধর্ম
সালাম শব্দের অর্থ শান্তি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সুন্দর কথা, পরম শান্তিময়, সর্বোচ্চ সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামী অভিবাদন। ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, আন্তরিকতা, নিরাপত্তা ও অকৃত্রিম ভালোবাসার বিনম্র অভ্যর্থনার বহির্প্রকাশ। জান্নাতের সর্বোচ্চ নেয়ামত হলো আল্লাহপাকের দিদার। জান্নাতিরা নিজ চর্ম চোখে মহান রাব্বুল আলামিনকে প্রাণভরে দেখবে ও নিজ কানে তাঁর পবিত্র কথা শুনবে। সব নবী-পয়গম্বরগণসহ সর্বস্তরের জান্নাতিদের তাদের প্রেমাষ্পদের সঙ্গে সাক্ষাতের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেদিন নূরের পর্দা উঠিয়ে সর্বপ্রথম সব জান্নাতিকে আল্লাহতায়ালা স্বীয় রহমত ও বরকতময় ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে অভিবাদন করবেন। (সুরা আহজাব আয়াত ৪৪) সুবহানাল্লাহ! আল্লাহতায়ালা জান্নাতিদের সম্বোধন করে বলবেন : তোমাদের প্রতি দয়াময় রবের পক্ষ থেকে চিরস্থায়ী সালাম (সুরা ইয়াসিন আয়াত ৫৮)। কেয়ামতের ময়দানে হিসাব-নিকাশ শেষে জান্নাতিরা জান্নাতে যাওয়ার পথে কোটি কোটি ফেরেশতা সালাম দিয়ে তাদের জান্নাতের দরজায় অভিবাদন করবেন। মানব সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই সালামের প্রচলন শুরু হয়েছে। আল্লাহতায়ালা যখন হজরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করলেন তখনই তাঁকে সালামের শিক্ষা ও নির্দেশ দেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা হজরত আদমকে যখন সৃষ্টি করলেন তখন বললেন, যাও সামনে অবস্থানরত ফেরেশতাদের বিশাল একটি জামাতকে সালাম কর, আর তারা তোমার সালামের কী উত্তর দেয় তা শ্রবণ কর এবং তা-ই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের পদ্ধতি। তখন হজরত আদম (আ.) সামনে অগ্রসর হয়ে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। জবাবে ফেরেশতাগণ বললেন, আসসালামু আলাইকা ওয়ারাহমাতুল্লাহ। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তারা ওয়ারাহমাতুল্লাহ অংশটি বৃদ্ধি করে বলেছেন। (বুখারি মুসলিম)। পুত্র সন্তান লাভের সুসংবাদ ও আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত কওমে লুতকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহর প্রেরিত ফেরেশতাগণ যখন হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কাছে আগমন করলেন তারা বললেন ‘সালাম’। তিনি বললেন, আপনাদের প্রতিও সালাম, আপনারা অপরিচিত। এমনিভাবে সব নবীগণের কাছে প্রেরিত ফেরেশতাগণ প্রথমেই নবীকে সালাম প্রদান করেন। হজরত আবুজর গিফারী (রা.) বলেন, আমি একদা নবীজির কাছে গেলাম, তিনি আমাকে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। আমি বললাম, ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। আবুজর (রা.) বলেন, সর্বপ্রথম আমি ওই ব্যক্তি যাকে মুহম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম প্রদান করেছেন। নবীজি বলেন, কথা বলার আগেই সালাম প্রদান কর। নবীজি আরও বলেন, যে অগ্রে সালাম প্রদান করে সে অহংকারমুক্ত। সালাম একটি দোয়া এবং ইবাদত। সালাম দেওয়া সুন্নত, উত্তর দেওয়া ওয়াজিব।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
কালের কন্ঠ
পূর্ববর্তী আসমানি ধর্মে রোজা যেমন ছিল
ইসলাম ধর্ম
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি রোজা। মুসলিমদের মতো পূর্ববর্তী জাতি গোষ্ঠীর ওপর রোজা ফরজ ছিল। এমনকি আসমানি ধর্মের অনুসারী নয়—এমন সম্প্রদায়ের ভেতরও রোজাসদৃশ আচার-আয়োজন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে প্রথমেই ইসলামী শরিয়তে রমজানের রোজা ফরজ হয়নি; বরং তা কয়েক ধাপে হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় রোজা ফরজ হওয়ার ধারাক্রমটি বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসেও সেই বর্ণনা পাওয়া যায়। পূর্ববর্তী আসমানি ধর্মে রোজা : আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতির মতো পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ওপরও রোজা ফরজ করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যেমন তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩) কোরআনে মারিয়াম (আ.)-এর ভাষ্যে বলা হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে কাউকে যদি তুমি দেখ তখন বলবে, আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে রোজার (মৌনতা অবলম্বনের মাধ্যমে) মানত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গে বাক্যালাপ করব না। ’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ২৬) ইসলামপূর্ব আরবে রোজা : ইসলাম আগমনের পূর্বে আরব সমাজেও রোজার প্রচলন ছিল। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘জাহেলি যুগে কুরাইশরা আশুরার রোজা পালন করত এবং আল্লাহর রাসুল (সা.)-ও এই রোজা পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায় আগমন করেন তখনো এই রোজা পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন আশুরার রোজা ছেড়ে দেওয়া হলো। যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০০২) আশুরার রোজা : মুসলমানরা মদিনায় হিজরত করার পর কিছুদিন আশুরার রোজা পালন করেন। এই সময় আশুরার রোজাই মুসলমানের জন্য ওয়াজিব ছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) যখন মদিনায় আসেন তখন দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তাদের রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, এই দিনেই আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.) ও বনি ইসরাঈলকে ফিরাউনের ওপর বিজয় দিয়েছিলেন। তাই আমরা ওই দিনের সম্মানে রোজা পালন করি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা (আ.)- এর বেশি নিকটবর্তী। এরপর তিনি সাওম পালনের নির্দেশ দিলেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৯৪৩) এ ছাড়া মুসলিম প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা পালন করত বলে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে বেশির ভাগ ফকিহ ও মুহাদ্দিসের মতে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ওয়াজিব ছিল, যা পরবর্তী সময়ে নফলে পরিণত হয়। আর আইয়ামে বিদ বা প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখার বিধান সব সময় মুস্তাহাব ছিল। হাদিসে আইয়ামে বিদের রোজার বিশেষ তাগিদ এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমার বন্ধু (সা.) আমাকে তিনটি কাজের অসিয়ত করেছেন। মৃত্যু পর্যন্ত আমি তা ত্যাগ করব না। তা হলো—প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, চাশতের নামাজ আদায় করা এবং বিতর আদায় করে শোয়া। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৭৮) রমজানের রোজা : দ্বিতীয় হিজরিতে রমজানের রোজা ফরজ হয়। ইমাম নববী (রহ.) লেখেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মোট ৯ বছর রমজানের রোজা রেখেছেন। কেননা তা দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে ফরজ হয়। আর নবী (সা.) একাদশ হিজরির রবিউল আউয়ালে ইন্তেকাল করেন। ’ (আল-মাজমুআ : ৬/২৫০) রোজা ও ফিদিয়ার ইচ্ছাধিকার : রমজানের রোজা যখন প্রথম ফরজ হয়, তখন মুমিনদের রোজা রাখা ও ফিদিয়া দেওয়ার ইচ্ছাধিকার দেওয়া হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘(তোমাদের ফরজ করা হয়েছে) রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা যাদের সাতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদয়া—একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর রোজা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর যদি তোমরা জানতে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪) অবকাশহীন ফরজ : এরপর রোজা ফরজ করা হয় কোনো প্রকার অবকাশ না রেখে। ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস। এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫) সময় সীমায় পরিবর্তন : তাফসিরে ইবনে কাসিরে উল্লেখ করা হয়েছে, রমজানের রোজা যখন ফরজ হয়, তখন রাতের বেলা এশার নামাজ বা ঘুমের আগ পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-সম্ভোগ অনুমতি ছিল। এশার নামাজ বা ঘুমের পর পানাহার ও স্ত্রী-সম্ভোগ নিষিদ্ধ হয়ে যেত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আল্লাহ সময় সংক্ষিপ্ত করে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার সময় নির্ধারণ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ জানেন যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হয়েছেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করেছেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সঙ্গে সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কোরো। আর তোমরা পানাহার কোরো যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা থেকে উষার শুভ্র রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Neutral
প্রথম আলো
ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত নিরসনে ইসলামের শিক্ষা
ইসলাম ধর্ম
সমগ্র সৃষ্টিজগতের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান ইসলামের লক্ষ্য। কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই; সুতরাং তোমরা ভ্রাতৃগণের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’ (সূরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১০)। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মুসলমান মুসলমানের ভাই। তাই তোমরা পরস্পরকে হিংসা কোরো না, ঈর্ষান্বিত হয়ো না, কারও পেছনে লাগবে না; এবং তোমরা এক আল্লাহর দাস হয়ে যাও এবং হয়ে যাও একে অপরের ভাই।’ (বুখারি: ৫৬৩৮)। দ্বীন বা ধর্ম কী? দ্বীন বা ধর্মের উদ্দেশ্য কী? হাদিস শরিফে আছে: ‘কল্যাণ কামনাই দ্বীন।’ (বুখারি ও মুসলিম)। কারও কল্যাণ চাইলে তার সংশোধনের জন্য যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, তাতে থাকতে হবে মহব্বত (প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা), আযমত (সম্মান করা), হিকমত (কৌশল অবলম্বন করা), খিদমাত (সেবা প্রদান করা)। নবী করিম (সা.) মুসলিম উম্মাহকে একটি মানবদেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এটা সেই তুলনার সঙ্গেও সাদৃশ্যমান, যেখানে উম্মাহকে একটি প্রাসাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে তোলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন: ‘প্রত্যেক মুসলমান একে অন্যের ভাই, কেউ কারও ক্ষতি করে না বা অন্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।’ (বুখারি)। মানবভ্রাতৃত্বের পাশাপাশি ইসলাম বিশ্বাসের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আল-কোরআনে এক মুসলমানকে অন্য মুসলমানের বন্ধুরূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে এই বলে যে ‘মুমিন নর ও মুমিনা নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজে আদেশ করে, মন্দকাজে নিষেধ করে এবং নামাজ কায়েম করে ও জাকাত আদায় করে। সর্বোপরি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করে; অচিরেই আল্লাহ তাদের প্রতি রহম করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা পরাক্রমশালী, মহা কৌশলী।’ (সূরা-৯ তাওবাহ, আয়াত: ৭১)। অহিংসা, মৈত্রী ও শান্তি হলো মহানবী (সা.)-এর মহতী দর্শন। ধৈর্য, সহনশীলতা, সমবেদনা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি এবং ক্ষমা, দয়া, স্নেহ, মায়া, মমতা, প্রেম, প্রীতি ইত্যাদি ছিল তাঁর মহান আদর্শ। পরোপকার, কল্যাণকামিতা ও ত্যাগ-তিতিক্ষা ছিল তাঁর কর্মালংকার। আর এটাই হলো ইসলাম। হাদিস শরিফে আরও আছে: ‘রাসুল (সা.) বলেন, যে সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আমাদের কিবলাকে অনুসরণ করে, আমাদের মতো নামাজ (স্বীকার) করে ও আমাদের (মুসলমানদের) জবাই করা প্রাণী আহার করে (হালাল মনে করে); তবে সে মুসলিম, তার জন্য তা-ই, যা মুসলমানের জন্য এবং তার বিরুদ্ধেও তা-ই, যা মুসলমানের বিরুদ্ধে।’ (বুখারি শরিফ)। মতবিরোধের ক্ষতি ও শান্তি–শৃঙ্খলার অবনতির পরিণাম কুফর-শিরকের চেয়েও ক্ষতিকর; এটা বোঝা যায় আল্লাহ তাআলার নবী ও রাসুল হজরত হারুন (আ.)-এর অবস্থান থেকে। হজরত মুসা (আ.) আল্লাহর নির্দেশে ৩০ দিনের জন্য তুর পাহাড়ে যান তাওরাত কিতাব আনার জন্য। সেখানে তিনি আল্লাহর আদেশে ৪০ দিন অবস্থান করেন। এ সময় তাঁর ভাই হজরত হারুন (আ.)-কে কওমের কাছে রেখে যান। পূর্বনির্ধারিত ৩০ দিনের বেশি আরও ১০ দিন বিলম্ব হওয়ার সুবাদে ছামেরি নামের এক জাদুকর সোনা দিয়ে গো-বাছুর তৈরি করে। বনি ইসরাইল এই গো–বাছুরের পূজা শুরু করে দেয়। নবী হারুন (আ.) এই মারাত্মক বিকৃতি সম্বন্ধে বারণ করলেও কঠোরতা অবলম্বন করেননি। হজরত মুসা (আ.) ফিরে এসে তাঁর সম্প্রদায়ের ওই গোমরাহির কথা জেনে তাঁর ভাইকে বললেন: ‘হে হারুন! তুমি যখন দেখলে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, তখন তোমাকে কিসে নিবৃত্ত করল আমার পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে? তবে কি আমার আদেশ অমান্য করলে?’ (সূরা-২০ তহা, আয়াত: ৯২-৯৩)। উত্তরে হারুন (আ.) বললেন: ‘হে আমার সহোদর! আমার দাড়ি ও চুল টেনো না। আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে তুমি বলবে, তুমি বনি ইসরাইলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং তুমি আমার কথা পালনে যত্নবান হওনি।’ (সূরা-২০ তহা, আয়াত: ৯৪)। এখানে লক্ষ করা যায় যে হারুন (আ.) প্রধান নেতা ফিরে না আসা পর্যন্ত দলের ঐক্য ধরে রাখার নিমিত্তে কওমের গোমরাহির মতো কাজেও কঠোরভাবে বাধা না দিয়ে ঐক্য বজায় রেখেছেন, যাতে কেউ বলতে না পারে যে তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করেছেন। দ্বন্দ্ব-সংঘাত বন্ধের শান্তিপূর্ণ উপায় এবং প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের সুন্নতি পদ্ধতি উত্তম কর্ম দ্বারা প্রতিবিধান করা। আল্লাহপাক নবী-রাসুলদের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম প্রচার করিয়েছেন। তাঁরা যদি শৌর্য-বীর্যে বলীয়ান হতেন অথবা রাজশক্তিতে শক্তিমান হতেন, তাহলে বলা যেতে পারত ইসলাম শক্তির বলে প্রচার-প্রসার লাভ করেছে। কিন্তু আল্লাহ ধনসম্পদহীন নবীদের দ্বারা দুনিয়ার বুকে ইসলাম জিন্দা রেখেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ভালো ও মন্দ সমান হবে না (হতে পারেও না); তুমি প্রতিরোধ করো (মন্দকে) যেভাবে উত্তম; তবে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা রয়েছে; সে–ও যেন পরম বন্ধু হবে।’ (আল-কোরআন, পারা: ২৪, পৃষ্ঠা: ৪৮১ / ১৯ হা. , সূরা-৪১ হা মীম সাজদাহ/ফুচ্ছিলাত, আয়াত: ৩৪)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন, ‘তোমরা মন্দকে প্রতিরোধ করো যা উত্তম তার মাধ্যমে; আমি নিশ্চিত জানি যা তারা সংজ্ঞায়িত করে।’ (সূরা-২৩, মুমিনুন, আয়াত: ৯৬)। ইসলাম চায় পৃথিবীতে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হোক। এ জন্য যুদ্ধের বিকল্প অনুসন্ধান করে। যেখানে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা যায়, তা দূর করতে যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ উপায় খোঁজে; যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে মীমাংসা করতে চায়। এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পরিপন্থী কোনো কাজ পছন্দ করে না এবং সেগুলো দূর করতেও চরমপন্থা গ্রহণ করে না। এ থেকে আরও একটি কথা প্রমাণিত হয়, ইসলামি শরিয়ার সব বিধিবিধানই বিশ্ববাসীর জন্য শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর। প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ না করে সন্ধিতে আবদ্ধ হওয়া মহানবী (সা.)-এর শান্তিকামিতার আরও একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ। তিনি শান্তি স্থাপনের জন্য হুদাইবিয়ার সন্ধি করেছেন; এ ছাড়া আরও বহু সন্ধিতে আবদ্ধ হয়েছেন। বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) সারা জীবন এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে গেছেন। ইসলাম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। ইসলাম কখনোই অনর্থক দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে সমর্থন করে না। তাই শান্তির দূত রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহের মুসলমান, ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিকসহ নানা ধর্মের ও নানা বর্ণের লোকদের নিয়ে একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করলেন, যা জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার মানবিক ও ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। মদিনায় বসবাসরত সব গোত্রের মধ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে মদিনা সনদ নামে পরিচিত; এটি একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। এ চুক্তির নানামুখী উদ্দেশ্যের একটি ছিল যুদ্ধের পরিবর্তে পরস্পরের শান্তিপূর্ণ অবস্থান। এ চুক্তির আরও উদ্দেশ্য ছিল অত্যাচারিত-নিপীড়িতকে সাহায্য করা এবং চুক্তিভুক্ত সব পক্ষের মান, মর্যাদা ও ধর্মবিশ্বাসের অধিকার সংরক্ষণ করা। ইসলাম যে শান্তি চায়, তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো এই মদিনা সনদ। ‘মদিনা সনদ’ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনে বিরাট পরিবর্তন সাধন করে। এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নৈরাজ্য, সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করে যুদ্ধবাজ গোত্রগুলোর মধ্যে সংঘাতের পরিবর্তে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধন। সংঘাত এড়ানো ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ হলো কারও অনুভূতিতে আঘাত না করা। সে যে ধর্মের বা যে মতেরই অনুসারী হোক না কেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহকে ছেড়ে যাদিগকে তারা ডাকে, তাদিগকে তোমরা গালি দিয়ো না।’ (সূরা-৬ আনআম, আয়াত: ১০৮)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন; মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসিকি এবং হত্যা করা কুফরি।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Negative
দৈনিক ইনকিলাব
এক মাদ্রাসা থেকে দশ লাখ হাফেজ
ইসলাম ধর্ম
পাকিস্তানের একটি মাদ্রাসা থেকেই পবিত্র কোরআনের হাফেজ হয়েছেন অন্তত দশ লাখ শিক্ষার্থী। ওয়াকাফ উল মাদারিস নামের মাদ্রাসাটি ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে এই মাদ্রাসা থেকে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী সফলভাবে পবিত্র কোরআন মুখস্ত করেছেন। স্টার্টাপ পাকিস্তানের খবরে বলা হয়েছে, শুধু ২০১৯ সালে মাদ্রাসাটি থেকে ১৪ হাজার ছাত্রীসহ ৭৮ হাজার জন পবিত্র কোরআনের হাফেজ হন। খবরে বলা হয়েছে, মাদ্রাসাটি চার বছরের কম বয়সী শিশুদের ভর্তি করে। তারা মাত্র দুই বছরের মধ্যে পবিত্র কুরআন মুখস্ত করে। কুরআন মুখস্থ ছাড়াও এই পাকিস্তানি মাদ্রাসার ছাত্ররা ইংরেজি, উর্দু, গণিত ইত্যাদি বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান স্টাডিজ এবং বিজ্ঞান। ওয়াফাক উল মাদারিসের প্রতিনিধি ক্বারী হাফিজ জলন্ধরি পাকিস্তানে বার্ষিক হাফিজ-ই-কুরআনের সংখ্যা সৌদি আরবের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, আরবি পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা না হলেও সৌদি আরবের তুলনায় পাকিস্তানের বেশি শিশু কুরআন মুখস্থ করছে। তিনি তুলে ধরেন যে সৌদি আরবে প্রতি বছর মাত্র পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী হাফেজে কুরআন হয়। ক্বারী হাফিজ জলন্ধরী উল্লেখ করেছেন যে ওয়াফাক উল মাদারিসের প্রচেষ্টা সৌদি সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশটি মাদ্রাসাটির প্রশংসা করেছে এবং এটিকে পুরষ্কার দিয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
সিরিয়া থেকে পরিবারসহ ইরাকে ফিরেছে ৫০ আইএস সদস্য
ইসলাম ধর্ম
ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের ৫০ সদস্য এবং তাদের পরিবারের ১৬৮ সদস্যকে শনিবার সিরিয়া থেকে ইরাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। একজন ইরাকি কর্মকর্তা একথা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, ইরাকি কর্তৃপক্ষ সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) কাছ থেকে ইসলামিক স্টেটের ৫০ জন সদস্যকে গ্রহণ করেছে। খবর এএফপি’র। এসডিএফ কার্যত এই এলাকায় কুর্দিদের সেনাবাহিনী এবং তারা ২০১৯ সালে তাদের সিরিয়ার ভূখ-ের শেষাংশ থেকে ইসলামিক স্টেট গ্রুপ যোদ্ধাদের বিতাড়িত করার যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে। কর্মকর্তারা আরো জানান, ‘তাদের ব্যাপারে তদন্ত করা হবে এবং তারা ইরাক বিচারের মুখোমুখি হবে।’ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার হাসাকেহে থেকে তাদের আটক করা হয়েছে। ইরাকি কর্মকর্তা আরো বলেন, আইএস-গ্রুপ সদস্যদের ১৬৮ জন আত্মীয়কে সিরিয়ার আল-হল ক্যাম্প থেকে ইরাকের মসুলের দক্ষিণে আল-জাদা ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয়েছে, সেখানে তাদের মানসিক চিকিৎসা দেয়া হবে। তারা বলেন, ‘আমরা তাদের উপজাতি নেতাদের কাছ থেকে প্রতিশোধের মুখোমুখি না হওয়ার আশ্বাস পেলে তাদের বাড়িতে পাঠানো হবে।’ কুর্দি-নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার আল-হোল ক্যাম্পে সন্দেহভাজন আইএস ও পরিবারের সদস্যসহ প্রায় ৫০ হাজার লোক বসবাস করে। তাদের মধ্যে বাস্তুচ্যুত সিরিয়ান, ইরাকি উদ্বাস্তু এবং সেইসাথে প্রায় ৬০টি দেশের ১০ হাজারের বেশি বিদেশী রয়েছে। মার্চ মাসে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আল-হোলে আটক বিদেশীদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানান। ইরাক সফরের সময় একটি বিবৃতিতে গুতেরেস বলেন, ‘শিবিরের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ১২ বছরের কম বয়সী এবং বাসিন্দারা ‘তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত, দুর্বল এবং প্রান্তিক।’ গুতেরেস বলেন, আমার বলতে দ্বিধা নেই যে আজকের বিশ্বে বিদ্যমান সবচেয়ে খারাপ শিবিরটি হলো আল-হোল, যেখানে মানুষের জন্য সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এবং সেখানে আটকে থাকা লোকরা বছরের পর বছর ধরে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।’ ২০২১ সালের মে থেকে, শত শত পরিবারকে আল-হোল থেকে ইরাকের আল-জাদাতে স্থানান্তরিত করা হয়েছ, যাদের অনেকে পালিয়ে যাচ্ছিল। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাকের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণকারী অতি-উগ্রবাদী গোষ্ঠীতে যোগদানকারী যোদ্ধাদের আত্মীয়দের ইরাকে প্রত্যাবাসন নিয়ে বিরোধিতাও রয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ইরাকি কর্তৃপক্ষ আল-জাদা বন্ধ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এএফপি।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
কালের কন্ঠ
হজ শেষে রওজা শরিফ জিয়ারতে দেড় লাখ মুসল্লি
ইসলাম ধর্ম
পবিত্র হজ পালনের পর মদিনায় পৌঁছেছেন লক্ষাধিক হাজি। তারা মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করবেন এবং পবিত্র মসজিদে নববীতে নামাজ পড়বেন। গত বুধবার পর্যন্ত এক লাখ ৪২ হাজার ৫৮৮ জন হজ করে মদিনায় যান বলে জানিয়েছে সৌদি বার্তা সংস্থা।হজ ও ভিজিট কমিটির পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, হজ শেষ করে গতকাল বুধবার মোট ১৭ হাজার ২৫৮ জন মদিনায় পৌঁছেন। ৩৯৫ ফ্লাইটে মদিনার হিজরাহ স্টেশনে এসেছেন ১৫ হাজার ১৫৯ জন। তাদের মধ্যে হারামাইন হাইস্পিড ট্রেনের ৩৯৫ ট্রিপে করে ১৭৯৭ জন পৌঁছেন। এদিকে ৩৬ হাজার ৯৬৩ জন নিজ দেশের উদ্দেশে চলে যান। জেনারেল প্রেসিডেন্সি জানায়, গত ২৫ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ৪২ লাখ ৫২ হাজারের বেশি লোক পবিত্র মসজিদে নববীতে জিয়ারত করেছেন।মসজিদে আগত মুসল্লিদের জন্য স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবা, স্বেচ্ছাসেবাসহ প্রয়োজনীয় সব সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। মুসল্লিদের মধ্যে দুই লাখ ৩২ হাজার ৯৪টি জমজম পানির বোতল এবং রোজাদারদের মধ্যে চার লাখ ২৬ হাজার ৪৫৭টি খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হয়। তা ছাড়া মসজিদ প্রাঙ্গণে ৪৬ হাজার ১৩৮টি উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। পবিত্র মসজিদে নববীর স্বেচ্ছাসেবা বিভাগ জানায়, জেনারেল প্রেসিডেন্সির পক্ষ থেকে পবিত্র মসজিদে ছয় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।জিলহজ মাসে মসজিদে আগত মুসল্লিদের নানা ধরনের সেবা দিয়েছেন। এদিকে সৌদি সরকারের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনেকে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করেন। তারা মুসল্লিদের পথনির্দেশনা, ভিড় নিয়ন্ত্রণ, খাবার বিতরণ, রোগীদের জন্য যানবাহন ব্যবস্থাপনা, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতাসহ নানা ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
কালের কন্ঠ
‘ফিলিস্তিনি শিশুদের জীবন কি মূল্যহীন’
ইসলাম ধর্ম
গাজায় যুদ্ধ ও রক্তপাত বন্ধসহ সব ধরনের সংঘাতের বিস্তার প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি। গতকাল মঙ্গলবার কাতারের শুরা কাউন্সিলের উদ্বোধনী বক্তব্যে জোরালোভাবে এ আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের জীবনের কোনো মূল্য নেই, শিশুদের জীবন যেন কারো কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।’ আল-থানি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার একমাত্র উপায় হলো ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির বাস্তবায়ন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা, যা এখন পর্যন্ত এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।আন্তর্জাতিক রেজল্যুশন অনুসারে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করে ন্যায়সংগত ও ব্যাপক শান্তি প্রতিষ্ঠা ছাড়া আর কোনো সমাধান নেই।’ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি প্রসঙ্গে কাতারের আমির বলেন, ‘আমরা বলব, যথেষ্ট হয়েছে। ইসরায়েলকে হত্যাযজ্ঞ চালানোর নিঃশর্ত সবুজ সংকেত দেওয়া উচিত নয়। চলমান অবরোধ, দখলদারি, বসতি স্থাপনের বাস্তবতা উপেক্ষা করা যায় না।ফিলিস্তিনি জনগণ থেকে পানি, ওষুধ ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করা পুরোপুরি অবৈধ। আমরা কারো দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করব না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের পেছনে থাকা সবাইকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, এরপর কী ঘটতে যাচ্ছে? যুদ্ধ কি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে? এরপর ফিলিস্তিনিরা কোথায় যাবে? যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়; বরং এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও হতাহতের সংখ্যা কেবল বাড়বে। এখন যা ঘটছে তা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে ধর্মীয় ও পার্থিব কোনো রীতি-নীতি ও মূল্যবোধের তোয়াক্কা করা হয়নি। ক্রমবর্ধমান এই সহিংসতা বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে এক নজিরবিহীন অভিযান পরিচালনা করে। এর পর থেকে গাজায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। সংঘর্ষের শুরুতেই দুই শতাধিক ইসরায়েলি নাগরিককে বন্দি করে হামাস।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
কালের কন্ঠ
তুরস্কের যে মসজিদের ওপর পাখি বসে না
ইসলাম ধর্ম
উসমানীয় যুগের ঐহিতাসিক মসজিদগুলোর অন্যতম শামসি পাশা মসজিদ। তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের ইসকুদা অঞ্চলে তা অবস্থিত। ১৫৮১ সালে বসফরাস প্রণালীর তীর ঘেঁষে নির্মিত হয় এ মসজিদ। মসজিদটি নির্মাণে উসমানীয় আমলের গভর্নর শামসি পাশা বিশেষ সহযোগিতা করেন এবং এর নকশা অঙ্কন করেন বিখ্যাত স্থাপতি মিমার সিনান।তিনি ৯০ বছর বয়সে তা নির্মাণ করেন।ঐতিহাসিক এ মসজিদের অন্যতম বিশেষত্ব হলো, এর ওপর পাখি দাঁড়ায় না। কারণ তা বসফরাস প্রণালী ও মারমারা সাগরের সংযোগস্থলে নির্মিত হয়েছে। উসমানীয় সুলতান সুলাইমান কানুনির যুগে নির্মিত মসজিদটি ঘিরে তুর্কি জাতির মধ্যে বংশপরম্পরায় বিস্ময়কর নানা কথা প্রচলিত রয়েছে।তুর্কি জাতির ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সেনাপতি শামসুদ্দিন পাশা তৎকালীন স্থপতি মিমার সিনানের কাছ থেকে একটি অদ্ভুত আবদার করেন। তিনি তাঁকে এমন একটি মসজিদ নির্মাণ করতে বলেন, যার ওপর পাখি দাঁড়াতে পারবে না। যেন মসজিদের ছাদ ময়লাযুক্ত হয়ে না পড়ে। এরপর বুদ্ধিসম্পন্ন মিমার সিনান ইস্তাম্বুলের তীরবর্তী ইস্কুদার অঞ্চলটি নির্বাচন করেন।এর কারণ হিসেবে মনে করা হয়, অঞ্চলটি প্রবহমান বাতাসের জন্য পরিচিত। স্বাভাবিকভাবে প্রচণ্ড বাতাসে পাখিদের চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে মসজিদের দেয়াল ও মিনারের ওপর দাঁড়ানো পাখিদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই মসজিদটির ছাদ কোনো ময়লাযুক্ত হয় না এবং এর গম্বুজ ও মিনার খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের তা পরিষ্কার করার প্রয়োজনও হয় না।মসজিদের আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এর ভেতর বায়ু চলাচলের জন্য বিশেষ ধরনের আউটলেট রয়েছে। তুরস্কে এ ধরনের ব্যবস্থা একমাত্র এ মসজিদেই রয়েছে। এর মাধ্যমে মসজিদে সমুদ্র থেকে পানি প্রবেশ করে এবং বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ছাড়াই তাতে প্রাকৃতিক বায়ু চলাচল করে।মসজিদের বাম পাশে উসমানীয় সেনাপতি শামসি আহমেদ পাশার সমাধি রয়েছে। তা ছাড়া মসজিদের ভেতরে একটি মাদরাসা রয়েছে। বর্তমানে তা সরকারি গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উসমানীয় যুগে এখানে ইসলামী পাঠ প্রদান করা হতো। প্রতিদিন পর্যটকরা মসজিদটির স্থাপত্য সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হন।
ধর্মীয় শিক্ষা
Neutral
দৈনিক ইনকিলাব
কুরআন মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে আনে
ইসলাম ধর্ম
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের সহজ ও সুন্দরতম মাধ্যম হল কুরআন মাজীদ। অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা, অন্যের তিলাওয়াত শোনা, আয়াতের অর্থ, ভাব ও মর্ম নিয়ে চিন্তা ফিকির করা- এসবই বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করে। আল্লাহর পরিচয় লাভ ও তাঁর প্রতি আপনত্ব অনুভবে সাহায্য করে। কারণ, কুরআন আল্লাহর কালাম। তাঁর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি প্রেরিত বার্তা। যেখানে তিনি পরম মমতায় বান্দাকে সম্বোধন করেছেন। উপদেশ দিয়েছেন। কল্যাণের পথ নির্দেশ করেছেন। মন্দ ও ক্ষতিকর বিষয়ে সতর্ক করেছেন। নবী ও রাসূলদের গল্প বলেছেন। সাহাবায়ে কেরামের ঘটনা উল্লেখ করেছেন। পূর্বের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর কর্ম-পরিণতি ও উত্থান-পতনের ইতিবৃত্ত জানিয়েছেন। সর্বোপরি ইহ-পরকালীন জীবনে সফলতা লাভের পথ ও পন্থা বলে দিয়েছেন। এসব এত সহজ ও সাবলীলভাবে পেশ করেছেন যে, সবাই বুঝতে পারে। এত চমৎকার শব্দ, বাক্য ও শৈলী ব্যবহার করেছেন যে, সবাই তার মাধুর্য অনুভব করতে পারে। কুরআন হল ‘রূহ’। কুরআনের বহু জায়গায় আল্লাহ তাআলা নিজের পরিচয় দিয়েছেন। এরপর বলেছেন, হে বান্দা, ইনি ‘তোমার’ রব। অর্থাৎ এই মহামহিম অত্যুচ্চ গুণাবলির অধিকারী সত্তার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক বড় গভীর ও মজবুত। তিনি তোমার স্রষ্টা। তোমার প্রতিপালক। তোমার অতি আপন। এভাবে বান্দাকে তার আসল পরিচয়ের সূত্র ধরিয়ে দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের রহস্য। এরপর নানাভাবে তাকে উৎসাহিত করেছেন কুরআন পড়তে। উদ্বুদ্ধ করেছেন কুরআনের বিভিন্ন আয়াত নিয়ে ভাবতে। কুরআনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে। কুরআনকে বুকে ধারণ করে লাভবান হতে। যেমন সূরা শূরার এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন : এভাবেই আমি ওহীর মাধ্যমে আপনার প্রতি নাযিল করেছি এক ‘রূহ’ আমার নির্দেশে। এর আগে আপনি জানতেন না- কিতাব কী, ঈমান কী। কিন্তু আমি একে বানিয়েছি এক নূর, যার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চাই হেদায়েত দান করি। (সূরা শূরা : ৫২)। এখানে আল্লাহ তাআলা কুরআনকে মানব জাতির ‘রূহ’ বা প্রাণ বলেছেন। বুঝিয়েছেন, কুরআনহীন মানব জীবন প্রাণহীন মানুষের মতো, মৃত। এ প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তির বুকে কুরআনের কোনো অংশ নেই, সে যেন বিরান ঘর। (জামে তিরমিযী : ২৯১৬)। অর্থাৎ অপরিচ্ছন্ন, আবর্জনাময়, ভীতিকর মানব সে। আলো বাতাসহীন, বসতিহীন, কীট পতঙ্গের আবাস তার বুক। কিন্তু এই বুকে যখন কুরআন প্রবেশ করে, বুক আলোকিত হয়। জীবন উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয়। সজীব সতেজ হয়। জীবন্ত ও প্রাণবন্ত হয়। আর বিরান মৃত জীবনের সঙ্গে তো প্রাণবন্ত জীবনের কোনো তুলনা হতে পারে না। একথাও আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন : যে ব্যক্তি ছিল মৃত এরপর আমি তাকে জীবন দিয়েছি, তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করেছি, যার সাহায্যে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে, সে কি ওই ব্যক্তির মতো হতে পারে, যে অন্ধকারে পরিবেষ্টিত, যা থেকে সে বের হতে পারে না? (সূরা আনআম : ১২২)। এছাড়াও সূরা ইবরাহীমের শুরুতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন : এটি এমন কিতাব, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে আনতে পারেন, তাদের রবের নির্দেশে। সেই সত্তার পথে, যিনি পরাক্রমশালী প্রশংসার্হ। (সূরা ইবরাহীম : ১)।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদত
ইসলাম ধর্ম
রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসনাতাউ ওয়া ফিল আখিরাতে হাসনাতাউ ওয়া কিনা আজাবান্নার’, অর্থাৎ ‘হে আমাদের রব, তুমি আমাদেরকে পৃথিবীতে কল্যাণ এবং পরকালে কল্যাণ দান করো।’ এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, ইসলাম শুধু মানুষকে বেহেশতের পথই দেখায়নি, ইসলাম মানুষকে সর্ববিধ পার্থিব উন্নতির পথও দেখিয়েছে। আল্লাহ মুসলমানদের এ কালের শান্তি ও পরকালে মুক্তি অর্জনের পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন। বেশির ভাগ মুসলমানই আমরা মনে করে থাকি যে, আমরা যেসব ইবাদত-বন্দেগি করে থাকি, সেসব ইবাদতের প্রতিদান শুধু মৃত্যুর পরবর্তী জীবনেই ভোগ করা যায়, এ পার্থিব জীবন বা এই দুনিয়ার জীবনে তেমন কোনো সুবিধাদি পাওয়া যায় না। এ রকম ধারণা সত্য না অযৌক্তিক তা আলোচনাসাপেক্ষে পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের মুক্তি ব্যতীত ইবাদতের যাবতীয় প্রতিদান বা উপকারিতা মানুষ এ পৃথিবীতেই ভোগ করে থাকেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ পাক নিজেই ঘোষণা করেছেন- ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে, তারাই কৃতকার্য’। (সূরা নূর : ৫২)। এ আয়াত দ্বারা আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে কৃতকার্যের কথাই বুঝিয়েছেন। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ ওয়াদা করেন- ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎ কর্ম করে, আল্লাহ তাদের ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদের অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন’। (সূরা নূর : ৫৫)। অন্য এক আয়াতে বলা হচ্ছে- ‘যে সৎ কর্ম করে সে নিজের উপকারের জন্যই করে আর যে অসৎ কর্ম করে তা তার ওপরই বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই জুলুম করেন না’। (সূরা হামিম সেজদা : ৪৬)। কাজেই ইবাদতের উপকারিতা শুধু মৃত্যুর পরেই পাওয়া যাবে, এমনটি নয়। ‘ইবাদত’ শব্দটি এসেছে আরবি ভাষার ‘আবদুন’ শব্দ থেকে। আবদুন শব্দের অর্থ গোলাম এবং ইবাদত শব্দের অর্থ গোলামি করা। অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে নিয়ে তাঁরই আনুগত্য করা। আল্লাহ বলেন- ‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা শুধু আমারই আনুগত্য করবে’। (সূরা জারিয়া : ৫৬)। মানুষের পুরো জীবনের যাবতীয় কাজ আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী করা বা না করাই হচ্ছে ইবাদত। পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে- ‘তোমরা আনুগত্য করো এক আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের, আর যদি তোমরা তা থেকে বিমুখ হও তাহলে জেনে রেখো আল্লাহ কাফেরদের ভালোবাসেন না’। (সূরা আল ইমরান : ৩২)। ইবাদতের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, তবে মানুষের কল্যাণ সাধন হচ্ছে ইবাদতের পারিপার্শ্বিক কর্তব্য। এ দুই উদ্দেশ্যে যেকোনো ভালো কাজ করার নামই ইবাদত। ইবাদতের পরিষ্কার একটি ধারণা পাওয়া যায় সূরা আল বাকারায়। বলা হয়েছে- ‘সৎ কর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎ কাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং সমস্ত নবী-রাসূলগণের ওপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য। আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে-রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী, তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেজগার’। (সূরা বাকারা : ১৭৭)। ইবাদত দুই প্রকার। হক্কুল্লাহ আর হক্কুল ইবাদ। হক্কুল্লাহ হচ্ছে সেই ইবাদত, যা আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। যেমন- তাওহিদ, রোজা, নামাজ, হজ, কোরবানি এবং হক্কুল ইবাদ, যা বান্দার সাথে সংযুক্ত যেমন- জাকাত, পিতা-মাতার অধিকার, নিকটাত্মীয়ের অধিকার, প্রতিবেশীর অধিকার, এতিম, ফকির-মিসকিনের অধিকার এবং সমস্ত মুসলিম ও অমুসলিমদের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত ইবাদতগুলো বান্দার সাথে সম্পৃক্ত ইবাদতগুলো কার্যকরী হওয়া বা নিশ্চয়তার পূর্বশর্ত। কেননা কেউ যদি প্রথম পর্যায়ের ইবাদত অর্থাৎ হক্কুল্লাহর ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক না হয়, তবে তার দ্বারা দি¦তীয় পর্যায়ের ইবাদত অর্থাৎ বান্দা সম্পর্কিত ইবাদত আশা করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ কেউ যদি আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে না পারে, তাহলে তার পক্ষে দ্বিতীয় পর্যায়ের ইবাদতের নিশ্চয়তা প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়ে। যদি কেউ এ দু’ধরনের ইবাদতই সম্পন্ন করে থাকে, তাহলে সেই ইবাদতগুলোই মানবকল্যাণের তাৎপর্য বহন করবে। তাওহিদ হচ্ছে প্রথম ইবাদত, যা আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত। আল্লাহ ঘোষণা করেন- ‘হে মানুষ সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো ইলাহ নেই’ (সূরা হুদ : ৬১)। পবিত্র কুরআনের সূরা ইখলাসে বলা হয়েছে- ‘বলুন, তিনি আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়, তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তিনিও কারো থেকে জন্ম নেননি এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ একজনও নেই’। (সূরা ইখলাস : ১-৪)। এই তাওহিদ বা একত্ববাদের স্বীকৃতি প্রদানের ফলে বান্দার ওপর অত্যাবশ্যক হয়ে যায় নবী-রাসূল, বেহেশত-দোজখ, কেয়ামত, আখেরাতসহ সব কিছুর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। যখন এসবের প্রতি মানুষ বিশ্বাস স্থাপন করবে তখন মানুষের ভেতরে এক ধরনের জবাবদিহিতার ভয় জন্মাবে, যাতে করে মানুষ নিজের থেকেই নিজে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং যা ইচ্ছে তা করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা মানুষ তখন ভাববে যে, আল্লাহর নির্দেশিত পথের বাইরে গেলে তাকে হাশর, মিজান, কবর, ফেরেশতা, জাহান্নাম ইত্যাদির সম্মুখীন হতে হবে। এই চেতনা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হলেই মানুষ মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়ে উঠবে। আর মানুষ যদি আল্লাহর তৈরি এসব বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করা থেকে বিরত থাকে এবং যা ইচ্ছে হয় তাই করতে থাকে, তাহলে আল্লাহর কোনো লাভ বা ক্ষতি হবে না। যা হওয়ার তা সবই হবে বান্দার জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘যে সৎ কর্ম করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং যে মন্দ কাজ করে তার শাস্তি সেই ভোগ করবে’। (সূরা হামিম : ৪১)। আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসের দ্বারা মানুষ নিয়ন্ত্রিত হলে সমাজ নিয়ন্ত্রিত হবে। সমাজে ভারসাম্য ও স্থিতি থাকবে এবং এই ভারসাম্য ও স্থিতির মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরে শান্তি ও শৃঙ্খলা বিরাজ করবে। ইবাদত হিসেবে নামাজের স্থান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ ও তার বান্দার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একমাত্র ইবাদত হচ্ছে নামাজ। কুরআন মজিদে অসংখ্যবার নামাজের ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন- ‘নামাজকে প্রতিষ্ঠিত করো, জাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহর রুজ্জুকে সম্মিলিতভাবে ধারণ করো, এর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ নামাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে পড়া হয়ে থাকলেও নামাজের অবদান সম্পূর্ণভাবে মানুষ ভোগ করে থাকে। পবিত্র কুরআন ঘোষণা করছে- ‘অবশ্যই নামাজ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে।’ তাহলে দেখা যাচ্ছে, নামাজি ব্যক্তির দ্বারা কোনো প্রকার খারাপ কাজ সংঘটিত হচ্ছে না, যাতে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বা নামাজির দ্বারা মানুষ কষ্ট পেতে পারে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এখানেও নামাজ পড়ার কারণে মানুষ ব্যক্তিগতভাবে সততা অর্জন করছে এবং তার সততার সুফল সে নিজে ভোগ করছে, সেই সাথে তার সমাজও ভোগ করছে। আধ্যাত্মিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে সিয়াম বা রোজা। রোজার মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন বৈধ কামনা-বাসনা, লোভ-লালসা, অহঙ্কার, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিজেকে বিরত রেখে আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জন করে। এটিও আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত ইবাদত। রোজা রাখার কারণে মানুষ যখন বৈধ জিনিসের প্রতি লালসা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি থেকেও নিজেকে সংযত রাখে; নিজে সংবরণ করে, তখন তার কাছে অবৈধ ভোগ-বিলাস হয়ে পড়ে গৌণ ও তুচ্ছ। বৈধ জিনিস চরিতার্থ করলে সমাজকে বা অন্য মানুষকে কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না, কিন্তু অবৈধ বস্তু চরিতার্থ করলে তার দ্বারা অন্য মানুষের দুঃখ ও কষ্ট বহুগুণে বেড়ে যায়, যা রোজার বিধানে বিশ্বাসী ব্যক্তির দ্বারা করা সম্ভব নয়। আল্লাহ ঘোষণা করেন- ‘অবশ্যই রোজা তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববতী লোকদের ওপর করা হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া বা পরহেজগারিতা অর্জন করতে পারো।’ এখানে তাকওয়া অর্জনের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর ভয়ে অন্যায় কর্ম থেকে বিরত থাকা। তাহলে অন্যায় কর্ম থেকে বিরত থাকলে উপকৃত হবে কে? উপকৃত হবে রোজাদার নিজে এবং সমাজের অন্যসব মানুষ। কাজেই রোজার মাধ্যমে যদি প্রত্যেক মানুষ তার আত্মার পরিশুদ্ধতা অর্জন করতে পারে, তবে সেই মানুষগুলো সমাজে সোনার মানুষে পরিণত হবে এবং এসব সোনার মানুষের কাছ থেকে যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে, সেসব সুযোগ-সুবিধা আল্লাহ পাক গ্রহণ করেন না, তার সমুদয় সুবিধা গ্রহণ করেন সমাজের সব স্তরের জনসাধারণ। জাকাত, হজসহ সব ধরনের ইবাদত যা বান্দার সাথে সম্পৃক্ত তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের কল্যাণ সাধন; সেই সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। জাকাতের অর্থ বিলি-বণ্টন ব্যবস্থা মানুষের তথা সমাজের দারিদ্র্য কমিয়ে আনে। মানুষের মধ্যে সমতা ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যতা রক্ষা করে শ্রেণী বৈষম্য কমায়। ধনী-দরিদ্রের মধ্যে অহঙ্কারের ব্যবধান হ্রাস করে। আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয় ধনীদের সম্পদে দরিদ্রদের অধিকার রয়েছে।’ জাকাতের কোনো অর্থ-সম্পদই আল্লাহ গ্রহণ করেন না, এর সমুদয় অর্থ-সম্পদ জাকাত প্রদানকারী ব্যক্তির (অগ্রাধিকার ভিত্তিতে) নিকটাত্মীয় এবং চার পাশের মানুষই গ্রহণ করে থাকেন। এখানেও জাকাতের অর্থ-সম্পদ সবই সাধারণ মানুষদের বিলিয়ে দেয়া হয়, আল্লাহ উদ্দেশ্য মাত্র। হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সাথে সাথে বিশ্বমুসলিম ভ্রাতৃত্বের সৌহার্দ্য সাম্য ও পারস্পরিক মতবিনিময়ের দ্বারা মুসলিম উম্মাহর অগ্রগতি ও উন্নতির পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়। হজের আত্মত্যাগে মানুষ একে অন্যের সাহায্যকারীর শিক্ষা অর্জন করে। আল্লাহর রাসূলদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে রাসূলের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নিজেদের সমাজে ফিরে আসেন। এই ফিরে আসা হাজীরা সমাজের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করার চেষ্টা করেন। এখানেও আল্লাহর কোনো উপকার হয় না, উপকার হয় মানুষের, মুসলিম উম্মাহর। পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা, নিকটাত্মীয়দের প্রতি গুরুত্বারোপ, অনাথ, এতিম, ফকির-মিসকিনদের প্রতি দায়িত্ববোধ, প্রতিবেশীদের খোঁজখবর করা ও বিপদাপদে আন্তরিকতার সাথে পাশে থাকা এবং সমাজের সব মুসলিম ও অমুসলিমের মানবিক প্রত্যাশার প্রতি যতœশীল হওয়ার মতো বান্দা সম্পর্কিত ইবাদতের প্রতিফলও মানুষই ভোগ করে থাকেন। এখানেও ইবাদতকারী ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম পালন করার মাধ্যমে, পিতা তার সন্তানের কাছ থেকে, সন্তান পিতার কাছ থেকে; স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে, স্বামী স্ত্রীর কাছ থেকে; প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর কাছ থেকে, এতিম-অনাথ তার নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে পরস্পর উপকৃত হয়। এভাবে পারস্পরিক সম্পৃক্ত এসব ইবাদত প্রত্যেক মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি হয়ে যায়। মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে একে অন্যের সাথে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত। সবাই সবার কাছে কোনো না কোনোভাবে দায়বদ্ধ কিংবা সহযোগিতা প্রত্যাশী। বান্দাসংশ্লিষ্ট ইবাদতের মাধ্যমে এই দায়বদ্ধতার দায়িত্ব থেকে মুক্তি অর্জন এবং সুশৃঙ্খল মানবিক অধিকার সচেতন টেকসই সমাজব্যবস্থার প্রবর্তনই এসব ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য। যদিও প্রতিটি ইবাদত আল্লাহর উদ্দেশ্যে সম্পন্ন হয়ে থাকে, তবুও এর অন্তর্নিহিত সব সুবিধা মানুষই উপভোগ করে থাকেন। যেমন কোনো মৃত ব্যক্তির জন্য আয়োজিত দোয়াখায়ের অনুষ্ঠানে প্রস্তুতকৃত খাদ্যসামগ্রী মৃত ব্যক্তি গ্রহণ করেন না, সব খাদ্য অনুষ্ঠানে আগত মেহমানেরাই ভোগ করে থাকেন, মৃত ব্যক্তি উপলক্ষ মাত্র। এভাবেই আল্লাহ শুধু দেখতে চান বান্দা তার আদেশ-নিষেধ ঠিকমতো পালন করছেন কি না। আল্লাহ বলেন- ‘তাদের গোশতও আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, তাদের রক্তও না কিন্তু তাঁর কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া’। (হজ-৩৭)। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন- ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন; যেন পরীক্ষা করে দেখতে পারেন কাজকর্মে তোমাদের মধ্যে কে সর্বোত্তম; তিনি মহাশক্তিমান ক্ষমা দানকারী’।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
কালের কন্ঠ
চীনের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মসজিদ
ইসলাম ধর্ম
চীনের সর্ববৃহৎ মসজিদ মসজিদে ঈদগাহ। স্থানীয় উচ্চারণ ‘ইদ কাহ’। ১৪৪২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত মসজিদ কাশগর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। মসজিদের মোট আয়তন ১৬ হাজার আট শ বর্গমিটার।মসজিদের মূল প্রার্থনা কক্ষে একসঙ্গে দুই থেকে তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। আর পুরো মসজিদ কমপ্লেক্সের ধারণক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার। মসজিদ নির্মাণে মৌলিক ধর্মীয় উপাদানের সঙ্গে স্থানীয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটেছে। ঈদগাহ মসজিদকে মনে করা হয় প্রাচীন উইঘুর স্থাপত্যের চমৎকার নিদর্শন ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক।এ মসজিদ দ্বারা উইঘুরে ইসলামী সংস্কৃতি ও স্থাপত্যরীতির প্রভাব অনুভব করা যায়। ‘দ্য চায়না ডিসকভারি ওয়েবসাইট’-এর ভাষ্য মতে, মসজিদটি প্রকৃতপক্ষে আরব সেনাপতি ও ইসলাম প্রচারক ইবনে কুতাইবার সমাধি ছিল (সম্ভবত উমাইয়া সেনাপতি কুতাইবা বিন মুসলিম উদ্দেশ্য। যিনি অত্র অঞ্চল বিজয়ে নেতৃত্ব দেন এবং খোরাসানের প্রশাসক নিযুক্ত হন)। কাশগর রাজ্যের শাসক সাকসিজ মির্জা ১৪৪২ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন।প্রাচীনকালে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রচারে ঈদগাহ মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খ্রিস্টীয় ১৬ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ঈদগাহ মসজিদ সম্প্রসারণ করা হয়। তখন বিপুলসংখ্যক মুসল্লি জুমার জামাতে অংশগ্রহণ করত। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে গুলেরেনা নামের একজন মুসলিম নারী পাকিস্তান যাওয়ার পথে মারা যান। স্থানীয় মুসল্লিরা মসজিদ সম্প্রসারণে তার পরিত্যক্ত সম্পদ ব্যবহার করে। এ ছাড়া একজন ধনাঢ্য উইঘুর মুসলিম নারী ছয় শ একর ভূমি মসজিদকে দান করেন। ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। তখন একটি গেট এবং ভেতরে খাল খনন করা হয়। মসজিদের সর্বশেষ সংস্কার হয় দাওগুয়াং সাম্রাজ্যের সময়ে। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সংস্কার কার্যক্রম শেষ হয়।ঈদগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সটি সাতটি অংশে বিভক্ত। তা হলো গেট, মিনার, সাধনা কক্ষ, সভাকক্ষ, উঠান, অতিরিক্ত প্রার্থনা কক্ষ ও মূল প্রার্থনা কক্ষ। মসজিদ নির্মাণে জমকালো শৈলীর পরিবর্তে উজ্জ্বল রং ও সাধারণ শৈলী ব্যবহার করা হয়। মসজিদের প্রধান প্রবেশপথ পূর্ব দিকে অবস্থিত। তবে পশ্চিমেও একটি প্রবেশপথ আছে। মুসল্লিদের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণ সূর্যাস্ত দেখতে এবং অবসর কাটাতে ঈদগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে আসে। উজ্জ্বল হলুদ রঙের গেটের দুই পাশে রয়েছে দুটি মিনার। মসজিদের অভ্যন্তর ভাগের নকশায় মুসলিম রীতি অনুসারে ফুল-পাতা-লতার ব্যবহার দেখা যায়। ধনুকাকৃতির দরজাগুলোর ৪.৭ মিটার উঁচু এবং ৪.৩ মিটার চওড়া। মিনার দুটির উচ্চতা প্রায় ১৮ মিটার। উভয়টিতে ইসলামী কারুকাজ ও ফুলেল নকশা রয়েছে। মিনারের শীর্ষদেশে আছে অর্ধচন্দ্র। ১৬ মিটার উঁচু গম্বুজের নিচে রয়েছে অষ্টভুজ আকৃতির হল। উত্তর পাশের পাথর বাঁধানো পথ ধরে হাঁটলে পাওয়া যাবে ২০ একরের সুবিশাল উঠান। যেখানে রয়েছে সবুজ বাগান,দৃষ্টিনন্দন গাছ ও পরিষ্কার পানির পুকুর।উইঘুর মুসলমানের কাছে ঈদগাহ মসজিদ যেমন তাদের সোনালি অতীতের সাক্ষী ও প্রতীক, তেমনি তা বহু নির্মমতারও সাক্ষী। যেমন ৯ আগস্ট ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে উইঘুর নেতা তৈমুর বেগকে শহীদ করে তাঁর মাথা ঈদগাহ মসজিদে প্রদর্শন করা হয়েছিল। একইভাবে ১৯৩৪ সালে মার্চে উইঘুর আমির আবদুল্লাহ বুগরাকে শহীদ করে তাঁর মাথা ঈদগাহ মসজিদে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে ঈদগাহ মসজিদে একাধিকবার নামাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
প্রথম আলো
শুভ বড়দিন আজ
খ্রীষ্টান ধর্ম
ফুল, নানা রঙের বেলুন, নকশা করা কাগজ ও জরি ব্যবহার করে কয়েক দিন ধরেই সাজানো হচ্ছিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালার গির্জা। শুধু এই গির্জা নয়, দেশের সব গির্জার ভেতরেই গত কয়েক দিন উৎসবের প্রস্তুতি চলছিল। গির্জায়–গির্জায় বর্ণিল সাজে সেজেছে ক্রিসমাস ট্রি। এত সব আয়োজন ২৫ ডিসেম্বর ঘিরে। এই দিনটি (আজ) খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশে এই উৎসব বড়দিন (ক্রিসমাস ডে) নামে পরিচিত। অন্য বছরের তুলনায় এবার বড়দিনের আয়োজনে চাকচিক্য কম। বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর অনাড়ম্বরভাবে বড়দিন উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট আজকের দিনে বেথলেহেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার জন্য যিশুখ্রিষ্ট জন্ম নিয়েছিলেন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা আজ সারা দিন আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্‌যাপন করবেন। দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। গত দুদিন ঢাকার কাকরাইলের সেন্ট মেরিস গির্জা, তেজগাঁওয়ের হলি রোজারি গির্জা ও আসাদগেটের সেন্ট ক্রিস্টিনা গির্জা ঘুরে দেখা যায়, অন্য বছরের তুলনায় এবার জাঁকজমক কম। যাজকেরা বলছেন, বড়দিনের যেসব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের বাইরে লোকসমাগম হয়, সে ধরনের উদ্‌যাপনে খ্রিষ্টভক্তদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কিছু কিছু আনুষ্ঠানিকতাও বাতিল করা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কেউ গির্জায় প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রার্থনা চলাকালেও সার্বক্ষণিক মাস্ক পরে থাকতে হবে। বড়দিন উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সুখী-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। বিদ্যমান সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে আরও সুদৃঢ় করতে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, বড়দিন দেশের খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ্য সম্প্রীতিকে আরও সুদৃঢ় করবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বর্তমানে বিশ্ব বিপর্যস্ত। তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবারের বড়দিন পালনের আহ্বান জানান। বড়দিনে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী জনসাধারণের শান্তি, কল্যাণ এবং সমৃদ্ধি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীসহ দেশের সব মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি।
ধর্মীয় উৎসব
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইজতেমায় কোনো পক্ষ বা বিভাজন থাকা উচিত নয় : র‍্যাব মহাপরিচালক
ইসলাম ধর্ম
র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, নিজেদের মধ্যে বিভাজন থাকলে ইজতেমায় আগ্রহ হারাবে মানুষ। তাই ইজতেমায় কোনো পক্ষ বা বিভাজন থাকা উচিত নয়। গাজীপু‌রের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ। এ উপলক্ষে বুধবার বেলা ১১টার দিকে ইজতেমা ময়দানের পাশে র‍্যাবের কন্ট্রোল রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন তিনি। র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, এবারের ইজতেমা আয়োজনে জঙ্গি বা কোনো উগ্রবাদী সংগঠনের হুমকি নেই। সকল গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। র‌্যাব শুধু নিরাপত্তাই নয়, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাও দেবে। এ ছাড়া তুরাগ নদীতে টহলের জন্য র‌্যাবের স্পিডবোট থাকছে। ৯টি অবজারভেশন পোস্ট, ৯টি ওয়াচ টাওয়ার সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। পুরো ময়দান পর্যবেক্ষণের জন্য আকাশ পথেও টহলে র‌্যাবের হেলিকপ্টার চলছে। তাছাড়া র‌্যাবের বোম্ব স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড ও স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করছে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য রয়েছে একটি মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও দুটি উপ-নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এবারের ইজতেমা নির্বিঘ্নে শেষ করতে র‍্যাবের পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে র‍্যাব সব সময় প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
ভোরের কাগজ
মাদ্রিদে শারদীয় দুর্গোৎসবে প্রবাসীদের মিলনমেলা
হিন্দু ধর্ম
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে পালিত হলো বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গা পূজা। বাঙালিঅধ্যুষিত লাভাপিয়েসে নির্মিত অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পাঁচ দিনব্যাপী এই দুর্গোৎসব মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) শেষ হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এ ধর্মীয় উৎসবে বাংলাদেশি ছাড়াও নেপাল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রবাসীও অংশ নিয়েছেন। এবার দুর্গা পূজা উপলক্ষে মাদ্রিদের বাঙালিঅধ্যুষিত এলাকা লাভা পিয়েসের পাশে খেসুস ই মারিয়া রোডস্থ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন হলরুমে পূজা মণ্ডপ তৈরি করা হয়। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এ পূজামণ্ডপ আরাধনার পাশাপাশি ছিল প্রবাসীদের মিলনমেলা। ঢাকঢোল ও শঙ্খ বাজিয়ে চলেছে উলুধ্বনি। দুর্গাপূজাকে ঘিরে মাদ্রিদে বাঙালিঅধ্যুষিত এলাকা যেন পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে আয়োজিত এই পূজার সব তিথি নির্ঘণ্ট মেনে এই পূজা পালন করা হয়। অন্যবারের মতো এবারও ছিল নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব বয়সের মানুষই সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন এই অনুষ্ঠানে। আর এই অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন এখানকার বয়োজ্যেষ্ঠরা। পূজাকে ঘিরে বিরাট আয়োজন হলেও কোথাও যেন একটা ঘরোয়া ছোঁয়া ছিল। আয়োজন করা হয় ভোগেরও। হাসিমুখে গোটা আয়োজনের দায়িত্ব ভাগ করে নেন সবাই। এরইসঙ্গে প্রাণখোলা আড্ডায় মেতে ওঠেন সবাই। দেশ থেকে অনেক দূরে সারাটা বছর জুড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা থাকেন নানা কাজের ব্যস্ততা। শুধুমাত্র এই সময়টাতেই একসঙ্গে মেতে ওঠেন এখানকার বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সব কাজ ভুলে সবাই মেতে ওঠেন আনন্দে। তারপর ফিরে যাওয়া আবার সেই দৈনন্দিন জীবনে। স্পেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আসেন এই পূজাতে। মাদ্রিদ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চক্রবর্তী উৎসবমুখর পরিবেশে প্রবাসে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করতে পেরে খুবই উৎফুল্ল। এসময় তারা বলেন, দেশের মতো আনন্দঘন পরিবেশ না থাকলেও এখানে আমরা নিজেদের মধ্যেই এ উৎসবকে ভাগাভাগি করে নিয়েছি। সোমবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ।পরিদর্শনকালে তিনি সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকায় এ বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উক্তি 'ধর্ম যার যার, উৎসব সবার'- উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যা পৃথিবীর খুব কম দেশেই আছে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব মোহতাসিমুল ইসলাম। সর্বজনীন দুর্গাপূজা পরিষদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় বাংলাদেশ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি আল মামুন, সাবেক সভাপতি এস আর আই এস রবিনসহ রাজনৈতিক, সামাজিক, কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ এবং সাংবাদিক প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্পেনে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত শ্রী দিনেশ কে পাঠনায়েন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন হলরুমে বড় সর্বজনীন দুর্গাপূজা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, দশমীই মূলত দুর্গাপূজার প্রধান অনুষঙ্গ। তবে দেবী দুর্গার বিদায় অর্থাৎ স্বামী গৃহে গমনের পাঁচদিন পরেই লক্ষ্মীপূজার মধ্য দিয়ে আবার পিতৃগৃহে ফিরে আসবেন। মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি যেমন কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য।ভারতের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই সুন্দর পূজা আয়োজনের প্রশংসা করেন। এ সময় সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চক্রবর্তী, উপদেষ্টা উত্তম মিত্র, মান্না চক্রবর্তী, শ্যামল তালুকদার, গৌরিক প্রভাত চক্রবর্তী, শ্যামল দেব নাথ, শংকর রায়, তাপস দেব নাথ, পলাশ শাহা, সুব্রত মল্লিক, শান্তনু দাস, আদ্রি সেন, মোহন লাল মজুমদার, সুমন রায়, শিমুল ঘোষ, চমন দাস, দিলিপ সূত্রধর, উত্তম ভূইয়া, লক্ষণ মণ্ডল, কমল মণ্ডল, প্রাণধন চক্রবর্তী, শংকর পোদ্দার, আরিন্দ্রজিত চক্রবর্তী, রাখাল দেব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
ধর্মীয় উৎসব
Positive
ইত্তেফাক
চাঁদকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণার দাবি ভারতীয় ধর্মগুরুর
হিন্দু ধর্ম
সম্প্রতি ভারতের চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করেছে। বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে সফল চন্দ্র অভিযানের আনন্দে ভাসছে পুরো দেশ। এরই মধ্যে চাঁদকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণার দাবি উঠেছে। আর এই অদ্ভুত দাবিটি করে বসলো দেশটির এক ধর্মগুরু।ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভার জাতীয় সভাপতি স্বামী চক্রপানি মহারাজ। এই ধর্মগুরু তার বিতর্কিত নানা মন্তব্যের জন্য বেশ পরিচিত। ধর্মগুরুর দাবি, চন্দ্রযান-৩ অবতরণ করার পর এবার চাঁদকে হিন্দু রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করা হোক এবং যে স্থানে চন্দ্রযানের সফট ল্যান্ডিং হয়েছে, সেই জায়গাটিকে রাজধানী ঘোষণা করা হোক। রোববার (২৭ আগস্ট) চক্রপানি মহারাজ এ বিষয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানান। তার দাবি, অন্য কোনও ধর্ম চাঁদের মালিকানা দাবি করার আগে, ভারত সরকারের এই দাবি করা উচিত। এমনকি এক লোকসভায় তিনি এ বিষয়ে প্রস্তাব এনে তা পাসেরও দাবি জানান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিওতে চক্রপানি মহারাজ বলেন, ‘ভারতীয় সংসদ চাঁদকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করুক। শিব শক্তি পয়েন্ট, যেখানে চন্দ্রযান-৩ অবতরণ করেছিল তাকে রাজধানী ঘোষণা করা হোক। যাতে কোনও জিহাদি মানসিকতা সেখানে পৌঁছাতে না পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনও সন্ত্রাসবাদী যাতে চাঁদে পৌঁছতে না পারে তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
বাংলাদেশ প্রতিদিন
কোটা খালি রেখেই শেষ হলো হজ নিবন্ধন
ইসলাম ধর্ম
চার দফা সময় বাড়ানোর পর শেষ হয়েছে এ বছরের হজ নিবন্ধন। মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন ৮৩ হাজার ১৫৫ হজযাত্রী। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধন শেষে এখনো কোটা খালি রয়েছে ৪৪ হাজার ৪৩টি। এ বছর বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করে দেয় সৌদি আরব। এর মধ্যে সরকারিভাবে হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন চার হাজার ২৬০ জন। বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন। সবমিলিয়ে মোট নিবন্ধন করেছেন ৮৩ হাজার ১৫৫ জন। বাকি ৪৪ হাজার ৪৩টি কোটা ফেরত যাবে। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, শেষদিনে অনেকে নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু তাদের পেমেন্ট পেন্ডিং (অপেক্ষমাণ) রয়েছে। এ সংখ্যা যোগ করলে আরও হাজার দুয়েক কমবে। তারপরও ৪০ হাজারের মতো কোটা সৌদি আরবকে ফেরত দেওয়া হবে। এবার হজের নিবন্ধন শুরু হয় ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর, যা ১০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রত্যাশিত সাড়া না মেলায় প্রথম দফায় সময় বাড়ানো হয় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়। তৃতীয় দফায় ২৫ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ায় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতেও হজ নিবন্ধনে কাঙ্ক্ষিত সাড়া না মেলায় শেষ দফায় ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
প্রথম আলো
আসুরিক শক্তির বিরুদ্ধে সুরের লড়াই
হিন্দু ধর্ম
দেবী দুর্গার ধর্মীয় মাহাত্ম্যের প্রথম উল্লেখ দেখা যায় শ্রীশ্রীচণ্ডীতে। সেখানে যে ধর্মীয় কাহিনি আছে, তাতে বলা আছে: রাজা সুরথ রাজ্য হারিয়ে আর সমাধি বৈশ্য ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে তাঁদের পরিবার-পরিজন কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়ে মনের দুঃখে গৃহত্যাগী হলেন। রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য কেউই কারও পূর্বপরিচিত নন। মনের দুঃখে তাঁরা দিগ্বিদিক ঘুরছিলেন। ঘুরতে ঘুরতে একসময় দুজনের দেখা হলো মেথস মুনির আশ্রমে। সেখানেই তাঁদের কথা হয়। দুজনেই তাঁদের দুঃখ ও যন্ত্রণার কথা পরস্পরকে বলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁরা দুজনেই দুঃখ-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে মা দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করলেন। সময়টা ছিল বসন্তকাল। চণ্ডীতে বলা আছে, মা দেবী দুর্গা তাঁদের আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে দেখা দিলেন এবং তাঁদের শোকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিলেন। এই হলো দেবীপূজার মাহাত্ম্য। শ্রীশ্রীচণ্ডীতে যে মেথস মুনির আশ্রমটির কথা বলা আছে, আশ্রমটির অবস্থান যেখানে থাকার কথা উল্লেখ আছে শ্রীশ্রীচণ্ডীতে, সেটি এখনো আছে নবগ্রামের বোয়ালখালী থানার করলডেঙ্গা গ্রামের করলডেঙ্গা পাহাড়ে। আশ্রমটি তেমনভাবেই আছে। বিশ্বাসীদের মতে, আগে এই অঞ্চলটি বেশ দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল ছিল। এই স্থানের পর্যটনের গুরুত্ব অনেক। তাই কয়েক বছর ধরে এই স্থানের পর্যটন গুরুত্ব, ধর্মীয় গুরুত্ব উপলব্ধি করে, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের খানিকটা সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। আমি মনে করি, দেবী দুর্গার ধর্মীয় মাহাত্ম্য অনুযায়ী দেবী দুর্গার আবাহনের এই স্থানটির যথাযথ সংস্কার জরুরি। একই সঙ্গে নানা ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যটন করপোরেশন স্থানটিকে দর্শনার্থী, তীর্থযাত্রীদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। তাহলে বাংলাদেশ-ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে বহু দর্শনার্থী, তীর্থযাত্রী স্থানটি পরিদর্শনে আসতে পারবে। এতে বাংলাদেশ পর্যটন খাতটি আরও সমৃদ্ধ হবে। বসন্তকালে দুর্গাপূজা হবে, এমনটাই যখন বলা আছে শ্রীশ্রীচণ্ডীতে, তখন এ ঘটনার ব্যতিক্রম দেখি রামায়ণে। রামায়ণে উল্লেখ আছে, রামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধারের জন্য দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেছিলেন। আর সময়টা ছিল শরৎকাল। তাই পরবর্তী সময়ে যখন শারদীয় দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রচলন হয়, তখন এই পূজাকে আমরা বলি শারদীয় দুর্গোৎসব। সেই সঙ্গে অকালবোধন পূজা। আমরা যদি শ্রীশ্রীচণ্ডীর মাহাত্ম্য বা রামচন্দ্রের অকালবোধন পূজার উদ্দেশ্যের দিকে তাকাই, দেখতে পাই দেবী দুর্গার আরাধনা, শক্তিরই আরাধনা। রাজা সুরথ আর রামের সময় আর পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও তাঁরা একই দেবীর পূজা করেন শক্তি সঞ্চয়ের জন্য। আর সেই শক্তিটি হলো শুভশক্তি। যে শক্তি আসুরিকতার বিরুদ্ধে, সব অসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আদিম যুগের পরবর্তী সময়ে যখন প্রস্তর যুগের সূচনা হলো, দেখলাম মানুষ পাথর দিয়ে বিভিন্ন জিনিস সৃষ্টি করে মনের ভাব প্রকাশ করতে শুরু করল। তার পরবর্তী সভ্যতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইট ও মাটি দিয়ে তৈরি জিনিসের প্রচলন শুরু হলো। তখন যে ভক্তিবাদের উন্মেষ ঘটেছিল, সেখানে মাটি দিয়ে তৈরি দেবীরই আরাধনা করতে শুরু করল মানুষ। আমরা মিসরীয় সভ্যতা, মহেেঞ্জাদারো সভ্যতা, হরপ্পা বা ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, ভারত সভ্যতা, অথবা মধ্যপ্রাচ্যের সভ্যতার দিকে যখন তাকাই, সেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে দেখতে পাই, সব সভ্যতাতেই বাসনকোসনের সঙ্গে মাটির তৈরি মূর্তিগুলোও পাওয়া গেছে। এ দেশে মা দেবী দুর্গার মাটির তৈরি প্রতিমা গড়ে পূজার প্রচলন শুরু করেন রাজশাহীর তাহিরপুরে রাজা কংস নারায়ণ। সেটাও আজ থেকে প্রায় সাত-আট শ বছর আগের কথা। এর আগে দেবী দুর্গার মাটির মৃণ্ময়ী রূপের প্রচলন হতে দেখা যায়নি। রাজা কংস নারায়ণ প্রতিমা গড়ে যে পূজা করেছিলেন, সেখানে তৎকালীন সময়ে নয় লাখ টাকা খরচ করা হয়েছিল। বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে যেসব রাজা-মহারাজা ছিলেন, তাঁদের একাংশ ছিলেন প্রজাদের প্রতি নিষ্ঠুর। আরেকাংশ প্রজাবৎসল। প্রজাবৎসল রাজারা যে শুধু প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন তা-ই নয়, প্রজাদের সঙ্গে মিলে তাঁরা দুর্গোৎসবের আয়োজনও করতেন। রাজারা এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই প্রজার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করতেন। এই উৎসবে রাজা-প্রজা, ধনী-নির্ধন—সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতেন। ফলে রাজা আর প্রজার মধ্যে নৈকট্যের জন্ম হতো। এটি ছিল ভয়ের সংস্কৃতির বিপরীতে একটি সৌহার্দ্যের সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা। আর এই ধারাটা চলে এসেছে প্রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ কাল পর্যন্ত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন রাজা-মহারাজাব্যবস্থা থাকল না, তখন দেখা গেল, সাধারণ বাঙালি একজোট হয়ে দুর্গাপূজা করছে। সেই সময় থেকেই দুর্গাপূজা সর্বজনীনতার রূপ নিল। তখন দুর্গাপূজা রাজার আঙিনা থেকে বেরিয়ে সাধারণের আঙিনায় চলে এল। বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। বাঙালির জীবন ইতিহাসে দেখা যায়, বাঙালি কখনো কারও ওপর আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেনি। চিরকাল তারা আগ্রাসিত হয়েছে। এর কারণে বাঙালির জীবনে দুঃখ এসেছে, বিপর্যয় এসেছে, হাসি-কান্না-বেদনার দিন এসেছে। পরবর্তী সময়ে এই কান্না, দুঃখ, বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য নতুন করে প্রাণোদ্যম ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছে উৎসবের মাধ্যমে। সেটা আজও অব্যাহত। বাংলার যেমন ষড়্ঋতু আছে। আছে সেই ঋতুগুলোর বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্য আর কোথাও দেখা যায় না। আর প্রতি ঋতুতেই বাঙালির উৎসব আছে। উৎসবকে কেন্দ্র করে বাঙালির বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি আছে। সংকীর্ণতা ভুলে বাঙালি পরিসরে একাকার হওয়ার চেষ্টা করে এ অঞ্চলের জনগণ। এ জন্যই আমরা বলি, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। প্রত্যেক বাঙালির যার যার ধর্ম আছে। ধর্মাচার আছে। কিন্তু সব ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মাচারের পাশাপাশি ধর্মীয় উৎসব আছে। এখান থেকে আমরা উচ্চারণ করতে পারি: ধর্ম যার যার উৎসব সবার। চট্টগ্রামে যে পাড়ায় আমি থাকি, তার নাম দেওয়ানজি পুকুরপাড়। এই এলাকায় মূলত হিন্দু সংখ্যালঘুদের বাস। এই পাড়ার নিকটতম প্রতিবেশী ছিল আজকের বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানদের পরিবার। একবার সরস্বতী পূজা উপলক্ষে পাড়ায় যে কমিটি হয়েছিল, সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী। বর্তমানে তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান। আবার কলাবাগানে যে সর্বজনীন দুর্গোৎসব হচ্ছে, এই উৎসবের সূচনা ও আয়োজনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন সেই এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। তঁারাই এলাকার হিন্দুদের একত্র করে এই উৎসবের আয়োজনে উৎসাহিত করেছেন। সেই থেকেই কলাবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব হয়ে আসছে। এটা খুব বেশি দিনের কথা নয়। আমরা লক্ষ করি, শারদীয় দুর্গাপূজা হিন্দুধর্মাবলম্বীরা করে। গৌতম বুদ্ধের জন্মদিনে বুদ্ধপূর্ণিমা বা খ্রিষ্টের জন্মদিনে ক্রিসমাস ডে করে, সবই আবহমানকাল থেকে বাঙালির সংস্কৃতির একটি রূপ। আরেকটি ব্যাপার উল্লেখযোগ্য, মা দুর্গার যে কাঠামো, রাষ্ট্র ও সমাজকে প্রতিফলন করে এ কাঠামো। আসুরিক শক্তির প্রভাবে যখন স্বর্গ থেকে দেবতারা চ্যুত হয়ে গেলেন, তখন তাঁরা আসুরিক সংস্কৃতির হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য মা দুর্গার আরাধনা করলেন। দেবতাদের মিলিত আরাধনার মাধ্যমেই তো মা দুর্গার আবির্ভাব। দেবতাদের যাঁর হাতে যা ছিল, তা-ই কিন্তু মায়ের হাতে স্থান পেল। রাষ্ট্র ও সমাজেরও তেমনি আসুরিক শক্তি আছে। আসুরিক অত্যাচারে মানুষ যখন ভয়ে থাকে, যখন উৎপীড়নের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হয়, তা থেকে উত্তরণের জন্য বাঙালি যুদ্ধ করে। ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে বাঙালি যখন যূথবদ্ধ হয়ে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে, এই অবয়বটি মা দুর্গার কাঠামোতে আছে। অসুরের সঙ্গে মা দুর্গার যে লড়াইটি হয়েছিল, তাতে আসুরিক শক্তির পরাজয় ঘটেছিল। দেখা যায়, যখনই আসুরিক শক্তির পরাজয় ঘটল, সেখানে যে সমাজকে দেখি, লক্ষ করি জ্ঞানের প্রতীক সরস্বতী, ধনের প্রতীক লক্ষ্মী, জনগণের প্রতীক গণেশ আর বীরের প্রতীক কার্তিক। তার মানে জনতা, জনগণ, ধ্যানজ্ঞান ও বীরের মধ্য যে রাষ্ট্রকাঠামো, এটা হলো শান্তি-সৌহার্দ্য বিনির্মাণের রাষ্ট্র ও সমাজকাঠামো। এই কাঠামো বিনির্মাণের জন্যই তো ঐক্যবদ্ধ বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ করেছে। কিন্তু এই স্বপ্নের বাংলাদেশ স্বাধীনতার চার দশক পর আজও আসেনি। আসুরিক শক্তি আজও সমাজে বর্তমান। পাশাপাশি শুভশক্তিও অবস্থান করছে। তাই আসুরিক শক্তির সঙ্গে শুভশক্তির বারবার সংঘর্ষ হচ্ছে, লড়াই হচ্ছে। তাই সময়ের বিচারে শারদীয় পূজা এখনো প্রাসঙ্গিক। ভবিষ্যতেও থাকবে। এই পূজার মাহাত্ম্য কখনো শেষ হওয়ার নয়।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
ইত্তেফাক
একশজন হলেই হজের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে এজেন্সি
ইসলাম ধর্ম
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এজেন্সি প্রতি একশজন হলেই আসন্ন হজের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে বাংলাদেশের বেসরকারি এজেন্সিগুলো। ২০১৯ সালের হজে বেসরকারি এজেন্সিগুলোর জন্য নতুন এই কোটা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে এজেন্সি প্রতি ১৫০ জন নির্ধারিত ছিল।রবিবার সৌদি আরবের জেদ্দায় দুই দেশের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান বাংলাদেশের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। জেদ্দায় সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স হলে সৌদি হজমন্ত্রী ড. সালেহ বিন বানতেনের সঙ্গে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে অন্যান্যদের মধ্য উপস্থিত ছিলেন ধর্ম সচিব আনিসুর রহমান, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, কন্সাল জেনারেল এফ এম বোরহান উদ্দিন, কাউন্সিলর (হজ) মাকসুদুর রহমান ও হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম। এছাড়া হজ মৌসুমে হাজিদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা, খাবারের মান উন্নয়ন, মোয়াল্লেম সার্ভিসকে আরো যুগোপযোগী করাসহ সৌদি হজ অথরিটি কর্তৃক হাজিদের মিনায় তাবুতে দুতলা বিশিষ্ট খাট পরিহার করার দাবি জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
রামাল্লার কেন্দ্রে ইসরাইলের অভিযান
ইসলাম ধর্ম
অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরের কেন্দ্রে গতকাল অভিযান চালিয়েছে ইসরাইল। শহরটিতে হামলার ঘটনা নতুন নয়। তবে ৭ অক্টোবরের পর থেকে হামলার গতি ও তীব্রতা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে রামাল্লার কেন্দ্রে অস্বাভাবিক এ অভিযান শুরু হয়েছে। এটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক সদর দফতর। রামাল্লাতে অভিযানের ঘটনা ঘটলেও শহরটির কেন্দ্রে প্রায়শই এমন ঘটনা ঘটে না। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অভিযান চলছে এবং রামাল্লার কেন্দ্রে ইসরাইলি বাহিনী এবং সাধারণ জনতার মধ্যে কিছু সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। তাদের পিছু হটাতে ইসরাইলি সেনার সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরের অন্যান্য স্থানেও ইসরাইলি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গাজায় খাদ্যসংকট নিয়ে ফের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা : আবার গাজায় খাদ্যসংকটের সতর্কতা জারি করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। বুধবার ডাব্লিউএইচও-র প্রধান একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে এক ভয়ংকর খাদ্যসংকটের মুখে পড়বে গাজা উপত্যকা। কয়েকলাখ মানুষ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ডাব্লিউএইচও বিবৃতিতে বলেছে, গাজার সর্বত্র স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না মানবিক কর্মীরা। বহু জায়গায় তাদের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। লড়াইয়ে তাদেরও প্রাণ গেছে। জিনিস নিয়ে তারা বার হলেই ক্ষুধার্ত মানুষ তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে আছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে খাদ্যসংকট থেকে গাজাকে বাঁচানো যাবে না। এর আগেও এবিষয়ে দীর্ঘ রিপোর্ট দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। একাধিকবার সংঘর্ষ-বিরতির আবেদনও জানানো হয়েছে ডাব্লিউএইচও-র তরফে। হিটলারের চেয়ে খারাপ নেতানিয়াহু : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান গাজায় ইসরাইলের হামলাকে ইহুদিদের প্রতি নাৎসিদের আচরণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারের চেয়েও খারাপ মানুষ। বুধবার আঙ্কারায় একটি অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতার সময় তিনি নেতানিয়াহু গণহত্যার জন্য দোষী অভিযোগ করে এ মন্তব্য করেন। আঙ্কারায় এক অনুষ্ঠানে এরদোগান ইসরাইলের প্রতি পশ্চিমা সমর্থনের সমালোচনা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, গাজার সংঘাত সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নিপীড়নের শিকার শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানীদের স্বাগত জানাতে তুরস্ক প্রস্তুত। তিনি বলেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় যা করছেন এবং কয়েক দশক আগে ইউরোপে নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলার যা করেছেন; তার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এরদোগান বলেন, হলোকাস্টে ৬ মিলিয়ন ইহুদিকে হত্যা গাজায় হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধের মতো খারাপ ছিল না এবং উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলের আচরণকে ইহুদিদের সঙ্গে তুলনা করেন। ঘনত্ব ও মৃত্যু শিবিরে আটকে রাখা হয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
ভোরের কাগজ
আফগানে মসজিদে বিস্ফোরণ, ধর্মীয় নেতাসহ নিহত ১৫
ইসলাম ধর্ম
আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতে একটি মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে তালেবানপন্থি এক ধর্মীয় নেতাসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের সময় গুজরগাহ মসজিদে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। খবর আল জাজিরার। হেরাত পুলিশের মুখপাত্র মাহমুদ রাসুলি বলেছেন, মুজিব রহমান আনসারি কয়েকজন রক্ষী ও বেসামরিক লোকদের নিয়ে মসজিদের দিকে যাওয়ার পথে নিহত হয়েছেন। বিস্ফোরণে ঠিক কতজন হতাহত হয়েছে তা জানাননি তিনি। তবে ঘটনাস্থলের একটি সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, এতে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আরও অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক চিকিৎসক।রাসুলি বলেন, ইমাম সাহেব বাড়ি থেকে মসজিদে যাওয়ার সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী তার হাতে চুম্বন করার সময় নিজেকে উড়িয়ে দেয়।তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বোমা হামলার নেপথ্যে থাকা অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে। এক টুইটে তিনি বলেছেন, দেশের বলিষ্ঠ ও সাহসী এক ধর্মীয় পণ্ডিত নৃশংস হামলায় শহীদ হয়েছেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
বাংলাদেশ প্রতিদিন
নবীজির (সা.) রাষ্ট্রনীতি
ইসলাম ধর্ম
আধুনিক ইসলামী গবেষকরা বলছেন, ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র গঠন হবে এ নিয়ে ইসলামের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। আমরা দেখেছি রসুল (সা.) ওফাতের সময় তাঁর স্থলাভিষিক্ত শাসক কে হবেন এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কিছু বলে যাননি। ফলে জনগণ হজরত আবু বকর (রা.)-কে রাষ্ট্রের কর্ণধার হিসেবে নির্বাচন করে নেয়। পরবর্তীতে হজরত আবু বকর (রা.) হজরত ওমরকে নিজের স্থলাভিষিক্ত মনোনীত করে যান। হাজার হাজার সাহাবি ও তাবেয়ি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তাঁর আনুগত্য করেন। আবার হজরত ওমর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে কাকে নির্বাচন করা যায় এজন্য একটি ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। এভাবে তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) খেলাফতের দায়িত্বে আসেন। খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধান যে প্রক্রিয়াতেই নির্বাচিত হোক না কেন সেটা বড় বিষয় নয়, কোরআনের দৃষ্টিতে বড় বিষয় হলো ন্যায়-ইনসাফের সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। পক্ষ-বিপক্ষের সব জনগণ সমান অধিকার পাবে এটাই কোরআনের রাষ্ট্র পরিচালনার বড় নীতিমালা। আসলে রাষ্ট্রে যদি ন্যায়বিচার থাকে, ইনসাফ থাকে তাহলে সেখানে কম যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হলেও তাতে ইসলামের বড় কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু রাষ্ট্রে যদি ইনসাফ প্রতিষ্ঠা না থাকে আর সবচেয়ে পরহেজগার ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হন তাতে জনগণের খুব একটা উপকার হবে না। ইসলামের ইতিহাসে অনেক কম পরহেজগার ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন এটা ঠিক, তবে যখনই ইনসাফের ব্যত্যয় ঘটেছে, তখনই একদল প্রতিবাদী আলেম জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অনেকগুলো মৌলিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ন্যায়বিচার একটি। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আপনি বলুন, আমাকে আদেশ করা হয়েছে যেন তোমাদের মাঝে ন্যায়বিচার করি।’ (সুরা শুরা, আয়াত ১৫) আরবি ‘আদল’ শব্দের অর্থ ন্যায়, ইনসাফ, ন্যায্যতা, নিরপেক্ষ, সমান। পরিভাষায়, যে যতটুকু যোগ্য তাকে ততটুকু প্রদান করাকে ন্যায়বিচার বলে। আল্লাহর এক নাম আদল বা আদিল। কেননা তিনি যোগ্যতা অনুযায়ী মানুষ ও সৃষ্টিকুলের মাঝে ভালোমন্দ বণ্টন করে থাকেন। যিনি ন্যায়বিচার করেন তাঁকে বলা হয় আদিল। আর যে স্থানে ন্যায়বিচার করা হয় তাকে বলা আদালত। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রধান অবশ্যই আদিল তথা ন্যায়বিচারক হবেন। তাঁর দেখাদেখি রাষ্ট্রের নির্বাহী ও বিচারিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ন্যায়বিচার করবেন। ন্যায়বিচারের সহজ অর্থ হলো- সব ধরনের দলাদলি থেকে দূরে থেকে নিরপেক্ষ বিচার করা। দলীয় স্বার্থ কিংবা বিরোধীপক্ষকে পরাস্ত করার মানসিকতা থেকে মুক্ত হয়ে বিচার করা। আপন-পর, দলীয়-বিরোধী সব মানুষের সঙ্গে সমান সম্পর্ক বজায় রাখা। আর সে সম্পর্কে ভিত্তি হবে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার। কোনো রায় যদি বিচারকের নিকটাত্মীয় বা দলীয় লোকের বিরুদ্ধেও যায় তবুও সে রায় কার্যকর করতে হবে নির্র্দ্বিধায়। আবার কোনো রায় যদি দূরের কোনো মানুষ কিংবা ব্যক্তির শত্রুতা আছে অথবা মতের অমিল রয়েছে এমন কারও পক্ষে যায় তবুও সে রায় কার্যকর করতে হবে বিনা বাক্যে। আমরা যদি রসুলের জীবনের দিকে তাকাই তাহলে দেখব তিনিও ন্যায়বিচারের সবগুলো প্যারামিটারে ছিলেন আপসহীন। একবার মক্কার এক সম্ভ্রান্ত নারী চুরির দায়ে পাকড়াও হয়। নবীজি (সা.) কোরআনের ক্রিমিনাল কোড অনুযায়ী তার হাত কাটার শাস্তি ঘোষণা করেন। কেউ কেউ বলল, উনি তো সম্মানিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার জন্য শাস্তি কিছুটা সহজ করা যায় কি না বা মওকুফের কোনো সুযোগ আছে কি না? এমন প্রস্তাব শুনে রসুল (সা.) দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের আগে যেসব জাতি অতিবাহিত হয়েছে তারা ঠিক এ কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে। তারা দুর্বল অপরাধীদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করত আর প্রভাবশালীদের ছেড়ে দিত। আল্লাহর কসম! আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য আমার মেয়ে ফাতেমাও যদি আজ চুরি কত, তবে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে ফেলতাম।’ (বুখারি, কিতাবুল হুদুদ)। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের জন্য ন্যায়বিচার শর্ত। আর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য শর্ত হলো নির্লোভ থাকা। তাফসিরে কুরতুবি থেকে জানা যায়, ওলিদ ইবনে মুগিরা ও শায়বা ইবনে রাবিয়া ছিলেন মক্কার প্রভাবশালী দুই নেতা। তারা একবার রসুলের (সা.) দরবারে এসে বলল, হে মুহাম্মদ! তুমি যে ধর্মের দাওয়াত দিচ্ছ সেটা বন্ধ করে দাও। বিনিময়ে ওলিদের সব সম্পদের অর্ধেক আর মুগিরার অতি রূপবতী কন্যা তোমাকে দিয়ে দেওয়া হবে। এমন লোভনীয় প্রস্তাবের জবাবে আল্লাহতায়ালা সুরা শুরার ১৫ নম্বর আয়াত নাজিল করে সাফ জানিয়ে দেন- ‘হে নবী! আপনি বলুন, আমাকে আদেশ করা হয়েছে যেন তোমাদের মাঝে ন্যায়বিচার করি।’ আজকের মুসলিম বিশ্ব অনেক দিকে এগিয়েছে। অনেক আধুনিক হয়েছে। প্রযুক্তিসমৃদ্ধ হয়েছে। কিন্তু কোনো কোনো দেশে এখনো ইনসাফ ও ন্যায়বিচার অধরা রয়ে গেছে। এ দুর্বলতা সাধারণ কোনো দুর্বলতা নয়। বরং রসুলের (সা.) ঘোষণা অনুযায়ী একটি জাতি ধ্বংস হওয়ার জন্য বেইনসাফি সমাজই যথেষ্ট। আল্লাহতায়ালা মুসলিম বিশ্বে ইসনাফ ও ন্যায়বিচারের সুবাতাস বইয়ে দিন। আমিন।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Neutral
কালের কন্ঠ
বন্দিদের সঙ্গে বিশ্ব নবী (সা.)-এর আচরণ যেমন ছিল
ইসলাম ধর্ম
একজন অপরাধীকে কারাগারে বন্দি রাখা হবে কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়; বরং তাকে সঠিক পথ বলে দিয়ে গন্তব্য দেখানোর জন্য। তার জীবন যে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে সে অন্ধকার দূরীভূত করি আলোর রশ্মি জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য। যারা বন্দিদের তত্ত্বাবধানে থাকবে তাদের আচরণ-উচ্চারণ, চলাফেরা সব কিছু দেখেই মুগ্ধ হয়ে সে আলোর পথে ছুটে আসবে। কিন্তু যদি বন্দিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়, তাহলে তো সে বন্দি অন্ধকারের দিকে আরো বেশি করে ছুটবে। বন্দিদের সঙ্গে প্রিয় নবীজি (সা.)-এর আচরণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত; সুমামা ইবনে উসালের ঘটনা। তিনি ছিলেন বনু হানিফা গোত্রের এক নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি। সে রাসুলকে হত্যা করার জন্য মদিনায় এসেছিল। আর রাসুল (সা.) তার সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন, তার কিছু নমুনা এই হাদিসে এসেছে। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কিছুসংখ্যক অশ্বারোহী সৈন্যকে ‘নাজদ’-এর দিকে পাঠান। অতঃপর বনু হানিফা গোত্রের এক ব্যক্তিকে তারা ধরে নিয়ে এলো। তার নাম ছিল সুমামাহ ইবনে উসাল। তিনি ইয়ামামাবাসীর সরদার ছিলেন। তারা মসজিদের একটি খুঁটির সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখল। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) তার কাছে এলেন এবং বলেন, হে সুমামাহ, তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে জবাব দিল, আমার কাছে তো ভালোই মনে হচ্ছে। আপনি যদি আমাকে হত্যা করেন, তাহলে খুনি ব্যক্তিকেই হত্যা করলেন। আর যদি আপনি অনুগ্রহ করেন, তবে আপনার অনুগ্রহ হবে কৃতজ্ঞ ব্যক্তির ওপর। আর যদি আপনি সম্পদ চান, তবে আপনাকে তাই দেওয়া হবে, আপনি যা চাইবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে যথাবস্থায় রেখে দিলেন। [এভাবে রাসুল (সা.) তিন দিন তার সঙ্গে কথা বলেন, এরপর]। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা সুমামাহকে ছেড়ে দাও। তারপর সুমামাহ মসজিদের নিকটবর্তী একটি খেজুরগাছের নিকট গেলেন। সেখানে তিনি গোসল করলেন। এরপর মসজিদে প্রবেশ করে বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল। হে মুহাম্মদ, আল্লাহর শপথ! পৃথিবীতে আমার কাছে আপনার চেহারার চেয়ে খারাপ চেহারা আর ছিল না। আর এখন সব মানুষের চেহারা থেকে আপনার চেহারাই আমার বেশি প্রিয়। আল্লাহর শপথ! আপনার ধর্ম থেকে বেশি খারাপ ধর্ম আমার কাছে আর ছিল না। আর এখন আপনার ধর্মই আমার কাছে সব ধর্ম থেকে অধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম! আপনার জনপদ থেকে বেশি নিকৃষ্ট জনপদ আমার কাছে আর ছিল না। আর এখন আপনার জনপদই আমার কাছে সব জনপদের চেয়ে বেশি প্রিয়। আপনার অশ্বারোহী সৈনিকরা আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে। অথচ আমি তখন ওমরা করার ইচ্ছা করেছিলাম। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে সুসংবাদ দিলেন এবং ওমরাহ করার নির্দেশ দিলেন। এরপর যখন তিনি মক্কায় ফিরে এলেন, তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, তুমি কি ধর্মান্তরিত হয়েছ? তখন তিনি বললেন, না; বরং আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আল্লাহর কসম! ইয়ামামা থেকে একটি গমের দানাও তোমাদের কাছে পৌঁছাবে না। যতক্ষণ না রাসুলুল্লাহ (সা.) তাতে সম্মতি দেন। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪৮১) বন্দিদের সঙ্গে কোমল আচরণ বন্দিদের সঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) কোমল আচরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। নবীজি (সা.) যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যেই সদয় আচরণের আদেশ দিয়েছেন তা শুধু মুখে বলে সীমাবদ্ধ করেননি, বরং বাস্তবে প্রয়োগ করে তিনি দেখিয়েছেন। তাদের সঙ্গে এমন সুন্দর আচরণ করতেন, যাতে তারা নিজেদের নবীজির কাছে নিরাপদ ও সুরক্ষিত মনে করতে বাধ্য হয়। বিশেষত, তাদের খাবারদাবার ইত্যাদি বিষয়ে সাহাবাদের সতর্ক করেছেন। হাদিসে এসেছে রাসুল (সা.) বলেছেন, যুদ্ধবন্দিদের প্রতি কল্যাণের ও সদাচরণের অঙ্গীকার গ্রহণ করো। (আল-মুজামুল কাবির : ৯৭৭) ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সাহাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা বন্দিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করো। ফলে সাহাবারা খানার সময় তাদের নিজেদের থেকে প্রাধান্য দিতেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৪/৫৮৪) নারী ও শিশুদের সঙ্গে যেমন আচরণ করতেন নারী ও শিশু বন্দিদের ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। তাদের মানসিক বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্ব দিতেন যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা বজায় রাখতেন। এ জন্য তিনি শিশুসন্তান ও মায়ের মাঝে আলাদা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। আবু আইয়ুব (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, (বন্দিনী) মা ও তার সন্তানকে একে অন্য থেকে যে ব্যক্তি আলাদা করল, আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসে তার এবং তার প্রিয়জনদের পরস্পর থেকে আলাদা করবেন। এ হাদিস অনুযায়ী রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবি ও তৎপরবর্তীরা আমল করেছেন। বন্দিনী মা-সন্তান, পিতা-পুত্র এবং ভাইদের পরস্পর থেকে আলাদা করাকে তারা নিষিদ্ধ বলেছেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৫৬৬)
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
কালের কন্ঠ
বিশ্বের প্রথম থ্রিডি প্রিন্টেড মসজিদ তৈরি করছে দুবাই
ইসলাম ধর্ম
সাম্প্রতিককালে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, গাড়ি, সেতু থেকে ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি। এবার নতুন চমক দেখিয়ে বিশ্বের প্রথম থ্রিডি প্রিন্টেড মসজিদ নির্মাণ করতে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দুবাই সরকারের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড চ্যারিটেবল অ্যাক্টিভিটিজ ডিপার্টমেন্টের (আইএসিএডি) তত্ত্বাবধানে আমিরাতের পুরনো শহর বুর দুবাইয়ে মসজিদটি তৈরি হচ্ছে।আইএসিএডি জানায়, সাধারণ নিয়মে মসজিদ নির্মাণের চেয়ে এই মসজিদ নির্মাণে ৩০ গুণ বেশি খরচ হবে।তবে থ্রিডি প্রিন্টিং পদ্ধতিতে নির্মাণসামগ্রীর বর্জ্য কমবে। এ ক্ষেত্রে ভবন নির্মাণের ডিজাইনের তথ্যের সঙ্গে প্রগ্রাম সংযুক্ত বড় প্রিন্টিং মেশিনের প্রয়োজন হয়। প্রিন্টারের প্রয়োজনীয় ম্যাটেরিয়াল ও কংক্রিটের মিশ্রণে তা তৈরি করা হবে।দুই হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই মসজিদে একসঙ্গে ৬০০ জন নামাজ পড়তে পারবেন।চলতি বছরের অক্টোবরে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হবে। ভবনের নকশার থ্রিডি প্রিন্টিং সম্পন্ন করতে চার মাস এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার কাজ শেষ করতে ১২ মাস সময় লাগবে। ২০২৫ সালের মার্চে মসজিদটি উন্মুক্ত হওয়ার আশা করা হচ্ছে।আইএসিএডি মহাপরিচালক ড. হামাদ বিন শেখ আহমেদ আল-শাইবানি বলেন, ‘থ্রিডি প্রযুক্তি ভবন নির্মাণ প্রকৌশলকে টেকসই করে তুলবে।তা খুবই পরিবেশবান্ধব ও নির্মাণসামগ্রীর বর্জ্য কমাতে সহায়ক। মূলত তিনজন কর্মী রোবটিক প্রিন্টারটি পরিচালনা করবেন এবং তা প্রতি ঘণ্টায় দুই বর্গমিটার প্রিন্ট করবে। অবশ্য মসজিদটি নির্মাণে সাধারণ পদ্ধতির চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি খরচ হবে। আশা করছি, ৩০ বছরের বিল্ডিং গ্যারান্টিসহ এর খরচ একই রকম হবে।’ দুবাইকে বিশ্বের থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের রাজধানী হিসেবে গড়তে কাজ করছে দেশটির সরকার। ২০২১ সালের আগস্টে দুবাইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদ আমিরাতকে ‘থ্রিডি প্রিন্টিং স্ট্র্যাটেজি’ ঘোষণা করে। মূলত ২০৩০ সালের মধ্যে আমিরাতের এক-চতুর্থাংশ ভবন নির্মাণে এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতেই বিশেষ আইনটি করা হয়। এরই মধ্যে বৃহত্তম থ্রিডি প্রিন্টেড অবকাঠামোর জন্য বিশ্বরেকর্ড করেছে দুবাই। ২০১৯ সালে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৬৪০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে সাড়ে ৯ মিটার দৈর্ঘ্যের মিউনিসিপ্যালিটি বিল্ডিং তৈরি করা হয়।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রিসালাত সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য
ইসলাম ধর্ম
নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রিসালাত সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য, বিশ্বের প্রতিটি ভাষাভাষীর জন্য। বিশ্বের প্রতিটি জাতি, প্রতিটি ভাষাভাষীর কাছে এ বাণী পৌঁছে দেয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দায়িত্ব ও কর্তব্য। এতদপ্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন : {হে প্রিয় হাবীব (সা.)}! আপনি বলুন, হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল, যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বভৌমত্বের অধিকারী। (আল আ’রাফ :১৫৮)। এই আয়াতে কারীমায় ইসলামের মূলনীতি সংক্রান্ত বিষয়াবলির মধ্য থেকে রিসালাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রিসালাত সারা দুনিয়ার সমস্ত জ্বিন ও মানবজাতি তথা কেয়ামত পর্যন্ত তাদের বংশধরদের জন্য ব্যাপক ও বিস্তৃত। এ জন্য নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সাধারণভাবে ঘোষণা করে দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে যে, আপনি মানুষকে বলে দিন : ‘আমি তোমাদের সকলের প্রতি নবী ও রাসূল-রূপে প্রেরীত হয়েছি। আমার নবুওয়াত লাভ ও রিসালাত প্রাপ্তি বিগত নবী ও রাসূলগণের মতো কোন বিশেষ জাতি অথবা বিশেষ ভূখণ্ড কিংবা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়; বরং সমগ্র বিশ্ব মানবের জন্য। বিশ্বের প্রতিটি অংশ, প্রতিটি দেশ ও রাষ্ট্র এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত বংশ ধরদের জন্য কেয়ামতকাল পর্যন্ত প্রলম্বিত ও পরিব্যাপ্ত।’ (কুরআনুল কারীম : অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর, খ.-১ প. ৮৩০)। হাফেজ ইবনে কাসির (রাহ.) বলেছেন : এ আয়াতে কারীমায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শেষ নবী খাতামুন্নাবিয়্যিন হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাব ও রিসালাত যখন কেয়ামত পর্যন্ত আগত সমস্ত বংশধরদের জন্য এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য ব্যাপক ও বিস্তৃত, তখন আর অন্য কোন নতুন রাসূল আগমনের প্রয়োজনীয়তা অবশিষ্ট নেই। (তাফসীরে ইবনে কাসির)। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাবুক যুদ্ধের সময় গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের ভয় হচ্ছিল যে, শত্রুরা নাজানি এ অবস্থায় আক্রমণ করে বসে। তাই তারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চারদিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) নামায শেষ করে বললেন : আজকের রাতে আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দান করা হয়েছে, যা আমার পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলকে দেয়া হয়নি। তার একটি হলো এই যে, আমার রিসালাত ও নবুওয়াতকে সমগ্র দুনিয়ার জাতিসমূহের জন্য ব্যাপক ও বিস্তৃত করা হয়েছে। আর আমার পূর্বে যতো নবী ও রাসূলই এসেছেন, তাদের আবির্ভাব ও দাওয়াত নিজ নিজ সম্প্রদায়ের সাথেই সম্পৃক্ত ছিল। দ্বিতীয়ত : আমাকে আমার শত্রুর মোকাবেলায় এমন প্রভাব দান করা হয়েছে যে, তারা যদি আমার থেকে এক মাসের দূরত্বেও থাকে, তবুও তাদের উপর আমার প্রভাব বিস্তার লাভ করবেই। তৃতীয়ত : অবিশ্বাসী কাফেরদের সাথে যুদ্ধেপ্রাপ্ত মালে গণিমত আমার জন্য হালাল করা হয়েছে। অথচ পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্য তা হালাল ছিল না। বরং এসব মালের ব্যবহার মহাপাপ বলে মনে করা হতো। তাদের মালে গণিমত ব্যয়ের পন্থা ছিল এই যে, আকাশ থেকে বিদ্যুৎ এসে সে সমস্তকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিয়ে যেত। চতুর্থত : আমার জন্য সমগ্র ভূমণ্ডলকে মসজিদ করে দেয়া হয়েছে এবং মাটিকে পবিত্র করার উপকরণ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে-আমাদের নামায ভূখণ্ডের যে কোন অংশে, যে কোন জায়গায় শুদ্ধ হয়। কোন বিশেষ মসজিদে সীমাবদ্ধ না হয়। পক্ষান্তরে, পূর্ববর্তী উম্মতদের ইবাদত কেবলমাত্র উপাসনালয়েই হতো, অন্য কোথাও নয়। নিজেদের গৃহে অথবা মাঠে ময়দানে তাদের ইবাদত বা নামায হতো না। তাছাড়া যখন পানি ব্যবহারের সামর্থ্য না থাকে, তা পানি না পাওয়ার কারণে বা রোগ-শোকের কারণে হোক, তখন মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নেয়া পবিত্রতা অর্জন ও অযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হয়ে যায়। পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্য এ সুবিধা ছিল না। আর পঞ্চমটি হচ্ছে এই যে, আল্লাহ জাল্লাশানুহু তাঁর প্রত্যেক রাসূলকে একটি দোয়া কবুল হওয়ার এমন নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন, যার কোন ব্যতিক্রম হতে পারে না। প্রত্যেক নবী রাসূলই তাদের নিজ নিজ দোয়াকে বিশেষ বিশেষ উদ্দেশে ব্যবহার করেছেন এবং সে উদ্দেশ্যও পূরণ হয়েছে। আমাকেও বলা হয়েছে যে, আপনিও কোন একটা দোয়া করুন? আমি আমার দোয়াকে আখেরাতের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছি। সে দোয়া তোমাদের জন্য এবং কেয়ামত পর্যন্ত ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমার সাক্ষ্যদানকারী যেসব লোক জন্মগ্রহণ করবে, তাদের কাজে লাগবে। (মুসনাদে আহমাদ : ২/২২২)। হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে লোক আমার আবির্ভাব সম্পর্কে শুনবে, তা সে আমার উম্মতদের মধ্যে হোক কিংবা ইয়াহুদি নাসারা হোক। যদি সে আমার উপর ঈমান না আনে তাহলে জাহান্নামে যাবে। (মোসনাদে আহমাদ : ২/৩৫০)।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
প্রথম আলো
বদর যুদ্ধে ইসলামের বিজয় কেতন
ইসলাম ধর্ম
মাহে রমজানে যে বছর মদিনায় প্রথম সিয়াম পালিত হয়, সেই দ্বিতীয় হিজরি সালের ১৭ রমজান, মাগফিরাতের সপ্তম দিন মোতাবেক ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মার্চ ইসলামের ইতিহাসের প্রথম আত্মরক্ষামূলক সশস্ত্র যুদ্ধ ‘গায্ওয়ায়ে বদরে’ ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হয়েছিল বলে এ দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের ইতিহাসে ‘বদরের যুদ্ধ’ বিশেষভাবে স্মরণীয়। ওই যুদ্ধে মুসলমানদের ‘চূড়ান্ত মীমাংসা’ হয়েছিল। আজ থেকে ১৩৯১ বছর আগে ১৭ রোজার দিনে ৩১৩ জন পদাতিক মুসলমানের দল তৎকালীন রণকৌশলে পারদর্শী অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত কাফের বাহিনীর সঙ্গে অসম যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ইসলামের বিজয় ছিনিয়ে আনে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘বদরের যুদ্ধে যখন তোমরা হীনবল ছিলে, আল্লাহ তো তোমাদের সাহায্য করেছিলেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৩) মক্কার কুরাইশরা যখন দেখল যে নবী করিম (সা.) মদিনায় হিজরত করে তথায় পৌত্তলিক, ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের সমন্বয়ে পৃথিবীর প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র ‘মদিনা সনদ’-এর ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করলেন এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-দলমতনির্বিশেষে তাঁর নেতৃত্বে মদিনাবাসী বিনা প্রতিবন্ধকতায় নিঃশঙ্ক জীবন যাপন করছিলেন এবং ইসলামের মর্মবাণী ধীরে ধীরে আরব উপদ্বীপ ছেড়ে বহির্বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছিল, তখন মক্কার কাফের সম্প্রদায় ও মদিনার ষড়যন্ত্রকারী মুনাফিকেরা চক্রান্ত করে নবী করিম (সা.) ও ইসলামকে দুনিয়ার বুক থেকে চিরতরে উৎখাত করে দেওয়ার মানসে যুদ্ধের জন্য রণপ্রস্তুতি গ্রহণ করে। একদল কুরাইশ ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে যুদ্ধাস্ত্র কিনে মদিনা হয়ে সিরিয়া থেকে মক্কায় ফিরছিল। পথে সরঞ্জামাদি হারানোর আশঙ্কায় মক্কায় বিপৎসংকেত পাঠানো হয়। তখনই কুরাইশ নেতা আবু জেহেল এক হাজার অশ্বারোহী সশস্ত্র যোদ্ধাসহ মদিনা অভিমুখে ছুটে আসেন। এ সংবাদ জানতে পেয়ে মহানবী (সা.) রোজাদার সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ সভায় বসলেন। সাহাবায়ে কিরামের সুদৃঢ় ইমানি চেতনা ও ইস্পাত কঠিন মনোবল দেখে নবী করিম (সা.) অত্যন্ত খুশি হলেন। আবু জেহেলের রণযাত্রার খবর শুনে দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসের ১২ তারিখে নিখিল বিশ্বের ত্রাণকর্তা স্বয়ং সেনাপতি রাসুলুল্লাহও (সা.) প্রাণোৎসর্গে প্রস্তুত ৬০ জন মুহাজির ও ২৫৩ জন আনসারসহ মোট ৩১৩ জন সাহাবি সঙ্গে নিয়ে শত্রু বাহিনীকে বাধা প্রদান ও দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্য মদিনা থেকে যাত্রা শুরু করে ৮০ মাইল দূরে বদর প্রান্তরে উপস্থিত হলেন। মুসলমানদের অস্ত্র মাত্র তিনটি ঘোড়া, ৭০টি উট, ছয়টি বর্ম ও আটটি তলোয়ার হলেও বিজয়লাভের প্রধান উপকরণ ছিল ইমানের বল; অস্ত্রবল ও সংখ্যা নয়। নবী করিম (সা.) মুসলমানদের জিহাদ সম্বন্ধে উপদেশ ও উৎসাহ প্রদান করলেন। যুদ্ধে জয়লাভ করা সংখ্যা, অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জামাদির আধিক্যের ওপর নির্ভর করে না; বরং মহাপরীক্ষার সময় আল্লাহর প্রতি অটল বিশ্বাস রেখে ধৈর্য অবলম্বন করা এবং অটল থাকাই জয়লাভের উপায়—এ কথাগুলো তিনি উত্তমরূপে সাহাবিদের হৃদয়ঙ্গম করিয়ে দিলেন। তিনি বদর প্রান্তরে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেছিলেন, তাঁর দোয়া কবুল করে আল্লাহ তাআলা বদর যুদ্ধে ফেরেশতা দিয়ে মুজাহিদদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাহায্য করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যখন তুমি মুমিনদের বলছিলে, “এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে তোমাদের প্রতিপালক প্রেরিত তিন সহস্র ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সহায়তা করবেন?” হ্যাঁ, নিশ্চয়ই যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং সাবধান হয়ে চলো, তবে তারা দ্রুতগতিতে তোমাদের ওপর আক্রমণ করলে আল্লাহ পাঁচ সহস্র চিহ্নিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৪-১২৫) আরবের তৎকালীন প্রথাগত যুদ্ধরীতি অনুযায়ী প্রথমে সংঘটিত মল্লযুদ্ধে মুসলিম বীরযোদ্ধাদের হাতে কাফের বাহিনী পরাজিত হয়। এরপর হক ও বাতিলের, নূর ও জুলুমাতের, ইসলাম ও কুফুরের উভয় বাহিনী পরস্পর সম্মুখীন। দুই পক্ষের তুমুল যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী বীরবিক্রমে লড়াই করে ইসলামের বিজয় কেতন ছিনিয়ে আনেন। বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘আজ যে ব্যক্তি কাফিরদের বিরুদ্ধে ধৈর্যের সঙ্গে সওয়াবের প্রত্যাশায় যুদ্ধ করবে, শহীদ হবে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন।’ (বায়হাকি) এমন আশ্বাসবাণী পেয়ে হক ও বাতিলের লড়াইয়ে স্বল্পসংখ্যক মুসলমান জানবাজি রেখে কাফেরদের মোকাবিলায় জয়লাভ করেছিলেন। বদর যুদ্ধে ৭০ জন কাফের নিহত ও ৭০ জন বন্দী হয়। অন্যদিকে মাত্র ১৪ জন মুসলিম বীর সেনা শহীদ হন; কাফেরদের বহু অস্ত্র ও রসদপত্র মুসলমানদের হস্তগত হলো। দেশের সার্বভৌমত্ব অর্জন ও স্বদেশ রক্ষায় জীবনদানকে মহানবী (সা.) শাহাদতের সম্মানজনক মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে শহীদদের মর্যাদা ঘোষণা করে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদের কখনোই মৃত মনে কোরো না, বরং তারা জীবিত ও তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে জীবিকাপ্রাপ্ত।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯) আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য ও মাতৃভূমি সুরক্ষার জন্য যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেন, তাঁদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর পথে যারা নিহত হয়, তাদের মৃত বোলো না, তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পারো না।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫৪) বদরের যুদ্ধে নিহত শহীদদের সম্পর্কে লোকেরা যখন বলাবলি করছিল যে ‘অমুকের ইন্তেকাল হয়েছে, সে পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে’ তখন তাদের মন্তব্যের জবাবে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। ১৭ রমজান বদর যুদ্ধ থেকেই আরম্ভ হয় ইসলামের মহাজয় যাত্রা। তওহিদ ও ইমান যে এক অজেয় শক্তি, এর সামনে যে দুনিয়ার সব শক্তিই মাথা নত করতে বাধ্য, এ কথা মুসলমানরা পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারলেন। সত্যাসত্যের পার্থক্য দিবা ভাস্করসম উজ্জ্বলরূপে মানব হৃদয়ে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। বস্তুত, বদর যুদ্ধ ছিল ইমানের মহাপরীক্ষা। এতে রোজাদার সাহাবিরা যেভাবে কৃতিত্বের সঙ্গে সফলকাম হতে সক্ষম হয়েছেন, জগতের ইতিহাসে তার তুলনা নেই। সাফল্যের অপূর্ব বিজয়গাথা ইসলামের ত্যাগের শিক্ষায় সত্য ও ন্যায়ের পথে মুসলমানদের যুগ যুগ ধরে প্রাণশক্তি জুগিয়ে আসছে।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
কলাপাড়ায় ফানুস উৎসব
বৌদ্ধ ধর্ম
প্রবারণা পূর্ণিমায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এ বছর সবচেয়ে বড় একটি ফানুস উড়িয়েছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনরা। এটির উচ্চতা ১৫ ফুট ও প্রস্থ ৪ ফুট। এটিতে কাগজ লেগেছে ৮০ পিস। আর ফানুসটির গায় লোখা রয়েছে ওয়েলকাম ইউএনও। উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের বেতকাটা পাড়ার রাখাইন যুবক মংতেন, ওয়েনচো, মেচো প্রায় এক মাস ধরে এ ফানসুটি তৈরি করেছেন। প্রবারণা পূর্ণিমায় দ্বিতীয় দিন সোমবার রাতের আকাশে বাহারি ডিজাইনের তৈরি এ ফানুসটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উড়িয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। এ সময় কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ বৌদ্ধকৃষ্টি কালচার সংঘ উপকূলীয় পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার প্রেসিডেন্ট নিউ নিউ খেইনসহ উপজেলা কৃষক লীগের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে অতিথি অপ্যায়ন ও রাখানই তরুনীর নৃত্য পরিবেশন করেন। তবে সব চেয়ে বড় এ ফানুস উড়ানো দেখার জন্য রাখাইন পল্লীর আশপাশ থেকে আসা উৎসুক লোকজন ভিড় করেন। রাখানই যুবক মেচো বলেন, শুধু মাত্র এই ফানুসটি তৈরি করা হয়েছে তা নায়। প্রবারণা পূর্ণিমায় উপলক্ষ্যে তাদের পাড়া থেকে ৫০টি ফানুস উড়িয়েছেন। এর মধ্যে এটাই সব চেয়ে বড় ফানুস। বাংলাদেশ বৌদ্ধকৃষ্টি কালচার সংঘ পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নিউ নিউ খেইন বলেন, ফানুস উড়ানো এখন সার্বজনীন উৎসব। এতে সকল ধর্মের লোকজন আনন্দ পায়। প্রতি বছরই প্রবারণা পূর্ণিমায় রাতের আকাশে ফানুস উড়ানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রাখাইনরা যাতে এ উৎসব ভালোভাবে পালন করতে পারে, সে জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলার ২৪টি রাখাইন মন্দিরে প্রবারণা উৎসব পালন করার জন্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
ধর্মীয় উৎসব
Positive
প্রথম আলো
ধর্ম নিয়ে কাউকে আক্রমণ করার চেয়ে জঘন্য কিছু নেই
অন্যান্য
সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটের হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে ভারতের। ২৪ অক্টোবরের সে হারের পর স্বাভাবিকভাবেই সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে গোটা ভারতীয় ক্রিকেট দলের ওপর দিয়ে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার হয়েছেন ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ শামি। পাকিস্তানের বিপক্ষে বল হাতে খুব একটা ভালো করতে পারেননি, ৩.৫ ওভারে কোনো উইকেট পাননি, রান দিয়েছেন ৪৩টি। এ কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় ভারতীয় সমর্থকদের আক্রোশের শিকার হন এই পেসার। ধর্মের কারণে তাঁকে ‘পাকিস্তানি’ বলে গালি দিয়েছে নেটিজেনরা।শামির ওপর এমন আক্রমণ মোটেও ভালোভাবে নেননি ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মের জন্য শামির নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তাদের একহাত নিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান, ‘আমার মতে একজন মানুষের পক্ষে ধর্মের জন্য কাউকে আক্রমণ করার চেয়ে জঘন্য আর কিছু সম্ভব নয়। এর মাধ্যমেই বোঝা যায়, মাঠে আমরাই ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করছি, যারা মেরুদণ্ডহীনের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব কুৎসা রটাচ্ছে, ওরা নয়। ওদের তো সামনাসামনি এসে কিছু বলার মতো সাহসই নেই।’যারা ভারতীয় ক্রিকেটে শামির অবদান ভুলে গিয়ে এভাবে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করেছে, তাদের মতো হীন লোকের পেছনে সময় নষ্ট করতে মোটেও রাজি নন ভারতীয় অধিনায়ক, ‘মোহাম্মদ শামি ভারতকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছে। সে ও বুমরা কয়েক বছর ধরেই আমাদের দলের নিয়মিত বোলার। মানুষ যদি এগুলো মনে না রাখে, সত্যি বলতে, এ ধরনের মানুষের পেছনে আমি, শামি বা ভারতীয় দলের অন্য সবাই—আমরা আমাদের জীবনের আর একটা মুহূর্তও ব্যয় করতে চাই না।’ ভারতীয় ক্রিকেট দলে সবার সঙ্গে সবার সম্পর্ক এতই ভালো যে এ ধরনের নোংরা কথাবার্তা তাঁদের ওপর কোনো প্রভাবই ফেলে না, শামির আক্রমণকারীদের জানিয়ে রাখেন কোহলি, ‘আমরা সম্পূর্ণভাবে তার (শামির) পাশে আছি। আমাদের ২০০ ভাগ সমর্থন পাচ্ছে সে। যারা আক্রমণ করতে চায়, তারা চাইলে আরও বেশি মানুষ নিয়ে আমাদের আক্রমণ করতে পারে। কিন্তু তাতেও আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ ও বন্ধুত্বের ওপর কোনো প্রভাবই পড়বে না। দলের অধিনায়ক হিসেবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমরা দলের ভেতর এমন একটি সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছি, যেখানে এসব কথা দলের পরিবেশের মধ্যে ঢুকতেই পারে না, এমনকি ০.০০০১ ভাগও না।’কোহলির মতে ধর্ম নিয়ে কখনোই বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়, ‘ধর্ম খুবই পবিত্র ও ব্যক্তিগত একটা বিষয়; সেভাবেই থাকা উচিত।’বিরাট কোহলি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাউকে নিগ্রহ করাকে জঘন্যতম কাজ হিসেবে মনে করেন, ‘তারা নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যকে হয়রানি করে এবং তাদের নিয়ে হাসাহাসি করে। বর্তমানে এটি একটি বিনোদনের খোরাক হয়ে গিয়েছে, যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমার কাছে এদের সবচেয়ে নিম্নশ্রেণির মানুষ বলে মনে হয়। সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একজন মানুষকে যে কী পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, সে সম্পর্কে ওই লোকদের কোনো ধারণাই নেই।’মানুষের মধ্যে সহানুভূতির অভাব আজকাল নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কোহলি, ‘মানুষ ব্যক্তিগত হতাশা থেকে এবং নিজেদের মধ্যে সহানুভূতি বলে কিছু না থাকার কারণেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যের নামে এ ধরনের জঘন্য কাজ করে।’
ধর্মীয় শিক্ষা
Negative
বাংলাদেশ প্রতিদিন
কোরআন তিলাওয়াতের আদব
ইসলাম ধর্ম
কোরআনুল কারিম মানব জাতির হেদায়েতের মাধ্যম। এর মাধ্যমে মুক্তি অনুসন্ধান করা হয়। এতে রয়েছে আরোগ্য। এর দ্বারা শারীরিক ও রুহানি রোগের মুক্তি মিলে। তার অসাধারণত্ব, মোজেজার শেষ নেই। শেষ নেই এর উপকারিতার। এটি এমন এক গ্রন্থ যা পূর্ববর্তী-পরবর্তী, জিন-মানুষ সবাইকে পথ দেখায়। কোরআন উপেক্ষা করলে হেদায়েত অসম্ভব। যারা তার ওপর ভরসা রাখবে তারাই হবে কামিয়াব। যারা সে অনুসারে আমল করবে তারাই হবে পার্থিব ও আখেরাতের সৌভাগ্যে সিক্ত। এতসব বৈশিষ্ট্যের কারণ এ কোরআন সংরক্ষিত। সংরক্ষিত হওয়ার রয়েছে অনেক কারণ। তন্মধ্যে অধিক পরিমাণ তিলাওয়াত হওয়া অন্যতম। অন্যসব গ্রন্থ থেকে এটি আলাদা ও বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এর বরকত অর্জনে আদবের সঙ্গে তিলাওয়াত কর্তব্য। নিচে কোরআন তিলাওয়াতের কয়েকটি আদব উল্লেখ করা হলো। ১. অজু সহকারে তিলাওয়াত করা। সম্মানের সঙ্গে তিলাওয়াত করা। বসে, শুয়ে, দাঁড়িয়ে যে অবস্থায়ই তিলাওয়াত করা হোক সওয়াব হবে। তবে কোরআনের সম্মানটা ধরে রাখা চাই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বুদ্ধিমান তারা, যারা আল্লাহকে (সর্বাবস্থায়) স্মরণ করে, দাঁড়িয়ে, বসে এবং শায়িত অবস্থায়।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১। অবশ্য উত্তম হলো অজু অবস্থায় বসে কিবলামুখী হয়ে তিলাওয়াত করা। আসন করে বসা কিংবা টেক লাগিয়ে বসা থেকে বিরত থাকা। ২. তিন দিনের কমে খতম না করা। এর চেয়ে কম সময়ে খতম করলে তিলাওয়াতের হক আদায় হয় না। নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে তিন দিনের কমে কোরআন খতম করল সে কোরআন বোঝেনি।’ আবু দাউদ : ১৩৯৪। তবে সাত দিনে কোরআন খতম একটি মধ্যম পন্থা। নবী (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-কে বলেন, সাত দিনে কোরআন খতম কর, এর চেয়ে কম সময়ে করো না।’ মুসলিম : ১১৫৯। তিলাওয়াতকারী আলেম হলে এবং কোরআনের অর্থ ও মর্ম সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা উদ্দেশ্য ভালো হলে তার জন্য এক মাসে এক খতম করাও যথেষ্ট। ৩. কোরআন তারতিল তথা খুব ভালোভাবে ধীরে ধীরে পড়া মুস্তাহাব। কোরআনের উদ্দেশ্যই হলো আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা। ধীরে ধীরে পড়লে চিন্তা-ভাবনা করতে সহজ হয়। উম্মে সালামা (রা.) নবী (সা.)-এর তিলাওয়াত সম্পর্কে বলেছেন, ‘নবী (সা.) একেকটি অক্ষর খুব স্পষ্ট করে পড়তেন।’ নাসায়ি : ১০২২। তা ছাড়া ধীরে ধীরে পড়লে অন্তরে এর প্রভাব পড়ে অনেক বেশি। ৪. তিলাওয়াতের মাঝে কোরআনের সতর্কবাণী, কিয়ামতের অবস্থা এবং পূর্ববর্তী জাতিসমূহের ধ্বংসের বিবরণ সম্পর্কিত আয়াতে চিন্তা-ভাবনা করা এবং ক্রন্দন করা মুস্তাহাব। নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘কোরআন পড়, কাঁদ। কাঁদতে না পারলে কাঁদার ভান কর।’ ইবনে মাজাহ : ১৩৩৭। আশা-আকাক্সক্ষার আয়াত অতিক্রম করলে সেগুলো প্রার্থনা করা এবং ভয়ভীতির আয়াত পড়ে গেলে তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা। ৫. আয়াতের হক আদায় করা। সিজদার আয়াত পড়লে কিংবা কারও থেকে শুনলে সিজদা করে নেওয়া, তবে শর্ত হলো অজু অবস্থায় থাকতে হবে। মুখস্থ তিলাওয়াত করলে সে অবস্থায় অজু না থাকলে অজু করে পরে সিজদা করে নেওয়া। ৬. শব্দ করে তিলাওয়াত করা। এতটুকু শব্দ অবশ্যই হওয়া চাই যেন নিজ কানে শোনা যায়। জোরে তিলাওয়াত অন্তর জাগ্রত করে। চিন্তা-ভাবনা শানিত করে। ঘুম দূর করে এবং পড়ায়ও আসে তৃপ্তি। তবে নিজের মধ্যে লোক দেখানোর আশঙ্কা হলে আস্তে পড়াই ভালো।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
প্রথম আলো
তারাবিহতে আজ: ২৬ জীবন-মৃত্যু সৃষ্টির কারণ
ইসলাম ধর্ম
আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের সুরা মুলক, সুরা কলম, সুরা হাক্কাহ, সুরা মাআরিজ, সুরা নুহ, সুরা জিন, সুরা মুজ্জাম্মিল, সুরা মুদ্দাসসির, সুরা কিয়ামাহ, সুরা দাহর ও সুরা মুরসালাত তিলাওয়াত করা হবে। ২৯তম পারা পড়া হবে। এই অংশে আল্লাহর ক্ষমতা, তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ, কিয়ামত, জান্নাত, জাহান্নাম, নবীজি (সা.)-এর গুণাগুণ, অবিশ্বাসীদের ভুল চিন্তা, অকৃতজ্ঞতার পরিণাম, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের পরিণতি, আগের জাতির কাহিনি, কিয়ামতের দিন আমলনামা প্রদান, মানুষের স্বভাব, নুহ (আ.)-এর গল্প, জিনদের আলোচনা, নবীজীবনী, তাহাজ্জুদের নামাজ, আল্লাহর অনুগ্রহ, নবীজি (সা.)-এর দাওয়াত, উত্তম উপদেশ গ্রহণ, মৃত্যু, জান্নাতের নেয়ামত ও পুনরুত্থান ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে। সুরা মুলকের ফজিলত মক্কায় অবতীর্ণ সুরা মুলকের আয়াত সংখ্যা ৩০। রাসুল (সা.) প্রতি রাতে এ সুরা তিলাওয়াত করতেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরআনের মধ্যে ত্রিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারও পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এ সুরাটি হলো—তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১,৪০০) রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে প্রতি রাতে সুরা মুলক পাঠ করবে, আল্লাহ এ সুরাকে তার কবরের আজাবের প্রতিরোধক বানাবেন।’ (সহিহুল জামে, হাদিস: ৩৬৪৩) আল্লাহ মানুষের জীবন ও দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষার জন্য। দুনিয়ার এ পরীক্ষার হলে যে সঠিক পথে জীবন যাপন করে আল্লাহর পরীক্ষায় পাস করবে, সে থাকবে জান্নাতে। ভুল পথে চললে কিংবা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে থাকতে হবে জাহান্নামে। আল্লাহ বলেন, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য যে—কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম। তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২) যাদের অনুসরণ করা যাবে না ৫২ আয়াতবিশিষ্ট সুরা কলম মক্কায় অবতীর্ণ। সুরার শুরুতে আল্লাহ কলমের কসম করেছেন, তাই এর নাম সুরা কলম রাখা হয়েছে। এ সুরার ১০ থেকে ১৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-কে ৯ ধরনের মানুষের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। যেমন যে অযথা কসম করে, নিচু স্বভাবের লোক, পেছনে দুর্নাম করে, পরচর্চাকারী, ভালো কাজে বাধা দেয়, সীমা লঙ্ঘনকারী, পাপী, পিতৃপরিচয়হীন কঠোর স্বভাবের মানুষ ও কোরআন অস্বীকারকারী। এক বাগানওয়ালার গল্প ইয়েমেনের সানা থেকে ৬ মাইল দূরে একটি বিশাল বাগান ছিল। এ কাহিনি আরবদের মুখে মুখে ফিরত। বাগানের মালিক এর থেকে উৎপন্ন ফলমূল গরিব-অসহায়দের দিত। তার মৃত্যুর পর সন্তানেরা গরিবদের বঞ্চিত করল। সম্পূর্ণ ফসল নিজেদের ঘরে তুলত। খুব ভোরে তারা ফসল তুলত, যেন গরিবরা তাদের নাগাল না পায়। আল্লাহর এ কাজ পছন্দ হয়নি। আল্লাহ বাগানে বিপর্যয় দিলেন। বাগান ধ্বংস হয়ে গেল একদিন। তারা ভোরে ফসল তুলতে গিয়ে কৃষ্ণবর্ণ এক বাগান পেল। তারা ভুল বুঝতে পারল। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইল। আল্লাহ ক্ষমা করে দিলেন। সুরা কলমের ১৭ থেকে ৩৩ নম্বর আয়াতে এ গল্পের বর্ণনা রয়েছে। সুরা হাক্কার বিষয়বস্তু মক্কায় অবতীর্ণ সুরা হাক্কার আয়াতের সংখ্যা ৫২। হাক্কা কিয়ামতের একটি নাম। অর্থ বাস্তবায়নাধীন। কিয়ামত একদিন বাস্তবায়ন হবেই, তাই এর নাম হাক্কা। সুরায় কিয়ামতের ভয়াবহতা, পূর্ববর্তী জাতির পরিণতি, কিয়ামতপূর্ব অবস্থা, নেককারদের ডান হাতে ও হতভাগাদের বাঁ হাতে আমলনামা প্রদান, জাহান্নামে কাফেরদের টেনেহিঁচড়ে নেওয়া ইত্যাদির বয়ান আছে। আল্লাহর কাছে ভালো যারা ৪৪ আয়াতবিশিষ্ট সুরা মাআরিজ মক্কায় নাজিল হয়েছে। মাআরিজ অর্থ উঁচু, সিঁড়ি। আল্লাহ নবীকে উঁচু মর্যাদা দিয়েছেন; এই সুরায় এমন আলোচনা থাকায় এ নাম রাখা হয়েছে। এ সুরার ২২ থেকে ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহর পছন্দনীয় স্বতন্ত্র মানুষের বেশ কিছু গুণের কথা এসেছে। গুণগুলো হলো ১. যারা নামাজ আদায় করে, ২. নামাজের প্রতি যত্নবান, ৩. যারা আত্মীয় ও অসহায়দের হক বুঝিয়ে দেয়, ৪. যারা প্রতিফল দিবসকে বিশ্বাস করে, ৫. আল্লাহর ভয়ে কম্পিত যারা, ৬. যারা বিশেষ অঙ্গকে সংযত রাখে। যা আছে সুরা নুহে ২৮ আয়াতবিশিষ্ট সুরা নুহ মক্কায় নাজিল হয়েছে। নুহ (আ.)-এর দাওয়াত, তাঁর জাতির অবাধ্যতা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার ফজিলত ও উপকারিতা, আল্লাহর নেয়ামত, মূর্তির প্রতি কাফেরদের প্রীতি, তাদের ধ্বংস এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমার বর্ণনা রয়েছে এ সুরায়। বিশ্বাসী জিনদের কাহিনি সুরা জিনে ২৮ আয়াতবিশিষ্ট সুরা জিন মক্কায় অবতীর্ণ। সুরার ১ থেকে ১৫ নম্বর আয়াতে নবীজির কণ্ঠে জিনদের কোরআন শোনার বয়ান আছে, তাই এর নাম সুরা জিন রাখা হয়েছে। রাসুল (সা.) তখন কয়েকজন সাহাবিকে নিয়ে উকাজের বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে নাখলা নামক স্থানে ফজর নামাজের সময় হয়। তিনি নামাজে কোরআন তিলাওয়াত করছিলেন। সে সময় একদল জিন ওই স্থান অতিক্রম করছিল। কোরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ শুনে তারা থেমে যায়। মধুর বাণী শুনতে থাকে। তারা ইসলাম গ্রহণ করে। জাতির কাছে ফিরে গিয়ে ঘটনা শোনাল। তাদের ইসলামের দাওয়াত দিল। তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব মক্কায় অবতীর্ণ সুরা মুজ্জাম্মিলের আয়াতসংখ্যা ২০। এ সুরার শুরুতে আল্লাহ-তাআলা রাসুল (সা.)-কে রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার আদেশ দেন। কারণ আল্লাহ তখন তাঁকে নবুয়তের জন্য প্রস্তুত করতে চাচ্ছেন। আত্মসংযমের জন্য বেশি কার্যকর ও কোরআন তিলাওয়াতের সেরা সময় তাহাজ্জুদ। মধ্যরাতের পর শয্যাত্যাগ করাকে তাহাজ্জুদ বলা হয়। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় হলো রাত ২টার পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত। সুরা মুদ্দাসসির, কিয়ামাহ, দাহর ও মুরসালাতে দ্বীনের দাওয়াত, কাফেরদের পরিণাম, কিয়ামতের দিন জান্নাতি ও জাহান্নামিদের অবস্থা, নসিহত, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, শাস্তি, মৃত্যুর সময় মানুষের অবস্থা ও কিয়ামতের পর পুনরুত্থান, মানুষ সৃষ্টির কাহিনি, মুমিনদের গুণ, জান্নাত, আল্লাহর নেয়ামত, আল্লাহর পথে আহ্বানকারীর গুণাবলি, কিয়ামত, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্টি ইত্যাদির আলোচনা রয়েছে।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
যেসব কাজে রোজা মাকরুহ হয়
ইসলাম ধর্ম
রমজান মাসে রোজা রাখা মুসলমানের জন্য ফরজ। রোজাদার ব্যক্তি সুবহে সাদিকের সময় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকে। এ ছাড়া যাবতীয় পাপ কাজ পরিহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রোজাদারকে। ইসলামী আইনজ্ঞরা এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করেছেন, যা রোজাদারের রোজা মাকরুহ করে ফেলে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো— ১. গড়গড়াসহ কুলি করা : রোজা থাকা অবস্থায় গড়গড়াসহ কুলি করা এবং নাকের গভীরে পানি পৌঁছান মাকরুহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তুমি ভালোভাবে অজু করো এবং নাকের গভীরে পানি পৌঁছাও, যদি না তুমি রোজা থাকো। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৮৭) ২. বিনা প্রয়োজনে খাবারের স্বাদ নেওয়া : খাবারের স্বাদ গ্রহণ করা খাবার খাওয়ার সদৃশ। তাই বিনা প্রয়োজনে কেউ রোজা রেখে খাবারের স্বাদ নেবে না। কিন্তু যদি বিশেষ প্রয়োজন হয়—যেমন অসুস্থ ব্যক্তি বা শিশুর জন্য খাবার তৈরি করা, তবে তা মাকরুহ হবে না। ৩. রোজা অবস্থায় মুখে থুথু জমিয়ে তা গিলে ফেলা মাকরুহ। ৪. রোজা অবস্থায় পেস্ট বা এমন ঝাঁজযুক্ত মাজন দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা মাকরুহ। তবে মিসওয়াক করা জায়েজ। ৫. দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা থাকলে শিঙা লাগানো মাকরুহ। ৬. কামাসক্ত হওয়ার ভয় থাকলে স্ত্রীকে স্পর্শ করা, চুম্বন করা বা অনুরূপ কোনো স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণ করা মাকরুহ। ৭. সন্দেহযুক্ত সময় পর্যন্ত বিলম্ব করে সাহরি খাওয়া মাকরুহ। ৮. সাহরি ও ইফতার ছাড়া ধারাবাহিকভাবে একাধিক দিনের রোজা রাখা মাকরুহ। ৯. বেশি কষ্ট হলে মুসাফিরের জন্য রোজা রাখা মাকরুহ। ১০. রোজা অবস্থায় মুখে পানি নিয়ে বারবার কুলি করা, মাথায় পানি ঢালা এবং ভেজা কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখা মাকরুহ।
ধর্মীয় শিক্ষা
Negative
ভোরের পাতা
দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামিক কনফারেন্সের উদ্বোধন করলেন বসুন্ধরা চেয়ারম্যান
ইসলাম ধর্ম
বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে আয়োজিত দেশের সর্ববৃহৎ কুরআনের নূর প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফলাফলের ভিত্তিতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও ইসলামিক কনফারেন্সের উদ্বোধন করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। শনিবার রাত পৌনে ৮টায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) হল-৪ (নবরাত্রি)-এ জমকালো এই আয়োজনের উদ্বোধন হয়। এর আগে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর মঞ্চে উপবিষ্ট হন। তারা অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের সময় হলজুড়ে তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। এ সময় আগত অতিথিদের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। আগত অতিথি ও পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে দেখা যায় আনন্দ ও উচ্ছ্বাস। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে একে একে মঞ্চে ওঠেন দেশি-বিদেশি বিশেষ অতিথিবৃন্দ। এর আগে মঞ্চ কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা ইসলামী গান পরিবেশন করে মাতিয়ে তোলেন অনুষ্ঠানস্থল। আল্লাহ ও রাসুলের গুণকীর্তনে তৈরি করা ইসলামী সংগীত সকলকে মুখরিত করে তোলে। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সভাপতিত্বে দেশে-বিদেশি অতিথিরা বক্তব্য রাখছেন। ইসলামিক কনফারেন্সের পর প্রতিযোগিতায় প্রথম বিজয়ী পাবে নগদ ১০ লাখ টাকা ও সম্মাননা। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিজয়ী পাবে সাত লাখ টাকা ও সম্মাননা। তৃতীয় বিজয়ী পাবে পাঁচ লাখ টাকা ও সম্মাননা। চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কার হিসেবে দুজন দুই লাখ টাকা ও সম্মাননা পাবে। এমনকি সেরা আটে থাকা প্রতিযোগীরাও পাবে এক লাখ টাকা আর্থিক পুরস্কার ও সম্মাননা। এ ছাড়া বিজয়ীরা পাবে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে পবিত্র ওমরাহ পালনের সুযোগ।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
Dhaka Tribune
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী: আগামী বছর হজে ৬৫ বছরের বয়সসীমা না-ও থাকতে পারে
ইসলাম ধর্ম
ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান জানিয়েছেন, আগামী বছর থেকে হজে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা না-ও থাকতে পারে। সেই সঙ্গে আগামী বছর পূর্ণ পরিসরে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে রিলিজিয়াস রিপোর্টার্স ফোরামের (আরআরএফ) নবনির্বাচিত কমিটির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। মো. ফরিদুল হক খান বলেন, আমরা আশা করছি এবারের হজ পূর্ণাঙ্গভাবে হবে এবং কোটা অনুযায়ী আমরা পূর্ণ অনুপাতে হজযাত্রীদের পাবো। সৌদি সরকারের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে এবং ৬৫ বছরের বয়সসীমার বিষয়টি পরের বার না-ও থাকতে পারে। এর আগে, কোভিড টিকার সবগুলো ডোজ নিয়েছেন এমন ৬৫ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের হজ করার অনুমতি দিয়েছিল সৌদি সরকার। গতবার, প্রায় ৬০,২৫৬ জন বাংলাদেশি হজ পালন করেছিলেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
বাংলাদেশ প্রতিদিন
রোজার কাফফারা কী ও কিভাবে
ইসলাম ধর্ম
রোজার কাজা হলো ভেঙে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা রোজার প্রতিবিধান হিসেবে শুধু রোজা আদায় করা। এক রোজার বিপরীতে এক রোজা রাখা। অতিরিক্ত কিছু আদায় না করা। অন্যদিকে রোজার কাফফারা হলো প্রতিবিধান হিসেবে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করা। যেসব কারণে রোজার কাফফারা ওয়াজিব হয়, তা হলো— ১. ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী সম্ভোগ/নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়া। ২. ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কোনো জিনিস খাওয়া বা পান করা, যা সাধারণত খাওয়া বা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। (আলমগিরি, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ২০৫) ৩. যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গিবত করার পর পানাহার করে। তাহলে তার ওপর কাজা-কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব। (ফাতহুল কাদির খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৮০) ৪. রোজাদার যদি সমকামিতায় লিপ্ত হয়, তাহলে তার ওপর কাজা-কাফফারা দুটিই ওয়াজিব। (আল-ওয়াল ওয়ালিজিয়্যাহ খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২২৩) ৫. পুরুষ যদি নারীর সঙ্গে জোরজবরদস্তি করে সম্ভোগ করে, তাহলে নারীর ওপর শুধু কাজা ওয়াজিব, কাফফারা নয়। আর পুরুষের ওপর কাজা-কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব। (আল-ওয়াল ওয়ালিজিয়্যাহ খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২২৪) রোজার কাফফারা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল, এই হতভাগা স্ত্রী সহবাস করেছে রমজানে। তিনি বলেন, তুমি কি একটি গোলাম আজাদ করতে পারবে? লোকটি বলল, না। তিনি বলেন, তুমি কি ক্রমাগত দুই মাস সিয়াম পালন করতে পারবে? লোকটি বলল, না। তিনি বলেন, তুমি কি ৬০ জন মিসকিন খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না। এমতাবস্থায় নবী (সা.)-এর কাছে এক আরাক অর্থাৎ এক ঝুড়ি খেজুর এলো। নবী (সা.) বলেন, এগুলো তোমার তরফ থেকে লোকদের আহার করাও। লোকটি বলল, আমার চেয়েও অধিক অভাবগ্রস্ত কে? অথচ মদিনার উভয় লাবার অর্থাৎ হাররার মধ্যবর্তী স্থলে আমার পরিবারের চেয়ে বেশি অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। নবী (সা.) বলেন, তা হলে তুমি স্বীয় পরিবারকেই খাওয়াও। (বুখারি, হাদিস : ১৯৩৭) ইসলামী শরিয়তে রোজা ভঙ্গ করার প্রতিবিধান রাখলেও তার শত ভাগ ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি (শরিয়ত অনুমোদিত) কোনো কারণ ছাড়া বা রোগ ছাড়া রমজান মাসের একটি রোজা ভেঙে ফেলে, তার পুরো জীবনের রোজা দিয়েও এর ক্ষতিপূরণ হবে না। যদিও সে জীবনভর রোজা রাখে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭২৩) রোজার কাফফারা হলো রোজা ভঙ্গকারী দাস মুক্ত করতে অক্ষম হলে দুই মাস লাগাতার রোজা রাখবে। আর দুই মাস রোজা রাখতে ব্যর্থ হলে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা পেট ভরে খানা খাওয়াবে অথবা ৬০ জন মিসকিনকে সদকায়ে ফিতর পরিমাণ গম, আটা, চাল ইত্যাদি অথবা সমপরিমাণ নগদ টাকা দেবে। একজন মিসকিনকে ৬০ দিন দুই বেলা খাওয়ালেও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। (আলমগিরি ১/৩০৫, রদ্দুল মুহতার ৩/৩৯০)
ধর্মীয় শিক্ষা
Neutral
দৈনিক ইনকিলাব
আল ফাজারী: আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের পথিকৃৎ মুসলিম বিজ্ঞানী
ইসলাম ধর্ম
আল ফাজারী'র পুরা নাম মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহীম ইবনে হাবীব ইবনে সোলায়মান ইবনে সামরা ইবনে জুনদাব আল ফাজারী। তিনি ছিলেন একজন মুসলিম দার্শনিক, গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ। তার পিতা ইব্রাহীম আল ফাজারীও একজন জ্যোতির্বিদ এবং গণিতবিদ ছিলেন। তিনি কোন অঞ্চলের মানুষ ছিলেন সেটা পরিস্কারভাবে জানা যায় না। তবে কোন কোন ঐতিহাসিক তাকে আরব হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আবার কোন কোন ঐতিহাসিক তাকে পারসীয়ান হিসাবে উল্লেখ করেছেন। জানা যায়, আল ফাজারী ৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন এবং ৮০৬ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। আল-ফাজারী আরবী ও ফারসী ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি বহু বৈজ্ঞানিক গ্রন্থের অনুবাদক ছিলেন। তিনি অষ্টম শতাব্দীর ইসলামী স্বর্ণযুগের মানুষ ছিলেন। ইসলামী বিশ্বের এবং আধুনিক বিশ্বের প্রথম অ্যাস্ট্রোল্যাব নির্মাণের কৃতিত্বও তাঁর। অ্যাস্ট্রোল্যাব হলো একটি বিস্তৃত নত-পরিমাপক এবং একটি অ্যানালগ ক্যালকুলেটর। যা কিনা জ্যোতির্বিদ্যার বিভিন্ন ধরনের কাজ এবং সমস্যা সমাধানে সক্ষম একটি যন্ত্র। ঐতিহাসিকভাবে, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং নাবিকরা পথে কিংবা সমুদ্রে চলার সময় তারকা দেখে দিক নির্ধারণর সুবিধায় এটি ব্যবহার করত বলে জানা যায়। যা ইসলামিক স্বর্ণযুগ, ইউরোপীয় মধ্যযুগ, শাস্ত্রীয় প্রাচীনত্ব এবং ইউরোপীয়দের আধুনিক জ্যোতির্বিদদের টেলিস্কোপ আবিষ্কারের যুগের সময় ব্যবহৃত হয়েছিল। তাকে আধুনিক জ্যােতির্বিজ্ঞানের পথিকৃৎ বলা হয়। ইয়াকুব ইবনে তারিক ও তার পিতার সাথে তিনি ৮ম শতাব্দীতে ভারতীয় গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী "ব্রহ্মগুপ্ত" কর্তৃক সংস্কৃত ভাষায় লিখিত ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক পুস্তক "ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত" থেকে আজ-জাজিল আল সিনা-আল-আরব বা "সিন্দহিন্দ" নামে আরবীতে অনুবাদ করতে সহায়তা করেন। ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত হলো ব্রহ্মার সংশোধিত নীতিমালা বা সিদ্ধান্ত। ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মগুপ্তের লেখা এবং বিশেষত সেই সময়ের তুলনায় একটি বিশাল আকৃতির বই। যা কোন গাণিতিক চিহ্নবিহীন পদ্যে রচিত গ্রন্থ। গাণিতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর লিখিত এই পুস্তকটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাদের মধ্যে রয়েছে শূন্য নিয়ে কার্যক্রমের তথা শূন্যের ভূমিকার একটি উত্তম ধারণা, ধনাত্মক বা ঋণাত্মক যেকোন সংখ্যা প্রয়োগের কিছু নিয়ম, বর্গমূল নির্ণয়ের একটি নিয়ম, ধারার সমষ্টি নির্ণয়ের পদ্ধতি উপরন্তু ব্রহ্মগুপ্তের অভেদ ও ব্রহ্মগুপ্তের উপপাদ্য এবং রৈখিক ও দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধান। দ্বিঘাত সমীকরণ হচ্ছে প্রাথমিক বীজগাণিতে, চতুর্ভুজ সমমানের সমাধান। আল ফাজারী'র এই অনুবাদটিই ছিল সেই মাধ্যম, যার দরুন হিন্দু সংখ্যা পদ্ধতি (অর্থাৎ আধুনিক সংখ্যা চিহ্নিতকরণ) ভারত থেকে মুসলিম বিশ্বে স্থানান্তরিত হয়েছিল। যার ফলে আরবের সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে নতুন সেতুবন্ধনের দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
দৈনিক ইনকিলাব
সচ্চরিত্রবান ব্যক্তির হাতে জান্নাতের চাবি
ইসলাম ধর্ম
চরিত্র মানুষের আচারণগত একটি দিক। সচ্চরিত্র মানুষের অর্জিত অমূল্য সম্পদ। সচ্চরিত্র অর্জনের কোনো বিনিময় নেই। এটি মানুষের পরিপূর্ণ ব্যাবহারিকগুণ। সচ্চরিত্র অর্জনের দুটি ধারা। এক জ¦ীনা ব্যভিচার মুক্ত থাকা। ব্যভিচারের অপরাধ চর্মের সংস্পর্শেই ঘটে থাকে। সুতরাং শারীর থেকে যৌনাঙ্গ বিচ্ছিন করাও যেমন সম্ভবপরনয় তেমনি জীবন থেকে দুশ্চরিত্রের ছাপ মুছে ফেলাও সম্ভাব হয় না। আজীবন এর মর্মন্তুত গ্লানি বয়ে বেড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না।পৃথিবীতে অনেক মূল্যবান বিষয় আছে যা অর্থ এবং কোনো কিছুর বিনিময়ে লাভ করা যায়। কিন্তু সচ্চরিত্র কখনো বিনিময় যোগ্য নয়। এটা ব্যক্তির শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যাবহারিক ও আচরণগত সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ। দুই, সচ্চরিত্র অর্জনের প্রথম ধারার সাথে দ্বিতীয় ধারা সাপেক্ষ। সত্যবাদিতা, সততা সৎসাহস, কর্তব্য নিষ্ঠা, দায়বদ্ধতা,বুদ্ধিমত্তা প্রভৃতি গুণাবলীর অধিকারী হওয়া। এ সব গুণাগুণ প্রথম ধারার সাথে সংশ্লিষ্ঠ। প্রথম ধারার ব্যভিচার মুক্ত ব্যক্তিই এ সব মানবিক গুণগুলো অর্জন করতে সক্ষম হয়। সকল পাপের মূল হচ্ছে ব্যক্তির মধ্যে মিথ্যার বাসনা। গাছ মাটির উপরে স্থির ভাবে বিরাজমান থাকার মূলে রয়েছে মাটির মধ্যে শিকরের সাথে তার গভীর বন্ধন। ব্যক্তির অপরাধের মূলেও থাকে মিথ্যার সাথে নীতির বন্ধন। মিথ্যাশ্রয়ী ব্যক্তির বিচারিক চেতনা মিথ্যার সূত্রে সত্যকে পরাস্থ করে মিথ্যাকে সত্য বলে তুলে ধরা। ব্যক্তি যখন সত্যে বিশ^াসী হয়, সততা তখন অতি সহজেই তার চিন্তা চেতনায় বর্হির্প্রকাশ পায়। বিবেক তাকে অসৎকাজে বাধা প্রদান করে থাকে। সত্যনিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তি তখন সততার আশ্রয় নেন। জ¦ীনা-ব্যভিচারের মত কঠিন পাপ করতে সে ভয় পায়। ব্যভিচারের পরিনাম, আল্লাহ প্রদত্ত দুনিয়া ও পরকালিন কঠিন শাস্তি তার মনকে অপকর্ম হতে বিরত থাকতে উজ্জিবীত করে। সচ্চরিত্র মানুষের মহামূল্যবান সম্পদ। এ সম্পদ আজীবন কঠিন সাধানার মাধ্যেমে অর্জন করতে হয়। এ সাধনার মূলে ব্যক্তির পঞ্চইন্দ্রিয়ের ভোগমোহকে বর্জন করে বৃহত্তর স্বার্থ জান্নাত লাভের আশায় আল্লাহতায়ালর প্রতি ভয় ও ভরসা রেখে জীবন চলতে হয়। রাসুলে করিম সা. উত্তম চরিত্রের মর্যাদা তাহাজ্জুদ গোজার ও অবিরাম সিয়াম সাধনা কারীর চেয়েও অধিক বলেছেন। জীবনভর রোজা রাখা আর রাতের পর রাত তাহজ্জুদ পরা বড় কঠিন সাধনা। আল্লাহতায়লা সচ্চরিত্রের পুরষ্কার ঘোষনা করে বলেছেন “ বান্দা তোমর চরিত্রকে সুন্দর কর আর জান্নাতুল ফির দাউসের চাবি হাতে নাও। আল্লাহ রব্বুল আলামীনের এ অঙ্গিকার, নামাজ রোজা, পর্দা, তেলাওয়াত, জিকির ও দানের বিনিময় নয়, সচ্চরিত্রের বিনিময়ে। সচ্চরিত্রবান বান্দার এবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য। হাদিসে আছে“ উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী মুমিনের সারাদিন রোজা ওে সারারাত নামাজের সওয়ার প্রদান করা হয়”। অর্থ হলো, যে বান্দা মুমিন, সে আল্লাহর দেয়া ফরজ বিধানগুলো যথাযথ পালন করে, খুব বেশী নফল রোজা আদায় করে না কিন্তু যে সচ্চরিত্রবান। তবে মহান আল্লাহ তায়লা তার এ সচ্চরিত্রের দরুন ঐ সবওলি আল্লাহদের সমপরিমাণ সওয়াব তাকে দান করবেন, যারা সারাদিন রোজা ও সারাদিন নফল নামাজ পালন করে। সচ্চরিত্র অর্জন যেমন কঠিন তেমনি সহজ, শুধুমাত্র আল্লহ তায়লার ফরমান পালনার্থে আল্লাহ প্রদত্ত কঠিন শাস্তি দোষককে ভয় করা এবং আল্লাহ তায়লা ঘোষিত অনন্ত শান্তি জান্নাতে বিশ^াসী থাকা। ইংরেজী প্রবাদে আছে, ঈযধৎধপঃবৎ রং ঃযব ঈৎড়হি ড়ভ সধহ. অর্থাৎ চরিত্র হলো মানুষের মূকুট স্বরূপ। মূকুট শরীরের শোভা, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। শরীরে যত মূল্যবান পোষাক থাক না কেন, উর্ধ্ব অঙ্গে ব্যবহৃত মূকুটের সৌন্দর্য ব্যক্তির শরীরে শোভাও মর্যাদা বৃদ্ধি করে। মানুষের চারিত্রকগুণ বহুমূখী। তার মধ্যে নৈতিক চরিত্রই ব্যক্তির চরিত্রের পরিচয়ে অগ্রে স্থান পায়। নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিই অন্যান্য চারিত্রিক গুণাবলীর ধারক বাহক হয়ে থাকে। সচ্চরিত্রবান ব্যক্তি সত্যনিষ্ঠ, ন্যায় পরায়ন, বিনয়ী ও আত্মসংযমী হয়। সে অন্যায় কে প্রশ্রয় দেয় না, ক্রোধে আত্মহারা হয় না এবং নিজগর্বে গর্বিত হয় না,কারও সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করে না। চরিত্র গঠনের প্রথমও প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে পরিবার। শিশুর মানসিক শিক্ষার প্রকৃষ্ট সময় এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত। শিশু এ সময়ে শুধু অনুকরণমূলক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে বড়দের নিকট হতে। সৎ ও সততার প্রশিক্ষণ শিশুকে দিতে হয় কৈশর পর্যন্ত। ধর্মীয় বিশ^াস, সত্যবাদিতা,বিনয় ন¤্রতা, দয়া, ক্ষমা, নিয়মানুবর্তিতা অপচয়, পূণ্য প্রভৃতি শিশুর অন্তরে দৃঢ় বিশ^াস জন্মানো পিতামাতার দায়িত্ব। নৈতিকতা সমৃদ্ধ বই পত্র মহাপুরুষদের জীবনী পড়ার অভ্যস্ত করা একান্ত কর্তব্য। এসময়ে শিশুকে সত্য- মিথ্যা, পাপ- পূণ্য,ন্যায়- অন্যায়, হালাল- হারাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়া অত্যন্ত জরুরী বিষয়। শিশুর কমল মনে এসব বিষয়গুলো অতি সহজেই প্রভাব পরে। মিথ্যা বললে পাপ হয় পাপের ফলে শাস্তি পেতে হয় এসব নীতি নির্ধারক বিষয়গুলো শিশু সহজেই বিশ^াস করে,কারণ শিক্ষক তার পিতামাতা। পিতামাতাই শিশুর একমাত্র বিশ^স্ত ব্যক্তি কারণ জন্মগত সম্পর্ক ও সাহচর্য। সুতরাং আদর্শবান পিতা মাতার সন্তানই আদর্শবান হয়। আদর্শবান সন্তানের দ্বারাই আদর্শ পরিবার ও সমাজ গঠিত হয়। আদর্শ সমাজের মাধ্যমে আদর্শ জাতি গঠন করা যায়। পরিবেশ মানুষের জীবনে গভীর ভাবে রেখাপাত করে। পরিবেশ মানুষকে সৎ অসতে প্রভাবিত করে। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের জীবন চলার ক্ষেত্রে সঙ্গির প্রয়োজন দেখা দেয়। তাই সৎ সঙ্গ শিশুর জীবনে অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ। সব বয়সেই যেহেতু সৎ সঙ্গের প্রভাব থাকে সেহেতু সবাইকে সৎসঙ্গীর সাথে চলাফেরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং সব বয়সেই অসৎ সঙ্গী থেকে দূরে থাকতে হয়। সঙ্গ দোষ ও সঙ্গগুণ দ’টোই ক্রিয়াশীল। সঙ্গ দোষে দোষী ব্যক্তি সুপথে ফিরে আসার সংখ্যা নগন্য। অসৎসঙ্গির কারণে বাস্তবে যা ঘটছে, আজ তা কারও অজানা নয়। রাছুলে করিয় সা. বলেছেন “ নেককার সাথি ও অসৎ সাথীর দৃষ্টান্ত একজন আতর রহনকারী ও একজন কামারের মত। আতর রহনকারী হয় সে তোমাকে আতর দেবে অথবা তুমি তার থেকে আতর খরিদ করবে, আর নাহলে কমপক্ষে তুমি তার থেকে সুঘ্রাণ পাবে। আর কামার সে হয় তোমাকে পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার থেকে দূর্গন্ধ অনুভব করবে”। এ হাদিসের বর্ণিত উদাহরন থেকে অতিসহজেই অনুমেয় যে, সৎ ও অসৎ সঙ্গির স্বভাবজাত প্রভাব সঙ্গির পর অনিবার্য। সচ্চরিত্র গঠনে এ হাদিসটি ছোটদের জন্য দৃষ্টান্ত স্বরূপ যার প্রযোজোক কর্তা পিতামাতা। বড়দের ব্যাপারেও হাদিসে আসছে “ বন্ধু নির্বাচন করলে তাকে বন্ধুর দ্বীনের উপর চিন্তা করতে হবে কাকে সে বন্ধু বানাবে”। অর্থাৎ দ্বীনদার ব্যক্তিই মুমিনের প্রকৃত বন্ধু। বন্ধু নির্বাচন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে সততার সাথে সত্যবাদীদের সাহচার্য অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন- “হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় কর আর শুধু সত্যবাদীদের সাথে থাক”। বন্ধু নির্বাচন নিয়ে ইংরেজিতে প্রবাদ আছে- অ সধহ শহড়ংি ষড়ু ঃযব পড়সঢ়ধহবু যব শববঢ়ং. অর্থাৎ বন্ধু নির্বাচনে বন্ধুকে জেনে, শুনে, বুঝে তবেই বন্ধু নির্ধারণ করা প্রয়োজন। রাছুল করিম সা. নিজের অধিক মহব্বতের কথাব্যক্ত করে বলেছেন “কিয়ামতের দিন আমার কাছে ঐ ব্যক্তিই সর্বাধিক প্রিয় যার চরিত্র ভালো। সচ্চরিত্রবান বান্দাকে আল্লাহতায়ালা উত্তম পুরুষ্কার হিসেবে জান্নাতুল ফেরদাউসের ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহর নবীও তাঁর সচ্চরিত্রবান উম্মতকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। আল্লাহর নবী বলেন “ “কেয়ামতের দিন আমলের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী আমল হবে সচ্চরিত্র”। পাপ পূর্ণ্যরে ফল আখেরাতের জীবনে অবশ্যই প্রদান করা হয়। এ বিশ^াসে বিশ^াসীগণ আল্লহ প্রদত্ত শাস্তিকে ভয় করে বিধায় জ¦ীনা - ব্যভিচারের দিকে তাকায় না। টি.ভি অম্লীলতায় ভরা। ইন্টারনেট, স্মার্টফোন তো চরিত্র বিধ্বংশী যৌনযন্ত্র। ধ্বংসের যত উপকরণ আছে তা আজ ঘরে ঘরে শোভায় পরিণত হয়েছে। আমদের শিক্ষা সংস্কৃতি পাশ্চাতের অপসংস্কৃতির উষ্ণ জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে। এ ¯্রােতে আত্মাহুতি দিচ্ছে আমাদের মুসলিম যুবক যুবতীরা। চারিত্রিক সৌন্দর্যের সাথে দৈহিক সৌন্দর্যের কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহ তায়ালা মানুষের দৈহিক সৌন্দর্য দেখেন না, তিনি দেখেন বান্দার চারিত্রিক সৌন্দর্য ও সরল অন্তকরণ। অন্তরের অনুভূতি আচরণে প্রকাশ পায়। পবিত্র অন্তরের অনুভূতির বহিপ্রকাশ হচ্ছে সচ্চরিত্র। পবিত্র অন্তর অর্জনের উপায় হচ্ছে আল্লাহ তায়লার ধ্যান খেয়ালকে অন্তরে পোষণ করা। সুতরাং মানুষ যখন আল্লাহ তায়লার প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল হয়, তখন চরিত্র বিনাশকারী কর্মকান্ড থেকে সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে অর্থাৎ আল্লহ তায়লাই তাকে রক্ষা করেন। হাদিসে আছে ‘ যে কামনা সুন্দরী কোনো নারী আলিঙ্গন থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে সে জান্নাতী”। হযরত ইউসুব আ. জুলায়খার কামনা হতে রক্ষার জন্য আল্লাহর প্রতি নিজেকে সফর্দ করে ছিলেন বিধায় আল্লাহতায়লা তাকে তাৎক্ষণিক ভাবে রক্ষা করে ছিলেন। আল্লাহর কোনো বান্দা বান্দী এ ধরনের সমস্যায় নিúতীত হলে সে যদি আল্লহ তায়ালার উপর নিজেকে ছেড়ে দেয়, মহান রববুল আলামীন তাঁর বান্দার সন্ত্রম রক্ষার ব্যবস্থা করতে বিন্দু মাত্র দেরী করেন না। ইংরেজি প্রবাদে আছে ডযবহ রং সড়হবু ষড়ংঃ রং হড়ঃ হড়ঃযরহম ষড়ংঃ. অর্থাৎ আর্থিক ক্ষতি কোনো ক্ষতি নয় কেননা শ্রম ও চেষ্টার মাধ্যমে তা পূরণ করা সম্ভব। ডযবহ রং যবধষঃয ষড়ংঃ রং ংড়সবঃযরহম ষড়ংঃ. স্বাস্থ্য নষ্ট হলে, স্বাস্থ্য সেবা সত্ত্বেও তা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাওয়া যায় না। ডযবহ রং ঈযধৎধপঃবৎ ষড়ংঃ রং বাবৎুঃযরহম ষড়ংঃ. অর্থাৎ ব্যক্তি যখন তার চরিত্রকে নষ্ট করে ফেলে, তখন সে সম্পূর্ণই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কেননা সচ্চরিত্র মানুষের সর্বোত্তম আচরণমূলক গুণ। এ গুণ একবার বিনষ্ট হলে তা পূরণ যোগ্য নয়। আজীবন তার গ্লানিবয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। পরকালেও এ পাপের কঠিন শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর কোরান পাকে সূরা বনি ইসরাইলের বত্রিশ নং আয়াতে বলেছেন, “ব্যভিচারের ধারের কাছেও যেয়ো না। এটা অত্যন্ত নিলর্জ্জতা ও চূড়ান্ত পর্যায়ের খারাপ পথ অবলম্বন করা। ব্যভিচারের শাস্তিগুলোর মধ্যে একটি উল্লেখ যোগ্য বর্ণণা হচ্ছে;-“ব্যভিচারি নারী পুরুষকে দোযকের ভেতর একটি গর্তে উলঙ্গ অবস্থায় পোড়ানো হবে”। সে গর্তের নীচের মুখ ছোট উপরের মুখ প্রশস্থ। ব্যভিচারী নারী পুরুষ সেখানে আগুনে জ¦ালবে । তারা গর্তের নীচের মুখে দৌড়ায়ে গেলে আগুন পিছে পিছে যাবে। আবার উপরে মুখে দৌড়ায়ে গেলে আগুন তাদের বেরিকেট দিয়ে পুড়াতে থাকবে। এ ভাবে ব্যভিচারী নারী পুরুষ অনন্তকাল ধরে আগুনে পুড়তে থাকবে। হায় অপকর্মে লিপ্ত নারী পুরুষ। ধীক তোমার মানব জীবন। তুমি তো পশুর চেয়েওে নিকৃষ্ট। আল্লাহতায়ালা তার কালেমে পাকে বলেছেন- “উলায়িকা কালআনয়ামি বাল হুম আদাল। অর্থাৎ তারা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট”। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে- “অ সধহ রিঃযড়ঁঃ ঈযধৎধপঃবৎ রং রহ ঃড় ধহরসধষ” অর্থাৎ চরিত্রহীন ব্যাক্তি পশুর চেয়ে অধম। চরিত্রবান হতে হলে লোভ- লালসা ও অসৎ প্রবৃত্তির নানা কু প্রলোভেন পরিহার করার শক্তি অর্জন করতে হয়। এ শক্তি অর্জনের একমাত্র পথ ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা। মনুষ্য সমাজে চরিত্র বলেই লোকে অমরতা লাভ করে থাকে। প্রতিভাবান ব্যক্তিও যদি চরিত্রবান না হয়; তাহলে সে সমাজে শ্রোদ্ধা অর্জন করতে পারে না। এ জন্যই বলা হয়, দুজন বিদ্যান হলেও পরিত্যক্ত। চারিত্রিক মাধুর্যের অধিকারী মানুষই অমরতা লভ করে। সমাজ ও ইতিহাসের পাতায় তার নাম ভাস্বর হয়ে থাকে।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
প্রথম আলো
দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাত
ইসলাম ধর্ম
বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের থাবা বিস্তৃত হচ্ছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিশ্বমানবতার জন্য চরম এক অভিশাপ। তাই ধনী ও দরিদ্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ইসলাম কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আর্থিক সাহায্যের বিধান রেখেছে। সম্পদ যেন শুধু বিত্তবানদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না থাকে, সে জন্য এতে দরিদ্রের একটা নির্দিষ্ট প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করে দেওয়া হয়েছে। একটি সুখী, সুন্দর ও উন্নত সামাজিক পরিবেশ গঠনে ধনাঢ্য মুসলমানদের অবশ্যই তাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদের একটি নির্ধারিত অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের দুর্দশা মোচনের জন্য ব্যয় করতে হবে। ফলে অসহায় ও দুস্থ মানবতার কল্যাণই হবে না; বরং সমাজে আয়বণ্টনের ক্ষেত্রেও বৈষম্য হ্রাস পাবে। পবিত্র কোরআনে ধনসম্পদ বণ্টনের মূলনীতি সম্পর্কে ঘোষণা হয়েছে, ‘যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান, কেবল তাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য আবর্তন না করে।’ (সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭) দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। অর্থবিত্তের মাধ্যমেই সমাজে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধি পায়। ইসলামি বিধানে সমাজের দরিদ্র জনসাধারণের আর্থিক প্রয়োজনের ব্যাপকতার প্রতি লক্ষ রেখে তৃতীয় হিজরিতে ধনীদের ওপর জাকাত ফরজ করা হয়েছে। সমাজে ধনসম্পদের আবর্তন ও বিস্তার সাধন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের মহান উদ্দেশ্যেই জাকাতব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন ও বেকার সমস্যা সমাধান জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য। জাকাত বণ্টনের খাতগুলো এ লক্ষ্যেই নিবেদিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সাদকা বা জাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত, জাকাত আদায়কারী কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্ত ব্যক্তিদের, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য; এটা আল্লাহর বিধান।’ (সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৬০) দারিদ্র্য দূরীকরণে জাকাতের মতো আর কোনো অর্থব্যবস্থাই সমাজের সার্বিক হিত সাধন করতে পারে না। ইসলামি সমাজে তাই জাকাত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বণ্টনব্যবস্থা। জাকাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম ফরজ আর্থিক ইবাদত। জাকাত হতদরিদ্র, অভাবী ও অক্ষম জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করে। নবী করিম (সা.) তাঁর জীবনব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত আরবদের তিনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী জাতি হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তাঁর প্রবর্তিত অর্থব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ছিল সমাজে সুষম, ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকরী জাকাতব্যবস্থা প্রচলনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন। জাকাত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জাকাত ইসলামের সেতু।’ (মুসলিম) ধনী লোকেরা তাদের ধনসম্পদের ৪০ ভাগের এক অংশ অসহায় দরিদ্রদের মধ্যে জাকাত বিতরণ করলে গরিব লোকেরা দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর কশাঘাত থেকে মুক্তি পায়। ইসলামি বিধান অনুসারে জাকাত প্রদানের ফলে সমাজের ঋণগ্রস্ত গরিব-দুঃখী, অনাথ, বিধবা, বৃদ্ধ, রুগ্ণ, পঙ্গু ও অক্ষম ব্যক্তিরা মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে অভাব মোচন করতে পারে। জাকাতের অর্থ অভাবী মানুষের হাতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বণ্টিত হয়ে তাদের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হয়। ধনী লোকেরা যদি ঠিকমতো জাকাত আদায় করে, তাহলে সমাজে কোনো অন্নহীন, বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন, শিক্ষাহীন দরিদ্র লোক থাকতে পারে না। জাকাতের সুষ্ঠু উশুল ও সুষম বণ্টনের মাধ্যমেই মুসলিম সমাজের দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব। যেমনভাবে পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘তাদের ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক।’ (সূরা আল-জারিআত, আয়াত: ১৯) জাকাতের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। ইসলামে সম্পদ বণ্টনব্যবস্থায় ধনীরা তাদের সম্পদের কিছু অংশ জাকাত দিলে গরিবদের সম্পদ কিছুটা বেড়ে যায় এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হয়। জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা মহানবী (সা.)-এর আদর্শ মদিনা রাষ্ট্র, খোলাফায়ে রাশেদিনের শাসনামলে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য বিমোচন করে মুসলিম উম্মাহকে সমকালীন বিশ্বে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত জাতিতে পরিণত করেছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় আল্লাহর কাছে দারিদ্র্য থেকে মুক্তির প্রার্থনা করতেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করতেন। তিনি মানুষকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের ওপর সাদকা (জাকাত) অপরিহার্য করেছেন, যা তাদের ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম) জাকাতের মাধ্যমে ইসলাম সমাজকে দারিদ্র্য থেকে উদ্ধার করতে চায়। কিন্তু দেশে যেভাবে জাকাত আদায় ও বণ্টন করা হয়, এতে জাকাতগ্রহীতা স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের পেশা বা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে না। দেশের আদায়যোগ্য জাকাতের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকারও অধিক হতে পারে; যা দ্বারা প্রতিবছর দুই লাখ লোকের পুনর্বাসন সম্ভব। পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে এভাবে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। তাই সমবেত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামের বিধান অনুযায়ী জাকাত আদায় ও তার যথাযথ বণ্টনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও মানুষের স্থায়ী কল্যাণের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
যায়যায়দিন
কাছের ব্যক্তি ছাড়া কাউকে স্বপ্নের কথা বলা ঠিক নয়
ইসলাম ধর্ম
স্বপ্নের উৎস তিনটি। ১. মহান আল্লাহ–তায়ালা, ২. কল্পনা, এবং ৩. শয়তান। নবীরা আল্লাহর কাছ থেকে আসা স্বপ্ন দেখেছেন। আল্লাহ তাঁদের স্বপ্ন শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছেন। নিজেদের কল্পনা থেকেও আল্লাহ তাঁদের স্বপ্নকে রক্ষা করেছেন। নবীদের স্বপ্ন তাই অহি হিসেবে গণ্য করা হয়। হজরত ইব্রাহীম (আ.) যেমন হজরত ইসমাইল (আ.)–কে কোরবানি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কল্পনা থেকে উদ্ভূত স্বপ্নকে বলা হয় হাদিসুন নাফস। ধরা যাক, ঢাকা শহরের আপনি একটি ফ্ল্যাটের মালিক হতে চান। এ নিয়ে সব সময় আপনি ভাবছেন। স্বপ্ন দেখলেন, আপনি একটি ফ্ল্যাটে বাস করছেন। এটা আপনার কল্পনা থেকে উদ্ভূত স্বপ্ন। শয়তানের পক্ষ থেকে যে স্বপ্ন আসে তা আসলে দুঃস্বপ্ন। আরবিতে একে বলা হয় আল হুলম। আল হুলম মানে অশুভ স্বপ্ন। এ ধরনের স্বপ্ন দেখার পর মনে ভয় বা আতঙ্কের জন্ম হয়। এ ধরনের স্বপ্নের মাধ্যমে শয়তান অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। এ ধরনের স্বপ্ন নিয়ে পড়ে থাকা ঠিক নয়। হজরত আবু হুরাইরাহ্ (রা.)–এর বরাতে একটি হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের সময় যখন আসন্ন তখন খাঁটি মুসলিমের স্বপ্ন মিথ্যা ও ভ্রান্ত হবে না। তোমাদের মধ্যে সত্যভাষীরা সবচেয়ে সত্য ও বাস্তব স্বপ্নদ্রষ্টা হবে। মুসলমানের স্বপ্ন নবুয়তের পঁয়তাল্লিশ ভাগের এক ভাগ। স্বপ্ন তিন প্রকার। ভালো স্বপ্ন আল্লাহর কাছ থেকে সুসংবাদ। আরেক ধরনের স্বপ্ন আসে শয়তানের পক্ষ থেকে, তা দুর্ভাবনা তৈরি করে। মানুষ তার মনের সঙ্গে যে কথা বলে এবং সে যা চিন্তা–ভাবনা করে তা থেকে অন্য আরেক ধরনের স্বপ্ন উদ্ভূত। অতএব তোমাদের কেউ যদি এমন কোনো স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে না, তাহলে সে যেন ঘুম থেকে উঠে দাঁড়ায় এবং নামাজ আদায় করে। আর মানুষের কাছে সে স্বপ্নের কথা গোপন রাখে। দুঃস্বপ্নের প্রতিকার দুঃস্বপ্ন দেখার পর কী করতে হবে সে সম্পর্কে মুসলিম শরিফে বর্ণনা করা হয়েছে। হজরত আবু কাতাদাহ্ (রা.) বলেছেন যে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘সুস্বপ্ন আসে আল্লাহর কাছ থেকে, আর দুঃস্বপ্ন শয়তানের কাছ থেকে। অতএব তোমাদের কেউ যদি এমন কোনো বিষয় স্বপ্নে দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তখন সে যেন তার বাঁপাশে তিনবার থুতু ফেলে এবং আউজুবিল্লাহসহ সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চায়। এ রকম করলে সে তার খারাপ কিছু করতে পারবে না।’ কেউ দুঃস্বপ্ন স্বপ্ন দেখলে তিনি পাশ পরিবর্তন করে ঘুমাবেন। সম্ভব হলে নামাজ পড়বেন। যে স্বপ্নই কেউ দেখুক না কেন, একেবারে কাছের ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে স্বপ্নের কথা বলা ঠিক নয়।
ধর্মীয় শিক্ষা
Neutral
বাংলাদেশ প্রতিদিন
কুয়ালালামপুরে পর্যটকদের নজর কাড়ে যে মসজিদ
ইসলাম ধর্ম
কুয়ালালামপুর শহরে দৃষ্টি নন্দন যে কয়েকটি ভবন ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের নজর কাড়ে তার একটি হলো মসজিদ জামেক। ভারতীয় মুসলিম মুঘল স্থাপত্য শৈলীতে তৈরি এ মসজিদটি দেখে যে কোনো ধর্মের লোকই বিমোহিত হন। জাভা স্ট্রিট এবং মালয় স্ট্রিট এলাকায় মালয় সম্প্রদায়ের জন্য কয়েকটি মসজিদ আগে বিদ্যমান ছিল, কিন্তু জামেক মসজিদটি কুয়ালালামপুরে নির্মিত প্রথম বড় মসজিদ। ব্রিটিশ স্থপতি এবি হাবব্যাক ডিজাইন করেন এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির। যিনি ইন্দো-সারাসেনিক শৈলীতে মসজিদটির নকশা করেছিলেন যা ভারতীয় মুসলিম মুঘল স্থাপত্য শৈলীকে শিথিলভাবে প্রতিফলিত করে। পিয়াজ এর মত দেখতে ঠিক এর গম্বুজগুলো। মসজিদ এর ইট-এবং-প্লাস্টার ব্যান্ডেড মিনার এবং তিনটি সুশোভিত গম্বুজ মোগল এবং মুরিশ শৈলী ধারন করে। গোমবাক এবং ক্লাং নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত মসজিদ জামেক মালয়েশিয়ার প্রথম ইটের মসজিদ। যা ১৯০৯ সালে সম্পন্ন হয়েছিল। ১০৬৫ সালে জাতীয় মসজিদ খোলার আগ পর্যন্ত এটি শহরের ইসলামী উপাসনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ২৩ মার্চ ১৯০৮ সালে সেলাঙ্গরের সুলতান স্যার আলাউদ্দিন সুলাইমান শাহ মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সুলতান আনুষ্ঠানিকভাবে ২৩ ডিসেম্বর ১৯০৯ সালে মসজিদটি খুলে দেন। মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে তৎকালিন ৩২,৬২৫ ডলার যার কিছু অংশ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের অবদানে মালয় সম্প্রদায় দ্বারা অর্থায়ন করা হয়। যে কোন জাতি, ধর্মের মানুষ মসজিদের অভ্যন্তরে পরিদর্শন করতে পারেন এবং নামাজের সময়ের বাইরে এর আশেপাশের মাঠ এবং বাগানে বিশ্রাম করতে পারেন শালীন পোশাক পরিধান করে। তাৎক্ষনিক কারো শালীন পোশাক পরিধান করা না থাকলে মসজিদ এর পক্ষ থেকেও শালীন পোষাক (ফেরত যোগ্য) প্রদান করা হয়। মসজিদটি ১৯৮৪ সালে সংস্কার করা হয়েছিল এবং নদীর নিকটবর্তী মিনারটি ইতিমধ্যেই ঢালু হওয়ায় এটির নিচের অংশটি পুনরায় তৈরি করা হয়েছিল। মসজিদের একটি গম্বুজ ১৯৯৩ সালে ভারী বৃষ্টির কারণে ভেঙে পড়ে, তারপর সেটিও মেরামত করা হয়। ২৩ জুন ২০১৭ সালে সেলাঙ্গরের সুলতান শরাফুদ্দিন ইদ্রিস শাহ তার পূর্বপুরুষ সেলাঙ্গরের চতুর্থ সুলতান আব্দুল সামাদ এর নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করেন সুলতান আব্দুল সামাদ জামেক মসজিদ। কারণ মসজিদটি মূলত সেলাঙ্গর রাজ্যের অংশ ছিল এমন জমিতে নির্মিত হয়েছিল।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
আলোকিত বাংলাদেশ
জুমার দিনের যে আমলে এক সপ্তাহের গুনাহ মাফ হয়
ইসলাম ধর্ম
জুমাবার মুসলমানদের কাছে একটি অত্যন্ত ফজিলতের দিন। সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুমা নামে পবিত্র কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা আছে। সুরা জুমায় আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং বেচা-কেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম) ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জানতে। (সুরা জুমা: ০৯) জুমার দিন কিছু আমল করলে সপ্তাহব্যাপী হয়ে যাওয়া গুনাহগুলো মাফ হয়ে যায়। সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি: ৮৮৩) অন্য হাদিসে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, তার ঈমানের নূর এক জুমা থেকে অন্য জুমা পর্যন্ত বিচ্ছুরিত হতে থাকবে।’ (বায়হাকি, সুনানে সুগরা: ৬৩৫)
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
মিথ্যাবাদিতা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য
ইসলাম ধর্ম
ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, মানবের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, সত্যবাদিতা। এছাড়া একজন মুমিন কামিল মুমিন হতে পারে না। একজন মানব পূর্ণাঙ্গ মানব হতে পারে না। কুরআন মাজীদে ও হাদিস শরীফে এ বিষয়ে খুব তাকীদ করা হয়েছে। আল্লাহপাক বলেন : ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর আর সত্যবাদীদের শামিল হও।’ (সূরা তাওবা : ১১৯)। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন : ‘তোমরা সত্যকে অবলম্বন কর। কারণ সত্যবাদিতা ভালো কাজে উপনীত করে। আর ভালো কাজ উপনীত করে জান্নাতে। মানুষ সত্য বলে ও সত্যবাদিতার অন্বেষায় থাকে, একপর্যায়ে সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে লিখিত হয়ে যায়।’ এ হলো হাদিসের প্রথম অংশ, দ্বিতীয় অংশ : ‘আর মিথ্যা থেকে দূরে থাক। কারণ মিথ্যা উপনীত করে পাপাচারে। আর পাপাচার উপনীত করে জাহান্নামে। ব্যক্তি মিথ্যা বলে ও মিথ্যার অন্বেষায় থাকে, এভাবে একসময় আল্লাহর কাছে সে চরম মিথ্যুক হিসেবে লিখিত হয়ে যায়।’ (সহীহ মুসলিম : ২৬০৭)। তো এ হাদিসে রাসূলে কারীম (সা.) সত্যকে অবলম্বন করার এবং মিথ্যা থেকে দূরে থাকার তাকীদ করেছেন। এজন্য সত্য বলা ফরয। মিথ্যা বলা হারাম। আর যে কোনো চিন্তাশীল মানুষ উপলব্ধি করেন যে, সত্য বলা মানুষের একটি উৎকৃষ্ট গুণ আর মিথ্যা বলা একটি নিকৃষ্ট বৈশিষ্ট্য। ভালো মানুষ কখনো মিথ্যা বলতে পারে না। একজন ভালো মানুষ সবসময় সত্য বলেন। তো সত্য বলা ধর্মীয় দৃষ্টিতে যেমন ফরয তেমনি বুদ্ধির দিক থেকেও এক উত্তম ও অপরিহার্য মানবীয় বৈশিষ্ট্য। ভালো মানুষ হওয়ার জন্য সত্যবাদিতার কোনো বিকল্প নেই। ইসলাম যেহেতু ‘দ্বীনে ফিতরত’ তাই এখানে সত্যবাদিতার গুরুত্ব অপরিসীম। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের উস্তাদ ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ (রাহ.) এবং পরবর্তী মুহাদ্দিস ইমাম বায়হাকী (রাহ.) হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর একটি বাণী সহীহ সনদে উল্লেখ করেছেন। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) বলেন : ‘তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাক, কারণ মিথ্যা ঈমানের পরিপন্থী।’ (আল মুসান্নাফ, ইবনে আবী শায়বা : ২৬১১৫)। সুতরাং যে মিথ্যা বলে সে কামিল মুমিন নয়। হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন : মুমিনের মধ্যে স্বভাবগত বিভিন্ন দোষ-ত্রুটি থাকতে পারে। তবে সে মিথ্যুক ও প্রতারক হতে পারে না। (আল মুসান্নাফ, ইবনে আবী শায়বা : ৩০৯৭৫)। তো মিথ্যা ইসলামের দৃষ্টিতে অতি গর্হিত, অবশ্য-বর্জনীয়। কুরআন মাজীদে সূরাতুল বাকারায় আল্লাহপাক মুনাফিকদের যে সকল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন এর মধ্যে নিকৃষ্ট বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন মিথ্যা বলাকে। আল্লাহপাক বলে : তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। এ কারণে যে, তারা মিথ্যা বলত। মিথ্যায় অভ্যস্ত ছিল।’ (সূরা বাকারা : ১০)। রাসূলে কারীম (সা.)-এর হাদিস শরীফেও যা ইমাম বুখারী (রাহ.) এ শিরোনামে এনেছেন এই বিষয়টি পাওয়া যায়। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন : ‘মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি।’ ‘যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে।’ কথা বললেই মিথ্যা বলে। অর্থাৎ মিথ্যা বলা তার স্বভাব। মিথ্যায় সে অভ্যস্ত। মিথ্যাবাদিতা ও মিথ্যায় অভ্যস্ততা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।
ধর্মীয় শিক্ষা
Negative
দৈনিক ইনকিলাব
সউদি আরব-আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যে ঈদ কবে, জানা যাবে আজ
ইসলাম ধর্ম
সউদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশে আজ বৃহস্পতিবার ২৯ রমজান। আজ সন্ধ্যার পরই পবিত্র শাওয়াল মাসের সূচনা উপলক্ষে চাঁদ খুঁজবেন এসব দেশের মানুষ। –খালিজ টাইমস আর তাই শুক্রবার (২১ এপ্রিল) শাওয়াল মাসের প্রথম দিন বা পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে কিনা তা আজ জানা যাবে। মূলত চন্দ্র মাস হিসেবে রমজান মাস ২৯ দিনেও শেষ হতে পারে। বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মুসলমানদেরকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পবিত্র শাওয়াল মাসের খোঁজার আহ্বান জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। অন্যদিকে সৌদিতে বসবাসরত সব মুসলিমকে আজ সন্ধ্যায় নতুন চাঁদ খোঁজার নির্দেশনা দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। খালিজ টাইমস বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের সূচনা উপলক্ষে নতুন চাঁদ দেখার জন্য দেশের সকল মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আজ শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে চলমান পবিত্র রমজান মাস শেষ হয়ে যাবে এবং ঈদুল ফিতরের সূচনা হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেউ চাঁদ দেখতে পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সংযুক্ত আরব আমিরাতের চাঁদ দেখা কমিটি ০২৬৯২১১৬৬ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৃহস্পতিবার ২৯তম রমজান চলছে এবং আজ সন্ধ্যায় নতুন চাঁদ দেখা গেলে শুক্রবার (২১ এপ্রিল) দেশটিতে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। আর চাঁদ দেখা না গেলে শুক্রবার ৩০তম রোজা পালন শেষে পরদিন শনিবার (২২ এপ্রিল) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। চাঁদ দেখার তারিখের ওপর নির্ভর করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাসিন্দারা চার দিন বা পাঁচ দিনের ছুটি ভোগ করবেন। শুক্রবার ঈদ হলে আমিরাতের বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার থেকে রোববার মোট চারদিনের ছুটি পাবেন। আর ঈদ শনিবার হলে ছুটি থাকবে পাঁচ দিন— বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার। এদিকে আরব আমিরাতের মতো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের চাঁদ অনুসন্ধানের জন্য সকল মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব। সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশের সকল মুসলমানকে চাঁদ দেখার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরবের সুপ্রিম কোর্ট। সউদি প্রেস এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, ‘যারাই খালি চোখে বা দূরবীনের মাধ্যমে চাঁদ দেখবেন তাদের নিকটতম আদালতে তা রিপোর্ট করার এবং সাক্ষ্য নিবন্ধন করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে।’ উল্লেখ্য, সউদি আরব ও সয়ুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গত ২৩ মার্চ পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়। বৃহস্পতিবার নতুন চাঁদ দেখা গেলে শুক্রবার (২১ এপ্রিল) এসব দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। আর চাঁদ দেখা না গেলে পরদিন শনিবার (২২ এপ্রিল) উদযাপিত হবে ঈদুল ফিতর।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
দীর্ঘ সাত বছর পর আজ সউদীতে দূতাবাস খুলছে ইরান
ইসলাম ধর্ম
আজ মঙ্গলবার (৬ জুন) সউদী আরবের রাজধানীতে অবস্থিত দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনগুলো পুনরায় খুলতে যাচ্ছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি এ তথ্য জানিয়েছেন। এ ছাড়া ওআইসিতে কাজ শুরু করবেন ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি। ইরান ও সউদী আরব উভয় দেশের সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘ সাত বছর পর মধ্যপ্রাচ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশের মধ্যে পুনরায় কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে যাচ্ছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, নাসের কানয়ানি সোমবার রাজধানী তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মঙ্গলবার ও বুধবার (৬ ও ৭ জুন) রিয়াদে ইরান দূতাবাস এবং জেদ্দায় ইরানি কনস্যুলেট আবার চালু করা হবে। একই সঙ্গে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা তথা ওআইসিতে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি তার কাজ শুরু করবেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, রিয়াদে অবস্থিত ইরানি দূতাবাস এবং জেদ্দায় ইরানি কনস্যুলেট নিজেদের হজ যাত্রীদের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম দেখভালের কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছে। গত ১০ মার্চ ইরান ও সউদী আরব পরস্পরের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আবার চালু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। চীনের মধ্যস্থতায় বেইজিংয়ে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই করেন ইরান ও সউদী আরবের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে গত ৮ এপ্রিল ইরান ও সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। গত মাসে শীর্ষ কূটনীতিক আলী রেজা এনায়েতিকে রিয়াদে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয় ইরান। এরই ধারাবাহিকতায় সউদী আরবে নিজের দূতাবাস চালু করছে তেহরান।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: নোবিপ্রবি’র ২ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ইসলাম ধর্ম
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করার অভিযোগে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সঙ্গে তাদের হলের সিট বাতিল করা হয়েছে। তারা হলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের প্রতীক মজুমদার এবং একই শিক্ষাবর্ষের ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী পাল দীপ্ত। আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা.আবুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। আদেশে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং বাংলাদেশ সরকারের আইন মোতাবেক দণ্ডনীয় অপরাধ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদেশ মোতাবেক ও শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাদেরকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার এবং হলের সিট বাতিল করা হল। তাদের কেনো স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না এবং আইসিটি আইনে মামলা হবে না তা লিখিতভাবে আগামী ৪ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রার দফতর বরাবর জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর থেকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ইসলাম নিয়ে প্রহসনমূলক মন্তব্য ও কটূক্তিকারী দুই শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
প্রথম আলো
যে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়
ইসলাম ধর্ম
যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ সামনে এলে বলা হয় ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। বিশ্বাসীরা কেবল মুখে বলা নয়; বরং মনে মনে এ কথা স্বীকার করে নেওয়া যে আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। আর নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব—এর অর্থ হচ্ছে, চিরকাল এ দুনিয়ায় থাকা যাবে না। একদিন আল্লাহরই কাছে যেতে হবেই। ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ অর্থ সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতটি কোরআন শরিফের প্রসিদ্ধ আয়াত। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। অর্থ (তারাই ধৈর্যশীল) যারা তাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে আমরা তো আল্লাহরই আর নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব। কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে পড়েন। অনেকে মনে করেন, মানুষের মৃত্যুসংবাদ পেলে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়তে হয়। বরং ইন্না লিল্লাহ পড়ার অনেক কারণ ও গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত রয়েছে। এই পবিত্র বাক্য আল্লাহকে স্মরণ রাখার বড় উপায়। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে (কাউকে) ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে, আর (কাউকে) ধনে–প্রাণে বা ফল–ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করব। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের তুমি সুখবর দাও। (তারাই ধৈর্যশীল) যারা তাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, [ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন] ‘আমরা তো আল্লাহর আর নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব।’ এসব লোকের প্রতি তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে আশীর্বাদ ও দয়া বর্ষিত হয়, আর এরাই সৎ পথপ্রাপ্ত। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭) এ তিনটি আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্ট। কারা ইন্না লিল্লাহ পড়বেন, কোনো পরিস্থিতিতে পড়বেন এবং পড়লে কী উপকার। বিশ্বাসীরা বিপদে পড়লে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পাঠ করেন। কেউ বিপদে পড়লে যেন এ দোয়াটি পাঠ করে। একাধারে যেমন সওয়াব পাওয়া যায়, তেমনি অর্থের প্রতি লক্ষ রেখে পাঠ করা হয়, তবে বিপদের মধ্যেও শান্তি লাভ করবে বিপদ থেকে উত্তরণও সহজ হয়ে যায়। কোনো বিপদে বান্দার মুখে উচ্চারিত হয় এই দুটি বাক্য—এর অর্থ আল্লাহর ফয়সালা সর্বান্তঃকরণে মেনে নিচ্ছি। আর আখিরাতে বিশ্বাস করি, তাই এ বিপদে সবরের বিনিময় তাঁর কাছে প্রত্যাশা করছি। দুটি বাক্যে ইমানের মৌলিক সাক্ষ্য দেওয়া হয়। তাই এর ফজিলতও অনেক। বিপদের সময় বলতে হবে উম্মে সালামা (রা.)–এর বরাতে হাদিস থেকে জানা যায়। তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)–কে বলতে শুনেছি, কোনো মুসলিমের ওপর বিপদ এলে যদি সে বলে, আল্লাহ যা হুকুম করেছেন—ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (অর্থাৎ আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তারই কাছে ফিরে যাব) বলে এবং এই দোয়া পড়ে, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফলি খাইরাম মিনহা ইল্লা আখলাফাল্ল হুলাহ খয়রাম মিনহা (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে আমার মুসিবতে সওয়াব দান করো এবং এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করো, তবে মহান আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করে থাকেন।) উম্মে সালামা (রা.) আরও বলেন, আবু সালামা যখন ইন্তেকাল করেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, আবু সালামা থেকে উত্তম মুসলিম আর পাব না। এরপর আমি দোয়া পড়লাম। এরপর মহান আল্লাহ আবু সালামার স্থলে রাসুল (সা.)–এর মতো স্বামী দান করেছেন। উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমার কাছে রাসুল (সা.) বিয়ের পয়গাম দেওয়ার জন্য হাতিব ইবনে আবু বালতা (রা.)–কে পাঠালেন। আমি বললাম, আমার একটা মেয়ে আছে আর আমার জিদ বেশি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তার মেয়ে সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করব, যাতে তিনি তাকে তার মেয়ের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেন। আর (তার সম্পর্কে) দোয়া করব যেন আল্লাহ তার জিদ দূর করে দেন। (মুসলিম: ৯১৮)
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
ভোরের পাতা
যেসব দেশে এবার ১৮ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে!
ইসলাম ধর্ম
বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের জন্য পবিত্রতম একটি মাস রমজান। পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে দুই মাসেরও কম সময় বাকি রয়েছে। সময় ঘনিয়ে আসায় খুব দ্রুতই রমজানের প্রস্তুতি শুরু করবেন বিশ্বের সব মুসলিম। রমজান মাসে সূর্যোদয়ের আগ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব পানাহার থেকে বিরত থেকে রোজা রাখেন মুসলিমরা। এর পর ইফতারের মাধ্যমে রোজা ভাঙেন তারা। এ বছর পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে পারে ১১ মার্চ থেকে। অন্যবারের মতো এবারও রোজার সময়টি (ঘণ্টা) ভিন্ন ভিন্ন হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর ১২ ঘণ্টা থেকে শুরু করে ১৮ ঘণ্টা হবে একেকটি রোজা। খবর আল আরাবিয়ার। এবার যেসব দেশের মুসলিমরা ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা রোজা রাখবেন— ১। নুক, গ্রিনল্যান্ড ২। রেকজাভিক, আইসল্যান্ড ৩। হেলেনস্কি, ফিনল্যান্ড ৪। গ্লাসগো, স্কটল্যান্ড ৫। ওটোয়া, কানাডা ৬। লন্ডন, যুক্তরাজ্য ৭। প্যারিস, ফ্রান্স ৮। রোম, ইতালি ১০। মাদ্রিদ, স্পেন। অপরদিকে আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে রোজা কম সময়ের হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব অঞ্চলের মানুষ ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা রোজা রাখবেন। সেসব দেশগুলো হলো— ১। ক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ড ২। পুয়ের্তো মন্তে, চিলি ৩। জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া ৪। নাইরোবি, কেনিয়া ৫। করাচি, পাকিস্তান ৬। নয়াদিল্লি, ভারত ৭। ঢাকা, বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য ও গালফ অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্য ও গালফ অঞ্চলের মুসল্লিরা এবার ১৩ থেকে ১৫ ঘণ্টা রোজা রাখবেন। স্থানভেদে এটি ভিন্ন ভিন্ন হবে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
দৈনিক ইনকিলাব
সউদীর এক মসজিদে মিললো ১২০০ বছর পুরনো স্থাপত্য নিদর্শন!
ইসলাম ধর্ম
সউদী আরব মসজিদে নতুন এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়ার কথা জানিয়েছে। দেশটির ঐতিহাসিক উসমান বিন আফফান মসজিদে মিলেছে ১ হাজার ২০০ বছর পুরনো ওই স্থাপত্য নিদর্শন। গালফ নিউজ আবিষ্কারটি ঐতিহাসিক জেদ্দায় প্রত্নতত্ত্ব প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ের অংশ, যার লক্ষ্য এই অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য উন্মোচন করা। জেদ্দা হিস্টোরিক ডিস্ট্রিক্ট প্রোগ্রাম (জেএইচডিপি) পরিচালিত জরিপ থেকে আধুনিক নির্মাণ বৈশিষ্ট্য থেকে শুরু করে মসজিদটির বিস্তৃত ইতিহাস সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা পাওয়া গেছে। ঐতিহাসিক উসমান বিন আফফান মসজিদটি শতাব্দীর পর শতাব্দী সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে। তবে আসল মিহরাব এবং স্থানিক নকশা বজায় রেখেই সবচেয়ে সাম্প্রতিক কাঠামোটি হিজরি ১৪ শতকের বলেই মনে করা হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, মসজিদটি বহু শতাব্দী ধরে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, সবচেয়ে সাম্প্রতিক কাঠামোটি ১৪ শতক হিজরির। এক সহস্রাব্দেরও বেশি সময় ধরে এর মূল মিহরাব এবং স্থানিক নকশা অবিকৃত রয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন মারফত শত শত প্রত্নবস্তু উদ্ধার হয়েছে, যা মসজিদের স্থায়ী উত্তরাধিকার এবং বিভিন্ন নির্মাণ পর্যায়কে প্রকাশ করে। উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে মসজিদের মেঝেতে ব্যবহৃত মাটির টাইলস, প্লাস্টার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারগুলির মধ্যে একটি হল মসজিদের নীচে পাওয়া প্রাচীন পানির ট্যাঙ্কগুলি, যা প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো। জেদ্দার বাসিন্দাদের পানির অভাব মোকাবেলায় এগুলি তৈরি করা হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। এছাড়াও সাইটটি থেকে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী মিলেছে- যেমন চীনামাটির বাসন এবং সেলাডন জাহাজের টুকরো, যা কয়েক শতাব্দী আগে এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক বাণিজ্য রুট এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
Dhaka Tribune
বিজয়া দশমী আজ
হিন্দু ধর্ম
শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমী আজ । হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব আজ শেষ হবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। মহালয়া থেকে দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকে আসার ঘণ্টা বাজে। ষষ্ঠীতে তিনি ভক্তদের মাঝে অধিষ্ঠিত হন। আর দশমীতে তিনি চলে যান কৈলাশ। তাই আজ ভক্তদের মনে বাজছে বেদনার সুর। হাতিতে চড়ে মা দুর্গা এসেছিলেন, ভক্তদের দুঃখ দূর করে দুর্গা এবার বিদায় নেবেন নৌকায়। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সকাল ৯টায় বিহিত পূজা ও পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দশমীর পূজা শেষ হচ্ছে। হিন্দু পুরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় বসন্তকাল; কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধি সে পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগিয়ে পূজা করেন। সেই থেকে অকালবোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালেই দুর্গাপূজা প্রচলন হয়ে যায়। সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন “খের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা”। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। মহালয়াতেই দেবী আগমনের ঘণ্টা বাজে আর বিজয়া দশমী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটি শেষ হয় মহা-আরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
ধর্মীয় উৎসব
Positive
ইত্তেফাক
ধর্ম অবমাননার দায়ে ইরানে ২ জনের ফাঁসি
ইসলাম ধর্ম
অনলাইনে ইসলাম ধর্মের অবমাননার দায়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। গত বছর দেশটিতে বিক্ষোভের পর থেকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননার দায়ে ইউসেফ মেহরদাদ ও সাদরোল্লাহ ফাজেলি নামে দুই ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের বিচার বিভাগ। দেশটির বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট মিজান জানিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম ও নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটাক্ষের অভিযোগ ছিল। বিচার বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই ব্যক্তি একাধিক ধর্মবিরোধী অনলাইন প্লাটফর্ম পরিচালনা করছিলেন। এর মাধ্যমে তারা ইসলাম ধর্ম ও এর পবিত্র বিষয়গুলোকে অমর্যাদার পাশাপাশি নাস্তিকতার প্রচার চালাচ্ছিলেন বলে দাবি করা হয়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, তাদের একজন কনটেন্ট প্রচারের কথা স্বীকার করেছেন। তবে এই ধরনের স্বীকারোক্তি সাধারণত জোরপূর্বক নেয়া হয় বলে অভিযোগ অধিকার সংস্থাগুলোর। গত শনিবার হাবিব চাব নামে সুইডিশ-ইরানিয়ান নাগরিকের ফাঁসি কার্যকর করেছে তেহরান। এই ঘটনাকে অমানবিক হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে সুইডেন। চীনের পরই ইরান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশ। দুইটি অধিকার সংস্থার গত মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইরানীয় কর্তৃপক্ষ ৫৮২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে, যা ২০২১ সালের চেয়ে ৭৫ শতাংশ বেশি। নরওয়ে ভিত্তিক ‘ইরান হিউম্যান রাইটস' এবং প্যারিসভিত্তিক ‘টুগেদার অ্যাগেইনস্ট দ্য ডেথ পেনাল্টি' এপ্রিলে জানিয়েছে, চলতি বছর ১৫১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
বাংলাদেশ প্রতিদিন
কথায় কথায় কসম খাওয়া অনুচিত
ইসলাম ধর্ম
সারা বিশ্বের মানুষ শান্তির খোঁজে ছুটছে। কিন্তু শান্তির দেখা মেলে না। কারণ শান্তি পাওয়ার যে শর্তগুলো আল্লাহপাক কোরআন পাকে উল্লেখ করেছেন সেগুলো মানুষের মধ্যে অনুপস্থিত। যিনি আমার মালিক, যিনি আমাকে জীবনধারণের সব উপকরণ সরবরাহ করেন তাঁর কথা মতো না চলে শান্তির প্রত্যাশা করি কীভাবে? শান্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর শর্তগুলো কী? পবিত্র কোরআনের সুরা আল-আসরেই রয়েছে সেগুলো। আল্লাহপাক বলেছেন, ‘কসম যুগের; নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে। কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে এবং নেক আমল করে, সঙ্গে সঙ্গে তারা পরস্পরকে হকের ওপর অটল থাকার উপদেশ দেয় এবং একে অন্যকে ছবরের তাগিদ দেয়।’ এই আয়াতে আল্লাহপাক শান্তির জন্য চারটি শর্তের উল্লেখ করেছেন। তবে এগুলোর গুরুত্ব বুঝানোর জন্য শুরুতে তিনি যুগ বা কালের কসম করেছেন কিংবা কালকে সাক্ষী রেখেছেন। এখানে দেখার বিষয়, সাক্ষী রাখা হয় এজন্য যে, বক্তা অথবা শ্রোতা কেউ যেন পরে বিষয়টিকে অস্বীকার করতে না পারে। তদ্রুপ দুজনের কেউ হয়তো বিষয়টি বিস্মৃত হয়, তখন সাক্ষীর মাধ্যমে বিষয়টিকে প্রমাণ করা সহজ হয়। আসলে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোরআন ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য বড় নেয়ামত। এ দুটি ছাড়া আমাদের পক্ষে দুনিয়াতে শান্তিময় জীবনযাপন করা এবং আখেরাতের চির মুক্তি পথের সন্ধান পাওয়া কিছুতেই সম্ভব হতো না। আল্লাহপাক বলেন, ‘লাক্বাদ কানা লাকুম ফি রসুলিল্লাহি উস্ওয়াতুন হাসানাহ্’ অর্থাৎ তোমাদের জন্য রয়েছে রসুলের চরিত্রে উত্তম আদর্শ। এই আয়াতে সে কথাই বর্ণনা করা হয়েছে। ‘উস্ওয়া’-এর অর্থ হলো নিদর্শন, নমুনা, মডেল। রসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য উত্তম মডেল। তাঁর পথ-প্রদর্শন ব্যতিরেকে কিছুতেই আমরা গন্তব্যের সন্ধান পেতাম না। কোরআন ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জীবনপথের পাথেয়। মানবিক জীবনাচারের সবকিছুই আমরা কোরআন ও রসুল (সা.) থেকে আমরা শিখি। তাই কোরআনে আল্লাহতায়ালা মানবীয় জীবনের স্বভাব ও আচরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অনেক কিছু উল্লেখ করেন, যা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার উপযুক্ত নয়, তথাপি শুধু মানুষের কাছে সহজবোধ্য করার জন্য তা উল্লেখ করেন। সাংসারিক বিবাদ-বিসংবাদ মীমাংসা করার সুবিদিত পন্থা যেমন দাবির সপক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করা, আর সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকলে কসম করা, তেমনি আল্লাহ মানুষের এ পরিচিত পন্থা নিজেও অবলম্বন করেছেন। তিনি কোথাও ‘শাহাদাহ্’ শব্দের মাধ্যমে বিষয়বস্তুকে জোরদার করেছেন, যেমন- ‘শাহিদাল্লাহু আন্নাহু লা-ইলাহা ইল্লাহু’ আবার কোথাও কসমের দ্বারা; যেমন- ‘ওয়ালআসরে’ ইত্যাদি। অনেকে তো কথায় কথায় কসম করে। এটা নিন্দনীয়। দোকানদাররা বলে, খোদার কসম! চল্লিশ টাকায় আমার কেনা, লাভ ছাড়াই আপনাকে কেনা দামে দিলাম। কেউ বলে, কসম খোদার! মাল একখানা দিলাম, সারা জীবন মনে করতে হবে! বাড়িতে এসে দেখা যায় বাতিল মাল। আবার অনেকের কথা- যারা আছে, যারা আলাপ-আলোচনার সময় দুই-তিন বাক্য পরপর কসম খায়। সমাজে কিন্তু এদেরকে সর্বাপেক্ষা বড় মিথ্যুক ধারণা করা হয়। হাদিসেও এদের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, ‘বেশি বেশি কসম খাওয়া মিথ্যাবাদীর আলামত।’ তবে শরিয়তে কসমের গুরুত্ব রয়েছে। ইসলামী বিধানের কোনো কোনো ক্ষেত্রে কসমকে অত্যধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। সাধারণ কথাবার্তায়ও কসমের দ্বারা বক্তব্যের বিশুদ্ধতা ও যথার্থতা বৃদ্ধি পায়। এটা সর্বজনবিদিত ও স্বীকৃত। তবে সীমা অতিক্রম করলে সব কিছুতেই নিন্দার শিকার হতে হয়। কথায় কথায় কসম করা আত্মমর্যাদাবোধহীনতার পরিচয়। যার মধ্যে যতটা সৎ গুণাবলি ও প্রশংসিত বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতি রয়েছে, সে ততটাই এই নিন্দনীয় স্বভাবের শিকার হয়েছে।
ধর্মীয় শিক্ষা
Negative
কালের কন্ঠ
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার দিতে তুরস্কে মাহের জেইন
ইসলাম ধর্ম
ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে এবার তাদের দেখতে তুরস্কে গেলেন ইসলামী সংগীতশিল্পী মাহের জেইন। দেশটির কাহরামানমারাস প্রদেশে যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা সালামের সঙ্গে খাবার বিতরণে অংশ নেন তিনি। এক টুইট বার্তায় মাহের জেইন লেখেন, ‘আমরা কাহরামানমারাস শহরের কেন্দ্রে রয়েছি। সুবহানাল্লাহ, এখানকার ধ্বংসের দৃশ্য যুদ্ধাঞ্চলের কথা মনে করিয়ে দেয়। শহরটি এই বিশাল ভূমিকম্পের প্রধান কেন্দ্রস্থল। লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। আমাদের যেভাবে সম্ভব তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে।’ ইনস্টাগ্রামের এক পোস্টে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলে ধ্বংসের মাত্রা দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ আমরা কাহরামানমারাসে পৌঁছেছি। ভূমিকম্পের আঘাতে জর্জরিত শহরগুলোর মধ্যে এটি একটি। শহরটি খুবই ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। আমি ক্যামেরার মাধ্যমে এর ভয়াবহ চিত্র আপনাদের দেখানোর চেষ্টা করেছি; কিন্তু ক্যামেরা কখনো শতভাগ তা দেখাতে পারে না।’ গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় দুটি প্রচণ্ড ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু তুরস্কে নিহত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৪১৮ জন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় নিহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৮০০ জনের বেশি। মেহের জেইন বিশ্বখ্যাত একজন ইসলামী সংগীতশিল্পী। লেবানিজ-সুইডিশ বংশোদ্ভূত এই শিল্পী রক অ্যান্ড বোল্ড গায়ক, গীতিকার ও সংগীত নির্মাতা। ২০০৯ সালে তার প্রথম অ্যালবাম ‘থ্যাংক ইউ আল্লাহ’ প্রকাশ করেন। ২০১২ সালে ‘ফরগিভ মি’ নামে তার আরেকটি অ্যালবাম প্রকাশ পায়। আরব ও মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোর তরুণদের মধ্যে তাঁর গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
প্রথম আলো
রমজান মাসে রহমতের ফল্গুধারা
ইসলাম ধর্ম
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। (বায়হাকি) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় দানশীল। যখন রমজান মাস আসত, তখন হজরত জিবরাইল (আ.) প্রতি রাতেই নবীজির কাছে আসতেন, কোরআনের দারস তালিম করতেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রবাহিত বায়ু অপেক্ষা অধিক হারে দান–খয়রাত ও ভালো কাজ করতেন।’ অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘রমজান এলে রাসুল (সা.) এত বেশি দান–দক্ষিণা করতেন, যেন তা প্রবাহিত বায়ু।’ (বুখারি: ৪৭১১; মুসলিম: ২৩০৮) আল্লাহর রহমত পেতে সৃষ্টির প্রতি দয়াশীল হতে হবে। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি রহম করো, আসমানওয়ালা খোদা তাআলা তোমাদের প্রতি রহম করবেন।’ (তিরমিজি: ১৯২৪; আবু দাউদ: ৪৯৪১; আহমাদ: ৬৪৯৪) আল্লাহর গুণাবলিগুলো দুই প্রকার, জামালি ও জালালি। দয়া–মায়া, স্নেহ–করুণা, সৃজন–লালন ইত্যাদি হলো সিফাতে জামালি বা ইতিবাচক সৌন্দর্যমণ্ডিত গুণাবলি। মহিমা, প্রতাপ, প্রভাব, প্রতিপত্তি, প্রতিকার, প্রতিবিধান, ধ্বংসলীলা, শাস্তিদান ইত্যাদি হলো সিফাতে জালালি বা নেতিবাচক সৌন্দর্যমণ্ডিত গুণাবলি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সিফাতে জামালি বা সৃজনশীল গুণাবলির অন্যতম প্রধান গুণ রহমান। রহমত অর্থ দয়া, মায়া, কৃপা, করুণা, অনুকম্পা, অনুগ্রহ ইত্যাদি। কোরআন ও হাদিসে এ শব্দের দুটি রূপ ব্যবহৃত হয়েছে, তা হলো ‘রহমান’ ও ‘রহিম’। এই শব্দ কোরআন কুঞ্জিকা বিসমিল্লাহ শরিফের মধ্যেই রয়েছে দুই–দুবার। উম্মুল কোরআন বা কোরআনের জননী ফাতিহা শরিফের দ্বিতীয় আয়াতে একইভাবে আছে আরও দুবার। কোরআন নাজিলের মাস রমজান। কোরআনের সঙ্গেও রহমতের আর রহমানের সম্পর্ক সুনিবিড়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রহমান (আল্লাহ) কোরআন শেখাবেন বলে মানুষ সৃষ্টি করলেন।’ (সুরা-৫৫ রহমান, আয়াত: ১-৩) রহমান অর্থ পরম করুণাময়। এ শব্দ দুনিয়ার সব মুসলিম–অমুসলিম, বাধ্য–অবাধ্য, নারী-পুরুষ, জীব–নির্জীব সবার জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য; যিনি দয়া বা রহমত কারও প্রতি একমুহূর্তের জন্যও বন্ধ করে দেন না, তিনি রহমান। রহিম অর্থ অতীব মেহেরবান, অতিশয় দয়ালু। আল্লাহর এ দয়া শুধু মুমিন মুসলিমগণের জন্য খাস বা নির্দিষ্ট, যা প্রকাশিত হবে বিশেষত আখিরাতে। যাঁরা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)–কে মেনে ইসলামের অনুশাসন বা রীতিনীতি অনুসারে জীবনযাপন করেছেন, শুধু তাঁরাই মৃত্যুর পর কবর, মিজান, পুলসিরাত ও হাশরের ময়দানে আল্লাহর ‘রহিম’ নামের দয়া বা অনুগ্রহধন্য হয়ে নাজাত পেয়ে জান্নাতে যাবেন। আল্লাহর বান্দা যেন তাঁর গুণাবলি অর্জন করে, সে গুণে গুণান্বিত হয়ে আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি সেই গুণের প্রকাশ ঘটায়, এটাই তাঁর ইচ্ছা। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘আল্লাহর রং! আর আল্লাহর রং অপেক্ষা চমৎকার আর কোনো রং হতে পারে?’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৩৮) যেহেতু মানুষ আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি, তাই তাঁকে খেলাফতের দায়িত্ব পালনের যোগ্য হতে হলে অবশ্যই সেসব গুণ অর্জন করতে হবে। আল্লাহর রং বা গুণ কী? তা হলো, আল্লাহ তাআলার অসংখ্য গুণবাচক নাম। হাদিস শরিফে এসেছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, যাঁরা এগুলো আত্মস্থ করবেন; তাঁরা জান্নাতে প্রবেশ করবেন। (মুত্তাফাকুন আলাইহি)। আল্লাহ তাআলার নামগুলো আত্মস্থ করা বা ধারণ করার অর্থ হলো সেগুলোর ভাব ও গুণ অর্জন করা এবং সেসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য নিজের কাজে–কর্মে, আচার–আচরণে প্রকাশ করা তথা নিজেকে সেসব গুণের আধার বা অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা। আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করবেন, আমরাও তাঁর সৃষ্টির প্রতি দয়া করব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দয়ার বিনিময় দয়া ছাড়া আর কী হতে পারে?’ (সুরা-৫৫ রহমান, আয়াত: ৬০) আল্লাহ তাআলার দয়া বা রহমত সর্বকালে সর্বক্ষণ তাঁর বান্দার প্রতি বর্ষিত হতে থাকে; বিশেষ করে পবিত্র মাহে রমজানে এর ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। পবিত্র মাহে রমজানের বরকতে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে রাখা হয়। ফলে আদম সন্তান রোজা পালন, নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত, দান–সদকা, ফিতরা, জাকাত প্রদান ও জিকির–আসকার ইত্যাদিতে মশগুল হয়ে তাকওয়া অর্জনে অধিক সচেষ্ট হতে পারে। ●
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
সব মসজিদে একই নিয়মে খতম তারাবি পড়ার আহ্বান
ইসলাম ধর্ম
পবিত্র রমজান মাসে খতমে তারাবি পড়ার ব্যাপারে দেশের সকল মসজিদে একই পদ্ধতি অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। শুক্রবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাসে দেশের প্রায় সকল মসজিদে খতমে তারাবি নামাজে পবিত্র কুরআনের নির্দিষ্ট পরিমাণ পারা তিলাওয়াত করার রেওয়াজ চালু আছে। তবে কোনো কোনো মসজিদে এর ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এতে করে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী কর্মজীবী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে পবিত্র কুরআন খতমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে একটি অতৃপ্তি ও মানসিক চাপ অনুভূত হয়। পবিত্র কুরআন খতমের পূর্ণ সওয়াব থেকেও তারা বঞ্চিত হন। এ পরিস্থিতি নিরসনকল্পে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ৬ দিনে দেড় পারা করে ৯ পারা এবং বাকি ২১ দিনে ১ পারা করে ২১ পারা তিলাওয়াত করলে ২৭ রমজান রাতে অর্থাৎ পবিত্র শবে কদরে পবিত্র কুরআন খতম করা সম্ভব হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে, দেশের সকল মসজিদে, খতমে তারাবি নামাজে প্রথম ৬ দিনে দেড় পারা করে ও পরবর্তী ২১ দিনে এক পারা করে তিলাওয়াতের মাধ্যমে পবিত্র শবে কদরে পবিত্র কুরআন খতমের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সারা দেশের সকল মসজিদের খতিব, ইমাম, মসজিদ কমিটি, মুসল্লি এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
একদিনে গাজা ছেড়েছে ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি
ইসলাম ধর্ম
গাজা নিয়ে ‘বৈশ্বিক উদ্যোগ’ চালু করছেন এরদোগান মানবিক বিরতির জন্য ইসরাইলকে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরাইল স্থল অভিযান জোরদারের পরে ওই অঞ্চল ছেড়েছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, শুধু বুধবারই শহরটি ছেড়েছে প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা। ইসরাইলি বাহিনী গাজার উত্তর-দক্ষিণের রাস্তা দিয়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য নিরাপদে বের হওয়ার সুযোগ করে দিলে বাসিন্দারা গাজার উত্তরাঞ্চল ছাড়ে। বুধবার ইসরাইল বলেছিল, তারা গাজা শহর ঘিরে ফেলেছে এবং গাজা উপত্যকাকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। আর এখন তারা বলছে, হামাস গাজার উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। হামাস পরিচালিত গাজার কর্তৃপক্ষ বলছে, গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বেশ কিছু বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এতে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। সব মিলিয়ে গত সাত অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ১০ হাজার ৫৬৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়। তাদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু। জাতিসংঘ এখনো শক্ত ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। হামাস এবং ইসরাইল-দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, গাজায় যে হারে বেসামরিক নাগরিক মারা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর পরিচালিত অভিযানে ‘স্পষ্টভাবেই কিছু ভুল’ রয়েছে। একই সাথে হামাস মানুষকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। গাজায় আটক ২৩৯ সজন জিম্মির পরিবার তাদেরকে মুক্তি দেয়ার দাবি অব্যাহত রেখেছে। বিবিসি তাদের ঘনিষ্ঠ জনদের সাথে কথা বলেছে। মোট ১২জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে তিন দিনের জন্য মানবিক বিরতি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এই জিম্মিদের মধ্যে অর্ধেকই আমেরিকান। তবে বিরতির সময়সীমা এবং গাজার উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বিতর্ক চলছে। কিন্তু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এতে ‘মিথ্যা গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। একই সাথে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের জিম্মিদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত’ কোন অস্ত্রবিরতি হবে না। বিবিসির আন্তর্জাতিক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন ইসরাইলি বাহিনীর সাথে গাজায় প্রবেশ করেছেন। তিনি সেখানে কোন ভবন অক্ষত দেখতে পাননি। এদিকে, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ ফের বন্ধ করে দেয়া হয়েছে গাজা উপত্যকা ও মিসরের মধ্যকার সীমান্তপথ রাফাহ ক্রসিং। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বুধবার এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ‘রাফাহ ক্রসিং আজ থেকে বন্ধ রয়েছে। আমরা যদ্দুর বুঝতে পারছি, নিরাপত্তাজনিত কারণেই এমন হয়েছে।’ কবে নাগাদ এই সীমান্তপথ খুলতে পারে, তার কোনো আভাস বেদান্ত প্যাটেল দেননি। মিসর থেকেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি আসেনি। গাজা নিয়ে ‘বৈশ্বিক উদ্যোগ’ চালু করছেন এরদোগান : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান গাজা সঙ্কট সমাধানের জন্য একটি ‘বৈশ্বিক উদ্যোগ’ পরিকল্পনা করছেন, সরকারপন্থী সংবাদপত্র হুরিয়েত জানিয়েছে। এতে বলা হয়, এরদোগান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ফিলিস্তিনি ছিটমহলে ইসরাইলের অপরাধ বন্ধের প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন। ‘আমি প্রত্যেক বিশ্বনেতাকে ফোন করব, তাদের সাথে আলোচনা করব এবং প্রয়োজনে তাদের সাথে দেখা করব। আমি নেতা, প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে গাজা নিয়ে একটি যৌথ বৈশ্বিক উদ্যোগ শুরু করতে চাই,’ ৭ নভেম্বর তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এরদোগান বলেছেন। এ সপ্তাহান্তে সউদী আরবে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এর একটি জরুরী শীর্ষ সম্মেলনের পর তুর্কি নেতা তার ‘বৈশ্বিক উদ্যোগ’ চালু করার পরিকল্পনা করেছেন। ২৮ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে এক সমাবেশে ভাষণ দিয়ে এরদোগান ইসরাইলকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ ঘোষণা করার জন্য তার দেশের অভিপ্রায় ঘোষণা করেছিলেন। মানবিক বিরতির জন্য ইসরাইলকে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : ফিলিস্তিনে গাজা উপত্যকায় মানবিক বিরতি ঘোষণা করতে ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সাম্প্রতিক বক্তব্যে তেমন ইঙ্গিতই মিলেছে। জি-৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে গতকাল জাপানের রাজধানী টোকিও গিয়েছিলেন ব্লিনকেন। বিশ্বের শিল্পোন্নত ৭ দেশের এই জোটের এবারের বৈঠকের মূল এজেন্ডাই ছিল গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি। বৈঠক শেষে জি-৭ জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে গাজায় অবিলম্বে মানবিক বিরতি ঘোষণা এবং বেসামরিক লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়র জন্য করিডোরের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে হামাস ও ইসরাইলের চলমান সংঘাত নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ব্লিনকেন বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের ওই অঞ্চলে যে সঙ্কট চলছে, তা স্থায়ীভাবে সমাধানের একমাত্র উপায় হলো সেখানে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত সৃষ্টি করা এবং অবশ্যই সেটি করতে হবে রাজনৈতিক কূটনৈতিক ভাবে। তাই শেষ পর্যন্ত কূটনীতি ও রাজনীতির ওপরই ভরসা রাখতে হবে আমাদের। গাজা উপত্যকাকে আমরা কখনও সন্ত্রাস ও সহিংসতার কেন্দ্রে পরিণত হতে দিতে পারি না।’ ব্লিনকেন আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিন ও গাজা প্রশ্নে ওয়াশিংটনের অবস্থান একদম স্পষ্ট; আর তা হলো-কোনো দখলদারিত্ব চালানো যাবে না, গাজা উপত্যকা থেকে অবরোধ তুলে নিতে হবে এবং গাজা উপত্যকার বেসামরিক লোকজনকে তাদের আবাসস্থল থেকে উচ্ছেদ করা বন্ধ করতে হবে।’ কিন্তু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মানবিক বিরতি না দেয়ার বিষয়ে অটল রয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের জিম্মিদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত’ কোন অস্ত্রবিরতি হবে না। এদিকে, গাজায় আটক ২৩৯ সজন জিম্মির পরিবার তাদেরকে মুক্তি দেয়ার দাবি অব্যাহত রেখেছে। মোট ১২জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে তিন দিনের জন্য মানবিক বিরতি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এই জিম্মিদের মধ্যে অর্ধেকই আমেরিকান। তবে বিরতির সময়সীমা এবং গাজার উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বিতর্ক চলছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
ভোরের কাগজ
ধামইরহাটে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গোৎসব
হিন্দু ধর্ম
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় সারাদেশে ন্যায় ধামইরহাট ও যথাযোগ্য উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। তাই পূজামণ্ডপে গত শনিবার থেকে লাগাতার ভক্তদের ঢল নেমেছে। বোধনের মধ্যে দিয়ে ষষ্ঠী শুরু হয়ে সপ্তমীতে চক্ষু দান হয়ে অষ্টমীর পার হতে চলেছে। সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, মন্দিরগুলো নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রয়েছে। এখনও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে সোমবার ভোর সকাল থেকেই বৃষ্টি ঝরছে। কিন্তু থেমে নেই ভক্তদের ঢল। ৩২ মন্দিরে জেলা প্রশাসক মোঃ খালিদ মেহেদী হাসান সরকারি অনুদান প্রদান করেছেন। ধামইরহাট উপজেলার বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক। এ সময় ওসি মোজাম্মেল হক কাজী, প্রেস ক্লাব সভাপতি মোঃ আব্দুল আজিজ মণ্ডল, পূজা উদযাপনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বৌদ্ধ নাথ কর্মকার, রামজনম রবিদাস খোকা মাহাতো প্রমুখ। আয়োজকরা বলেন, এবারের পূজা জাঁকজমক পূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতিধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে আমাদের সাথে থেকে উৎসবকে সোহার্দ্য-সম্প্রতির বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখতে চাই।
ধর্মীয় উৎসব
Positive
আলোকিত বাংলাদেশ
মুসাফির যেভাবে নামাজ আদায় করবেন
ইসলাম ধর্ম
ব্যক্তিগত প্রয়োজন, অফিসিয়াল কাজকর্ম কিংবা আনন্দ-ভ্রমণসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের দূর-দূরান্তে সফর করতে হয়। এটা মানুষের জীবনযাত্রার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মানুষ নিজের আবাস্থলে থাকলে পুরোপুরি নামাজ আদায় করতে হয়। কিন্তু ভ্রমণে গেলে আল্লাহর পক্ষ থেকে আলাদা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তখন নামাজ সংক্ষেপ করাই ইসলামের বিধান। মূলত কোনো ব্যক্তি তার অবস্থানস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরে সফরের নিয়তে বের হয়ে তার এলাকা পেরিয়ে গেলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হয়ে যায়। নিজ এলাকা, গ্রাম বা শহর অতিক্রম করার পর থেকেই সফরের বিধান আরোপিত হবে। এ সময় সফরকারীকে মুসাফির বলে গণ্য করা হবে। সফরকারীর জন্য শরিয়তের বিধি-বিধানে কিছু শিথিলতা রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ তা’আলা তোমাদের নবির জবানে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত ও সফর অবস্থায় দুই রাকাত নামাজ ফরজ করেছেন’ (সহিহ মুসলিম: ৬৮৭)। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে, তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করায়— কোনো আপত্তি নেই’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০১)। মাগরিব ও ফজরে কসর নেই। এ দুই ওয়াক্তের ফরজ নামাজ যথাক্রমে তিন রাকাত ও দুই রাকাতই আদায় করতে হবে। ফরজ ছাড়া অন্য নামাজগুলো কসর হয় না। তাই সেগুলো আদায় করলে পরিপূর্ণভাবেই আদায় করতে হবে। বেতর তিন রাকাতই আদায় করতে হবে। তবে সুন্নাতে মুআক্কাদা নামাজ অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজের সাথে প্রতিদিন যে বারো রাকাত সুন্নাত নামাজ আমরা আদায় করে থাকি, এগুলো সফর অবস্থায় আবশ্যক থাকে না। ক্লান্তি বা ব্যস্ততা থাকলে এই নামাজগুলো ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে সময় সুযোগ থাকলে পড়ে নেওয়াই উত্তম। আর মুসাফির ব্যক্তি স্থানীয় ইমামের পেছনে ইকতিদা করলে সে ইমামের অনুসরণে পূর্ণ নামাজই আদায় করবে। (আল মাবসুত, সারাখসি ১/২৪৩)। এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মুসাফির যদি মুকিমদের সঙ্গে নামাজে শরিক হয় তবে সে তাদের মতো (চার রাকাত) নামাজ পড়ে (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৩৮৪৯)।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
প্রথম আলো
বাঙালি মুসলিম সমাজে নববর্ষ
অন্যান্য
সময় বয়ে চলেছে তার আপন গতিতে। একটি বছরের বিদায়ের মধ্য দিয়ে আরেকটি বছরের আগমন ঘটছে। একটি সালের পরিবর্তন মানে বর্ষপঞ্জিতে এক বছরের যোগ। একটি বছরের বিদায়লগ্নে নতুন আরেকটি বছরের আগমন নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তাই জীবনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের মতো বর্ষ গণনাকেও জরুরি বলে মনে করা হয়। সকলে বিগত বছরটির প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির অঙ্ক কষেন এবং আগত বছরটিকে নতুন স্বপ্নে বরণ করার প্রস্তুতি নেন। দিবা-রাত্রির পরিবর্তন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে এই দিনগুলোর আমি পর্যায়ক্রমে আবর্তন ঘটাই।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৪০) সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই ইহজগতে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে মানুষের পথচলা। ইসলামে সময়ের সদ্ব্যবহারের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। সূরা আল-আসরের প্রারম্ভিক আয়াতে যুগের শপথ গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে সত্য, ন্যায়পরায়ণতা ও ধৈর্য-সহনশীলতার মাধ্যমে মানবজাতি তার আয়ুষ্কাল বা সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারে এবং নিজেদের অনিষ্টের কবল থেকে রক্ষা করতে পারে। সময়ের আবর্তনে ঘটমান সবকিছু থেকে আল্লাহ তাআলা মানুষকে উপদেশ গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘এবং তাদের আল্লাহর দিবসগুলো দ্বারা উপদেশ দাও। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে পরম ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ লোকদের জন্য।’ (সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৫) বাঙালি জাতির জীবনে বাংলা নববর্ষ উৎসব একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। মৌসুমি ফসল উৎপাদন ও ঘরে তোলাকে কেন্দ্র করে যুগে যুগে উপমহাদেশে বাংলা সনসহ একাধিক সন গড়ে উঠেছে। বাংলা নববর্ষ উৎসবে প্রথমদিকে মুসলমানরা পুরোপুরি সম্পৃক্ত ছিল। বৈশাখী অনুষ্ঠান ছাড়াও আবহমান বাংলার গ্রামীণ লোকজ অনুষ্ঠানে মুসলমান ও হিন্দু কৃষিজীবীরা একাত্মÄ হতেন। নববর্ষ পৃথিবীর সর্বত্রই দেশীয় সংস্কৃতি, জনগণের অনুভূতি, আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে উদ্যাপিত হয়। সবার প্রত্যাশা থাকে নতুন বছরে অতীতের সব গ্লানি ধুয়ে-মুছে নতুনভাবে শুরু হোক জীবন, সৌভাগ্যের রাজটীকা শোভিত হোক ললাটে, বিষাদ ও বিড়ম্বনার অবসান হোক! ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম বণিক বা শাসকেরা যখন ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন, তখন তাঁদের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে কৃষ্টি-সভ্যতার অংশবিশেষ আমাদের সংস্কৃতিতে মিলিত হয়েছে। আরবরা ইসলাম গ্রহণের পরও অনেক ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান অকৃত্রিম রেখেছিল। বাংলা সন-পরবর্তী একাধিক সন তৈরিতে ইসলামের প্রভাব সুস্পষ্ট ছিল। ১৭৮২ সালে পিতা হায়দার আলী খানের ইন্তেকালের পর টিপু সুলতান মহীশূর রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি পিতার নামে নয়, বরং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াত লাভের বছরকে গণনায় এনে মুহাম্মদী সন নামে একটি নতুন সাল প্রবর্তন করেন। এটিই নবী করিম (সা.)-এর নবুওয়াত লাভের স্মারকে উপমহাদেশে প্রথম সন। সম্রাট আকবরের সময় ফসলের মাধ্যমে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে ফসলি সন নামে আরও একটি সন চালু ছিল। এ মাসগুলোর নাম হিজরি মাসের নামেই ছিল। বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ও আরাকানে মগি সন নামে আরেকটি সন প্রচলিত ছিল। এটিও হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তনের মতোই। হিজরি সনের আদলে এ অঞ্চলে আরও গড়ে উঠেছিল বিলায়তি সন, আসলি সন, ইলাহী সন প্রভৃতি। এসব সনের উৎপত্তি ও তারিখ গণনার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে মহানবী (সা.), নবুওয়াত, ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিষয়গুলো সম্পৃক্ত ছিল। মোগল সম্রাট আকবর প্রবর্তিত সেই বাংলা নববর্ষই আজ বাঙালিদের প্রাণের অনুষ্ঠান। যে বাংলায় আজ নববর্ষ উদ্যাপিত হচ্ছে একসময় তা ছিল প্রাচীন কৃষিসভ্যতার অংশ। বাংলার কৃষি অর্থনীতিতে পুঁজিবাদের ছোঁয়া তখনো লাগেনি। নগদ অর্থের প্রবাহ কম থাকায় দোকানদার-মহাজনের সঙ্গে শ্রমজীবী কৃষকেরা বাকি-বকেয়ায় জড়িত হয়ে পড়তেন। সেই বকেয়া শোধের কাঙ্ক্ষিত দিন ছিল পয়লা বৈশাখ। মহাজন-দোকানদারেরা এ উপলক্ষে আয়োজন করতেন বর্ণাঢ্য হালখাতা অনুষ্ঠান। দেনাদারকে চিঠির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে জানিয়ে দিতেন দেনা পরিশোধ করার জন্য। দেনাদারেরাও নানাভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন সে অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য। দেনা শেষে দোকানদার-মহাজনেরা মিষ্টি, দই-সন্দেশ দিয়ে তাঁদের আপ্যায়ন করাতেন। খাজনা পরিশোধের পর প্রজাদের মিষ্টিমুখ করানোরও রেওয়াজ ছিল। বঙ্গীয় মুসলমানরা এ সময় ভালো খাবার-দাবারের বন্দোবস্ত করেন। পোশাকপরিচ্ছদেও থাকে পরিপাটির ছাপ। প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার মুসলমানরা ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি পুরোনো ঘরদোরের সংস্কারে নিয়োজিত হন। নীতিমান ব্যবসায়ীরা হালখাতার উৎসবে মেতে ওঠেন। এ ধারাটি এখনো অক্ষুণ্ন আছে মুসলিম সমাজে। মুসলমান ব্যবসায়ীরা বৈশাখের প্রথম দিনে দোকান পরিষ্কার, ঝাড়মোছ করার পর দোয়ার মাহফিল ও মিলাদ শরিফ পড়ানোর বন্দোবস্ত করেন। দেনা-পাওনা মেটানোর পর দেনা পরিশোধকারীদেরও মিষ্টিমুখে বিদায় করার সাংস্কৃতিক রেওয়াজ এখনো মুসলিম সমাজে লক্ষণীয়। লৌকিক বাংলার ধারাবাহিকতায় সিক্ত বাঙালি মুসলমান সমাজে নববর্ষের প্রথম দিনে হতদরিদ্র মানুষের জন্য কাঙালিভোজ ও শিরনি-পায়েস খাওয়ানোর রেওয়াজও ছিল। আবহমান কাল থেকে বাংলা নববর্ষের সূচনালগ্ন পয়লা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির একটি অনন্য দিন। দেশের প্রতিটি ঘরে বিরাজ করে নবান্নের উৎসবের আমেজ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইহলোকিক কল্যাণ ও পরকালীন সফলতার প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতিটি দিন, মাস ও বছর মানুষের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। সময়ের যথার্থ মূল্য দিতে পারলেই কেবল জীবনে সফলকাম হওয়া যাবে। পূর্ব দিগন্তে প্রভাতের সূর্য হাসুক, খুশির বার্তা নিয়ে পাখিরা মুক্ত মনে গান গেয়ে উড়ুক খোলা আকাশে। মুছে যাক ব্যর্থতার সব স্মৃতিচিহ্ন। সূচনা হোক নতুন বছরের। হারিয়ে যাওয়া দিনের প্রাপ্তি প্রত্যাশার হিসাব। স্বপ্নিল আগামী গড়ার দৃঢ়প্রত্যয়ে সূচিত হোক নতুন দিনের, নতুন বছরের। বাংলা সন হোক আমাদের জীবনে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার অনুপ্রেরণা!
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Neutral
ভোরের কাগজ
রমজানে বিএনপির কর্মসূচি ধর্মীয় মূল্যবোধের বিপরীত
ইসলাম ধর্ম
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রমজান মাসে কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণা দিয়ে বিএনপি জনগণের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অনুভূতির বিপরীতে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, রমজান মাস সংযমের মাস। এ মাসেও বিএনপির নেতারা তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি চলমান রাখার কথা জানিয়েছে। রমজান মাসে কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি জনগণের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অনুভূতির বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। কাদের বলেন, তাদের এই কর্মসূচি রমজানের মধ্যেও জনভোগান্তি সৃষ্টি করবে। অর্থাৎ তারা দেশের জনগণকে কোনওভাবেই স্বস্তিতে থাকতে দিতে চায় না। আমরা আগেই বলেছি, রমজানে ঘোষিত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপি আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে তাদের তথাকথিত সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে দেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংসের পাঁয়তারা করে আসছে বিএনপি। কিন্তু তাদের ডাকে জনগণ কখনোই সাড়া দেয়নি। বরং তারা জনগণ দ্বারা বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ফলে বিএনপি তথাকথিত আন্দোলনের মাধ্যমে গণসম্পৃক্ততার কোনও স্বরূপ তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি সর্বদাই গণবিরোধী অবস্থানে থেকে রাজনীতি করে আসছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা পরোক্ষভাবে বন্দিত্বের কথা বলছে; তারা নাকি স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারে না। অথচ তারা নিয়মিতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে, চড়া গলায় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভুলের চোরাবালিতে আটকা পড়েছে, ভুল রাজনীতির ফ্রেমে বন্দি হয়ে আছে। তারা খুনি-দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারী তারেক রহমানের নেতৃত্বের দাসত্বে বন্দি হয়ে আছে। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় বা বিবেক জাগ্রত না হলে তারা এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবে না। বন্দি অবস্থায় থাকতে থাকতে ভ্রমের কারণে তারা তাদের বন্দিত্বের দায়ভার সরকারের উপরে চাপানোর অপচেষ্টা করছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
ভোরের কাগজ
ঈদের আগে সুনামগঞ্জে পরিবহন ধর্মঘট
অন্যান্য
সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসির বাস চালু করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সোমবার ভোর ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘট চলছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগ মুহূর্তে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। হঠাৎ এ ঘোষণায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। সুনামগঞ্জ পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা বলছেন, সোমবার থেকে হঠাৎ করে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসির বাস চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ সুনামগঞ্জে ২টি মালিক সমিতি ও একটি ট্রেড ইউনিয়ন আছে। কোনো জেলায় নতুন বাস চালু করতে হলে মালিক-শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে হয়। কিন্তু প্রশাসন কিংবা কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই অঘোষিত ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিআরটিসির বাস চালুর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হয়, এই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলবে। সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিসবাহ উদ্দিন জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জে মোট ৪টি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ থাকার পরও কেউ আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত বিআরটিসির বাস বন্ধ করা না হয় আমাদের এই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলবে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
কালের কন্ঠ
যুক্তরাজ্যে সব ধর্মের লোকদের মসজিদে আসার আমন্ত্রণ
ইসলাম ধর্ম
সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যবোধ তৈরি করতে যুক্তরাজ্যে এবারও অনুষ্ঠিত হবে ‘ভিজিট মাই মস্ক’ দিবস। মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের (এমসিবি) তত্ত্বাবধানে দেশটির আড়াই শর বেশি মসজিদে পালিত হবে দিবসটি। আগামী ২৩-২৪ সেপ্টেম্বর দুই দিন মসজিদগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ওই দিন মসজিদ প্রাঙ্গণে থাকবে বিভিন্ন ইসলামী প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের অধিকাংশ মসজিদ প্রতিবছর এই আয়োজনে অংশ নেয়। এক বিবৃতিতে এমসিবি জানিয়েছে, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও ভিজিট মাই মস্ক দিবসটি পালিত হবে। মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের নেওয়া এই উদ্যোগে আড়াই শর বেশি মসজিদ অংশ নেবে। এই সময় মসজিদগুলো সব ধর্মের লোকদের জন্য সার্বক্ষণিক উন্মুক্ত থাকবে।এতে স্থানীয় সব সম্প্রদায়ের সঙ্গে মসজিদগুলোর সেতুবন্ধ তৈরি হবে।’ এই আয়োজনে অংশ নিতে মসজিদ কর্তৃপক্ষকে ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে বলা হয়। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘হ্যাশট্যাগ ভিজিট মাই মস্ক’ লিখে চলছে প্রচারণা। এমসিবি এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছে, ব্রিটেনের ৭০ শতাংশ মানুষ অন্য ধর্মের উপাসনাস্থলের ভেতরের অংশ কখনো দেখেনি।আর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ কখনো মসজিদের ভেতরের অংশ দেখেনি। তাই সব ধর্মের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক জানাশোনা ও সুসম্পর্ক গড়তে মসজিদ পরিদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যেন ইসলাম ও মুসলিমদের জীবনযাপন সম্পর্কে অন্য ধর্মের মানুষও ধারণা লাভের সুযোগ পান।২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার ভিজিট মাই মস্ক দিবসটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বছরই সবার মধ্যে মসজিদভিত্তিক ব্যতিক্রমী এ কর্মসূচি ব্যাপক সাড়া ফেলে।ওই বছর যুক্তরাজ্যের ২০টি মসজিদ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলেও বর্তমানে এ সংখ্যা বেড়ে তিন শর কাছাকাছি পৌঁছে। দিনটিতে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিরোধীদলীয় নেতা, জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা স্থানীয় মসজিদ পরিদর্শন করেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
যায়যায়দিন
ইফতারের সময় কুয়েতে কামানের গোলা ছুড়ে কেনো?
ইসলাম ধর্ম
বিশ্বজুড়ে চলছে এখন মাহে রমজান। এই রমজান মাসকে কেন্দ্র করে উৎসবের নগরীতে পরিণত বিশেষ অনেক শহর বন্দর। বিশেষ করে তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে এই সংস্কৃতি দেখা যায়। সম্প্রতিক সময়ে লন্ডনেও বর্ণিল সাজে সাজানো হয় রমজান উপলক্ষ্যে। রমজান মাসকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী রয়েছে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ। রমজানে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে প্রতিদিন কামান দাগিয়ে ইফতারের সময় জানিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ বেশ পুরোনো। কুয়েতও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশে ইফতারের সময় হলেই দেখা যায় বিভিন্ন মসজিদে সাইরেন কিংবা ‘ইফতারের সময় হয়েছে, আপনারা ইফতার করে নিন’ বলে দেওয়া হয়। অন্যদিকে কুয়েতে ইফতারের সময় জানাতে কামানের গোলা ছোড়ার আওয়াজ শোনানো হয়। যা ‘মিডফা আল ইফতার’ নামে পরিচিত। রোজাদারদের জানাতে দেশটির শাসক শেখ মোবারক আল সাবাহ এ রীতি চালু করেন বলে জানা যায়। এটি কুয়েতের ঐতিহ্যও বটে। ইফতারের সময় হলেই দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে। যেটা দেখে রোজাদাররা ইফতার শুরু করেন। কুয়েত ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশে এ রীতি চালু আছে। কুয়েত সিটির লিবারেশন টাওয়ারের পাশেই নায়েফ প্রাসাদে এ কামান বসানো হয়েছে। নায়েফ প্রাসাদটি ১৯১৯ সালে শেখ সালেম আল-মুবারক আল-সাবাহ-এর শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল। কুয়েতে প্রথম কামানটি ১৯০৭ সালে শেখ মুবারক আল-সাবাহ-এর শাসনাধীনে আসে। কামানটি ছিল ইরানের গভর্নরের কাছ থেকে পাওয়া একটি উপহার ছিল। নায়েফ প্রাসাদের বর্তমান কামানটি ১৯৯২ সালে বাহরাইন রাজা থেকে প্রতিশ্রুতি হিসেবে এসেছে। এই কামান দাগাতে তিনজন ইউনিফর্মধারী গার্ড কাজ করেন। কামানের গোলা ছোড়ার এ দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন স্থানীয় নাগরিক ও প্রবাসীরা। তাদের কাছে এটি মনোমুগ্ধকরও বটে। বলা হয়ে থাকে, মিশরের তৎকালীন শাসক খোস কাদাম একদিন সূর্যাস্তের সময় নতুন একটি কামান পরীক্ষা করতে গিয়ে ঘটনাক্রমে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেলেন। সেটা ছিল রমজানের মাগরিবের সময়। সমগ্র কায়রোয় শব্দটি শোনা গিয়েছিল। স্থানীয়রা মনে করেছিল, ইফতারের সময় হয়েছে, তা জানাতে এটি নতুন শাসকের নতুন পদ্ধতি। বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সমাজের অভিজাত ব্যক্তিরা সুলতানের কাছে গিয়েছিলেন এবং তার সদয় অঙ্গভঙ্গির জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান। তখন থেকে এ ঐতিহ্য আজ অবধি অব্যাহত রয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
দৈনিক ইনকিলাব
আলজেরিয়ায় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ উদ্বোধন
ইসলাম ধর্ম
আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ও আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বড় মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) আলজিয়ার্সের গ্র্যান্ড মসজিদ উদ্বোধন করেন দেশটির রাষ্ট্রপতি আবদেল মাদজিদ তেবোউন। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্য গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স স্থানীয়ভাবে জামাআ এল-জাজাইর নামে পরিচিত। মসজিদটিতে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারবেন। আলজিয়ার্সের গ্রেট মসজিদে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মিনার রয়েছে-যার উচ্চতা ২৬৫ মিটার (৮৬৯ ফুট)। রাষ্ট্রীয় খরচে ২০১০ এর প্রায় পুরো দশক ধরেই একটি চীনা নির্মাণ কোম্পানি মসজিদ তৈরির কাজটি করেছে। মসজিদটির নকশায় রয়েছে আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের সমন্বিত ছোঁয়া। এতে আলজেরিয়ার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে আরব এবং উত্তর আফ্রিকার সমৃদ্ধিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মসজিদটিতে রয়েছে হেলিকপ্টার অবতরণের একটি প্যাড। মসজিদের সাথে সংযুক্ত লাইব্রেরিতে রাখা যাবে প্রায় ১০ লাখ বই। আল-জাজিরা জানায়, প্রায় ৭০ একর জায়গার উপর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদটি প্রায় পাঁচ বছর ধরেই পর্যটক এবং রাষ্ট্রীয় দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। কেবল বিলম্বিত হয়েছে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
ইসরাইলের বাধার মুখেও আল-আকসায় ১ লাখ ২০ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়
ইসলাম ধর্ম
পবিত্র রমজান মাসের দ্বিতীয় জুমায় আল-আকসা মসজিদে শুক্রবার একসঙ্গে নামাজ পড়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার মুসল্লি। দখলদার ইসরাইলের নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যাপক বাধা সত্ত্বেও এদিন পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের আল-আকসায় জড়ো হন হাজার হাজার মুসল্লি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মুসলমানদের পবিত্রস্থান আল-আকসার কালান্দিয়া, জেইতুন ও বেথলেহেম চেকপয়েন্টে সামরিক তৎপড়তা জোরদার করেছে ইসরাইল। আল-আকসায় প্রবেশের অনুমোদন তাদের কাছে নেই দাবি করে শত শত মুসলিমদের ফিরিয়ে দেয় ইসরাইলের সেনাবাহিনী। মসজিদের চারপাশে শত শত সেনা মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। রমজান মাসেও আল-আকসায় প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে দখলদার বাহিনী। এর মধ্যেও ১ লাখ ২০ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জেরুজালেমের ইসলামিক প্রতিষ্ঠান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে বিভিন্ন জায়গায় চেকপয়েন্ট বসিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে ইসরাইল। এছাড়া ওল্ড সিটির উন্মুক্ত গেইটে লোহার ব্যারিকেড বসিয়েছে তারা। ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান হলো আল-আকসা মসজিদ। তবে আল-আকসায় প্রবেশে মুসলিমদের যে একচ্ছত্র অধিকার রয়েছে সেটি কেড়ে নিতে চায় দখলদার ইসরাইল। এমনকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আল-আকসায় ইবাদতের জন্য একমাত্র মুসলিমদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু সেটির তোয়াক্কা করে না ইসরাইলি সরকার। পবিত্র রমজান মাসেও যেন মুসল্লিরা যে আল-আকসায় যেতে না পারেন সেজন্য সেখানে প্রবেশের আগে পূর্ব অনুমতির ব্যবস্থা করেছে ইসরাইল। এর আগে রমজানের প্রথম জুমায় আল-আকসায় ৮০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেছিলেন। কিন্তু ওইদিন মসজিদটিতে শুধুমাত্র ৫৫ বছরের উর্ধ্বের পুরুষ এবং ৫০ বছরের উর্ধ্বের নারীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। এছাড়া আগে থেকেই অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা দিয়েছিল ইসরাইল। ফলে বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি প্রথম জুমায় আল-আকসায় প্রবেশ করতে পারেননি। গত বছরের অক্টোবর গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধের দোহাই দিয়ে আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিদের প্রবেশ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু রমজান মাস আসার পর তারা নমনীয়তা দেখাতে বাধ্য হচ্ছে। যদিও ইসরাইলের উগ্রপন্থিমন্ত্রী ইতামার বেন গিভির চেয়েছিলেন রমজানেও যেন আল-আকসায় মুসল্লিদের প্রবেশ করতে না দেয়া হয়। তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার এ প্রস্তাবে রাজি হননি। কারণ নেতানিয়াহু ভয় পেয়েছিলেন এই ভেবে যে, যদি রমজানেও মুসল্লিদের পবিত্র এ মসজিদে প্রবেশ করতে না দেয়া হয় তাহলে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশী হতে পারে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
ব্রুনাই-মালয়েশিয়ায় রোজা শুরু মঙ্গলবার
ইসলাম ধর্ম
ব্রুনাই এবং মালয়েশিয়ায় রোজা শুরুর তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। চাঁদ দেখা না যাওয়ায় দেশ দুটিতে আগামী মঙ্গলবার (১২ মার্চ) থেকে শুরু হবে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। ব্রুনাই জানিয়েছে, রাষ্ট্রের কোথাও চাঁদ দেখা না যাওয়ায় আগামী মঙ্গলবার থেকে রমজান মাস শুরু হবে। অপরদিকে মালয়েশিয়া বলেছে, রমজানের অর্ধচন্দ্র দেখা সম্ভব হয়নি। ফলে আগামী মঙ্গলবার পবিত্র রমজান মাসের প্রথমদিন হবে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রও রোজা শুরুর তারিখ ঘোষণা করেছে। অস্ট্রেলিয়ার সরকার জানায়, আগামীকাল সোমবার শেষ হবে শাবান মাস। আর মঙ্গলবার (১২) হবে রমজান মাসের প্রথমদিন। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে আগামীকাল সোমবার থেকে রোজা শুরু হবে। উত্তর আমেরিকা ফিকাহ কাউন্সিল এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, রমজানের প্রথমদিন হবে আগামীকাল সোমবার, মার্চ ১১, ২০২৪। তারাবির নামাজ শুরু হবে রবিবার রাতে।
ধর্মীয় উৎসব
Positive
ইত্তেফাক
হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করতে চলেছে ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্টের মেয়ে
হিন্দু ধর্ম
মুসলমান থেকে হিন্দু হতে চলেছে ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট সুকার্নোর তৃতীয় কন্যা সুকমাবতী সুকার্নোপুত্রি। সিএনএন ইন্দোনেশিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার বালিতে একটি 'সুধি বদানি' অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সনাতনী হবেন সুকমাবতী। হিন্দু ধর্মে তার আগ্রহের পিছনে রয়েছেন দাদী ইদা আয়ু নিয়োমন রাই শ্রিম্বেন। সুকমাবতীর বাবা ইন্দোনেশিয়া ন্যাশনাল পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। কানজেঙ্গ গুস্তি পানগেরান আদিপতি আর্য মাঙ্গকুনেগারার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তার। ১৯৮৪ সালে বিচ্ছেদ। সুকমাবতীর আইনজীবী জানান, হিন্দুত্বের বিষয়ে বিশাল জ্ঞান রয়েছে সুকার্নোর মেয়ে। হিন্দু ধর্মের আচার-আচরণ সম্পর্কেও জানেন। ২০১৮ সালে সুকমাবতীর বিরুদ্ধে উঠেছিল ইসলাম অবমাননার অভিযোগ। ইন্দোনেশিয়ার ফ্যাশন উইকে একটি কবিতা পড়েছিলেন তিনি। সুকমাবতী বলেছিলেন, বোরখা পড়ার চেয়ে ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী খোঁপা অনেক ভালো। তার পরই সুকমাবতীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করে উলেমাদের সংগঠন। তার গ্রেফতারির দাবি করেন। ওই ঘটনার পর সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষমা চান তিনি। ইন্দোনেশিয়া মুসলিম প্রধান দেশ। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যা সেখানে। একটা সময় হিন্দুদের আধিক্যও ছিল সেখানে। এখনও সরকারিভাবে দেশের ৬টি ধর্মের মধ্যে অন্যতম হিন্দু।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
প্রথম আলো
কাজাখস্তানে রোজা
ইসলাম ধর্ম
কাজাখস্তানে ৭০ শতাংশ মুসলমান। কাজাখদের ইফতার, সাহ্‌রি, তারাবিহ আর ঐতিহ্যের মিশেলে রমজান মাস হয়ে উঠে উৎসব–আনন্দের মাস। দোকানিরা রমজানকে স্বাগত জানান। নামাজি মুসল্লিরাও মসজিদ ও নামাজের স্থানগুলো ধোয়ামোছায় রোজার প্রাথমিক প্রস্তুতি সমাপ্ত করেন। বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা রাস্তায় নেমে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে নানান আরবি গান গাইতে থাকে। সর্বত্র একটি ধর্মীয় আবেগ ইমেজ তৈরি হয়। কাজাখদের ঐতিহ্যবাহী রীতি হলো, রমজানে সব আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করা ও উপহার পাঠানো। যেসব আত্মীয়স্বজনের ভেতরে কোনো বিরোধ থাকে, রমজান আসার আগেই সে বিরোধ মিটিয়ে ফেলা হয়। কাজাখদের প্রধান ইফতারি হলো কুমিস আর শুবাত। কুমিস তৈরি হয় ঘোড়ার দুধ দিয়ে, শুবাত উটের দুধে। এর সঙ্গে ফলমূল আর শরবত। শীতপ্রধান দেশ হওয়ায় ইফতারে শরবতের পরিবর্তে চায়ের চাহিদাও থাকে। কাজাখদের রন্ধনশৈলী পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। বাহারি রন্ধনের জন্য পর্যটকদের প্রথম পছন্দ কাজাখস্তান। উট, ভেড়া ও ঘোড়ার গোশতে প্রস্তুত হয় করা নানান ধরনের খাদ্য। উট আর ভেড়ার দুধ থেকে তৈরি করা হয় নানা ধরনের মুখরোচক ইফতারি। কাজাখস্তানে রোজা কাজাখস্তানে প্রায় দুই হাজার বড় মসজিদ আছে। সব মসজিদেই রোজাদারদের জন্য উন্মুক্ত মেহমানদারির ব্যবস্থা থাকে। এই মেহমানদারির নাম মাতাইমুর রহমাহ, অর্থাৎ আল্লাহর রেস্তোরাঁ। মাতাইমুর রহমাহ পরিচালনার জন্য উন্মুক্ত দানের ব্যবস্থা আছে। খতমে তারাবিহতে কাজাখদের আগ্রহ বেশি। সহজে কেউ খতমে তারাবিহ ছাড়তে চান না এবং মসজিদ ছাড়া কেউ একাকী তারাবিহ পড়েন না। কাজাখস্তানের শহরের মসজিদগুলোয় একটি অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। এটি কাজাখদের ঐতিহ্যের অংশ। তারাবিহর পর চালক বা গাড়ির মালিক গাড়ি নিয়ে মুসল্লিদের অপেক্ষা করেন। এরপর তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেন। কোনো ভাড়া নেন না। গাড়ির মালিক রমজানে অতিরিক্ত নেকি ও ফজিলত অর্জন করতে চান। রমজানের কোরআন তিলাওয়াতেও কাজাখদের আগ্রহ। এভাবে সুন্দর সব ইবাদত আর কাজের মধ্য দিয়ে কাজাখরা রমজানকে বিদায় জানান।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
দেশের বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কেউ নস্যাৎ করতে পারবে না : জিএম কাদের
হিন্দু ধর্ম
শারদীয় দুর্গা উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। শারদীয় দুর্গা উৎসব উপলক্ষ্যে আজ সোমবার দেয়া এক বাণীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালিদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবে দেশের সকল মানুষের প্রতি অফুরান ভালোবাসা জানিয়েছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সনাতন ধর্ম মতে, “দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন” এর প্রত্যাশায় শারদীয় দুর্গা উৎসব উদযাপিত হয়ে থাকে। এসময় সমাজের অন্যায়, অবিচার, অশুভ এবং অশুর শক্তি দমনের মাধ্যমে বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরম ভক্তিকে আরাধনা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, সার্বজনীন দুর্গা উৎসবে এদেশের মুসলিম-বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও আনন্দ মুখর পরিবেশে অংশ নেয়। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে বিরাজমান হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কেউ নস্যাৎ করতে পারবে না। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেশ পরিচালনার সময় ১৯৮৯ সালে জন্মাষ্টমীর আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জন্মাষ্ঠমীর শুভ দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। পল্লীবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট। যোগ্যতার ভিত্তিতে সকল ধর্মাবলম্বীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেছিলেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এছাড়া, প্রতিটি পূজা-পার্বণ, মন্দির নির্মাণ ও মন্দির সংস্কারে পল্লীবন্ধুর আন্তরিক সহায়তা ছিল সর্বজনবিদিত। তিনি, সবার শান্তিময় উজ্জল ভবিষ্যত কামনা করেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
রমজানে অধীনস্থ কর্মচারীর কাজ হালকা করুন
ইসলাম ধর্ম
বেঁচে থাকতে হলে একে অপরের ওপর নির্ভর করতে হয়। আজ যারা অফিসপ্রধান তারাই তাদের অধীনস্থ কর্মচারীর কারণে খুব সহজেই অফিস পরিচালনা করতে সক্ষম। আপনি একটু ভাবুন, আপনার নিম্ন কর্মচারী যদি না থাকত, অফিসের কাজে আপনার কতইনা বেগ পেতে হতো। অফিস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ সব কাজই প্রধানের পক্ষে করা কষ্টের হতো। আজ যারা মালিকপক্ষ, যারা শিল্পপতি, দামি বাড়িতে বসবাস ও দামি গাড়িতে চলাচল করে, আনন্দে উল্লাসে সময়কে অতিবাহিত করে একটু লক্ষ্য করুন, আপনার এ আনন্দের পেছনে রয়েছে আপনারই অধীনস্থ শত শত শ্রমিক বা কর্মচারীর হাজারো ফোঁটা ঘাম। একজন কর্মচারীর গোটা জীবন কেটে যায় আপনার কারখানায়। মালিকের মুখে হাসি ফোটাতে, মালিককে লাভবান করতে অসহনীয় পরিবেশে কাজ করেন তারা। এমনকি মালিককে লাভবান করতে অতিরিক্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেন হাসিমুখে। সপ্তাহ, মাসজুড়ে কাজ করে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও মন একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট তারা ব্যতীত অন্যরা খুব কমই বোঝে, যে শ্রমিক দিয়ে আমরা আজ বিত্তশালী। পরিবারকে নিয়ে আনন্দে কাটাচ্ছি। তাদের অবহেলা করা উচিত নয়। মাহে রমজানে অধীনস্থ কর্মচারীদের থেকে কাজের বোঝা কমিয়ে দেওয়া ভালো কাজ। একজন কর্মচারীর রোজা রেখে পরিপূর্ণভাবে কাজ সম্পাদন করা যে কত কঠিন, উপরস্থ কর্মচারী কিংবা মালিকপক্ষের অনুভব করা দরকার। রমজান মাসে তাদের ওপর কষ্টকর সাধ্যাতীত কাজের বোঝা চাপানো ঠিক নয়। এটা রোজাদারকে কষ্ট দেওয়া হয়। রোজা রেখে তারা অধিক কষ্টসাধ্য কাজ করলে বেশি ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে। তারা নিজ পরিশ্রম দিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে ১২টি মাসের ১১টিতেই কাজ করল। রোজার এই একটি মাসে তাদের অধীনস্থ কর্মচারীদের কাজকে হালকা করে দেওয়া ভালো কাজ। এ ব্যাপারে বলেন, ‘এ মাসে (রমজানে) যারা দাস-দাসীদের প্রতি সদয় ব্যবহার করেন, অর্থাৎ তাদের কাজের বোঝা হালকা করেন, আল্লাহ তাদের দয়াপরবশ হয়ে ক্ষমা করে দেন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করেন।’ শান্তির ধর্ম ইসলামে মানুষের পার্থক্য করেনি। মাটির কবরেই সবার শেষ ঠিকানা। ধনী-গরিব, মালিক-শ্রমিকের কোনো পার্থক্য করে না। একটি প্রতিষ্ঠানে সবাই সমান। মালিক নিজে যা খাবে ও পরবে, অধীনস্থ কর্মচারীকে তা-ই খাওয়াবে ও পরাবে। উঁচু-নীচুর মন মানসিকতা তৈরি করবে না। প্রিয় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের ভাইদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। অতএব, যার অধীনে কোনো ভাই থাকে তাকে তা-ই খাওয়াবে যা সে নিজে খায়, তাকে তা-ই পরাবে যা সে নিজে পরে এবং তাকে সাধ্যের অধিক কাজ চাপিয়ে দেবে না। অগত্যা তাকে দিয়ে যদি কোনো কষ্টের কাজ করাতে হয়, তাহলে তাকে সাহায্য করবে।’ বুখারি ও মুসলিম। রমজানে বাসার কাজের ছেলেমেয়েদের অতিরিক্ত কাজ করানো হয়। অল্প বেতন দিয়ে পুরো পরিবারটিকেই গুছিয়ে রাখে তারা। একটু ভুল হলেই বকাঝকা পর্যন্ত করে। কাজের ছেলেমেয়ের হাত দিয়ে সামান্য কিছু নষ্ট হলেই শুরু হয় বেদম প্রহার বা নির্যাতন। অথচ নিজের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে কোনো কিছু নেই। রমজানে অতিরিক্ত রান্নার কারণে মালিকপক্ষের উচিত তাকে সাহায্য করা।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
Dhaka Tribune
আরব আমিরাতে সন্ধান মিলল ইসলামপূর্ব যুগের খ্রিস্টান মঠের
ইসলাম ধর্ম
সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলের একটি দ্বীপে প্রাচীন খ্রিস্টান মঠের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) আমিরাতের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। আরব দেশগুলোতে ইসলাম ধর্ম প্রসারের আগে মঠটি নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমিরাতে পাওয়া দ্বিতীয় মঠ এটি। সিনিয়াহ দ্বীপে অনুসন্ধান পাওয়া মঠটি পারস্য উপসাগরের তীরে খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসে নতুন আলো দেখালো।সিনিয়াহ উম আল-কুওয়াইনের শেখডমের অংশ। পারস্য উপসাগরের উপকূল বরাবর দুবাই থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩০ মাইল) উত্তর-পূর্বের আমিরাত দ্বীপ এটি। দ্বীপটি উম্ম আল-কুওয়াইনের খোর আল-বেইদা জলাভূমিকে রক্ষা করে। দ্বীপের উত্তর-পূর্ব দিকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মঠটি খুঁজে পেয়েছেন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, প্রায় এক হাজার ৪০০ বছরের মঠটি যখন তৈরি হয়, তখন মরুভূমির বিস্তার ঘটেনি। এখনকার মতো সমৃদ্ধ তেল শিল্পের সূচনাও হয়নি, আবুধাবি এবং দুবাইয়ের আকাশছোঁয়া অট্টালিকা তখন কল্পনার বাইরে ছিল। এই মঠ আবিষ্কারের কাজে যুক্ত ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্বের সহযোগী অধ্যাপক টিমোথি পাওয়ার। তিনি বলেন, “হাজার বছর আগে এখানে অসাধারণ কিছু ঘটেছিল। সেই কথা জানা প্রয়োজন। তিনি জানান, ৫৩৪ এবং ৬৫৬ সালের মধ্যে মঠের ভিত্তিতারিখে নমুনার কার্বন ডেটিং করা হয়েছে। ইসলামের নবী মোহাম্মদ (সা:) জন্মগ্রহণ করেন ৫৭০ সালে। বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা জয় করার পর ৬৩২ সালে মৃত্যু হয় তার। অধ্যাপক টিমোথি পাওয়ার আরও জানান, উপর থেকে দেখা গেলে বোঝা যাবে, সিনিয়াহ দ্বীপে খ্রিস্টান উপাসকরা চার তলার মঠের একটি একক ঘরের গির্জার মধ্যে প্রার্থনা করতেন। ভিতরের কক্ষগুলোতে ব্যাপটিজমাল হরফ রয়েছে। রুটি বেক করার জন্য একটি চুলা বা গোষ্ঠীবদ্ধ রীতিপালনের জন্য ওয়েফার রয়েছে। একটি বেদিও ছিল সেখানে। গির্জার মূল অংশে ওয়াইনের জন্য একটি ইনস্টলেশনও ছিল। মঠের পাশে চারটি ঘরের দ্বিতীয় ভবন রয়েছে। সম্ভবত চারপাশে মঠের উঠান ছিল। অনুমান করা হচ্ছে, গির্জা বা মঠের প্রথম বিশপের বাড়ি ছিল এটি।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
প্রথম আলো
সুরা নমলে হজরত সোলায়মান (আ.) ও রানি বিলকিসের ঘটনা
ইসলাম ধর্ম
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ইয়েমেনের এক নারীর গল্প বলেছেন। বিলকিস হজরত সোলায়মান (আ.)-এর যুগে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সম্রাজ্ঞী ছিলেন। সোলায়মান (আ.) ওই নারীর (বিলকিসের) সাম্রাজ্যের কথা জানতেন না। তিনি তাঁর গোয়েন্দা পাখি হুদহুদের মাধ্যমে জানতে পারেন, কারো আনুগত্য স্বীকার না করেই বিলকিস বিস্তীর্ণ একটি অঞ্চল শাসন করছেন। তিনি তাঁকে আত্মসমর্পণের আহ্বান করলেন। কোরআনের সুরা নমলের ২৪টি আয়াতে আল্লাহ ঘটনাটি তুলে ধরেছেন। কোরআনের ভাষ্যে ঘটনাটি বর্ণনা করা যাক। কোরআনে আছে, সে (হুদহুদ) দেরি না করে এসে পড়ল এবং বলল, ‘আমি এমন সব তথ্য লাভ করেছি, যা আপনার জানা নেই আর সাবা থেকে সঠিক খবর নিয়ে এসেছি। আমি এক নারীকে দেখলাম সে জাতির ওপর রাজত্ব করছে। তাকে সবই দেওয়া হয়েছে ও তার আছে এক বিরাট সিংহাসন। আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম, তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান ওদের কাছে ওদের কাজকর্ম শোভন করেছে ও ওদের সৎ পথ থেকে দূরে রেখেছে যেন ওরা সৎ পথ না পায় এবং যিনি আকাশ ও পৃথিবীর গোপন বিষয়কে প্রকাশ করেন, যিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর ও যা তোমরা প্রকাশ কর, সেই আল্লাহকে যেন ওরা সিজদা না করে। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনিই মহা আরশের অধিপতি।’ (সোলায়মান) বলল, ‘আমি দেখব, তুমি সত্য বলছ না মিথ্যা বলছ? তুমি আমার এ চিঠি নিয়ে যাও। এ তাদের কাছে দিয়ে এসো। তারপর তাদের কাছ থেকে সরে পড়ো ও দেখো তারা কী উত্তর দেয়।’ (সাবা রানি বিলকিস) বলল, ‘পারিষদবর্গ! আমাকে এক সম্মানিত পত্র দেওয়া হয়েছে। এ সোলায়মানের কাছ থেকে। আর তা এই: করুণাময়, পরম দয়াময় আল্লাহর নামে। অহংকার করে আমাকে অমান্য করো না, আনুগত্য স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হও।’ (বিলকিস) বলল, ‘পারিষদবর্গ! আমার এ সমস্যায় তোমাদের পরামর্শ দাও, আমি যা করি তা তো তোমাদের উপস্থিতিতেই করি।’ ওরা বলল, ‘আমরা তো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা; তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনার, কী নির্দেশ দেবেন, তা আপনিই দেখুন।’ (বিলকিস) বলল, ‘রাজা-বাদশাহরা যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে, তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় ও সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদের অপদস্থ করে; এরাও তা-ই করবে। আমি তাঁর কাছে উপঢৌকন পাঠাচ্ছি। দেখি, দূতেরা কী উত্তর আনে।’ দূত সোলায়মানের কাছে এলে সোলায়মান বলল, ‘তোমরা কি আমাকে ধনসম্পদ দিয়ে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ তোমাদের যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম জিনিস দিয়েছেন আমাকে, অথচ তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে উৎফুল্ল বোধ করছ।... তোমরা ওদের কাছে ফিরে যাও, আমি অবশ্যই ওদের বিরুদ্ধে এমন এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে উপস্থিত হব, যা রুখবার শক্তি ওদের নেই। আমি ওদেরকে সেখান থেকে অপমান করে বের করে দেব ও ওদেরকে দলিত করব।’ সোলায়মান আরও বলল, ‘হে আমার পারিষদবর্গ। তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করতে আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?’ এক শক্তিশালী জিন বলল, ‘আপনি আপনার স্থান থেকে ওঠার আগেই আমি তা এনে দেব। এ ব্যাপারে আমি এমন শক্তি রাখি। আর আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।’ কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বলল, ‘আপনি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি তা এনে দেব। সোলায়মান যখন তা সামনে রাখা দেখল, তখন বলল, এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তা নিজের জন্য করে, আর যে অকৃতজ্ঞ সে জেনে রাখুক যে আমার প্রতিপালকের অভাব নেই, তিনি মহানুভব।’ সোলায়মান বলল, ‘তার সিংহাসনের আকৃতি বদলে দাও; দেখি সে ঠিক ধরতে পারে, নাকি ভুল করে।’ বিলকিস যখন পৌঁছাল, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘তোমার সিংহাসন কি এ রকম?’ সে বলল, ‘এ তো এ রকমই। আমরা আগেই সবকিছু জেনেছি ও আত্মসমর্পণও করেছি।’ আল্লাহর পরিবর্তে সে যার পূজা করত, তা-ই তাকে সত্য থেকে সরিয়ে রেখেছিল, সে (বিলকিস) ছিল অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের একজন। তাকে বলা হলো, ‘এই প্রাসাদে প্রবেশ করো।’ যখন সে ওটার দিকে তাকাল, তখন তার মনে হলো এ এক স্বচ্ছ জলাশয় এবং সে তার কাপড় হাঁটু পর্যন্ত টেনে তুলল। সোলায়মান বলল, ‘এ তো স্বচ্ছ স্ফটিকের প্রাসাদ।’ (বিলকিস) বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক। আমি তো নিজের ওপর জুলুম করেছিলাম। আমি সোলায়মানের সঙ্গে বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ করছি।’ (সুরা নমল, আয়াত: ২২-৪৪) আরও পড়ুন রোজার নিয়ত রোজার নিয়ত নিজের সিংহাসন সোলায়মান (আ.)-এর দরবারে দেখে বিলকিস অবাক হবেন এবং ক্ষমতা দেখে তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নিয়ে আনুগত্য করবেন। তাই তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য সোলায়মান (আ.) কিছু নির্দেশনা দিলেন। বললেন, তাঁর সিংহাসনের ধরন পাল্টে দাও। এরপর দেখি, সে সত্য পথের দিশা পায়, নাকি যারা পথের দিশা পায় না তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়। রানি বিলকিস আত্মসমর্পণের জন্যই এলেন। তাঁকে সিংহাসনটি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘এটা কি আপনার সিংহাসন?’ তিনি বললেন, ‘তাই তো মনে হয়। আমরা আত্মসমর্পণ করতেই এসেছি।’ রানি বিলকিসকে প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানিয়ে সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘প্রাসাদে প্রবেশ করুন।’ প্রাসাদের মেঝে দেখে তিনি ভাবলেন সেটি স্বচ্ছ পানির হ্রদ। বিভ্রান্ত হয়ে পানি থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি পায়ের গোছা থেকে কাপড় উঁচু করেন। সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘এটা স্বচ্ছ কাচের প্রাসাদ।’ রানি বিলকিস এসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গিয়ে সোলায়মান (আ.)-এর অলৌকিক ক্ষমতা উপলব্ধি করলেন। তিনি আত্মসমর্পণ করলেন। বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমি অবশ্যই নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমি সোলায়মানের সঙ্গে বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করছি।’
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
প্রথম আলো
হজরত আলী (রা.): ইসলামের ইতিহাসে জ্ঞানের প্রদীপ
ইসলাম ধর্ম
হুদাইবিয়ার সন্ধি ইসলামের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ সন্ধির লেখক ছিলেন হজরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.)। রাসুল (সা.)–এর যুগের সব যুদ্ধেই আলী (রা.)–র সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। এ কারণে রাসুল (সা.) তাঁকে হায়দার বা সিংহ উপাধি দিয়েছেন। খন্দকের যুদ্ধের সময় রাসুল (সা.) আলী (রা.)–কে জুলফিকার নামের একটি তলোয়ার দেন। আলী (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.)–এর আপন চাচাতো ভাই, রাসুল (সা.)–এর চাচা আবু তালিবের ছেলে। রাসুল (সা.)–এর নবুয়ত প্রাপ্তির সময় তাঁর বয়স ছিল ১০ বছর। সে সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। কিশোরদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম মুসলিম। রাসুল (সা.)–এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তিনি শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ছিলেন কোরআনের হাফেজ এবং একজন শ্রেষ্ঠ মুফাসসির। আলী (রা.) নিজেই বলেছেন, কোরআনের এমন কোনো আয়াত নেই, যা নিয়ে আমি রাসুল (সা.)–এর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করিনি। রাসুল (সা.)–এর হিজরতের সময় আলী (রা.) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। অবিশ্বাসীদের যেন সন্দেহ না হয়, এ জন্য আলী (রা.)–কে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রাসুল (সা.) আবু বকর (রা.)–কে সঙ্গে নিয়ে রাতের অন্ধকারে মদিনায় রওনা দেন। সুবহে সাদিকের সময় মক্কার লোকজন রাসুল (সা.)–এর ঘরে আসে এবং দেখতে পায় আলী (রা.) তাঁর বিছানায় শুয়ে আছেন। খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তিনি ইসলামি রাষ্ট্রের রাজধানী মদিনা থেকে ইরাকের কুফায় স্থানান্তর করেন। তিনি ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে তাঁর শাসনকাজ পরিচালনা করেছেন। হিজরি ৩৭ সনে সংঘটিত সিফফিনের যুদ্ধে আলী (রা.)–র খুব প্রিয় একটি বর্ম হারিয়ে যায়। হঠাৎ একদিন তিনি তাঁর বর্মটি কুফার বাজারে এক অমুসলিমকে বিক্রি করতে দেখেন। তিনি লোকটিকে তাঁর বর্মটি ফিরিয়ে দিতে বলেন। কিন্তু লোকটি বর্ম ফিরিয়ে দিতে রাজি হলো না। বর্মটি জোর করে নিয়ে নিতে পারলেও তিনি তা করলেন না। আইন অনুযায়ী লোকটির বিরুদ্ধে কাজির আদালতে মামলা করেন। কাজিও কঠোর ন্যায়বিচারক। তিনি আলী (রা.)–র দাবির সমর্থনে প্রমাণ চাইলেন। আলী (রা.) কোনো প্রমাণ দিতে পারলেন না। ফলে কাজি অমুসলিম লোকটির পক্ষে মামলার রায় দিলেন। মুসলিম জাহানের শাসকের এমন ন্যায়পরায়ণতা লোকটিকে খুব বিস্মিত করল। এ মামলার প্রভাব লোকটির ওপর এতটাই পড়েছিল যে সে মুসলমান হয়ে যায়। লোকটি বলে ওঠে, যে ধর্ম এমন সুন্দর শিক্ষা দেয়, সে দ্বীন অবশ্যই সত্য! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, বর্মটি আমিরুল মুমিনিনের। সিফফিন যুদ্ধে যাওয়ার সময় উটের পিঠ থেকে বর্মটি পড়ে গেলে আমি তা তুলে নিই। লোকটি ইসলাম গ্রহণ করায় আলী (রা.) খুব খুশি হয়ে বর্মটি তাকে উপহার হিসেবে দিয়ে দেন। আলী (রা.) ছিলেন জ্ঞানের ভান্ডার। সে যুগের শ্রেষ্ঠ আরব কবিদের মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন। দিওয়ানে আলী নামে তাঁর একটি কবিতার সংকলন পাওয়া যায়, তাতে ১ হাজার ৪০০ শ্লোক আছে। তিনি ছিলেন একজন সুবক্তা। ‘নাহজুল বালাগা’ নামে তাঁর বক্তৃতার একটি সংকলন আছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
ভোরের কাগজ
স্মরণকালের বড় ধর্মঘটের ডাক ফ্রান্সে
অন্যান্য
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর প্রস্তাবিত সার্বজনীন পয়েন্টভিত্তিক পেনশন ব্যবস্থাপনায় নাখোশ বিভিন্ন ইউনিয়ন কয়েক বছরের মধ্যে ফ্রান্সজুড়ে সবচেয়ে বড় সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। দেরিতে অবসর কিংবা কম পেনশন নিতে বাধ্য করার প্রতিবাদে পেশাজীবী ও শ্রমিকদের ডাকা এ ধর্মঘটে ফ্রান্সজুড়ে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধর্মঘটে পুলিশ, আইনজীবী, হাসপাতাল ও বিমানবন্দরের কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষক এবং পরিবহন শ্রমিকরাও অংশ নিতে যাচ্ছে বলে জানায় বিবিসি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষ বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করলেও তা জনদুর্ভোগ হ্রাসে সেগুলো খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারবে না বলেই অনুমান করা হচ্ছে। শিল্প খাতের শ্রমিকদের ধর্মঘট বৃহস্পতিবারের পরও চলতে পারে বলে বেশকিছু ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা আভাস দিয়েছেন। পেনশন ব্যবস্থাপনার সংস্কার নিয়ে ম্যাক্রো তার প্রস্তাব প্রত্যাহার করা না পর্যন্তও এ ধর্মঘট চলতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা। ধর্মঘটের পক্ষে ৬৯ শতাংশ নাগরিকের সমর্থন আছে বলে এক জনমত জরিপে দেখা গেছে। সমর্থকদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের সংখ্যাই বেশি। ১৯৯৫ সালেও পেনশন ব্যবস্থা সংস্কারের এক প্রস্তাবের বিপক্ষে ইউরোপের এ দেশটিতে টানা তিন সপ্তাহের ধর্মঘট হয়। দেশজুড়ে পরিবহন ব্যবস্থা অকেজো করে দেয়া ওই ধর্মঘটে জনগণের বিপুল সমর্থন থাকায় তৎকালীন সরকার তাদের সংস্কার প্রস্তাব থেকে পরে সরে আসে। বৃহস্পতিবারের ধর্মঘট শুরুর আগে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফ কাস্তেনার বলেন, ধর্মঘট চলাকালে দেশের অন্তত আড়াইশ স্থানে বিক্ষোভ হবে বলে ধারণা করছেন তিনি। এর মধ্যে কিছু প্রতিবাদ সহিংস হতে পারে বলে আশঙ্কা তার। অসংখ্য মানুষ এসব প্রতিবাদে অংশ নেবেন এবং আমরা জানি ঝুঁকিগুলো কী। আমি অনুরোধ করেছি, যেসব জায়গায় দাঙ্গা বা সহিংসতার ঘটনা ঘটবে, সেখানে যেন নিয়ম মেনে দাঙ্গাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। ধর্মঘটে অংশ নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান ইয়োলো ভেস্ট আন্দোলনে অংশ নেয়া অনেক বিক্ষোভকারীও। বাস চালক ও ট্রেন কর্মীদের মতো পরিবহন খাতে সক্রিয় সব শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নই বৃহস্পতিবার থেকে বিক্ষোভে অংশ নেবে বলে নিশ্চিত করেছে। আন্তঃনগর ও দ্রুতগতির টিজিভি ট্রেনের মধ্যে কেবল ১০ শতাংশ আজ শুক্রবার চালু ধাকবে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের এসএনসিএফ। মেট্রো চলাচলেও সারাদিন ধরে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করতে পারে বলে যাত্রীদের সতর্ক করেছে প্যারিসের মেট্রো ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান আরএটিপি। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররাও এ ধর্মঘটে অংশ নেবেন। এরই মধ্যে এয়ার ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ৩০ শতাংশ বাতিল করা হয়েছে। ইজিজেটও তাদের ২০০র বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে। নার্স, হাসপাতালের কর্মী, আইনজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, জ্বালানি খাতের কর্মী ও ডাক বিভাগে কর্মরতরাও এদিনের ধর্মঘটে অংশ নেবেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
দৈনিক ইনকিলাব
মসজিদুল হারামে বুধবারের তারাবিতে অংশ নেন ২৫ লাখ মুসুল্লি
ইসলাম ধর্ম
মক্কার মসজিদুল হারামে খতম আল-কোরআনের তারাবিহ নামাজে গতকাল বুধবার (রমজানের ২৮তম রাতে) ওমরাহ করতে আসা মানুষ ও দর্শনার্থীসহ ২৫ লাখ মুসুল্লি অংশ নিয়েছেন। খবর সৌদি গেজেটের। খতম আল-কোরআনের নামাজ হলো পবিত্র রমজান মাসজুড়ে তারাবি নামাজে পুরো কোরআন তিলাওয়াতের সমাপ্তি ঘটা। সৌদি সরকারের দুই পবিত্র মসজিদ (মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি) বিষয়ক প্রেসিডেন্সির প্রধান শেখ আবদুর রহমান আল-সুদাইস এদিন তারাবিহ নামাজে ইমামতি করেন। তার সঙ্গে নামাজে অংশ নেন ২৫ লাখের বেশি মুসল্লি। দুটি পবিত্র মসজিদ মুসুল্লিতে পরিপূর্ণ ছিল। শুধু তা-ই নয়, মসজিদের প্রাঙ্গণ এবং আশপাশের সড়কেও নামাজ আদায় করেন প্রচুর মুসলমান। সৌদি প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপে প্রশান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে ইবাদত-বন্দেগি করেন তারা। নামাজ শেষে ইমাম শেখ আল-সুদাইস মহান আল্লাহর কাছে এই বরকতময় রাতে সব মুসলমানদের ক্ষমা এবং তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষার জন্য প্রার্থনা করেন। এছাড়া দেশটির নেতাদের পাশাপাশি সব মুসলিম দেশকে অনিষ্ট থেকে রক্ষা এবং তাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রদানের জন্য প্রার্থনা করেন তিনি। এদিন সকাল থেকেই নামাজ আদায়ের জন্য গ্র্যান্ড মসজিদে সমবেত হন মুসল্লিরা।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
কালের কন্ঠ
মানুষের জীবনে তাওবার প্রয়োজন কেন
ইসলাম ধর্ম
তাওবা মানে ফিরে আসা। পরিভাষায় তাওবা হলো, যেসব কথা ও কাজ মানুষকে আল্লাহর থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তা থেকে ফিরে আসা এবং সে সব কথা ও কাজে লিপ্ত হওয়া, যা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় ও তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচা যায়। সহজ কথায় তাওবা হলো, সব পাপ কর্ম থেকে ফিরে এসে সৎকাজে প্রবৃত্ত হওয়া।ইমাম নববী (রহ.) বলেন, উলামায়ে কেরাম বলেছেন, প্রতিটি গুনাহ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব।তারপর তিনি তাওবা শুদ্ধ হওয়া ও কবুল হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, যদি গুনাহ আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার সংশ্লিষ্ট বিষয় হয় এবং তার সঙ্গে কোনো লোকের হক জড়িত না থাকে তবে তা থেকে তাওবা করার তিনটি শর্ত আছে—১. তাওবাকারীকে গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে।২. সে তার কৃত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে।৩. তাকে আর কখনো গুনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে।আর গুনাহের কাজটি যদি কোনো ব্যক্তির হক বা অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে, তাহলে তার থেকে তাওবা করার উপরোক্ত তিনটি শর্ত ছাড়া আরো একটি শর্ত আছে। তা হলো, তাওবাকারীকে হকদার ব্যক্তির প্রাপ্য হক আদায় করতে হবে। যদি গুনাহটি কারো ধন-সম্পত্তির বিষয়ে হয়ে থাকে অথবা এরূপ অন্য কিছু থাকে, তাহলে তাকে তা ফেরত দিতে হবে। কোনো প্রকার দোষারোপ (যেমন: জিনার অপবাদ, মিথ্যা চুরির অপবাদ) বা এরূপ অন্য কোনো বিষয় হয়ে থাকলে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে তার শাস্তি ভোগ করতে হবে অথবা তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।অনুরূপভাবে গিবত, গালাগাল, কাউকে অপমান করা ইত্যাদি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।ইমাম নববী (রহ.) বলেন, সব গুনাহ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব। কিছু গুনাহ তাওবা করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। তবে বাকি গুনাহগুলো বাকি থেকে যাবে। কোরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমার মাধ্যমে তাওবা করা ওয়াজিব প্রমাণিত হয়েছে।(সূত্র রিয়াজুস সালেহিন, তাওবা অধ্যায়)আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে মুমিনদের তাওবা করার আদেশ দিয়েছেন। যেমন এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তাওবা করো। তাহলে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হবে।’ (সুরা নূর, আয়াত : ৩১) অন্য আয়াতে বলেছেন, (তরজমা) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। অতঃপর তাওবা করো।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৩)তাওবা করার মাধ্যমে মুমিন বান্দা শুধু নিষ্পাপ ও গুনাহমুক্ত হয় না; বরং ইহকালীন ও পরকালীন বহু কল্যাণ এবং সুখ-শান্তিময় জীবন লাভ করেন। এখানে তাওবার কিছু উপকারিতা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো। তাওবা আগের সব গুনাহ দূর করে দেয় এবং জান্নাত দান করে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা করো। আশা করা যায় তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের পাপ তোমাদের থেকে মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার নিচে নহর বহমান থাকবে। (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৮) এই আয়াতে আল্লাহ তাওবা করার আদেশ করেছেন, পাশাপাশি তার ফলাফল উল্লেখ করেছেন যে এর দ্বারা পাপ মোচন করে দেবেন এবং তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাওবা পাপকাজগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন পাপ ও সেগুলোর শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করার পর বলেছেন, ‘তবে কেউ তাওবা করলে, ঈমান আনলে এবং সৎকর্ম করলে আল্লাহ এরূপ লোকদের পাপরাশিকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যে ব্যক্তি তাওবা করে ও সৎকর্ম করে, সে মূলত আল্লাহর দিকে যথাযথভাবে ফিরে আসে।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৭০-৭১)তাওবা দুনিয়ায় উত্তম জীবন দান করে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর তার কাছে তাওবা করো। তিনি তোমাদের এক নির্ধারিতকাল পর্যন্ত উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন এবং যে কেউ বেশি আমল করলে তাকে নিজের পক্ষ থেকে বেশি প্রতিদান দেবেন।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৩) আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে খাঁটি তাওবাকারী হিসেবে কবুল করুন। আমিন
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
কালের কন্ঠ
স্কটিশ যুদ্ধবন্দি যখন মদিনার গভর্নর ছিলেন
ইসলাম ধর্ম
পবিত্র নগরী মদিনার গোড়াপত্তনের পর বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ব্রিটিশ নাগরিক থমাস কেইথ তাঁদের ব্যতিক্রম। কেননা তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠার কোনোটিই মুসলিম পরিবারে হয়নি। এমনকি তিনি কোনো মুসলিম দেশেরও নাগরিক ছিলেন না।তিনি ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে থমাস কেইথ ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ৭৮তম হাইল্যান্ডারস রেজিমেন্টে যোগদান করেন। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ব্রিটিশ উপনিবেশ সিসিলিতে পাঠানো হয়। কেইথ ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে মিসরের আলেক্সেন্দ্রিয়া নগরী দখলে ব্রিটিশ অভিযানে অংশ নেন।কিন্তু এই অভিযান ব্যর্থ হয় এবং ব্রিটিশ ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হয়। বহু সৈনিক নিহত হয় এবং অনেকেই গ্রেপ্তার হয়। ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দের ২১ এপ্রিল থমাস ও তাঁর রেজিমেন্টের বাদ্যবাজক উইলিয়াম থম্পসন রোসেটা দ্বীপের নিকটবর্তী আল হামিদ এলাকা থেকে আটক হন। তাদের আরো ৪৫০ জন ব্রিটিশ বন্দির সঙ্গে কায়রোতে পাঠানো হয়।একজন আলবেনীয় বর্শাচালক তাদের সামরিক ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেন। উসমানীয় অফিসার আহমদ বোনাপার্ট তাঁদের দুজনকে কিনে নেন। থমাস কেইথ আহমদের সেবা করে তাঁর প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। আহমদের আচরণ ও মুসলমানদের রীতিনীতি দেখে দুই স্কটিশ সৈনিক ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। ইসলাম গ্রহণের পর কেইথ ইবরাহিম এবং থম্পসন উসমান নাম ধারণ করেন।আহমদের কাছ থেকে থমাস কেইথকে মিসরের তৎকালীন উসমানীয় গভর্নর মুহাম্মদ আলী পাশার স্ত্রী আমিনা হানিম কিনে নেন। তিনি তাঁকে তাঁর ছেলে তুসুনের সেবায় নিয়োজিত করেন। তুসুন স্কটিশ থমাসের সামরিক ও আরবি ভাষার দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে থমাস কেইথ তুসুনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তুসুন থমাসের মৃত্যুদণ্ড দেন। কিন্তু প্রহরীদের হত্যা করে তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তিনি তুসুনের মায়ের কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় প্রার্থনা করেন। আমিনা হানিম তাঁকে ক্ষমা করেন এবং তুসুনের সঙ্গে বিরোধ মেটাতে এগিয়ে আসেন। কেননা তিনি থমাসের উচ্চতর সামরিক দক্ষতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। প্রহরীদের হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে থমাসের বীরত্বের কথা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মানুষ তাঁকে ‘আগা’ উপাধি দেয়। পরবর্তী সময়ে তিনি আগা ইবরাহিম নামেই পরিচিতি লাভ করেন।১৮১১ খ্রিস্টাব্দে ১৮ বছর বয়সী আগা ইবরাহিম এবং ১৭ বছর বয়সী তুসুন ‘আলে সৌদ’ তথা সৌদি রাজপরিবারের নেতৃত্বাধীন ওয়াহাবি বিদ্রোহের বিরুদ্ধে এক অভিযানে যোগদান করেন। এই অভিযানে দুই হাজার আলবেনীয় ও বেদুইন সেনা ছিল। ইবরাহিম আগা ছিলেন এই বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক ব্যক্তিত্ব (সেকেন্ড ইন কমান্ড)। ১৮১২ সালে আলে সৌদের বিরুদ্ধে আগা ইবরাহিমের বাহিনী বড় ধরনের সাফল্য লাভ করে। পবিত্র মদিনা নগরী উদ্ধারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৮১৫ সালে উসমানীয় শাসকদের পক্ষ থেকে তাঁকে মদিনার ভারপ্রাপ্ত গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে মক্কা নগরী উদ্ধারেও আগা ইবরাহিম সাহসিকতার পরিচয় দেন এবং মক্কার নিকটবর্তী বিদ্রোহী সেনা ছাউনিগুলো গুঁড়িয়ে দেন। এ বছরই একজন ওয়াহাবি উগ্রবাদীর হাতে তিনি গুপ্তহত্যার শিকার হন। ১৮১৮ সালে উসমানীয়দের হাতে বন্দি সৌদি রাজপুত্র আবদুল্লাহ বিন সৌদ তাঁর বীরত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
বাংলাদেশ প্রতিদিন
শবেবরাতের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও করণীয়
ইসলাম ধর্ম
পবিত্র শবেবরাত মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশাল নিয়ামত। শবেবরাত মুক্তির রজনি। এ রাতে আল্লাহতায়ালা তাঁর অসংখ্য, অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করার মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। আরবি ভাষায় এ রাতকে ‘লাইলাতুন্নিসফি মিন শাবান’ বলা হয়। এর অর্থ হচ্ছে অর্ধশাবানের রজনি। হাদিসে লাইলাতুন্নিসফি মিন শাবান নামেই এ রাতের ফজিলতের কথা এসেছে। শবেবরাত একটি মহিমান্বিত রাত। এ রাত ফজিলতপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি সহি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, এ হাদিসের ফজিলত সম্পর্কে সহি হাদিসের বিখ্যাত সংকলন সহি ইবনে হিব্বানে বর্ণিত হয়েছে- হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ অর্ধশাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ দেখুন ‘ইবনে হিব্বান’। শবেবরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত প্রমাণিত হওয়ার জন্য এই একটি হাদিসই যথেষ্ট। তবু হাদিসের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে এ-বিষয়ক আরও হাদিস উল্লেখ করা সম্ভব। নিচে আরেকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো। হজরত আলা ইবনুল হারিস (রহ.) থেকে বর্ণিত। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একবার রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা, অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা, তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রসুলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসুলই ভালো জানেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন, এটা হলো অর্ধশাবানের রাত। (শাবানের ১৪ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ অর্ধশাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ দেখুন ‘শুয়াবুল ইমান, বায়হাকি’। উপরোক্ত হাদিস থেকে এ রাতের ফজিলত যেমন জানা যায় তেমন এ রাতের আমল কেমন হওয়া উচিত তাও বোঝা যায়। অর্থাৎ দীর্ঘ নামাজ পড়া, সিজদা দীর্ঘ হওয়া, আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং রহমত ও দয়া কামনা করা। এমনিভাবে অন্তরকে বিদ্বেষমুক্ত করা। কারও সঙ্গে যদি বিদ্বেষ ও শত্রুতামূলক কোনো সম্পর্ক থাকে, তাহলে তা মিটিয়ে ফেলা। কারণ তা না হলে এ মহান রাতের ফজিলত তথা আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার মতো দুর্ভাগ্যের শিকার হতে হবে। যার চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না। শবেবরাতের আরেকটি বিশেষ আমল হলো শবেবরাতের পরদিন রোজা রাখা। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (তরজমা) ‘১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা তা ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং পরদিন রোজা রাখো।’ দেখুন ‘সুনানে ইবনে মাজাহ’।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
আল্লাহর ওলি-আউলিয়াদের পরিচিতি
ইসলাম ধর্ম
আরবি ভাষায় ‘ওলি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো নিকটবর্তী বন্ধু, দোস্ত, অভিভাবক। শরীয়তের পরিভাষায় ‘ওলি’ বলতে তাকেই বুঝায় যার মধ্যে দু’টি গুণ আছে। প্রথমত: ঈমান, এবং দ্বিতীয়ত: তাকওয়া। ঈমানদার এবং মুত্তাকিদের আল্লাহ রাব্বুল ইজত ওলি বা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন। আরবি ওলি শব্দটির ব্যবহার আল কুরআনে বিভিন্ন আঙ্গিকে হয়েছে। যেমন: এক বচনে ওয়ালিয়্যুন্ রূপে সূরা বাকারাহ-এর ২৫৭ নং আয়াতে। সূরা আলে ইমরানের ৬৮ নং আয়াতে। সূরা আল আনয়ামের ৭০ নং আয়াতে। সূরা বনি ইসরাাইলের ১১১ নং আয়াতে। সূরা ফুসসিলাতের ৩৪ নং আয়াতে। সূরা শুরা-এর ৯ নং আয়াতে এবং ২৮ নং আয়াতে। সূরা জাসিয়া-এর ১৯ নং আয়াতে। এতে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, ওয়ালিয়্যুন রূপে ওলি শব্দটির ব্যবহার আল কুরআনে ৮ বার হয়েছে। আর আল কুরআনে ‘ওলি’ শব্দটি ওয়ালিয়্যিন্ রূপে এসেছে ১২ বার। যেমন : সূরা বাকারাহ-এর ১০৭, ১২০ নং আয়াতে। সূরা তাওবাহ-এর ৭৪ নং আয়াতে ও ১১৬ নং আয়াতে। সূরা রায়াদ-এর ৩৭ নং আয়াতে। সূরা কাহাদ-এর ২৬ নং আয়াতে। সূরা আনকাবুতের ২২ নং আয়াতে। সূরা আস সিজদাহ-এর ৪ নং আয়াতে। সূরা শুরা-এর ৯, ২৮, ৩৯ এবং ৪৪ নং আয়াতে। এতে করে আল কুরআনে ‘ওয়ালিয়্যুন’ ও ওয়ালিয়্যিন, শব্দ দ্বয়ের এক বাচনিক ব্যবহার ২০ বার লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া ওয়ালিয়্যুন্ শব্দটি এক বচনে ওয়ালিয়্যান রূপে আল কুরআনে ১৩ বার এসেছে। যেমন: সূরা নিসা-এর ৪৫, ৭৫, ৮৯, ১১৯, ১২৩ ও ১৭৩ নং আয়াতে। সূরা আল আনয়ামের ১৪ নং আয়াতে। সূরা আল কাহাফ-এর ১৭ নং আয়াতে। সূরা মারিয়ামের ৫ ও ৪৫ নং আয়াতে। সূরা আল আহযাবের ১৭ ও ৬৫ নং আয়াতে। সূরা আল ফাতহ-এর ২২ নং আয়াতে। আর ওয়ালিয়্যুন শব্দটি সম্বন্ধপদ হিসেবে আল কুরআনে ৬টি রূপে মোট ১১ বার ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন: ‘ওয়ালিয়্যুকুম’ রূপে সূরা আল মায়েদাহ-এর ৫৫ নং আয়াতে। ‘ওয়ালিয়্যুনা’ রূপে সূলা আল আরাফের ১৫৫ নং আয়াতে। সূরা সাবা-এর ৪১ নং আয়াতে। ‘ওয়ালিয়্যুহু’ এবং ‘ওয়ালিয়্যিহি’ রূপে সূরা বাকারাহ-এর ২৮২ নং আয়াতে। সূরা বনি ইসরাইলের ৩৩ নং আয়াতে। সূরা নামল-এর ৪৯ নং আয়াতে। ‘ওয়ালিয়্যহুম’ রূপে সূরা আল আনয়ামের ১২৭ নং আয়াতে। সূরা নাহল-এর ৬৩ নং আয়াতে। ‘ওয়ালিয়্যুহুমা’ রূপে সূরা আলে ইমরানের ১২২ নং আয়াতে। ‘ওয়ালিয়্যিয়া’ রূপে সূলা আল আরাকের ১৯৬ নং আয়াতে। সূরা ইউসুফ-এর ১০১ নং আয়াতে। একুনে ‘ওলি’ শব্দটি এক বচনের বিভিন্ন রূপসহ সম্বন্ধ পদ হিসেবে সর্ব মোট ৪৪ বার ব্যবহৃত হয়েছে। এই ৪৪ সংখ্যাটির একক হচ্ছে (৪+৪)=৮। এই ৮ সংখ্যাটি আরবি ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দদ্বয়ের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে। এতে করে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়ে যে, আল্লাহপাক তাদেরকেই বন্ধুরূপে কবুল করেন, যারা আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মোতাবেক জীবন চলার সকল পথ অতিক্রম করে। আর আরবি ‘ওলি’ শব্দের বহু বচন হলো ‘আওলিয়া’। এই বহুবচনিক আউলিয়া শব্দটি আল কুরআনে ৩৪ বার ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন : সূরা আলে ইমরানের ২৮ নং আয়াতে। সূরা নিসা-এর ৮৬, ৮৯, ১৩৯, ১৪৪ নং আয়াতে। সূরা আল মায়েদাহ-এর ৫১, ৫২, ৬৭, ৮১, নং আয়াতে। সূরা আরাফের ৩, ২৭, ৩০ নং আয়াতে। সূরা আন্ফাল-এর ৭২, ৭৩, নং আয়াতে। সূরা তাওবাহ-এর ২৩, ৭১ নং আয়াতে। সূরা ইউনুস-এর ৬২ নং আয়াতে। সূরা হুদ-এর ২০, ১১৩ নং আয়াতে। সূরা রায়াদ-এর ১৬ নং আয়াতে। সূরা বানি ইসরাইলের ৯৭ নং আয়াতে। সূরা আল কাহাফ-এর ৫০, ১০২ নং আয়াতে। সূরা ফুরকানের ১৮ নং আয়াতে। সূরা আনকাবুতের ৪১ নং আয়াতে। সূরা জুমার-এর ৩ নং আয়াতে। সূরা শুরা-এর ৬, ৯, ৪৬ নং আয়াতে। সূরা জাসিয়া-এর ১০, ১৯ নং আয়াতে। সূরা আহকাফ-এর ৩২ নং আয়াতে। সূরা মুমতাহানার ১ নং আয়াতে। সূরা আল জুময়া-এর ৬ নং আয়াতে। গভীর দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যায় যে, বহু বচনিক আউলিয়া শব্দটি সম্বন্ধপদসহ আল কুরআনে ৪১ বার ব্যবহৃত হয়েছে। এই ৪১ সংখ্যাটির একক হলো (৪+১)=৫। এই ৫ সংখ্যাটি ইঙ্গিত করছে আরবি ইসলাম শব্দের প্রতি। ইসলাম শব্দের অক্ষর সংখ্যা ৫। সুতরাং সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, যারা আল্লাহপাকের দেয়া জীবনব্যবস্থা ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে, ইসলামকে কবুল করে ধন্য হয়েছে, তারাই আল্লাহর বন্ধু বলে স্বীকৃতি লাভ করতে পারবেন, অন্যরা নয়।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
ভোরের কাগজ
ভারতে ধর্মীয় শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, নিহত ৪
হিন্দু ধর্ম
ভারতের হরিয়ানায় একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ৪৫ জন আহত হয়েছে। হরিয়ানার গুরুগ্রাম সংলগ্ন নূহ এলাকায় সোমবার এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে এনডিটিভি জানিয়েছে। পুলিশ বলছে, নূহ এলাকার খেদলা মড এলাকায় ওই শোভাযাত্রায় একদল জনতা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এর জেরেই পাথর নিক্ষেপ ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেসময় গুলিতে ওই দুই নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। এরপর রাতভর চলা সহিংসতার মধ্যে আরও দুজনের প্রাণ যায়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ‘ব্রিজ মণ্ডল জলভিষেক যাত্রা’ নামে ওই শোভাযাত্রা আয়োজন করলে একদল যুবক গুরুগ্রাম-আলওয়ার জাতীয় মহাসড়কের কাছে তাদের বাধা দেয়। এর জেরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে সরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহন লক্ষ করে আক্রমণ চালায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা। এনডিটিভি জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বজরঙ দল কর্মীর এক ভিডিও প্রকাশের জেরে এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়। কয়েকদিন আগে বজরঙ দল সদস্য মনু মানেশর ও তার সহযোগীরা ওই ভিডিও পোস্ট করেছিল। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শোভাযাত্রায় বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে সোমবার সন্ধ্যায় গুরুগ্রাম-সোহনা মহাসড়কে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বেশকিছু গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় এবং পুলিশের দিকে ঢিল ছোড়া হয়। এনডিটিভি জানিয়েছে, ওই শোভাযাত্রায় অংশ নিতে নূহ এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিল। কিন্তু সহিংসতার সূত্রপাত হলে তারা একটি মন্দিরে আশ্রয় নেয় এবং সন্ধ্যায় পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
দৈনিক ইনকিলাব
আজ রমজানের বরকতময় প্রথম জুমা
ইসলাম ধর্ম
আজ রমজানের প্রথম জুমা। বরকতময় জুমা। সওয়াবের বসন্তপ্রবাহ। জুমার দিনে সুরা কাহাফের তেলাওয়াত করা, দান-সদকা করা ও দরুদ শরিফের আমল করার কথা আছে। এ ছাড়াও দিনটির বিশেষ গুরুত্ব কোরআন হাদিসে এসেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, হে মুমিনরা! জুমার দিন যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো, এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝ। এরপর নামাজ শেষ হলে জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো যাতে তোমরা সফলকাম হও। সূরা জুমা : ৯-১০ জুমার দিনের ফজিলত বিষয়ে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সকল দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এই দিনেই আদম (আলাইহিস সালাম)কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। আর এই জুমার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। বুখারি-১৫০২ আজ রোজার চতুর্থদিন। চারদিকে রহমতের উৎসব। রমজানের অবারিত রহমতে ভরে যাক আমাদের জীবন। যে কোরআনের প্রেমময়তায় আজ রমজান রহমতে ভরপুর, কোরআনের মুগ্ধতায় লাইলাতুল কদর হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রাত! কোরআন এসেছিল বলে মক্কা-মদিনা পৃথিবীর মর্যাদাবান শহর! কোরআনের নবী হজরত মুহাম্মদ নবীদের সরদার! কোরআনের সেই প্রেম, মুগ্ধতা ও মর্যাদা আমাদের কতটা আলোকিত করেছে? মাস, রাত আর মক্কা-মদিনার মর্যাদা বাড়াতে কোরআন আসেনি পৃথিবীতে। কোরআনে এসেছে মানুষের জীবন রাঙাতে। শুধু রাত শ্রেষ্ঠ হবে না; কোরআনের মানুষেরাও হবে আশরাফুল মাখলুকাত। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানুষ। কোরআন সে তো আল্লাহ প্রেমের চিঠি। পাঠে পাঠে সজীব হয় দেহমন। জোগায় আত্মিক শক্তিও। প্রেমের চিঠি প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালাও বলেন, যারা ঈমানদার, তারা যখন আল্লাহর নাম নেয়, নরম হয় তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে কোরআন পাঠ করা হয়, তাদের ঈমান সজীব হয়ে ওঠে। রোজার জুমায় মানুষের ঢল। কিয়ামুল লাইল বা শেষ রাতের তাহাজ্জুতেও মসজিদ প্রাণবন্ত থাকে। মসজিদমুখী মানুষেরা কোরআনের আলোয় জীবন রাঙাতে চায়। হেদায়াতের নেশায় ব্যাকুল মানুষেরা শুনতে চায় কুরআনের মর্মকথা। কোরআনের ইতিহাস ও গল্পে ফিরে যেতে চায় আগের নবী-রাসুলদের জীবনে। আগে মসজিদে যাওয়ার সওয়াব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন জুমার দিন আসে ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে আগন্তুকদের নাম লিখতে থাকে। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি উট সদকা করে। তারপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি গাভী সদকা করে। তারপর আগমনকারী মুরগি সদকাকারীর মতো। তারপর আগমনকারী একটি ডিম সদকাকারীর মতো। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন, তখন ফেরেশতারা তাদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন।’ (বুখারি, হাদিস, ৮৮২) এক বছর নফল রোজা ও নামাজের সওয়াব আরেক হাদিসে হজরত আউস ইবনে আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে (জুমার নামাজের পূর্বে স্ত্রী-সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবং নিজেও গোসল করবে অথবা উত্তমরূপে গোসল করবে। এরপর ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে আসবে, আসার সময় হেঁটে আসবে, কোনো বাহনে চড়বে না, ইমামের কাছাকাছি বসবে, এরপর দুটি খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং (খুতবার সময়) কোনো অনর্থক কাজকর্ম করবে না, সে মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে এক বছর নফল রোজা ও এক বছর নফল নামাজের সওয়াব পাবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস,৩৪৫) দোয়া কবুল জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমার দিনে এমন একটা সময়ে রয়েছে, যাতে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায় আল্লাহ তাই দেন। অতএব তোমরা আছরের শেষ সময়ে তা তালাস করো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮, নাসাঈ, হাদিস : ১৩৮৯)
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
প্রথম আলো
হজরত আবু মুসা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শে প্রতিচ্ছবির জীবন
ইসলাম ধর্ম
হজরত আবু মুসা আল আশয়ারি (রা.)-এর জীবন ছিল যেন রাসুলের (সা.) জীবনের প্রতিচ্ছবি। সব সময় তিনি চেষ্টা করতেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিটি কাজ ও আচরণ হুবহু অনুসরণ করতে। রমজানের রোজা ছাড়াও তিনি নফল রোজা রাখতেন। এ ছাড়া তিনি আশুরার রোজা রাখতেন এবং মানুষকে তা রাখতে বলতেন। প্রচণ্ড গরমের সময়ও তাঁকে রোজা রাখতে দেখা যেত। তিনি বলতেন, ‘হয়তো দুপুরের গরমের তৃষ্ণা কিয়ামতের দিনে আমাদের জন্য প্রশমিত হবে।’ সুন্নত ছাড়া মুস্তাহাবের প্রতিও তিনি খুব যত্নবান ছিলেন। কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা মুস্তাহাব। এ কারণে তিনি তাঁর কন্যাদেরও হুকুম দিতেন নিজ হাতে পশু জবাই করার জন্য। আবু মুসা (রা.) জীবনের শেষ পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদেশ ও নিষেধ পালনে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। জীবনের শেষ দিকে তাঁর অবস্থা যখন সংকটজনক হয়ে পড়ে এবং তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলেন, তখন নারীরা কান্নাকাটি শুরু করেন। সেই কঠিন মুহূর্তেও ক্ষণিকের জন্য চেতনা ফিরে পেলে তিনি বলেন, রাসুল (সা.) এভাবে বিলাপ করতে নিষেধ করেছেন।আবু মুসা (রা.)-এর মধ্যে এ গুণ পরিপূর্ণরূপে ছিল। রাতে ঘুমানোর সময়ও তিনি বিশেষ ধরনের পোশাক পরে নিতেন, যাতে সতর (শরীরের সেসব অংশ অপরের সামনে ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক) উন্মুক্ত না হয়ে যায়। আবু মুসা (রা.) ছিলেন অত্যন্ত সরল ও সাদাসিধে প্রকৃতির। প্রথম জীবনে দরিদ্র ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। তবে পরবর্তী জীবন সচ্ছলতায় কেটেছে তাঁর। যে ছয়জন সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় ফতোয়া দানের অনুমতি পেয়েছিলেন, আবু মুসা আল আশয়ারি (রা.) তাঁদেরই একজন। রাসুল (সা.) তাঁর সম্পর্কে বলতেন, ‘আবু মুসা (রা.) অশ্বারোহীদের নেতা।’ আবু মুসা আল আশয়ারি (রা.) ছিলেন ইয়েমেনের অধিবাসী। সেখানকার আল আশয়ার গোত্রের সন্তান হওয়ায় তিনি আল আশয়ারি হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।আবু মুসা (রা.) ইসলামের পরিচয় পেয়ে ইয়েমেন থেকে মক্কায় আসেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে বাইয়াত নেন। কিছুদিন মক্কায় অবস্থানের পর স্বদেশবাসীকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার উদ্দেশ্যে আবার ইয়েমেনে ফিরে যান। আবু মুসা (রা.) ছিলেন তাঁর বংশের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। তাই খান্দানের লোকেরা দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে তাঁর দাওয়াতে সাড়া দেন। রাসুল (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের কয়েক বছর পর প্রায় ৫০ জন মুসলিমের একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে আবু মুসা (রা.) মদিনায় যাওয়ার জন্য ইয়েমেন থেকে সমুদ্রপথে যাত্রা করেন। তাঁরা যখন মদিনায় পৌঁছান, সে সময় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীও খাইবার বিজয় শেষ করে মদিনায় ফেরেন। রাসুল (সা.) আবু মুসা (রা.) ও তাঁর সঙ্গীদের সবাইকে খাইবারের গনিমতের অংশ দান করেছিলেন। আবু মুসা (রা.) তাড়াতাড়ি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অত্যন্ত সম্মানিত হয়ে ওঠেন।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
প্রথম আলো
বৃষ্টি আসে আল্লাহর রহমত হিসেবে
ইসলাম ধর্ম
বৃষ্টিতে মন প্রফুল্ল হয়। আল্লাহর রহমতে প্রকৃতি পায় স্বস্তি ও উর্বরতা শক্তি। বৃষ্টি আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ বৃষ্টি সম্পর্কে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টির সময় কিছু আমল করতেন। বৃষ্টির সময় দোয়া রাসুল (সা.) বৃষ্টির সময় আল্লাহর রহমতের জন্য দোয়া করতেন। বৃষ্টি যেমন আল্লাহর রহমত, তেমনই আবার কখনো গজবও হয়ে উঠতে পারে। রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা সায়্যিবান নাফিআহ।’ ‘হে আল্লাহ! তুমি এ বৃষ্টিকে প্রবহমান ও উপকারী করে দাও। (বুখারি, হাদিস: ১,০৩২) হজরত আনাস (রা.)–র বরাতে হাদিসে এসেছে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, একবার আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম; তখন বৃষ্টি এল। রাসুল (সা.) তখন তাঁর গায়ের পোশাকের কিছু অংশ সরিয়ে নিলেন, যাতে করে গায়ে বৃষ্টির ছাঁট লাগে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কেন এমনটি করলেন? তিনি বললেন, ‘কারণ বৃষ্টি তার প্রতিপালকের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৮৯৮)ঝোড়ো বাতাস বইতে দেখলে দোয়া দমকা হওয়া বইতে দেখলে নবীজি (সা.) উদ্বিগ্ন হতেন। বৃষ্টি শুরু হলে তিনি খুশি হয়ে উঠতেন। হজরত আয়িশা (রা.) বলেছেন, আমি এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমার আশঙ্কা হয়, আমার উম্মতের ওপর কোনো গজব আসে কি না।’ বৃষ্টি দেখলেই তিনি বলতেন, ‘এটি আল্লাহর রহমত।’ (মুসলিম, হাদিস: ১,৯৬৯) হজরত আয়িশা (রা.)–র বরাতে আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) আকাশে মেঘ দেখলে নফল ইবাদত ছেড়ে দিতেন। তিনি এই বলে দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরি ওয়া খাইরি মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি’। ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে বৃষ্টির উপকারী দিক কামনা করছি। আর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫,১৯৯)অতিরিক্ত বৃষ্টিতে দোয়া রাসুল (সা.) একবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে এই দোয়া করেছিলেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়াইলাইনা ওয়া আলাইনা।’ ‘হে আল্লাহ! আমাদের এখানে নয়, আশেপাশে বৃষ্টি বর্ষণ করো।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ১,৫২৭) প্রবল বৃষ্টি হলে নবী (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিআ; ওয়া মানাবিতিস শাজার।’ (বুখারি, হাদিস: ১,০১৪) এর অর্থ, ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং গাছ-উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোতে বৃষ্টি দিন।’ বজ্রপাতের দোয়া আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) বজ্রপাতের সময় কথা বন্ধ রাখতেন। কেবল বলতেন, ‘ওয়া ইউসাব্বিহুর রাদু বিহামদিহি, ওয়াল মালাইকাতু মিন খিয়ফাতিহি।’ (সুরা রাদ, আয়াত: ১৩) এর অর্থ, ‘বজ্র ও সব ফেরেশতা সন্ত্রস্ত হয়ে তাঁর প্রশংসা পাঠ করে।’বৃষ্টির সময় দোয়ার ফজিলত বৃষ্টি আল্লাহর রহমত ও করুণা বর্ষণের সময়, তাই এটি দোয়া কবুলেরও উপযুক্ত সুযোগ। সাহল বিন সাদ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে নবী (সা.) বলেছেন, ‘দুটি দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না। আজানের সময়ের দোয়া এবং বৃষ্টির সময়ের দোয়া।’ (মুস্তাদরাক, হাদিস: ২,৫৩৪; তাবারানি; হাদিস: ৫,৭৫৬; সহিহুল জামে, হাদিস: ৩,০৭৮) বৃষ্টি শেষে দোয়া করা বৃষ্টি শেষ হয়ে এলে রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে এই দোয়া পড়ার তাগিদ দিয়েছেন, ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রাহমাতিহ।’ ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস: ১,০৩৮) বৃষ্টি শেষে রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে একটি বিশেষ দোয়া পড়ার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন, দোয়াটি হলো, ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহ। এর অর্থ, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস: ১,০৩৮)
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
কালের কন্ঠ
ট্রানজিট ভিসায় ওমরাহ পালনের সুযোগ
ইসলাম ধর্ম
সৌদি আরবের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করা যাত্রীদের জন্য ফ্রি ট্রানজিট ভিসা পরিষেবা চালু করেছে সৌদি আরব। গতকাল সোমবার (৩০ জানুয়ারি) এই ভিসা চালুর ঘোষণা দেয় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চার দিনের এই ভিসা নিয়ে ট্রানজিটে থাকা যাত্রীরা ওমরাহ পালন, মসজিদে নববি জিয়ারতসহ সৌদি বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন। আরব নিউজের খবরে বলা হয়, ট্রানজিট ভিসাধারীরা ৯৬ ঘণ্টা বা চার দিন পর্যন্ত সৌদিতে অবস্থান করতে পারবেন। সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাসের ইলেকট্রনিক প্লাটফর্মের মাধ্যমে এই ভিসা আবেদন করতে পারবেন টিকিটধারী যাত্রীরা। এরপর আবেদনটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিন্ন জাতীয় ভিসা প্লার্টফমে চলে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে একটি ডিজিটাল ভিসা ইস্যু হবে এবং তা আবেদনকারীর ই-মেইলে চলে যাবে। এই প্রক্রিয়ার জন্য কোনো ফি দিতে হবে না। তিন মাস মেয়াদের এই ভিসা নিয়ে চার দিন সৌদিতে অবস্থান করা যাবে। সৌদি ভিশন ২০৩০ এর লক্ষ্য অর্জনে ই-ট্রানজিট ভিসা বিশেষ ভূমিকা রাখবে এবং প্রতি বছর অন্তত ১০ কোটি লোক দেশটি ভ্রমণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তা ছাড়া এর মাধ্যমে সৌদির ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক স্থানে আগের চেয়েও বেশি দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে। সৌদির পর্যটন মন্ত্রী ও পর্যটন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আহমেদ আল-খতিব বলেছেন, ‘পর্যটন খাতে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সৌদির প্রতিশ্রুতির আরেকটি প্রমাণ নতুন ট্রানজিট ভিসা। সৌদি আরবের মধ্য দিয়ে যাওয়া ভ্রমণকারীদের জন্য সবকিছু উন্মুক্ত থাকবে। ভ্রমণ, ব্যবসা, ওমরাহসহ যেকোনো কাজের উদ্দেশ্যে এখানে আসতে পারবে। সৌদিকে একটি বৈশ্বিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সম্মিলিতভাবে কাজ চলছে।’ সৌদি ট্যুরিজম অথরিটির সিইও ফাহদ হামিদাদ্দিন বলেছেন, ‘আজ ট্রানজিট ভিসা উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। এটি সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত সহযোগিতার একটি যুগান্তকারী উদাহরণ। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যকদের কাছে তা প্রধান গন্তব্যে পরিণত হবে।’ এই ভিসা সৌদি আরবকে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবে জানান বিমান সংস্থা সৌদিয়া ও ফ্লাইনাসের প্রধান নির্বাহীরা। সৌদিয়ার প্রধান ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম কোশি বলেছেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ভ্রমণের কৌশলগত লক্ষ্য পূরণে এটি সহায়তা করবে। তা ছাড়া পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সংযোগকারী কেন্দ্র হিসেবে সৌদির অবস্থানকে সুদৃঢ় করবে। পাশাপাশি তা ক্রমবর্ধমান ট্রানজিট যাত্রীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
বাংলাদেশ প্রতিদিন
জামাতে নামাজ আদায় উত্তম
ইসলাম ধর্ম
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কোরআন-হাদিসে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার অনেক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। জামাতে নামাজ আদায় করার তাগিদ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ। কোরআনে করিমে তিনি ঘোষণা করেন, ‘আর তোমরা নামাজ কায়েম কর ও জাকাত প্রদান কর এবং যারা রুকু করে তাদের সঙ্গে রুকু কর। (সুরা বাকারা-৪৩) মুসলিম উম্মাহর সর্বোত্তম আদর্শ রসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি গোটা জীবন জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। এমনকি তাঁর ইন্তেকালের আগমুহূর্তে অসুস্থতার সময়ও তিনি জামাত ছাড়েননি। তাঁর প্রিয় সাহাবিরা আমাদের জন্য আদর্শের প্রতিচ্ছবি। তাদের গোটা জীবন রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুযায়ী অতিবাহিত করেছেন। তারাও জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। রসুলুল্লাহ (সা.) জামাতে নামাজ আদায়ের বহু ফজিলত ও উপকার বর্ণনা করেছেন। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! আমার ইচ্ছা হয় জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দিই। এরপর নামাজ কায়েমের আদেশ দিই। তারপর নামাজের আজান দেওয়া হোক, এরপর এক ব্যক্তিকে লোকদের ইমামতি করার নির্দেশ দিই। তারপর আমি লোকদের অন্বেষণে যাই এবং যারা (জামাতে আসেনি) তাদের ঘর জ্বালিয়ে দিই। (সহি বুখারি) জামাতে নামাজ আদায়ের ফজিলত বর্ণনা করে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী ঘরে বা বাজারে আদায়ের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি। অন্য বর্ণনায় ২৭ গুণ ফজিলতের কথা উল্লেখ আছে। (সহি বুখারি) অন্য হাদিসে তিনি ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত তাকবিরে উলার সঙ্গে (নামাজের প্রারম্ভ থেকে) জামাতে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে দুই প্রকার মুক্তি দান করবেন। এক. জাহান্নাম থেকে মুক্তি। দুই. মোনাফেকের তালিকা বা কার্যক্রম থেকে মুক্তি।’ (তিরমিজি-হাসান) প্রত্যেক মুসলমানের ওপর নামাজ ফরজ। মহান আল্লাহতায়ালা নামাজ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেক ওলামায়ে-কিরামের দর্শন অনুযায়ী নামাজ সংরক্ষণের অন্যতম মর্ম হলো, তা জামাতের সঙ্গে আদায় করা। মারাত্মক অসুস্থতা অথবা অনিবার্য কোনো অপারগতা না হলে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক। তাই আমাদের উচিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমা ও ঈদের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা। মসজিদে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সবাই অজু করে পাকপবিত্র হয় এবং নামাজে ওঠাবসা করে, যা দৈহিক সতেজতা এবং মানসিক প্রফুল্লতা লাভে অত্যন্ত সহায়ক হয়। সকালে জামাতের জন্য জাগ্রত হওয়া এবং মসজিদের দিকে হেঁটে যাওয়া শারীরিকভাবে শ্রেষ্ঠতম উপশম। আর পরকালের অফুরন্ত কল্যাণ তো আছেই। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে জামাতে নামাজ পড়ার জন্য কোনো একটি মসজিদের দিকে পা বাড়াবে তাঁর একটি কদমে আল্লাহ তার একটি করে পাপ মুছে দেবেন। আর একটি কদমে তার একটি করে মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। (সহি মুসলিম)
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
প্রথম আলো
সদ্ব্যবহারে মনুষ্যত্বের বিকাশ
ইসলাম ধর্ম
ব্যবহার মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য উপাদান। ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ হিসেবে জগতের সব মানুষ পারস্পরিক সর্বোত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিকার রাখে। সুন্দর ব্যবহারকে ইসলামে অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়। সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজেকে অন্যের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারে। সব মানুষেরই নিজের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করার জন্য তার ব্যবহারকে অমায়িক করে গড়ে তোলা দরকার। কেননা, আচার-ব্যবহারের মধ্য দিয়েই মনুষ্যত্বের প্রকৃত পরিচয় ফুটে ওঠে। মানুষ ভালো কথাবার্তা ও আচার-ব্যবহার গঠনের মাধ্যমে নিজেকে শোভন, সুন্দর আর পরিশীলিত করে অন্যের প্রীতিভাজন হয়ে উঠতে পারে। সবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকটতম প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে।’ (সূরা আল নিসা, আয়াত: ৩৬) মানুষের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার ও ইসলামি শরিয়াহ পরিপালন পরস্পর সহধর্মী। তাই পরস্পরের প্রতি ভালো ব্যবহার মানবজীবনের অন্যতম ব্রত হওয়া উচিত। মানুষের শোভন ও সুন্দর হয়ে ওঠার জন্য জীবন চলার পথে সুন্দর আচার-ব্যবহারের মানসিকতা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। মানবসমাজে বংশের আসল পরিচয় তার আচার-ব্যবহার। তাই মনুষ্যত্বের বিকাশের জন্য আচার-ব্যবহার সুন্দর হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। মানুষের সত্যিকার পরিচয় তার ব্যবহারেই ফুটে ওঠে। একজন মানুষ ভালো কি মন্দ, তা তার ব্যবহার দেখেই ধরে নেওয়া যায়। ভদ্রলোকের কথাবার্তা, আদব-কায়দা ও আচার-আচরণ থেকে সদ্ব্যবহার প্রকাশ পায়। একজনের ব্যবহার ভালো হলে সে সহজেই সবার প্রিয়ভাজন হয়ে উঠতে পারে। যেমনভাবে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ভালো কথা ও সাদকা করা উত্তম কাজ। সুতরাং তোমরা দোজখের আগুন থেকে বেঁচে থাকো, একটি খেজুর দিয়ে হলেও। যদি তা না পাও, তাহলে মধুর ভাষা ও ব্যবহারের বিনিময়ে।’ (বুখারি) মানবসমাজে সবাইকে ভদ্রোচিতভাবে অন্যের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে কথায় ও কাজে আত্মসংযমী হতে হয়। মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, কাউকে কথা দিয়ে প্রতিশ্রুতি না রাখা, অবান্তর প্রশ্ন করা এবং অহেতুক রাগ-অনুরাগ বা হিংসা-বিদ্বেষ করা উচিত নয়। পরিচিত লোকজনের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করা, ছোটদের স্নেহ-ভালোবাসা, গুরুজনদের মান্য করা এবং অতিথিকে যথাসাধ্য আপ্যায়ন করা সবার দায়িত্ব। সালামের ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে খুশিমনে সালামের জবাব দেওয়া অবশ্যকর্তব্য। সৎ মানুষকে সর্বোত্তম বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। একে অন্যের সঙ্গে সব সময় হাসিমুখে কথা বলা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন এবং সর্বোত্তম পন্থায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতেন। তাই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করো হিকমত (প্রজ্ঞা) ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করো সদ্ভাবে।’ (সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১২৫) সুতরাং মানুষকে হাসিমুখে ও আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করা নৈতিক দায়িত্ব। বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি দ্বারা গ্রাহকদের অভ্যর্থনা দিতে হবে। একজন হাস্যোজ্জ্বল মানুষের সঙ্গে যে কেউ কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করলে তার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও প্রশংসা লাভ করা যায়। ব্যবহার ভালো হলে সবাই তাকে ভালো বলে ও পছন্দ করে। ভালো ব্যবহার করলে অন্যের কাছ থেকেও সদ্ব্যবহার পাওয়ার আশা করা যায়। সুন্দর ব্যবহারই মানুষকে শান্তিপূর্ণ জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারে। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে হলে, জীবনে মহৎ কিছু করতে চাইলে অবশ্যই সবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে হবে। সুন্দর ব্যবহারই মানুষকে সব দিক থেকে সুন্দর করে তোলে। মুমিনের সম্প্রীতিবোধ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নম্র-বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উচ্চাসনে আসীন করেন।’ (মিশকাত) সুন্দর ব্যবহার গড়ে তুলতে হলে মানুষের মন-প্রাণ উদার হতে হয়। আবার ব্যবহার সুন্দর হলে তার মন উদার ও মানবিক গুণাবলিতে ভরপুর হয়ে ওঠে। ভদ্র ও সংযমী আচরণের মাধ্যমে গড়ে ওঠে সুন্দর ব্যবহার। কারও মধ্যে এসব সদ্গুণের সমাহার থাকলে তা ধীরে ধীরে মানুষের ব্যবহারকে সুন্দর ও শোভন করে গড়ে তোলে। তাই ইসলামি জীবনাচার, আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার নিজের জীবনে পরিপালন করতে হবে। পরিপাটি হয়ে থাকা, মানানসই জামা-কাপড় পরিধান করা, পারস্পরিক সাক্ষাতে সালাম ও অভিবাদন দেওয়া, উত্তম আচরণ করা এবং অনুমতি নিয়ে কথা বলা ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি। ইসলামে শিষ্টাচার বা আদবকে ইমানের অংশ বলা হয়েছে। সর্বোত্তম ব্যবহার, বিনয়ী চরিত্র, ব্যক্তিত্ব, আনুগত্য, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে মানবসেবা ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। সে-ই সবচেয়ে আদর্শ মানুষ, যার স্বভাব পরিবারের কাছে সবচেয়ে ভালো বলে বিবেচিত। সে-ই পূর্ণ মুসলমান, যার আচরণ সর্বোত্তম। যে ব্যক্তি নিজের লেনদেন ও কাজ-কারবারে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত, ওয়াদা পালন করে, দায়িত্ব-কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করে, মানুষকে ধোঁকা দেয় না, আমানতের খেয়ানত করে না, অন্যের হক বিনষ্ট করে না, ওজনে কম দেয় না, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং সুদ-ঘুষসহ যাবতীয় অবৈধ রোজগার ও দুর্নীতি থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলে, সে-ই হলো প্রকৃত মুসলমান। খাঁটি মুসলিম সে-ই, যার রসনা ও হাত থেকে মানবজাতি নিরাপদ। কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা চাইবে, তা অন্য ভাইয়ের জন্যও চাইবে। সমাজকে এমন আলোকিতভাবে গড়ে তোলা দরকার, যাতে সহজেই সব মানুষ ব্যক্তিগতভাবে সদ্বব্যবহার করার সুযোগ পায়। সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে মানবজীবনকে সুখী, সমৃদ্ধ ও পরিপূর্ণ করার পাশাপাশি চিরন্তন জীবনের মহাশান্তি লাভের পথ সুগম করা সম্ভব।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
যায়যায়দিন
বই পরিচিতি ইসলাম ও বিশ্বদর্শন নিয়ে কবি ইকবাল
ইসলাম ধর্ম
আধুনিক উর্দু ও ফারসি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে খ্যাতির পাশাপাশি আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের পরিচিতি উপমহাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিক হিসেবে। ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের স্বাত্যন্ত্র ধরে রাখা ও বিকশিত করার তাগিদে তাদের নিজস্ব স্বাধীন আবাসভূমি পাকিস্তান গঠনের তাত্ত্বিক পুরুষ হিসেবে তিনি সুপরিচিতি। তবে এর চেয়েও বেশি জোরালো হলো দার্শনিক হিসেবে তাঁর সুনাম। আর তাঁর দর্শনচিন্তায় ইসলাম প্রবলভাবে উপস্থিত। ইসলাম তাঁর কাছে ছিল গতিশীল এক জীবনদর্শন। সেই উপলব্ধির ফসল রিকনস্ট্রাকশন অব রিলিজিয়াস থটস ইন ইসলাম (ইসলামে ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন)। মূলত ১৯২৮ সালে অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ, হায়দারবাদ, আলিগড়সহ কয়েকটি স্থানে তিনি বিশ্বদর্শন ও ইসলাম বিষয়ে সাতটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেগুলো ছিল ইংরেজিতে। সে বক্তৃতাগুলো সংকলিত হয়ে ১৯৩০ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এর চার বছর পর অক্সফোর্ড থেকে বইটির আরেকটি সংস্করণ প্রকাশিত হয় যেখানে ‘ধর্ম কি সম্ভব?’ নামে আরেকটি নিবন্ধ যুক্ত হয়। বইটি র্জামান ভাষায় অনূদিত হওয়ার পর সেখানকার দার্শনিক ও পণ্ডিত মহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। তাঁরা অনেকেই ইকবালকে তখন ’ইসলামের নবজাগরণের চিন্তাবিদ’ হিসেবে অভিহিত করেন। উল্লেখ্য, ইকবাল জার্মানির মিউনিখের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। বইটিতে জ্ঞান ও ধর্মীয় অভিজ্ঞতা, দর্শনের দৃষ্টিতে প্রত্যাদেশমূলক ধর্মীয় অভিজ্ঞতা, আল্লাহ সম্পর্কে ধারণা ও প্রার্থনার মর্ম, মানুষের খুদি বা আত্মার স্বাধীনতা ও অমরত্ব, মুসলিম সংস্কৃতির মর্মকথা এবং ইসলামি জীবন ব্যবস্থার গতিময়তার ওপর গভীরভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। ইকবাল বলতে চেয়েছেন, ইসলামভিত্তিক সমাজজীবন কোনো একটি কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, নয় স্থবির। সে কারণেই ইসলামি দুনিয়ায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন দেখা দিয়েছে, মতবাদ এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় মুসলমানদের মানসদিগন্তে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে স্বকীয় জ্ঞানের আলোকে নানা রকম ধারণা তৈরির স্বাধীনতা এসেছে। ইকবাল এটাও ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন যে মানুষের জীবনে ইচ্ছার স্বাধীনতা রয়েছে এবং মানুষ তাঁর কাজের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতিনিধি হয়ে অমরত্ব লাভ করতে পারে। মানে, তাকে সাধনা করে অমরত্ব অর্জন করতে হয়। আল্লামা ইকবালে এই বইয়ের মাধ্যমে এও জানাতে চেয়েছেন যে ইসলামের বিধিবিধানগুলোর ভিত্তিতে এবং ইজতিহাদের (আলেমদের গবেষণা) আলোকে মানবজীবনে কালে কালে চিন্তায় ও চর্চায় নানা বিন্যাস ও পুনর্বিন্যাস দেখা দেয়, ভবিষ্যতেও দেবে। তবে এই পুনর্বিন্যাসে কোনো সংকীর্ণ মনোভাবকে স্থান দেওয়া যাবে না। প্রথম প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ৯৩ বছর ধরে নানা ভাষায় বইটির অনেক অনুবাদ ও পুনর্মুদ্রণ হয়েছে। বাংলাভাষাতেও এটি সুন্দরভাবে অনূদিত হয়েছে। ১৯৮১ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এটি বের করেছিল। এখন প্রথমা প্রকাশনীর অনুবাদে এটি বাজারে আছে।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
প্রথম আলো
এক শ বছর পর জীবিত
ইসলাম ধর্ম
হজরত ইবরাহিম (আ.) জাতিকে তওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন। তার বাবাকে তওহিদের প্রতি আহ্বান করেছেন, মূর্তি ভেঙেছেন। শাসক নমরুদ ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে বিতর্ক হয়। ইবরাহিম (আ) বলেন, আমার আল্লাহ তিনি, যিনি জীবন-মৃত্যু দান করেন। তখন নমরুদ বলল, আমিও তো জীবন ও মৃত্যু দান করি। এ বলে সে দুজন জীবন্ত লোক আনতে বলল। একজনকে মেরে ফেলল অন্যজনকে ছেড়ে দিল। আর বলল এই যে আমি যাকে ইচ্ছা জীবন ও মৃত্যু দিই। তারপর ইবরাহিম (আ.) সূর্য উদয় ও অস্তের কথা বললেন, তখন নমরুদ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। আল্লাহ তাঁর ক্ষমতা দেখানোর ইচ্ছা করলেন। গাধাসহ এক লোককে মৃত্যু দিয়ে একশত বছর মৃত রাখেন। তার সঙ্গে রাখা খাবার নষ্ট করলেন না। এক শ বছর পর জীবিত করে বললেন, ‘তুমি এ অবস্থায় কত দিন ছিলে?’লোকটি বলল, ‘এক দিন অথবা এক দিনের কিছু সময়। পুনরায় যখন জীবিত হলো তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। লোকটি ভাবল হয়তো দিনের মধ্যবর্তী সময়টুকু মৃত অবস্থায় ছিলাম। আল্লাহ জানিয়ে দিলেন, তুমি এক শ বছর মৃত ছিলে এবং আল্লাহ নিদর্শনগুলোও দেখিয়ে দিলেন। আল্লাহ সব বিষয়ে ক্ষমতাবান, তিনি ইচ্ছা করলে হাজার বছর পরেও মৃতকে জীবিত করতে পারেন, মানুষ মরে পচে গলে গেলেও পুনর্জীবিত করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব নয়। এ লোকটি কে ছিল, তা নিয়ে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। তার নাম ছিল উজায়ের, তবে প্রকৃত নাম আল্লাহ ভালো জানেন। (সূত্র: তফসিরে ফাতহুল মজিদ) কোরআনে আছে, আবার সেই ব্যক্তির কথা স্মরণ করো, যে এমন এক শহরে পৌঁছেছিল যা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। সে বলল, ‘মৃত্যুর পর কী রূপে আল্লাহ একে জীবিত করবেন?’ তখন তাকে আল্লাহ এক শ বছর মৃত রাখলেন, তারপর তাঁকে পুনর্জীবিত করলেন। আল্লাহ বললেন, ‘তুমি মৃত (অবস্থা) কতক্ষণ ছিলে?’ সে বলল, ‘এক দিন বা এক দিনেরও কিছু কম।’ তিনি বললেন, ‘না, এক শ বছর ছিলে। আর লক্ষ করো তোমার খাদ্যসামগ্রী ও পানীয় বস্তু আর তোমার গাধাটাকে—ওসব অবিকৃত রয়েছে আর আমি তোমাকে মানবজাতির জন্য নিদর্শনস্বরূপ করব। আর (গাধার) হাড়গুলোর দিকে লক্ষ করো, কীভাবে সেগুলোকে আমি জোড়া দিই ও মাংস দিয়ে ঢেকে দিই।’ যখন এ তার কাছে স্পষ্ট হলো তখন সে বলে উঠল, ‘আমি জানি, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৯ )
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার মানুষের ঢল নামছে ইউরোপে
ইসলাম ধর্ম
গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। এরপর ২৮ অক্টোবর থেকে ওই উপত্যকায় স্থল হামলাও শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এরই মধ্যে ভয়াবহ আগ্রাসনে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজারে। এর মধ্যেই ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে ৫২ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যেও ১৫ হাজারের বেশি নারী ও শিশু। এছাড়াও আট হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিখোঁজ রয়েছে। তা সত্ত্বেও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ‘ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে’— মর্মে সমানে সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছে। তারা চলমান বোমা হামলার তীব্রতার কথা বলছে খুব সামান্যই। তবে ইসরাইলের বর্বর এই আগ্রাসন ইতোমধ্যে গণহত্যায় রূপ নিয়েছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ। গাজার সমর্থনে ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বিক্ষোভ হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। বিক্ষোভ মিছিলের সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে, ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশকে ব্রিটেনে অনেক রাজনীতিক একটি ঘৃণাব্যাঞ্জক কাজ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের গায়ে সন্ত্রাসের সহযোগী শক্তি হিসেবে তকমা এঁটে দিতে চাচ্ছেন। ফিলিস্তিনিদের পতাকা উড়িয়ে অথবা ‘নদী থেকে সাগরে ফিলিস্তিন’ শীর্ষক সেøাগান দিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশকে রাজনীতিকেরা যতই নিন্দাসূচক কাজ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করুন না কেন, ব্রিটেনের অনেক সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছেন। গাজার বিরুদ্ধে আজকের চলমান যুদ্ধ যুক্তরাজ্যের জনগণ ও তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের মানসিক ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভাজনের রাজনীতিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা অনেকেও এই তথাকথিত ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে আমাদের এই সময়ের সবচেয়ে তীব্র বিভাজনকারী ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত করছেন। এর মাধ্যমে এটি পরিষ্কার যে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থন অনেক বেড়েছে। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন নামের একটি আন্দোলন সংগঠনের হিসাব মতে, লন্ডনে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা দেড় লাখ থেকে তিন লাখ এবং সর্বশেষ আট লাখে উন্নীত হয়েছে। গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর তা-ব ও গণহত্যার ভয়াবহ মাত্রা সাধারণ মানুষের বিবেককে মারাত্মকভাবে নাড়া দিয়েছে এবং অনেকে রাতারাতি আন্দোলন কর্মীতে পরিণত হয়েছেন। দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনের ওপর জুলুম চালানোকে সমর্থন দেওয়ার কারণে পশ্চিমা সরকারগুলোর প্রতি ক্ষোভ ও অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হয়েছে। ফিলিস্তিন সমর্থক আন্দোলনকর্মীদের ইসরাইলবিরোধী ভাষা প্রয়োগের এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসরাইল বিদ্বেষী বক্তব্য দেওয়ার কারণে ব্রিটিশ পুলিশ ইতোমধ্যে অনেককে আটক করেছে। শিক্ষার্থীদের অনেকে বলেছেন, তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের অ্যান্টি টেররিজম প্রিভেন্ট প্রোগ্রামের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করলে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসরাইলবিরোধী বক্তব্য পোস্ট করলে তাদের অ্যান্টি টেররিজম প্রিভেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় আনা হতে পারে বলে তারা সতর্ক করছেন। তবে এত কিছুর পরও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যুক্তরাজ্যে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেওয়া লোকের সংখ্যা বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের মাটিতে ফিলিস্তিনিরা এমন একটি ন্যায্যতাবাদী গোষ্ঠী খুঁজে পাচ্ছেন, যাদের আন্দোলন তৎপরতা ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। লন্ডনভিত্তিক ব্রিটিশ-সিরিয়ান উদ্যোক্তা ওমার লাবাবেদি হোয়াটসঅ্যাপে ফিলিস্তিন আন্দোলনের সমর্থনে একটি গ্রুপ খুলেছিলেন। শুরুর দিকে তাতে দেড়শ’ জনের মতো সদস্য ছিলেন। সেই গ্রুপ থেকেই পরে আন্দোলনকারীদের বড় একটি সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এই নেটওয়ার্কটি মিছিল, সমাবেশের পাশাপাশি গণমাধ্যমে ফিলিস্তিন ইস্যুর সংবাদ পরিবেশনা পর্যবেক্ষণ করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে থাকে। ‘প্যালঅ্যাক্টিভিজম’ নামের এই গোষ্ঠী যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনকর্মীদের পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করে দেয়। লাবাবেদি দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু লোকজনকে সংগঠিত করার এই কাজ তার প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলেছে। মিডল ইস্ট আই।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
ভোরের পাতা
ইফতার সামনে নিয়ে দোয়া পড়লে গুনাহ মাফ হয়
ইসলাম ধর্ম
রোজা মুসলমানের জন্য ফরজ ইবাদত। এটা আল্লাহর দেওয়া বিশেষ সওগাত। মুসলমান হিসেবে সবার উচিত এ মাসকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা, এ মাসে ইবাদত-বন্দেগি বেশি বেশি করা। সকল প্রকার, অন্যায়, অপরাধ, জুলুম-নির্যাতন, অশ্লীলতা ও বেহায়পনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখাই হলো- রমজানের পবিত্রতা। রমজানের পবিত্রতা শুধু মিছিল ও স্লোগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সব ধরণের অন্যায়-অশ্লীলতা থেকে নিজেকে পরিশোধিত ও সংশোধন করতে হয় রমজান মাসে। লক্ষ্য রাখতে হবে, তাহাজ্জুদ, জিকির-আজকারও যেন না ছুটে। আল্লাহর কাছে ক্ষমাও চাইতে হবে। ইফতারের কিছুক্ষণ পূর্বে এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তে হবে। এটি পড়লে পড়লে আল্লাহতায়ালা তার বান্দার পেছনের সব গুনাহ মাফ করে দেন- يَا وَا سِعَ الْمَغْفِرَةِ اِغْفِرْلِىْ উচ্চারণ: ইয়া ওয়াসিয়াল মাগফিরাতি, ইগফিরলী। অর্থ: হে মহান ক্ষমা দানকারী! আমাকে ক্ষমা করুন। (শু‘আবুল ঈমান: ৩/৪০৭) بِسْمِ اللهِ وَعَلى بَرَكَةِ اللهِ বিসমিল্লাহি ওয়া ‘আলা বারাকাতিল্লাহ বলে ইফতার শুরু করবে এবং ইফতারের পর নিম্নের দুটি দোয়া পড়বে- اَللّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلي رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়ালা রিযকিকা আফতারতু। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রেখেছি, এবং তোমারই দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করলাম। (আবূ দাঊদ: ১/৩২২) ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْـتَلَّتِ العُرُوْقُ وَثَبَتَ الاَ جْرُ اِنْ شَاءَ الله تَعَا لى উচ্চারণ: যাহাবাযযমা ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহু তায়ালা। অর্থ: পিপাসা দূরিভূত হয়েছে, ধমনীসমূহ সতেজ হয়েছে, এবং ইনশাআল্লাহ রোজার সওয়াব নিশ্চিত হয়েছে। (আবূ দাঊদ: ১/৩২১) কারো দাওয়াতে ইফতারি করলে মেজবানের উদ্দেশে এই দোয়া পড়বে- اَفْطَرَعندكم الصائمون واكل طعامكم الابرار وصلت عليكم الملئكة উচ্চারণ: আফতারা ইনদাকুমুস সায়িমুন ওয়া আকালা তাআমুকুমুল আবরার ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালাইকা। অর্থঃ আল্লাহ করুন যেন রোজাদাররা তোমাদের বাড়ীতে রোজার ইফতার করে এবং নেক লোকেরা যেন তোমাদের খানা খায় এবং ফেরেশতারা যেন তোমাদের উপর রহমতের দু‘আ করে। (আসসুনানুল কুবরা, নাসাঈ ৬:৮১)
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
ধেয়ে আসছে জাহেলিয়াত
ইসলাম ধর্ম
জাহেলিয়াত মানে অজ্ঞতা, বর্বরতা, হিং¯্রতা কিংবা দানবতা। অথবা অশ্লীল ও অনাচার ঘেরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থা। যে সমাজে মিথ্যার জয়জয়কার। সত্যের ঠাঁই মেলা ভার। মানুষ আর পশুতে ব্যবধান কেবল আকৃতি। আচার-আচরণ ও কাজকামে দুয়ের মাঝেই অভিন্ন প্রকৃতি। সে সমাজে, যে যার মতো চলে। যা খুশি তাই করে। শক্তির জোরে ভক্তি পায় অর্থের জোরে মুক্তি পায়। কি ন্যায় কি অন্যায় তা বুঝার শক্তিও লোপ পায়। ঠিক যেন ইসলামপূর্ব সত্যের জ্ঞান ও আলোহীন সমাজ ব্যবস্থার মতো। ইসলাম যার নাম দিয়েছিল ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’ বা ‘অজ্ঞতার যুগ’ বলে। কাল পরিক্রমায় আবারও ‘ধেয়ে আসছে জাহেলিয়াত’। অন্ধকার হচ্ছে পৃথিবী। এর কিছু নমুনা তুলে ধরা হলোÑ সৃষ্টিকর্তা ও পরকালে অবিশ্বাস : জাহেলি যুগে অনেক মানুষের ধারণা ছিল সৃষ্টিকর্তা বলতে কিছু নেই। পরকাল, হাশর-নাশর কেবল অলীক কল্পনা। দুনিয়ার জীবনই জীবন। হায়াত-মউত প্রাকৃতিক নিয়ম বা কাল বিবর্তনের ফল। কোরআনে মাজিদে তাদের কথা এভাবে এসেছে, ‘আর তারা বলে, জীবন তো শুধু দুনিয়ার জীবনই। আমাদের জীবন-মরণ এখানেই। কালের বিবর্তনই আমাদের ধ্বংস করে।’ (সুরা জাসিয়া : ২৪) অন্যত্র এসেছে, ‘তারা বলে, ‘যখন আমরা মরে যাব এবং মাটি ও হাড়ে পরিণত হব তখনও কি আমরা পুনরুত্থিত হব?’ (সুরা মুনিুন : ৮২) কোরআন তাদের এসব অসার ও অবান্তর অনেক কথার জওয়াব খুব জোরালোভাবে দিয়ে ঘোষণা করেছে, ‘এমনকি তোমরা যদি (মাটি ও হাড্ডির চেয়ে কঠিন পদার্থ) পাথর কিংবা লোহা হয়ে যাও অথবা তারচেয়েও কোনো কঠিন পদার্থ, তোমাদের ধারণা মতে যাতে জীবনীশক্তি দেয়া সম্ভব নয় (তবু তোমাদের পুনরায় উঠাব।)’ [সুরা বনি ইসরাইল : ৫০-৫১] আজকাল আমাদের সমাজে এ ধরণের বিশ্বাস ও চেতনাধারীদের নাস্তিক বলে ডাকা হয়। ইউকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, ‘বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার শতকরা ২.৩% মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে পরিচয় দেয় এবং ১১.৯% মানুষ কোনো ধর্মেই বিশ্বাস করে না।’ তন্মধ্যে ‘গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল’র ৬৫টি দেশ নিয়ে করা এক জরিপে দেখা গেছে চীনের শতকরা ৯০ ভাগ ও সুইডেনের ৭৬ ভাগ মানুষ পত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করে। এছাড়া চেকপ্রজাতন্ত্র, ব্রিটেন, হংকং, জার্মানি ও জাপান নাস্তিক্যবাদ চর্চায় রয়েছে শীর্ষ সাত দেশের তালিকায়। (সূত্র দৈনিক কালেরকণ্ঠ, ৩০ জুন, ২০১৯) মুসলিম দেশগুলোতেও নাস্তিকদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। শিরকের প্রাদুর্ভাব : শিরক হলো আল্লাহতায়ালার সত্তা কিংবা গুণাবলির সঙ্গে কোনো মানুষ, জীবজন্তু, বা কোনো নির্জীব পদার্থের গুণাবলি অথবা সত্তাকে অংশীদার বানানো। পৃথিবীর মোট ৪৩০০টি ধর্মের মধ্যে ইসলাম ছাড়া কোনো ধর্মই আল্লাহর একত্ববাদের বিশুদ্ধ শিক্ষা দেয় না। সে হিসাবে শিরককারীদের সংখ্যাও পৃথিবীতে কম নয়। অথচ ‘শিরক সবচেয়ে বড় অন্যায়।’ (সুরা লুকমান : ১৩) ‘আল্লাহতায়ালা তাঁর সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য পাপ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কারণ যে শিরক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।’ (সুরা নিসা : ৪৮) কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো আজ তাওহিদের ধারকবাহক মুসলিমরাও নানা রকমের শিরকে লিপ্ত। মাজারগুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখুন। পীর-মুরিদদের দিকে লক্ষ্য করুন। গণক, জ্যোতিষীদের কাছে যারা যায় তাদের দিকে তাকান। দেখবেন, কতজন কতভাবে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করছে। ঠিক যেন জাহেলি যুগের মুশরিকদের মতো তাদের আকিদা-বিশ্বাস। মাজারে পড়ে সিদজা করছে। মৃতলোকের কাছে দুনিয়ার সমস্যার সমাধান চাচ্ছে। সন্তান কামনা করছে। পীরকে ভালোমন্দ দেয়ার বা করার যোগ্য মনে করছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবই শিরকের অন্তর্ভুক্ত। মূর্তিপ্রীতি : জাহেলি যুগে মূর্তি এতটাই প্রিয় হয়ে উঠেছিল, মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ক্ষেতখামার, বৈঠকখানা, ইবাদতখানা সর্বত্রই সযতেœ মূর্তি রাখত ও সংরক্ষণ করত। এমনকি মক্কার লোকেরা কাবাঘরেও ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করেছিল। এদের সামনে মাথা নত করত। সেজদা দিত। খাবার রাখত। এদের নামে যেকোনো কাজ শুরু ও শেষ করত। মান্নত করত। পশু জবাই দিত। বিয়ে-শাদিসহ সামাজিক সকল আচার-অনুষ্ঠান এদের নামেই হতো। এসব মূর্তি বা প্রতিকৃতি ছিল মূলত পূর্বেকার নেককার লোকদের। তাদের বিশ্বাস ছিল নেককার লোকেরা আল্লাহর প্রিয় মানুষ। তারা আল্লাহর কাছে কারো ব্যাপারে সুপারিশ করলে আল্লাহ তা কবুল করবেন। সুতরাং তাদের কোনোভাবে খুশি করা গেলে সফল হওয়া যাবে। কোরআন মাজিদে এসেছে, (মুশরিকরা বলত) ‘আমরা তাদের (মূর্তিদের) ইবাদাত একমাত্র এ উদ্দেশ্যেই করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেবে।’ (সুরা যুমার : ৩) অন্যত্র এসেছে, ‘তারা বলে, ‘এগুলো আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।’ (সুরা ইউনুস : ১৮) আমাদের অবস্থাও আজ তাদের মতোই। আমরাও বাড়িঘর, দোকানপাট, অফিস-আদালতসহ সকল কর্মস্থলে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় প্রিয়জনদের ছবি, বুজুর্গদের ছবি কিংবা নেতানেত্রীর ছবি লাগিয়ে রাখি। যা মূলত মূর্তিপূজারীদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এ ধরণের সাদৃশ্য ধারণও ইসলামে নিষিদ্ধ। নবী করিম সা. বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য ধারণ করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।’ (সুনান আবু দাউদ : ৪০৩১) বলতে বাধা নেই, অনেকে বরকত লাভ ও সম্মান জানানোর জন্যও কোনো মৃত নেতানেত্রী বা বুজুর্গ ব্যক্তির ছবি কিংবা ভাস্কর্য বানিয়ে ঘরে রাখেন কিংবা কোনো জায়গায় স্থাপন করেন। এ সবকিছু মূর্তির সাদৃশ্য অবলম্বন। মূর্তিপূজার সূচনা এভাবেই হয়েছিল। মাদকের ছড়াছড়ি : কোরআনের ভাষায় মদ একটি নিকৃষ্ট বস্তু ও এটা গ্রহণ করা শয়তানের কাজ। (সুরা মায়েদা: ৯১) হাদিসে একে ‘উম্মুল খাবায়েস’ বা পাপাচারের উৎস আখ্যা দেয়া হয়েছে। কারণ মদের উপকারের চেয়ে অপকার অনেক বেশি। জাহেলি যুগে মদের ব্যবহার ছিল অতি মাত্রায়। মদ খেত না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম ছিল। ইসলামের শুরু সময়টাতে তা গ্রহণে বাধা না দেয়া হলেও পরবর্তীতে তা সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কারণ একটি আদর্শ ও সুস্থ সমাজ নির্মাণে মাদক সেবন একটি বড় অন্তরায়। আজকাল মদ্যপান ও এর বেচাকেনা ইসলাম ভিন্ন অন্যান্য জাতির কাছে যেমন স্বাভাবিক বিষয়, তেমন অনেক মুসলিমের কাছেও তা স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে কে না জানে। এরপরও মানুষ সে পথেই হাঁটছে। সমাজকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অবৈধ উপার্জন : সে যুগে অর্থ উপার্জনের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা ছিল না। জীবিকার তাদিগে যে যেভাবে পারত অর্থ উপার্জন করত। অভিশপ্ত ইহুদিরা করত সুদের কারবার। যাযাবররা মরুভূমি পশুপালনের সঙ্গে জড়িত থেকে চুরি, ছিনতাই ও লুটতরাজ চালাত। অভিজাত শ্রেণি ব্যবসা-বাণিজ্য করলেও উপার্জন ছিল সীমিত। যে কারণে তারাও অসদুপায় অবলম্বন করত। দুর্বলদের ঠকাত। এতিম-মিসকিনেদর সম্পদ গ্রাস করত। মেয়েদের পিতা, স্বামী, ভাইসহ অনেক আত্মীয়ের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করত। জুয়াকে সম্পদ উপার্জনের বৈধ পথ মনে করত। ইসলাম এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। চুরি-ডাকাতির শাস্তি নির্ধারণ করেছে। প্রত্যেকের সম্পদেরর অধিকার নিশ্চিত করেছে। সুদ, ঘোষ, ও জুয়াকে হারাম ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আজ সমাজের চিত্র পাল্টে গেছে। উল্লিখিত অপরাধগুলো মহামারীর আকার ধারণ করেছে। বোনদের হক না দেয়া রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। দুর্বলদের নানাভাবে ঠকানো হচ্ছে। জুয়া ও সুদের কারবার রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ যেন কোরআনের বিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙুল প্রদর্শন। ইসলামের সঙ্গে ক্ষমতার আস্ফালন। এসবই কেয়ামত পূর্বলক্ষণ। নারী নির্যাতন : জাহেলি যুগে নারী ছিল কেবলই ভোগের পণ্য। তাদের সামাজিক মান-মর্যাদা ছিল খুবই কম। যেভাবে খুশি পুরুষ তার প্রয়োজনে তাকে ব্যবহার করত। ছেলের কাছে মায়ের কদর ছিল না। বাবার কাছে কন্যার দাম ছিল না। অনেক সময় কন্যাকে বংশের কলঙ্ক ভেবে হত্যা করা হতো। জীবন্ত কবর দিয়ে বাবা তার আত্মমর্যাদা রক্ষা করত। স্ত্রীরা ছিল দাসীতুল্য। বোনরা ছিল অবহেলিত। ইসলাম এসে সবার মর্যাদা নিশ্চিত করে। কিন্তু আজ সে অধিকার নারীরা হারাতে বসেছে। সম-অধিকারের নামে তারা অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের অধিকার খর্ব করছে। ইসলাম বলে মেয়েকে পাত্রস্থ করার আগ পর্যন্ত তার যাবতীয় ব্যায়ভার বাবা ও ভাইদের ওপর। স্ত্রীর ভরণপোষণ স্বীমর ওপর। মা-বাবা কর্মক্ষম হলে সন্তানরা তাদের দেখভাল করবে। আর এখন সে চিত্র উল্টে যাচ্ছে। মা-বাবার স্থান হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। স্ত্রী সংসারের উপার্জনের উদ্দেশ্যে উড়াল দিচ্ছে বিদেশের মাটিতে। যুবতী মেয়েকে ঘরের বাহিরে কাজে দিয়ে বাপ-ভাইয়েরা ঘুমাচ্ছে বাড়িতে পড়ে। নারী যেন স্বাধীনতার নামে ফিরে যাচ্ছে পরাধীনতার জীবনে। এসবই নব্য জাহেলিয়াতের নিদর্শন। অবৈধ যৌনাচার : অবৈধ যৌনাচার, যাকে ইসলাম জিনা হিসেবে নামকরণ করেছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান পৃথিবী জাহেলি যুগের পৃথিবীকে ছাড়িয়ে গেছে। বিয়ের মতো পবিত্র ও মধুর সম্পর্ক ছেড়ে ব্যভিচারকে মানুষ বেছে নিচ্ছে। বিয়ে ছাড়াই জন্ম দিচ্ছে সন্তান। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ইউরোপ, আমেরিকা এগিয়ে থাকলেও এশিয়া কিছুটা পিছিয়ে। তবে বিনোদন কেন্দ্রগুলো, নামি-দামি হোটেলগুলো, শহরের বিভিন্ন অলিগলি আজ জিনার বাজারে পরিণত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে সে বাজার দিনকে দিন বড় হচ্ছে। গ্রাম, মফস্বলের পবিত্র পরিবেশও সে বায়ুতে আক্রান্ত হচ্ছে। অশ্লীল বিনোদন : সে যুগে গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস সবকিছুতেই ছিল অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। নারীর বিভিন্ন গোপনাঙ্গের বর্ণনা, বংশীয় আভিজাত্য, পরস্পর অহংকার প্রদর্শন ইত্যাদি কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা দিয়ে সাজানো ছিল সাহিত্যাঙ্গন। নগ্নতা ছিল আকর্ষণীয় বিনোদন। আজও সাহিত্য মানে একশ্রেণির মানুষের কাছে অশ্লীল, রুচিহীন, নোংরা, পুঁতিগন্ধময় কিছু কথাবার্তা। নগ্নতা সবার চোখেই দৃশ্যমান। এ ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের চেয়ে এগিয়ে। শয়তানের প্রধান টার্গেটই ছিল মানুষের শরীর থেকে পোশাক খুলে নেয়া। জান্নাতে সে আমাদের আদি পিতামাতার পোশাক খুলে নিয়েছিল ষড়যন্ত্র করে। আর দুনিয়ায় সে আদম সন্তানের পোশাক খুলে নিতে ব্যস্ত। এ ক্ষেত্রে মানুষরূপী শয়তানরা তাকে সাহায্য করছে। গান-বাজনার কী অবস্থা সে খবরও আমাদের জানা। এক কথায় অশ্লীলতার ও বেহাপনার জোয়ারে ভাসছে আজ পৃথিবী। চারিত্রিক অবক্ষয় : চরিত্র মানবের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। একটি সমাজ সুস্থ কি অসুস্থ তার পরিচয় সমাজে বসবাসরত মানুষের মধ্যে দিয়ে পাওয়া যায়। আমাদের সমাজের প্রতিবিম্বটা তখনই পরিস্কার হয়ে ওঠে, যখন দেখি ছাত্রের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত। শিক্ষকের হাতে ছাত্রী যৌন হেনস্থার শিকার। সহপাঠীর হাতে সহপাঠী নিহত। বাবা-মাকে হত্যা করছে আপন সন্তান! ক্ষমতার লোভে গুম-খুন করছে মানুষ মানুষকে। সত্যকথা বলার দায়ে বিষিয়ে তোলা হচ্ছে জীবনকে। কারো সম্পদ রাখার জায়গা হচ্ছে না, কেউ আবার দু’বেলার খাবার খুঁজে পাচ্ছে না। কারো আলিশান গাড়ি বাড়ি। কারো ফুটপাতে লতাপাতার ঝুপড়ি। কেউ সামান্য রোগের চিকিৎসা করাতে বিদেশে যায়, কেউ মহারোগ নিয়ে হাসপাতালের বারান্দাতেও থাকার জন্য টাকা পায় না। মানবীয় গুণাবলি ধারী ধীরে মানুষ থেকে উঠে যাচ্ছে। এর স্থান দখল করছে পশুস্বভাব। একে অপরের প্রতি দয়া, ভ্রাতৃত্ববোধ, ভক্তি, সম্মানবোধ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। হিং¯্রতা, বর্বরতা, হিংসা-বিদ্বেষ ব্যাপকহারে বেড়ে চলছে। এ অবস্থায় মুমিনের অতি সতর্ক ও সংযত হয়ে জীবনযাপন করা প্রয়োজন। ইসলামি অনুশাসনের প্রতি ভালোবাসা ও দরদ নিয়ে তা মান্য করা কর্তব্য। নতুবা ইসলাম যেভাবে অপরিচিত ও দুর্বল অবস্থায় আত্মপ্রকাশ করেছিল অচিরেই তা আগের অবস্থাতেই ফিরে যাওয়ার ভয় রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন!
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
Dhaka Tribune
চাঁদকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণার দাবি মহাসভা প্রধানের
হিন্দু ধর্ম
গত সপ্তাহেই প্রথমবারের চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রেখে ইতিহাস গড়েছে ভারত। বুধবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় সফলভাবে সফট ল্যান্ডিং করেছে দেশটির মহাকাশযান চন্দ্রযান ৩। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরই মধ্যে সেই ল্যান্ডিং স্পটের নাম “শিবশক্তি” রেখেছেন। এই নামকরণ নিয়ে ভারতজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। আর এই আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই এবার চাঁদকে “হিন্দু রাষ্ট্র” হিসেবে ঘোষণার দাবি তুলেছেন সর্বভারতীয় হিন্দু মহাসভার জাতীয় সভাপতি স্বামী চক্রপাণি মহারাজ। রবিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমি চাই ভারতীয় পার্লামেন্ট একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে চাঁদকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করুক।” নরেন্দ্র মোদির নাম দেওয়া “শিব শক্তি পয়েন্ট”কে চাঁদের রাজধানী ঘোষণারও দাবি করেন সর্বভারতীয় হিন্দু মহাসভার জাতীয় সভাপতি। তিনি বলেন, “চন্দ্রযান-৩ যেখানে অবতরণ করেছে সেই শিব শক্তি পয়েন্টকে রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কোনো সন্ত্রাসী জিহাদি মানসিকতা নিয়ে যাতে সেখানে পৌঁছাতে না পারে, কট্টরপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিকাশ যাতে না হয় সেজন্য চাঁদকে সনাতন হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া উচিত।” স্বামী চক্রপাণি মহারাজ বলেন, “শিবশক্তি পয়েন্টকে আমি শিবশক্তি ধাম হিসেবেই দেখছি। হিন্দু মহাসভা এবং সন্ত মহাসভার তরফ থেকে এই মর্মে আমরা সরকারের কাছে একটি চিঠিও লিখছি। যত দ্রুত সম্ভব চাঁদকে হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা করা হোক। আমার আরও একটি প্রস্তাব আছে। চাঁদে যাতায়াত শুরু হলেই ওই শিবশক্তি পয়েন্টে আমি ভগবান শিব, মা পার্বতী এবং ভগবান গণেশের একটি মন্দির তৈরি করব।”
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
প্রথম আলো
মাহে রমজানে তাওরাত অবতরণ
ইসলাম ধর্ম
আল্লাহর নবী হজরত মুসা (আ.)-এর কাছে কয়েক হাজার বছর আগে রমজান মাসের ৬ তারিখে কয়েকখানা পাথরের ফলকে উৎকীর্ণ অবস্থায় আসমানি কিতাব ‘তাওরাত’ নাজিল করা হয়। আল্লাহর আহ্বানে হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে গমন করে প্রথমে ৩০ দিন একটানা রোজা ও ইতিকাফ পালন করেন, পরে আরও ১০ দিন একইভাবে সিয়াম ও ইতিকাফ পালন করেন। এভাবে ৪০ দিন পূর্ণ হলে তাঁর কাছে ‘তাওরাত’ অবতীর্ণ হয়। হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে গিয়েছিলেন ২৭ রজব এবং ৬ রমজান তাঁর অবস্থান ৪০ দিন পরিপূর্ণ হলে তিনি তাওরাতপ্রাপ্ত হন। হজরত মুসা (আ.)-এর সঙ্গে আল্লাহর সরাসরি বাক্যালাপ হওয়ায় তিনি ‘কালিমুল্লাহ’ খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুসার সঙ্গে আল্লাহ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করেছিলেন।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৪) হজরত মুসা (আ.) আল্লাহকে দেখার জন্য জোর আবেদন-নিবেদন করলে তিনি ঘোষণা করেন, ‘মুসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো এবং তার প্রতিপালক তার সঙ্গে কথা বললেন, তখন সে বলল: “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও! আমি তোমাকে দেখব।” তিনি বললেন: “তুমি আমাকে কখনোই দেখতে পাবে না। বরং তুমি পাহাড়ের প্রতি লক্ষ করো, তা স্বস্থানে স্থির থাকলে তুমি আমাকে দেখবে।” যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল আর মুসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ল। যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল, তখন বলল: মহিমাময় তুমি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমারই দিকেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৪৩) হজরত মুসা (আ.)-এর হাতে যে আশ্চর্যজনক লাঠি থাকত, সেটি অনেক মুজিজা গুণসমৃদ্ধ ছিল। ফিরআউনের জাদুকরদের জাদুর সাপ সেই লাঠি সাপে পরিণত হয়ে খেয়ে ফেলেছিল। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘মুসার প্রতি আমি প্রত্যাদেশ করলাম, তুমিও তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো, সহসা তা তাদের অলীক সৃষ্টিগুলোকে গ্রাস করতে লাগল।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১১৭) ওই লাঠি লোহিতসাগরে বিশাল পথ করে দিয়েছিল, যা দিয়ে ফিরআউনের কবল থেকে উদ্ধারকৃত বনি ইসরাইলকে নিয়ে হজরত মুসা (আ.) নিরাপদে নীল নদের ওপারে চলে যান। এই লাঠি অন্ধকারে আলো দিত, অনাবৃষ্টির সময় পানি বর্ষণ করত, ফলবান বৃক্ষ হয়ে যেত; দুধ, মধু ও সুগন্ধি জোগান দিত, সমুদ্রে দিক নির্ণয় করত। হজরত মুসা (আ.) যখন রিসালাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তিনি প্রধানত ১০টি বিধান বা ধর্মীয় অনুশাসন লাভ করেছিলেন আর তা হচ্ছে: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মূর্তি তৈরি কোরো না, মাতা-পিতার অবাধ্য হবে না, নরহত্যা কোরো না, ব্যভিচার কোরো না, প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে কোনোরূপ মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না, প্রতিবেশীর পরিবারের প্রতি অন্যায় লালসা কোরো না’ প্রভৃতি। হজরত মুসা (আ.) ও হজরত খিজির (আ.)-এর সাক্ষাৎ ও বিশেষ জ্ঞান শিক্ষালাভ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর তারা (মুসা ও তাঁর সঙ্গী) আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের (খিজিরের) সাক্ষাৎ পেল, যাকে আমি আমার কাছ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম এবং আমার কাছ থেকে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। মুসা তাকে (খিজিরকে) বলল, “সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা থেকে আমাকে শিক্ষা দেবেন, এ শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি?”’ (সূরা আল-কাহফ, আয়াত: ৬৫-৬৬) পবিত্র মাহে রমজানে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জাতির স্বীয় মাতৃভাষাকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করে নিজ নিজ জাতির নিজস্ব ভাষায় আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন। হজরত মুসা (আ.)-এর সম্প্রদায়ের মাতৃভাষা ছিল হিব্রু বা ইবরানি, এ ভাষায় ‘তাওরাত’ অবতীর্ণ হয়। হিব্রু ভাষায় ‘তাওরাত’কে বলা হয় ‘তোরা’। নবী-রাসুলগণের মাতৃভাষায় আসমানি কিতাব নাজিলের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎ পথে পরিচালিত করেন।’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪) >নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রমজান উপলক্ষে আমার উম্মতকে পাঁচটি বস্তু দেওয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী উম্মতকে দেওয়া হয়নি।’ হজরত মুসা (আ.)-এর সমকালেও রোজা রাখার বিধান ছিল। ইহুদিদের ওপর সপ্তাহে প্রতি শনিবার আর বছরের মধ্যে মহররমের ১০ তারিখে আশুরার দিন এবং অন্যান্য সময় বিশেষ উপলক্ষে রোজা ফরজ ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করে ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা অবস্থায় পেলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ তোমরা কিসের রোজা করছ?’ তারা বলল, ‘এটা সেই মহান দিবস, যেদিন আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়কে (বনি ইসরাইল) মুক্ত করেছিলেন এবং ফিরআউন ও তার জাতিকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। ফলে শুকরিয়াস্বরূপ হজরত মুসা (আ.) ওই দিন রোজা রেখেছিলেন, তাই আমরা আজ রোজা করছি।’ এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমি তোমাদের অপেক্ষা হজরত মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এদিন সাওম পালন করেন এবং সবাইকে রোজা রাখার নির্দেশ দেন।’ (বুখারি ও মুসলিম) হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে আল্লাহর কাছ থেকে ‘তাওরাত’প্রাপ্তির আগে ৪০ দিন পানাহার পরিত্যাগ করেছিলেন। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে বর্ণিত আছে, হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে ৪০ দিন পানাহার বর্জন করে রোজা অবস্থায় ধ্যানমগ্নতায় কাটিয়েছিলেন। তাই ইহুদিরা হজরত মুসা (আ.)-এর অনুসরণে ৪০টি রোজা রাখা ভালো মনে করত। তন্মধ্যে ৪০তম দিনটিতে তাদের ওপর রোজা রাখা আবশ্যক ছিল। মহররমের ১০ তারিখে আশুরার দিনে হজরত মুসা (আ.) তাওরাতের ১০টি বিধান পেয়েছিলেন, এ কারণেই তাওরাতে ওই দিনের রোজা পালনের জন্য তাগিদ এসেছে। এ ছাড়া ইহুদি সহিফাতে অন্যান্য রোজারও সুস্পষ্ট হুকুম রয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রমজান উপলক্ষে আমার উম্মতকে পাঁচটি বস্তু দেওয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী উম্মতকে দেওয়া হয়নি।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সেহ্রি খাওয়া।’ (মুসলিম) অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে যে ‘আমাদের এবং ইহুদিদের রোজার পার্থক্য হচ্ছে আমরা সেহ্রি খাই।’
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
তাঁর আগমনে ধন্য হলো ভুবন যেদিন
ইসলাম ধর্ম
মহানবী (সা.)-এর শুভাগমন হয়েছিল ৫৭০ খ্রি. ১২ই রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার। শীতের অবসান প্রায়, তরু শাখা-প্রশাখায় নব পাতা পল্লব সমাগত। এমন এক দিনে রাতের শেষ প্রহরে হালকা শীতের স্নিগ্ধ বাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল। পবিত্র মক্কা নগরীতে উঁচু-নিচু ভূমিতে প্রভাতী আলোক শিখা শুভাগমনী বার্তা নিয়ে কারা যেন ছড়িয়ে পড়েছিল। যার আগমনের অপূর্ব নুরে আসমান-জমিন আলোকিত হয়েছিল। আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছিল- ‘মারহাবা ইয়া হাবিবাল্লাহ্, শুভাগমন! অভিনন্দন! সমস্ত সৃষ্টিজগত আজ আনন্দে আত্মহারা, গগণে গগণে ফেরেশতাদের ছুটাছুটি, তোরণে তোরণে সালাম সম্ভাষণ। সবই আজ বিস্মিত, পুলকিত, কম্পিত ও শিহরিত। জড় প্রকৃতির অন্তরেও লেগেছে দোলা। বেহেশতি খুশবুতে বাতাস আজ সুরভিত। যুগ-যুগান্তরের প্রতীক্ষিত না আসা অতিথির আগমন মুহূর্ত আজ যেন আসন্ন হয়ে উঠেছে। তারই অভ্যর্থনার জন্য আজ সব আয়োজন। এমন স্নিগ্ধ-শান্ত আমেজের মধ্যদিয়ে শুভ মুহূর্তে সোবহে-সাদিকের সময় আরবের মরু দিগন্তে মক্কা নগরীর এক প্রাচীন কুটিরের নিভৃত কক্ষে মা আমেনার কোলে তাশরীফ আনলেন প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)। আম্বিয়াগণের শুভাগমনের মুহূর্তে বিস্ময়কর ও আশ্চর্যজনক কিছু ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কথা ইতিহাসে উল্লেখ আছে। সৃষ্টির দুলালের আগমনের মুহূর্তেও অভাবনীয় বিস্ময়কর ও অতি আশ্চর্যজনক কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় যাকে বলা হয়- ‘ইরহাসাত’। নবী (সা.)-এর জন্মলগ্নে সত্যের আগমনে মিথ্যার কম্পন সৃষ্টি হয়েছিল তামাম দুনিয়ার খোদাদ্রোহী শাসকদের অন্তরে। সৃষ্টির দুলালের শুভ জন্মের সময়ে পারস্যের রাজ প্রাসাদে ফাটল দেখা দেয়, তার ১৪টি গম্বুজ ভূমিতে ধ্বসে পড়ে, পারস্য মন্দিরের অগ্নি নির্বাপিত হয়ে যায়, যা ইতিপূর্বে হাজার বছরেও নির্বাপিত হয়নি। সিরিয়ার মরুভূমিতে নহর প্রবাহিত হলো। সাওয়া নদী শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হলো। সায়্যিদা আমেনার জীর্ণ কুটিরের আলোতে সিরিয়ার সব মহল ও রোম সাম্রাজ্যের প্রাসাদসমূহ পর্যন্ত আলোকিত হলো। মা আমেনার কোলে তাশরীফ এনেছেন যে-নূর তার নাম মুহাম্মদ (সা.)। হযরত মুহাম্মদ (সা.) একটি নাম। কোটি কোটি মানুষের ওষ্ঠদ্বয় প্রতিদিন বহুবার এ নামের আস্বাদ গ্রহণ করে। এ নাম মুমিনের হৃদয়ে প্রবাহিত করে খুশি ও আনন্দের ফুলগুধারা। সাড়ে ১৪শ’ বছর ধরে এভাবেই চলছে দুনিয়ার ইতিহাস। পৃথিবীর শেষ দিনটি পর্যন্ত অগণিত মানুষের মুখে মরুর দুলালের নামের উচ্চারণ এবং হৃদয়ের গভীরে তার অনুরাগ এমনিভাবে অব্যাহত থাকবে। রাসূল (সা.)-এর শুভ জন্মের দিন সোমবার দিবসটি ইতিহাস বিজড়িত। রাসূল (সা.)-এর শুভ জন্ম হয়েছে সোমবার, নবুওয়্যাত লাভ করেছেন সোমবার, মদিনায় হিজরতের উদ্দেশে মক্কা ত্যাগ করেছেন সোমবার, মদিনা মুনাওয়্যারায় আগমন করেছেন সোমবার, উম্মতদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে পরপারে যাত্রা করেছেন সোমবার এবং হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করেছেন সোমবার। মানব সৃষ্টির কম-বেশি ছয় হাজার বছর পর সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ওহির জ্ঞানের আলোকে আদর্শ সমাজ গড়ে যে শিক্ষা মানব জাতিকে দিয়েছেন, সে শিক্ষার আলোকে পথ চলে আমরাও হাউজে কাউসার পানকারী এবং তাঁর শাফায়াতের যোগ্য হতে পারি ইনশাআল্লাহ। সমস্যা হোক পাহাড়সম, জটিলতা হোক সমুদ্রসম তবুও নবীজীর আনীত ধর্মে তার সঠিক সমাধান ও সঠিক উত্তর নিহিত রয়েছে। প্রিয় নবীজির অপ্রতিদ্বন্দ্বী আদর্শের দিকে ফিরে যাওয়াতেই রয়েছে ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি। তাঁর অনিন্দ্য সুন্দর জীবনের আলোয় আমাদের জীবনকে আলোকিত করার মধ্যেই রয়েছে সফলতা। নবী (সা.)-এর প্রদর্শিত মত ও পথকে মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টি হিসেবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে গ্রহণ করার মধ্যেই রয়েছে আমাদের কল্যাণ।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
কালের কন্ঠ
সিরিয়ার প্রভাবশালী আলেমের ইন্তেকাল
ইসলাম ধর্ম
সিরিয়ার প্রসিদ্ধ আলেম ও দায়ী শায়খ মুস্তফা আল-সাইরাফি ইন্তেকাল করেছেন। সর্বশেষ তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। গত শনিবার (২৬ আগস্ট) দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভোগার পর তিনি কাতারের দোহায় মারা যান। তিনি ছিলেন সিরিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী আলেম।ইসলাম বিষয়ক আকর্ষণীয় বক্তব্য দিতেন তিনি। তিনি বিভিন্ন মসজিদে ইমাম ও ইসলাম প্রচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।শায়খ আল-সাইরাফি ১৯৩০ সালে সিরিয়ার হামা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ছিল সম্ভ্রান্ত ইলমী পরিবার।ছোটবেলা থেকেই তিনি মানুষকে ইসলামের প্রতি ডাকতে অভ্যস্ত ছিলেন। তাঁর হাস্যোজ্জ্বল মুখ ও বিনয়ীভাব মানুষকে তাঁর কাছে নিয়ে আসত। বিশুদ্ধ ভাষায় বক্তব্যের জন্য তিনি সবার মধ্যে সুপরিচিত ছিলেন। শায়খ মুহাম্মদ আল-হামিদ, শায়খ মুহাম্মদ আলী মুরাদসহ সমকালীন বিখ্যাত আলেমদের কাছ থেকে তিনি ইসলামী জ্ঞান অর্জন করেন।১৯৫০ সালে তিনি দামেশক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ইসলামী শরিয়াহ, সাহিত্য, দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।শায়খ মুস্তফা আল-সাইরাফি ছাত্রাবস্থা থেকেই বিভিন্ন সাংগঠনিক তৎপরতায় যুক্ত ছিলেন। তরুণদের মধ্যে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব গড়তে তিনি নিয়মিত হামা শহরের জামে আল-মাসউদে বক্তব্য দিতেন। তখনকার সময় বক্তব্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক তরুণ ইসলামচর্চা শুরু করে।তখন তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে উঁচু পদের জন্য অফার করা হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।১৯৬৩ সালের মার্চে বাথ পার্টি সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিলে তার নিপীড়ন শুরু হয়। পরের বছর তিনি প্রথমে আরব আমিরাত যান। এরপর পুনরায় দেশে ফিরে কাতার চলে যান। আমৃত্যু সেখানে তিনি বিভিন্ন ইসলামী কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকেন। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকতা, দাওয়াতি কার্যক্রম, মসজিদের ইমামতিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের সংখ্যালঘু বিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
দৈনিক ইনকিলাব
‘রমযান মাস তো সে মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে’
ইসলাম ধর্ম
রমযার মাস,আল কোরআন নাজিলের মাস। এ মাস তাকওয়ার মাস।এরশাদ হচ্ছে-‘হে ইমাদারগণ!তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে,যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পুর্ববতী নবীর উম্মতের উপর। আশা করা যায় তোমাদের মাঝে তাকওয়ার গুন ও বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হবে’। (সুরা বাকারা-১৮৩)। রোজা একটি ফরজ ইবাদত।ইহা পালন করা ফরজ। এরশাদ হচ্ছে,‘ যাদের কাছে রোজার মাস উপস্থিত হবে,তারাই রোজা পালন করবে’।রোজাকে অস্বীকার বা অবহেলা কারী কাফের।একজন মুসলমানের ইমানী দায়ীত্ব হচ্ছে রমজান মাসে রোজা পালন করা। রোজা পালন করলেই তাকওয়ার গুন অর্জন করা না। তাকওয়া অর্জনের জন্য খোদা ভীতি,মহান আল্লাহ তাআলার নাফরমানি,অবাধ্যতা থেকে নিজেকে বেঁচে রাখ।অন্তরে আল্লাহ ভীতি জাগ্রত রাখা। যা মোমেন বান্দার জন্য একান্ত ভাবে কাম্য। মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে সর্ব শ্রেষ্ঠ্য জাতি হিসাবে পৃথিবীতে প্রেরন করেন। মানুষকে পরিচালনার জন্য মহা গ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করেন। কোরআন হচ্ছে, সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।পার্থক্যে পরিমাপের মাপ কাটি । এরশাদ হচ্ছে- ‘রমযান মাস তো সে মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে। আর এ কোরআন হচ্ছে মানব জাতির জন্য পথের দিশা। মানুষের জন্য সত্য মিথ্যার পার্থক্য কারী’।(সুরা বাকারাহ-১৮৫)। মহান আল্লাহ তাআলা সব সহিফা এবং বড় বড় চারি খানা আসমানি কিতাব রমজান মাসে নাজিল করেন। পবিত্র হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে,‘হযরত ইব্রাহিম (আ) এর উপর সহিফা রমজানের ১লা তারিখে,হযরত মুসা (আ) এর উপর তাওরাত শরীফ রমজানের ৬ তারিখে,হযরত দাউদ (আ) এর উপন যাবুর শরীফ রমজানের ১২ তারিখে, হযরত ঈসা (আ) এর উপর ইজ্ঞিল শরীফ রমজানের ১৮ তারিখে এবং সব শেষ মহা গ্রন্থ আল কোরআন শরীফ বিশ^ নবী (দ) এর উপর রমযান মাসের কদরের রাতে নাজিল করা হয়েছে’। প্রত্যেক বনি আদমের ভালো কাজের প্রতিদান দশগুন থেকে সাতশত গুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়।এরশাদ হচ্ছে,‘আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত রাসুল (দ) বলেছেন,বনী আদমের প্রত্যোক ভালো কাজের প্রতিদান দশগুন থেকে সাতশত গুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,তবে সওম ছাড়্ াযেহেতু তা কেমল আমার জন্য আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।কেননা একজন সওমকারী তার প্রবৃত্তিকে আমার জন্য নিবৃদ্ধ রেখেছে এবং খানাপিনা থেকেও বিরত থেকেছে। রোজাদারের জন্য রয়েছে দু’টো মুহুত। ১.যখন সে ইফতার করে। ২. যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাত করেবে। রোজাদারের মুখের গন্ধ মহান আল্লাহর নিকট মিশকে আম্বরের চেয়েও অধিক সুগন্ধি যুক্ত। প্রকৃতপক্ষে সিয়াম ঢাল স্বরুপ। সুতুরায় তোমাদের কেউ যখন রোজার দিনে সওম রাখবে তখন যেন যৌন মিলন না করে,অশ্লীল বাক্যলাপও না করে। তবে যদি কেউ তোমাদের কোন রেজাদারের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয় বা ঝগড়া বাধিয়ে দেয়,তখন যেন বলে দেয় যে,আমি একজন রোজাদার’।(বুখারী)। রমযান মাস, মোমেন বান্দার জন্য মহা নিয়ামত।তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন.হে আল্লাহ,বাতিল ছেড়ে সত্য পথের দিশা দেখাও। এরশাদ হচ্ছে-‘হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে সরল সঠিক পথের দিশা দাও’। (সুরা ফাতিহা)্।তার জবাবে আল্লাহ বলেন,‘আলিফ লাম মিম!এটা সেই কিতাব,তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এটি মুত্তাকি লোকদের পথ দেখাবে’।(সুরা বাকারা১-২)। মহান আল্লাহ তাআলা আল কোরআনের মাধ্যমে মুত্তাকি বান্দার পুরুস্কার ঘোষনা করেন।এরশাদ হচ্ছে,‘নিশ্চয় যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং যারা সৎকর্ম পরায়ন,আল্লাহ তাদের সঙ্গে রয়েছেন’।‘নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদেরকে ভালোবাসেন’। ‘যে আল্লাহকে ভয় করে,আল্লাহ তার পাপ মার্জন করবেন এবং তাকে দেবেন মহা পুরুস্কার’।‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারনাতীত উৎস থেকে জীবিকা দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’।‘যদি তোমরা ধৈর্য ধারন করো এবং আল্লাহকে ভয় করো। তাদের ষড় যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।‘যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করতো তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকট উপস্থিত হবে,তার দরজা গুলো খুলে দেওয়া হবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদের বলবে,তোমাদের প্রতি সালাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করো, স্থায়ী ভাবে অবস্থানের জন্য”। হাদীসে কুরসিতে আল্লাহ বলেন,‘রোজা আমার জন্য,আমি নিজে তার পুরুস্কার দিব’। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্নিত হযরত রাসুল (দ) বলেন, সিয়াম এবং কোরআন বান্দার জন্য কিয়ামতের দিবসে সুপারিশকারী হবে,সিয়াম বলবে,হে প্রভু আমি তাকে দিনের বেলা খাওয়া এবং প্রবৃত্তির তাড়না থেকে নিবৃত্ত রেখেছি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহন করুন। কোরআন বলবে,আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি,তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন,আল্লাহ বলবেন,তাদের সুপারিশ গ্রহন করা হলো’।‘যে রমজানের ইমান এবং এহতেসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে,আল্লাহ তার পুর্বের গোনাহ মাফ করে দেবেন’।(বুখারী-মুসলিম)। রোজা মানুষের পাপ রাশিেেক জ¦ালিয়ে একজন খাটি মানুষ হিসাবে তৈরী করে। রাত জেগে আল কোরআন তেলাওয়াত,আল্লাহর নিয়ামত ও অসংখ্য নেকী অর্জন করার মাস। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘আর এ কুরআন হচ্ছে মানব জাতির জন্য পথের দিশা। মানুষের জন্য হক-বাতিলে পার্থক্য কারী’। আধুনিক সভ্যতা,সংস্কৃতিকে আকড়ে ধরেছি। যা দুনিয়ার জীবনে শেষ। পরকালের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। আল্লাহ তাআলা কোরআনের প্রতিষ্ঠানিক রুপদানেবান্দার প্রতি রোজা ফরজ করেন। আমরা নামাজ,রোজা,যাকাত,হজ্জ ইত্যাদি ইবাদত করি।এরশাদ হচ্ছে,‘নিশ্চয় নামাজ খারাপ ও অশ্লুীল কাজ থেকে বিরত রাখে’। আমরা,সঠিক পথের সন্ধ্যান পাচ্ছি না। আল কোরআন অধ্যায়ন ও রোজা পালনের মাধ্যমে মুত্তাকি হতে পারছি না।আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত হযরত রাসুল (দ) বলেন,যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুয়ায়ী আমল বর্জন করতে পারে নি,তার খাওয়া ও পান করা পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজনে নেই। (বুখারী)। হযরত রাসুল (দ) বলেন,কত রোজাদার আছে,যাদের সওমের বিনিময়ে ক্ষুদা ছাড়া আর কিছুই জোটে না।(মসনদে আহমদ)।মোট কথা আমাদেরকে মিথ্যা কথা,গীবত,অপবাদ,পাপাচার,পরনিন্দা এবং অন্যায় কাজ কর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। সওমের মাধ্যমে ক্ষমা পেতে হলে,সওম হতে হবে পাপমুক্ত। শুধু মাত্র পানাহার ত্যাগ আর গুনাহের কাজ না ছাড়লে কোন ভাবেই সওম পালন কওে মুক্তাকি হওয়া যাবে না। মাহে রমযান বরকত,রহমত ও নাজাতের মাস। আমরা হালাল,হারাম,ন্যায়-অন্যায়,সত্য-মিথ্যাসহ যাবতীয় বিধানাবলি যথাযথ ভাবে পালন করি। বিশ^ নবী (দ) অন্ধকার যুগে জাহিলিয়াত,পাশবিকতা ও হিং¯্রতা,শিরক, পৌত্তলিকতা ও অমানবিকতায় ভরা অন্ধাকার সমাজকে দুর করে সোনালি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেন। সে সমাজে উদয়মান সুর্য্যরে দীপ্ত আলোয় বিশ^ হলো আলোকিত।বিশ^ নবী (দ) বলেন,‘সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ হলো আমার যুগ’। এরশাদ হচ্ছে,‘আমি আকাশ পৃথিবী ও পর্ব্বত মালার সামনে এ আমানত(আল কোরআনের তথা খেলাফতের দায়ীত্ব)পেশ করলাম। কিন্তু তারা তা গ্রহন করতে প্রস্তুত হলো না। তারা ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু মানুষ তার স্কন্ধে তুলে নিল।’(সুরা আহযাব)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,‘ইয়াসিন,জ্ঞান গর্বময় কোরআনের শপথ,তুমি অবশ্যই রাসুলদের একজন।নিঃসন্দেহে তুমি সরল পথের উপর (প্রতিষ্ঠিত) রয়েছ। পরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকেই কোরআন অবর্তীনা’।(সুরা ইয়াসিন)। আল কোরআনের জ¦লন্ত আগুন,মানুষকে পুড়িয়ে সোনার মানুষে পরিনত করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহনের পুর্বে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) বিশ^ নবী (দ) কে হত্যা করার জন্য ঝড়ের বেগে ছুটছে। কিন্তু আল কোরানের র্স্পশে ওমরের হৃদয়ে পরিবর্তন আসে। তারপর,তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হলেন।আসুন,আমরা রোজার তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করি। আল কোরআনের জ্ঞানে নিজেকে আকড়ে ধরি। এই হোক সবার প্রত্যাশা।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
সউদী আরবে ১৩শ’ বছর আগের মসজিদ পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ
ইসলাম ধর্ম
জামে আল-সাফা। ১৩ শ’ বছর আগে নির্মিত সউদী আরবের প্রাচীনতম একটি মসজিদ। এটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গৃহীত ঐতিহাসিক মসজিদের উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে আল-বাহা অঞ্চলের এই মসজিদটিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সংস্কারের মাধ্যমে মসজিদের স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিশ্চিত করা হবে। আল-সাফা মসজিদটি বালজুরাশি অঞ্চলে অবস্থিত। সাড়ে ১৩ শ’ বছর আগে উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত মসজিদটির আশপাশে রয়েছে পাথরের তৈরি বিভিন্ন ভবন। মনে করা হয়, আল-সাফা মসজিদটি প্রথম নির্মাণ করেন সুফিয়ান বিন আউফ আল-গামদি। তখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপটে মসজিদটির গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল। গ্রামবাসী এখানে একত্র হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করত। মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে বিভিন্ন বিরোধ মীমাংসা করা হতো। ঐতিহাসিক মসজিদ সংস্কার প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে সউদী আরবের ১৩টি অঞ্চলের ৩০টি মসজিদ আছে। এর মধ্যে রিয়াদে ছয়টি, মক্কায় পাঁচটি, মদিনায় চারটি, আসিরে তিনটি, আল-জউফ ও জাজানের দুটি, তাবুক, আল-বাহা, নাজরান, হায়েল ও আল-কাসিমসহ বিভিন্ন মসজিদ আছে। এর আগে সংস্কার প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১০টি অঞ্চলের ৩০টি ঐতিহাসিক মসজিদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। মসজিদগুলোর সুরক্ষা, সংস্কার, স্থায়িত্ব ও জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে স্থাপত্য সৌন্দর্য বজায় রাখতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। সউদী আরবের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে ঐতিহাসিক মসজিদগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য অক্ষুণœ রেখে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি করাই এ প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য। আরব নিউজ, সউদী গেজেট।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive