Source
stringclasses 15
values | Headlines
stringlengths 10
177
| Category
stringclasses 5
values | Article
stringlengths 337
11.8k
| Aspect
stringclasses 4
values | Sentiment
stringclasses 3
values |
---|---|---|---|---|---|
প্রথম আলো | ইসলামে শিশু নির্যাতন হারাম | ইসলাম ধর্ম | শিশুরা পবিত্রতার প্রতীক। শিশুরা নিষ্পাপ। শিশুরা আনন্দের উপকরণ ও প্রেরণার উৎস। তাই শিশুদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করা জরুরি। কোরআন মজিদে বর্ণিত হয়েছে: ‘আল্লাহ তোমাদের থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবন উপকরণ দিয়েছেন। (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৭২)। শিশু মানবজাতির অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শৈশবেই মানুষের জীবনের গতিপথ নির্ধারিত হয়। তাই শৈশবকাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়ে ওঠার জন্মগত অধিকার রয়েছে। শিশুদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু দেখা যায়, আমাদের সমাজে শিশুরা অহরহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
শিশুদের শারীরিক শাস্তি একটি সামাজিক ব্যাধি
শিশুদের শারীরিক শাস্তি আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অঘোষিতভাবে অনুমোদিত হয়ে রয়েছে। এটি পারিবারিক নেতিবাচক মূল্যবোধ থেকে সৃষ্ট ও সামাজিক নৈতিক অবক্ষয়ের কুফল। শিশুর পিতা, মাতা ও অভিভাবকেরা নিজেরা এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং তাঁরা শিক্ষকসহ অন্যদের এ বিষয়ে উৎসাহ প্রদান ও সহযোগিতা দান করে থাকেন। আমাদের সমাজে অনেক শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সমাজের সব স্তরের মানুষের একটি বড় অংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত না থাকলে এত শিশু শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা নয়। শিশুদের শারীরিক শাস্তি ও মানসিক নির্যাতন বর্তমানে একটি সামাজিক ব্যাধিরূপে আবির্ভূত হয়েছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়; এর আশু নিরসন প্রয়োজন। শিশুদের শারীরিক শাস্তির মতো বর্বর সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সামাজিক উদ্যোগ।
শিশুদের সুশাসন বনাম শারীরিক নির্যাতন
ইসলামের বিধানগুলো যৌক্তিক ও মানবিক। শিশুর সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার জন্য পিতা, মাতা, শিক্ষক ও অভিভাবকের সুশাসন অবশ্যই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু শাসনের নামে নির্যাতন ইসলাম অনুমোদন করে না। এটি অমানবিক জুলুম। শিশুরা বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। সাধারণত শারীরিক শাস্তিটা পরিবারে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বেশি হয়। গড়ে শিশুর ৩ বছর থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে শারীরিক শাস্তি বেশি দৃশ্যমান হয়ে থাকে; এর মধ্যে বয়স ৭ বছর থেকে ১১ বছর সময়ে শারীরিক শাস্তিটা বেশি পরিলক্ষিত হয়। নাবালেগ মাসুম (নিষ্পাপ) শিশুদের শাসনের নামে এমন শাস্তি প্রদান যাতে শরীরের কোনো অংশ কেটে যায়, ফেটে যায়, ছিঁড়ে যায়, ভেঙে যায়, ফুলে যায়, ক্ষত হয়, বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় অথবা মানসিক ক্ষতি হয়; ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক, কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে এবং ফিকহের বিধানমতে সম্পূর্ণরূপে হারাম, নাজায়েজ, অবৈধ, অনৈতিক, অমানবিক ও বেআইনি এবং কবিরা গুনাহ বা বড় পাপ; যা তওবা ছাড়া মাফ হবে না। তা সত্ত্বেও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাবালেগ মাসুম শিশুদের শারীরিক শাস্তির হার সর্বাধিক। শিশুর পিতা, মাতা বা অভিভাবকের অনুমতি বা নির্দেশক্রমেও শিশুদের শারীরিক শাস্তি প্রদান শিক্ষক বা অন্য কারও জন্য জায়েজ নয়। কারণ পিতা, মাতা বা অভিভাবক নিজেই তাঁর নিজের নাবালেগ সন্তানকে (শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে এমন প্রচণ্ড ও কঠিন আঘাতের মাধ্যমে) শাস্তি দানের অধিকার রাখেন না। সুতরাং, তিনি অন্যকে এই অধিকার দিতে পারেন না। (ফাতাওয়ায়ে শামি, ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি।
নিজ ঘরে শিশুদের শারীরিক শাস্তি নিবারণ
নিজের ঘর শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। মাতৃকোল শিশুর পরম শান্তির নিবাস। মায়ের যথাযথ শিক্ষা না থাকায় এখানেই শিশু প্রথম বঞ্চনা ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। কুসংস্কার ও অজ্ঞতার কারণে শাল দুধ ফেলে দিয়ে শিশুর ক্ষতি করা হয়। অভাবের সংসারে এবং অনেক মা কর্মব্যস্ততার কারণে মেজাজ বিগড়ে গেলে শিশুদের মারধর করেন। কর্মজীবী বা শ্রমজীবী পিতারা শিশুদের খেলাধুলা ও চঞ্চলতার জন্যও মেরে থাকেন, যা আদৌ কাম্য হতে পারে না। সুশিক্ষা, সচেতনতা সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে এ পর্যায়ে শিশুর শারীরিক শাস্তি ও জুলুম বন্ধ করা সম্ভব।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক শাস্তি নিবারণ
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। সুশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই, যা আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে, তা–ই শিক্ষা। শিক্ষা তথা সুশিক্ষার জন্য রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাঁরা শিক্ষা প্রদানে ব্যাপৃত থাকেন, তাঁরা নিজেরাই অনেক ক্ষেত্রে তেমন শিক্ষিত নন বা প্রশিক্ষিত নন। কোথাও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের আদর্শ অনুপাত যেখানে ১: ১০ থেকে ১: ২০-এর মধ্যে (প্রতিজন শিক্ষকের জন্য ১০ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী) হওয়ার কথা, সেখানে দেখা যায় এই অনুপাত ১: ৫০ থেকে ১: ১০০ (শিক্ষকপ্রতি শিক্ষার্থী ৫০ জন থেকে ১০০ জন) পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর সঙ্গে উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ না থাকা ও যথাযথ শিক্ষা উপকরণের অভাব, শিক্ষার্থীদের বয়সের তারতম্য, মেধা ও রুচির পার্থক্য, পারিবারিক বিভিন্ন স্তরের শিশুর অসম অবস্থানসহ নানা প্রভাবক শিক্ষককে শিশুদের শারীরিক শাস্তি প্রদানে প্রভাবিত ও উদ্বুদ্ধ করে।
এর সমাধানের জন্য প্রয়োজন গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষক, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত আদর্শ অনুপাতের কাছাকাছি আনা, শিক্ষকদের বিনোদনের সুযোগ প্রদান, শিক্ষকদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা পূরণ ও মানসম্মত জীবনযাত্রা নিশ্চিতকরণ এবং শিক্ষকদের আধুনিক আন্তর্জাতিক বিশ্বশিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
কর্মক্ষেত্রে শিশুদের শারীরিক শাস্তি নিবারণ
কর্মক্ষেত্রে শিশুরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, অবহেলার শিকার হয়; এমনকি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুশ্রমিক বা শ্রমজীবী শিশুরা কম বয়সেই বেশি নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়। এ ক্ষেত্রে গৃহকর্মী শিশুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও বঞ্চিত হয়ে থাকে। এই গৃহকর্মীরা প্রায় কন্যাশিশু। এদের বয়স ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে গৃহকর্ত্রী ও গৃহমালিকের সন্তানদের দ্বারাই বেশি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি প্রয়োজন।
জালিম ও মজলুমকে সাহায্য করো
যাদের দ্বারা নির্যাতন (জুলুম) সংঘটিত হয়, তারা জালিম। যারা নির্যাতিত হয়, তারা মজলুম। হাদিস শরিফে রয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘উনছুর আখাকা জালিমান আও মাজলুমান।’ অর্থাৎ তোমরা তোমার ভাইকে (সব মানুষকে) সাহায্য করো; হোক সে জালিম বা মজলুম। এক সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), যখন কেউ মজলুম হবে, আমরা তার সাহায্য করব; কিন্তু জালিমের (নির্যাতনকারীর) সাহায্য করব কীভাবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জালিমকে জুলুম থেকে বিরত রাখবে, এটাই তাকে সাহায্য করা। (বুখারি, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি)।
আদর্শ শিখনপদ্ধতি
আমরা নিরন্তর শিখছি, শিশুরাও শিখছে অহরহ, অবিরত। শিশুদের শিক্ষা নিয়ে আমরা সদা উদ্গ্রীব থাকি। আমরা ভাবি, আমরা যা শেখাই (যা বলি), শিশুরা তা শেখে। আসলে শিশুরা আমাদের শেখানোটা (বলাটা) হয়তো শেখে; কিন্তু শিশুরা আমাদের দেখে দেখে (আমাদের আচরণ থেকে) তার চেয়ে বেশি শেখে। কারণ, শিশুরা অনুকরণপ্রিয়; তারা যা দেখে তা আত্মস্থ করে। আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি তাদের কোমল মনে স্থায়ীভাবে রেখাপাত করে। এর প্রতিফলন ঘটে তাদের কর্মক্ষেত্রে বা কাজে-কর্মে, সারা জীবনের আচার-আচরণে। যেমন ধৈর্য বা সহিষ্ণুতার উপদেশ যদি আমরা অসহিষ্ণুভাবে উপস্থাপন করি; তবে শিশু এখান থেকে দুটো বিষয় শিখবে: এক. ধৈর্য বা সহিষ্ণুতার বাণী বা বুলি; দুই. অধৈর্য বা অসহিষ্ণু আচরণ। এখন আমাদের ঠিক করতে হবে, আমরা শিশুদের কী শেখাতে চাই। আমাদের সেভাবে আচরণ করতে হবে। | ধর্মীয় শিক্ষা | Negative |
ভোরের পাতা | পুরুষদের জন্য সোনা ব্যবহার করা কি বৈধ?
| ইসলাম ধর্ম | পুরুষের জন্য সোনার চেইন, ঘড়ি, আংটি, বোতাম, কলম ইত্যাদি ব্যবহার বৈধ নয়। তবে নারীদের জন্য স্বর্ণ-রোপা সবই বৈধ।
পুরুষের স্বর্ণ ব্যবহার নিয়ে হাদীসে এসেছে, আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রা.) হতে বর্ণিত। নবী ( সা.) বলেছেন, স্বর্ণ ও রেশমের ব্যবহার আমার উম্মাতের নারীদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে। (তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত ৪৩৪১ নং)
ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিন লোকের হাতে একটি সোনার আংটি লক্ষ্য করে সেটি খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেন, তোমাদের মাঝে কেউ কেউ আগুনের টুকরা জোগাড় করে তার হাতে রাখে। রাসূলুল্লাহ (সা.) সে স্থান ত্যাগ করলে ব্যক্তিটিকে বলা হলো, তোমার আংটিটি উঠিয়ে নাও। এটি দিয়ে উপকার হাসিল করো। সে বলল, না। আল্লাহর কসম! আমি কখনো ওটা নেব না। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) তো ওটা ফেলে দিয়েছেন। (মুসলিম ২০৯০ নং)
প্রকাশ থাকে যে, ব্যতিক্রমভাবে পুরুষের জন্য সোনার নাক বাঁধার অনুমতি রয়েছে ইসলামে।'আবদুর রহমান ইবনু ত্বরাফাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত, কুলাবের যুদ্ধে তার দাদা' আরফাজাহ্ ইবনু আস’আদ-এর নাক কাটা গিয়েছিল। তিনি রূপার দ্বারা একটি নাক তৈরি করেছিলেন। ফলে তাতে দুর্গন্ধ দেখা দিলো। অতঃপর নবী (সা.) তাকে স্বর্ণের নাক তৈরি করতে নির্দেশ করলেন। (আহমাদ ১৮৫২৭, আবূ দাঊদ ৪২৩২, তিরমিযী ১৭৭০, নাসাঈ ৫১৬১ নং)
প্রয়োজনে সোনার তার দিয়ে দাঁত বাঁধতে অথবা সোনার দাঁত বাঁধিয়ে ব্যবহার করাতেও অনুমতি আছে শরীয়তে। পক্ষান্তরে চার আনা সোনার আংটি ব্যবহারের বৈধতা শরীয়তে নেই। বিপদ প্রয়োজনে যে কোনো স্বর্ণটুকরা হাতে না রেখে সঙ্গেও তো রাখা যায়। প্রকাশ থাকে যে, সোনা দিয়ে পালিশ করা জিনিসেও যেহেতু সোনা থাকে, সেহেতু টা পুরুষের জন্য ব্যবহার বৈধ নয়। (ইবনে জিবরীন) | ধর্মীয় শিক্ষা | Neutral |
ভোরের কাগজ | ধর্ম রাজনীতির হাতিয়ার হতে পারে না
| অন্যান্য | পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি বলেছেন- বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলেছে। তাতে ধর্ম রাজনীতির হাতিয়ার হতে পারে না। গত ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মেট্রোরেল এর শুভ উদ্বোধনসহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করেছে। অব্যাহত থাকবে উন্নয়নের ধারায়, দেশ অন্ধকার থেকে এবার আলোয় পরিনত হবে। তিনি আরো বলেন- বিএনপি-জামায়াত ধর্মের নামে একত্র হয়ে যে রাজনীতির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে, তাতে কোন লাভ হবে না। তবে দলীয় কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সরকারের নামে শক্তির অপব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। উপজেলা প্রশাসন আয়োজনে শনিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে বাঘা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অন্তঃধর্মীয় সর্ম্পক ও সামাজিক বন্ধনকে সুসংহত রাখা, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধনকে এগিয়ে নিতেও উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ,সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। এ সময় অন্যাদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, পৌর মেয়র একরামুল হক, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বিপ্লব, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুল হাসান মামুন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন, চারঘাট মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুল আলম, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল মামুন তুষার, সাধারণ সম্পাদক রায়হেনুল হক রানাসহ সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি পাচঁজন ছাত্রছাত্রীর মাঝে বাইসাইকেল ও বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদেও উপবৃত্তি টাকা প্রদান করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। | ধর্মীয় প্রতিবেদন | Negative |
দৈনিক ইনকিলাব | মুসলিম উম্মাহর জন্য মসজিদে আকসা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ-৩
| ইসলাম ধর্ম | বাইতুল মাকদিসের মতো পবিত্র ভূখণ্ডের সান্নিধ্যে কিছু সময় যাপন করতে পারাই তো সৌভাগ্যের বিষয়। উপরন্তু বসবাসের জন্য যদি এক টুকরো মাটি পাওয়া যায়, তাহলে এটা তো আরো অনেক বড় প্রাপ্তি। এ কারণেই হাদিস শরীফে বাইতুল মাকদিসের কাছাকাছি বসবাসের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আবু যার (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : অচিরেই এমন সময় আসবে, যখন কোনো ব্যক্তি যদি ঘোড়ার রশি পরিমাণ জায়গাও পেয়ে যায়, যেখান থেকে বাইতুল মাকদিস দেখা যায়, তাহলে এটা তার জন্য সমগ্র দুনিয়া থেকে বেশি উত্তম হবে। (মুসতাদরাকে হাকেম ৪/৫০ : ৮৫৫৩)।
পবিত্র ভূখণ্ডে জীবন অতিবাহিত করার পাশাপাশি মৃত্যুবরণ করাও একজন মুমিনের পরম কাক্সিক্ষত বিষয়। বাইতুল মাকদিস যেহেতু পবিত্রতম স্থান, তাই তো হযরত মূসা (আ.) এই মাটিতে মৃত্যুর আরজি পেশ করেছিলেন। রাসূলে কারীম (সা.) হযরত মূসা (আ.)-এর মৃত্যুর ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন : তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, যেন তাঁকে পবিত্র ভূখণ্ডের এতো কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখান থেকে একটি পাথর নিক্ষেপ করলে পবিত্র ভূখণ্ডে পতিত হবে। যদি আমি সেখানে থাকতাম, তবে লাল টিলার কাছে রাস্তার পাশে আমি তোমাদেরকে তাঁর কবর দেখিয়ে দিতাম। (সহীহ বুখারী : ১৩৩৯)। এই হাদিসে পবিত্র ভূখণ্ড দ্বারা বাইতুল মাকদিস উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
আহলে হকের অবস্থানস্থল। বাইতুল মাকদিস এবং আশপাশের অঞ্চলে সর্বদা এমন একটা জামাতের উপস্থিতি থাকবে, যারা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আবু উমামা বাহিলী (রা.) বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন : আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা সত্যের ওপর অবিচল থাকবে। তাদের দুশমনদের ওপর বিজয়ী থাকবে। তাদের সঙ্গ ত্যাগ করে কেউ তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। অবশেষে আল্লাহর নির্দেশ আসবে আর তারা এভাবেই থেকে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, এই দলটির অবস্থান কোথায় হবে? তিনি বললেন, বাইতুল মাকদিস ও তার আশপাশে। (আল মুজামুল কাবীর, তবারানী : ৭৬৪৩)।
পৃথিবীতে মানব জাতির যাত্রালগ্ন থেকেই শুরু হয়েছে হক ও বাতিলের লড়াই, সত্য ও মিথ্যার সংঘাত। এটা অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে হক-বাতিলের চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণী লড়াই হবে বাইতুল মাকদিস অঞ্চলে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) বলেন : কিয়ামত কায়েম হবে না, যতক্ষণ না মুসলিমগণ ইহুদিদের সাথে লড়াই করবে আর মুসলিমগণ তাদের হত্যা করবে। এমনকি ইহুদিরা যে পাথর বা গাছের পেছনেই আত্মগোপন করবে, সে পাথর বা গাছও বলে উঠবে, হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা! এই যে আমার পেছনে ইহুদি আছে। এসো তাকে হত্যা করো। তবে গারকাদ গাছ কিছু বলবে না; কারণ এটা ইহুদিদের গাছ। (সহীহ মুসলিম : ২৯২২)।
ইমাম নববী (রাহ.) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘গারকাদ’ একধরনের কাঁটাদ্বার গাছ, যা বাইতুল মাকদিসে প্রচুর পরিমাণে হয়। আর সেখানেই দাজ্জাল ও ইহুদি বধের ঘটনা ঘটবে। (দ্র. শরহে মুসলিম, নববী ১৮/৪৫)
উপরের আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল, আল আকসা বা বাইতুল মাকদিস ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা তাৎপর্যপূর্ণ আর মুসলিম উম্মাহর জন্য কতই না গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গোটা মুসলিম উম্মাহ আল আকসার বিষয়ে দায়িত্বহীনতার শিকার হয়ে পড়েছে। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন এবং আল আকসার মুক্তির জন্য আবারো জেগে ওঠার তাওফীক দান করুন। (আমীন)। ইয়া রাব্বুল আলামীন।
| ধর্মীয় সংস্কৃতি | Positive |
দৈনিক ইনকিলাব | আত্মহত্যা রোধে ইসলামের সতর্কতা
| ইসলাম ধর্ম | বর্তমানে বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ২০টি কারণের মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হল আত্মহত্যা। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশ্বের কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ আত্মহত্যা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বছরে প্রায় আট লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশেষতঃ ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী যুবক-যুবতীরা বেশি আত্মহত্যা করে বলে জানা গেছে। যা মানবতার জন্য এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। দক্ষিণ এশিয়ায় দশম। প্রতি বছরই আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে এবং গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন করে আত্মহত্যা করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহত্যার পেছনে অন্যতম কারণগুলো হল মানসিক হতাশা ও বিষণনতা, দাম্পত্যজীবনে কলহ কিংবা যেকোনো সম্পর্কে অনৈক্য, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতা ও পারিপার্শ্বিক অসহযোগিতা আর ২০০৩ সাল থেকে দিবসটি পালন করা শুরু হলেও ২০১১ সালে প্রায় ৪০টি দেশ এই দিবসটি উদযাপন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘প্রিভেন্টিং সুইসাইড: অ্যা সোর্স ফর মিডিয়া প্রফেশনালস ২০১৭’ জরিপ বলছে, ‘প্রতিবছর বিশ্বে ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে একটি।’ আরও একটি জরিপ বলছে, ‘গত ৪৫ বছরে আত্মহত্যার ঘটনা ৬০ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বে বর্তমানে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে আত্মহত্যা।এতো গেল বিশ্বের কথা। বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা- ২০২৩’ শিরোনামের এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন ইউনিটে ৩০ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত অভিযোগ জমা পড়ে ৩৪ হাজার ৬০৫টি। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ২৬ হাজার ৫৯২।
লিঙ্গভিত্তিক তুলনামূলক পরিসংখ্যানে সাইবার অপরাধে ভুক্তভোগীদের মধ্যে নারীর হার ৫৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এই বিশাল সংখ্যার নারীর অনেকের মধ্যে দেখা দিয়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা। সাইবার অপরাধে ভুক্তভোগী নারীদের এই উচ্চ হার জানিয়ে দিচ্ছে, প্রযুক্তির অপব্যবহার, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি করছে ব্যাপক মাত্রায়। এদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা ৬৯ জন নারী। যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা ১০ জন, ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন এবং যৌতুকের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৫ জন নারী। দেশের পত্রপত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী আত্মহত্যায় শীর্ষে ঢাকা। বিভাগটিতে আত্মহত্যা ২৩.৭৭ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ যা ১৭.২৭ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগ যা ১৬.৮১ শতাংশ। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ১৪.১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮.৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮.৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬.২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪.৪৮ শতাংশ স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছেন।পরিসংখ্যান বলছে নারীদের আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি।
স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী রয়েছেন ৬০ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং পুরুষ রয়েছেন ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যাকারী নারী শিক্ষার্থীর পরিমাণ ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ। শুধু কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যাকারী নারী ৫৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ রয়েছে ।আত্মহত্যার পেছনের কারণ হিসেবে মান-অভিমানকে দেখানো হয়েছে। জরিপে উঠে আসা এমনই বেশ কিছু কারণের মধ্যে দেখা যায়, অভিমান তাদের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমান করে। এদের বড় অংশই অভিমান করেছিল পরিবারের সদস্যদের ওপর। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে প্রেমঘটিত কারণ, পারিবারিক কলহসহ নানা কারণ।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ শুধু ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে।বর্তমানে নানা কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। এ হার প্রতি লাখে ৮ দশমিক ৫ জন। এটি আমরা ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ৫ ও ২০৩০ সালে ২ দশমিক ৮ জনে নামিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। তবে এটা কারোর একার পক্ষে সম্ভব নয়, সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জোর দিতে হবে। আত্মহত্যা জীবনে সবচেয়ে বড় কাপুরুষতার পরিচয়”- উক্তিটি জগদ্বিখ্যাত নেপোলিয়ন বোনাপার্টের। ভারতবর্ষের মহান সাধক ফকির লালন সাঁই জীবনকে দেখেছেন আশ্চর্য এক সাধনার মঞ্চ হিসেবে। সেই জীবনের টানেই জীবনানন্দ দাশ কবিতার পঙক্তিতে ঢেলেছেন সুরিয়ালিস্টিক ভাবধারা। মনীষীরা মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করে জীবনকেই করেছেন মহিমান্বিত। তবে কেন এ আত্মহনন? কেন এ জীবনবিমুখতা? চিকিৎসাবিজ্ঞান আত্মহত্যার চেষ্টাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে দেখেন। বিশ্বের অনেক দেশ আত্মঘাতকদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ বলছে, প্রতিবছর বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে এর মধ্যে আত্মহত্যা ১৩তম প্রধান কারণ।
বিবিএস সূত্র জানায়, বর্তমানে (২০২০ সালের জরিপ) প্রতি লাখে ৮ দশমিক ৫ জন আত্মহত্যা করেন। সে সময়ে দেশের মোট জনসংখ্যা ধরা হয় ১৭ কোটি ১৬ লাখ। ২০২০ সালে সারাদেশে মোট ১৩ হাজার ৮১৪ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের গড় প্রায় সমান। ২০১৯ সালে প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তখন দেশের মোট জনসংখ্যা ধরা হয়েছিল ১৬ কোটি ৫৯ লাখ। সে হিসাবে ওই সময়ে দেশে মোট জনসংখ্যার ১২ হাজার ৯৫৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছিলেন। এতেই স্পষ্ট হয়, দেশে আত্মহত্যার হার বাড়ছে। ২০১৫ সালে দেশে প্রতি লাখে ৭ দশমিক ৬৮, ২০১৬ সালে ৭ দশমিক ৮৪, ২০১৭ সালে ৩ দশমিক ৭৯ ও ২০১৮ সালে ৭ দশমিক ৬৮ জন আত্মহত্যা করেছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত লাখে আত্মহত্যার হার ৭ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এটা এখন ৮ জনের ওপরে চলে এসেছে।
বিবিএস সূত্র জানায়, ২০২১ সালের প্রথম ১০ মাসে দেশে মোট মৃত্যুর কিছু কারণ খুঁজে বের করে বিবিএস। ১০ মাসে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ৫ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তখন ১১ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। মহামারির এ সময়ে দেশে শুধু হার্ট-অ্যাটাক, হার্ট-ফেইলিওর ও হৃদরোগে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে ৮ লাখ লোক আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬ জন। ২০১৪ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন। আর পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে, বছরে গড়ে ১০ হাজার মানুষ ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। এর বাইরে ঘুমের ওষুধ সেবন, ছাদ কিংবা উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়া কিংবা রেললাইনে ঝাঁপ দেওয়ার মতো ঘটনাগুলোও বিরল নয়।
বয়স্ক মানুষ হার্ট অ্যাটাকে বেশি মারা যাচ্ছে, বাড়ছে আত্মহত্যাও: ৬০ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুহার হিসাব করলে হার্ট অ্যাটাক প্রথমে। মোট মৃত্যুর ২৩ দশমিক ৮ শতাংশই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এর পরে রয়েছে ব্রেন স্ট্রোক ১১ দশমিক ৫, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ১১, হার্ট ডিজিস ৬, অ্যাজমা ৫ দশমিক ২, হাই ব্লাড প্রেশার ৩ দশমিক ৭, ডায়াবেটিস ৩ দশমিক ৩, কিডনি রোগে ২ দশমিক ৯, লিভার ক্যানসার ২ দশমিক ৮, প্যারালাইসিসে ২ দশমিক ২, ব্লাড ক্যান্সারে ১ দশমিক ৯, নিউমোনিয়া ১ দশমিক ৫ ও স্টমাক ক্যান্সারে ১ শতাংশ মানুষ মারা যান। এসব রোগের বাইরে অন্য কারণে দেশের দশমিক ২ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়।
পরিশেষে বলতে চাই, কুরআন সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী হতাশা কিংবা যে কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে নিমিষেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া যাবে না। বরং এক আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য ও নিজের মেধা খাঁটিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়; বরং আবেগতাড়িত হয়ে নিজের ভূলে নিজের জীবনকে চিরতরে নিঃশেষ করে দেওয়া মারাত্মক ভুল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।আল্লাহ তাআলা সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুক। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে ধর্মীয় অনুশাসন মানার বিকল্প নেই। এ মহাপাপ থেকে বাঁচতে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর ভরসা এবং সবরের আমল করতে হবে। সব ধরনের দুশ্চিন্তা, দুঃখ-কষ্ট এবং ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত, দুরূদ পাঠ, জিকির ও ইস্তিগফার করতে হবে।আত্মহত্যার মতো মারাত্মক অপরাধ ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন। | ধর্মীয় শিক্ষা | Positive |
বাংলাদেশ প্রতিদিন | ছিলেন পর্নো তারকা, বর্তমানে ধর্ম প্রচারক! | খ্রীষ্টান ধর্ম | ছিলেন পর্নো তারকা। হয়ে গেলেন খ্রীষ্টান ধর্মযাজক। সাবেক পর্নো তারকা ক্রিসি আউটল এভাবেই নিজেকে পাল্টে ফেলেছেন। দীর্ঘদিনের পেশাকে ছেড়ে এবার চার্চের যাজক হিসেবেই নিজেকে দেখতে চান তিনি।
পর্নো দুনিয়া থেকে চার্চের কর্মী হওয়ার ক্রিসির এমন সিদ্ধান্তে অবাক অনেকেই। তবে তিনি জানান, যে ঈশ্বরই তাকে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে পর্ন দুনিয়া ছেড়ে তাকে চার্চের কাজে যোগ দিতে। তাই নিজের এতদিনকার পেশা ছেড়ে দিলেন ৪১ বছরের এই পর্নো তারকা।
ক্রিসি এখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন যে, তার মতো যেন অন্য মেয়েরা এই পর্নো দুনিয়াতে এসে ভুল না করেন। এমনকি এখন তিনি অ্যান্টি-পর্নো ওয়েবসাইটের হয়েও কাজ করছেন। অতীতে প্রায় ৫০টির বেশি পর্নো ছবিতে অভিনয় করেছেন ক্রিসি। | ধর্মীয় শিক্ষা | Positive |
বাংলাদেশ প্রতিদিন |
ইসলামী অভিবাদন সালামের ফজিলত | ইসলাম ধর্ম | সালাম শব্দের অর্থ শান্তি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সুন্দর কথা, পরম শান্তিময়, সর্বোচ্চ সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামী অভিবাদন। ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, আন্তরিকতা, নিরাপত্তা ও অকৃত্রিম ভালোবাসার বিনম্র অভ্যর্থনার বহির্প্রকাশ।
জান্নাতের সর্বোচ্চ নেয়ামত হলো আল্লাহপাকের দিদার। জান্নাতিরা নিজ চর্ম চোখে মহান রাব্বুল আলামিনকে প্রাণভরে দেখবে ও নিজ কানে তাঁর পবিত্র কথা শুনবে। সব নবী-পয়গম্বরগণসহ সর্বস্তরের জান্নাতিদের তাদের প্রেমাষ্পদের সঙ্গে সাক্ষাতের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেদিন নূরের পর্দা উঠিয়ে সর্বপ্রথম সব জান্নাতিকে আল্লাহতায়ালা স্বীয় রহমত ও বরকতময় ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে অভিবাদন করবেন। (সুরা আহজাব আয়াত ৪৪) সুবহানাল্লাহ! আল্লাহতায়ালা জান্নাতিদের সম্বোধন করে বলবেন : তোমাদের প্রতি দয়াময় রবের পক্ষ থেকে চিরস্থায়ী সালাম (সুরা ইয়াসিন আয়াত ৫৮)।
কেয়ামতের ময়দানে হিসাব-নিকাশ শেষে জান্নাতিরা জান্নাতে যাওয়ার পথে কোটি কোটি ফেরেশতা সালাম দিয়ে তাদের জান্নাতের দরজায় অভিবাদন করবেন। মানব সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই সালামের প্রচলন শুরু হয়েছে। আল্লাহতায়ালা যখন হজরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করলেন তখনই তাঁকে সালামের শিক্ষা ও নির্দেশ দেন।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা হজরত আদমকে যখন সৃষ্টি করলেন তখন বললেন, যাও সামনে অবস্থানরত ফেরেশতাদের বিশাল একটি জামাতকে সালাম কর, আর তারা তোমার সালামের কী উত্তর দেয় তা শ্রবণ কর এবং তা-ই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের পদ্ধতি। তখন হজরত আদম (আ.) সামনে অগ্রসর হয়ে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। জবাবে ফেরেশতাগণ বললেন, আসসালামু আলাইকা ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তারা ওয়ারাহমাতুল্লাহ অংশটি বৃদ্ধি করে বলেছেন। (বুখারি মুসলিম)। পুত্র সন্তান লাভের সুসংবাদ ও আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত কওমে লুতকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহর প্রেরিত ফেরেশতাগণ যখন হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কাছে আগমন করলেন তারা বললেন ‘সালাম’। তিনি বললেন, আপনাদের প্রতিও সালাম, আপনারা অপরিচিত। এমনিভাবে সব নবীগণের কাছে প্রেরিত ফেরেশতাগণ প্রথমেই নবীকে সালাম প্রদান করেন।
হজরত আবুজর গিফারী (রা.) বলেন, আমি একদা নবীজির কাছে গেলাম, তিনি আমাকে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। আমি বললাম, ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। আবুজর (রা.) বলেন, সর্বপ্রথম আমি ওই ব্যক্তি যাকে মুহম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম প্রদান করেছেন। নবীজি বলেন, কথা বলার আগেই সালাম প্রদান কর। নবীজি আরও বলেন, যে অগ্রে সালাম প্রদান করে সে অহংকারমুক্ত। সালাম একটি দোয়া এবং ইবাদত। সালাম দেওয়া সুন্নত, উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। | ধর্মীয় শিক্ষা | Positive |
কালের কন্ঠ | পূর্ববর্তী আসমানি ধর্মে রোজা যেমন ছিল | ইসলাম ধর্ম | ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি রোজা। মুসলিমদের মতো পূর্ববর্তী জাতি গোষ্ঠীর ওপর রোজা ফরজ ছিল। এমনকি আসমানি ধর্মের অনুসারী নয়—এমন সম্প্রদায়ের ভেতরও রোজাসদৃশ আচার-আয়োজন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে প্রথমেই ইসলামী শরিয়তে রমজানের রোজা ফরজ হয়নি; বরং তা কয়েক ধাপে হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় রোজা ফরজ হওয়ার ধারাক্রমটি বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসেও সেই বর্ণনা পাওয়া যায়।
পূর্ববর্তী আসমানি ধর্মে রোজা : আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতির মতো পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ওপরও রোজা ফরজ করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যেমন তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো।
’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
কোরআনে মারিয়াম (আ.)-এর ভাষ্যে বলা হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে কাউকে যদি তুমি দেখ তখন বলবে, আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে রোজার (মৌনতা অবলম্বনের মাধ্যমে) মানত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গে বাক্যালাপ করব না। ’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ২৬)
ইসলামপূর্ব আরবে রোজা : ইসলাম আগমনের পূর্বে আরব সমাজেও রোজার প্রচলন ছিল। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘জাহেলি যুগে কুরাইশরা আশুরার রোজা পালন করত এবং আল্লাহর রাসুল (সা.)-ও এই রোজা পালন করতেন।
যখন তিনি মদিনায় আগমন করেন তখনো এই রোজা পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন আশুরার রোজা ছেড়ে দেওয়া হলো। যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০০২)
আশুরার রোজা : মুসলমানরা মদিনায় হিজরত করার পর কিছুদিন আশুরার রোজা পালন করেন। এই সময় আশুরার রোজাই মুসলমানের জন্য ওয়াজিব ছিল।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) যখন মদিনায় আসেন তখন দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তাদের রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, এই দিনেই আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.) ও বনি ইসরাঈলকে ফিরাউনের ওপর বিজয় দিয়েছিলেন। তাই আমরা ওই দিনের সম্মানে রোজা পালন করি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা (আ.)- এর বেশি নিকটবর্তী। এরপর তিনি সাওম পালনের নির্দেশ দিলেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৯৪৩)
এ ছাড়া মুসলিম প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা পালন করত বলে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে বেশির ভাগ ফকিহ ও মুহাদ্দিসের মতে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ওয়াজিব ছিল, যা পরবর্তী সময়ে নফলে পরিণত হয়। আর আইয়ামে বিদ বা প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখার বিধান সব সময় মুস্তাহাব ছিল।
হাদিসে আইয়ামে বিদের রোজার বিশেষ তাগিদ এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমার বন্ধু (সা.) আমাকে তিনটি কাজের অসিয়ত করেছেন। মৃত্যু পর্যন্ত আমি তা ত্যাগ করব না। তা হলো—প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, চাশতের নামাজ আদায় করা এবং বিতর আদায় করে শোয়া। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৭৮)
রমজানের রোজা : দ্বিতীয় হিজরিতে রমজানের রোজা ফরজ হয়। ইমাম নববী (রহ.) লেখেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মোট ৯ বছর রমজানের রোজা রেখেছেন। কেননা তা দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে ফরজ হয়। আর নবী (সা.) একাদশ হিজরির রবিউল আউয়ালে ইন্তেকাল করেন। ’ (আল-মাজমুআ : ৬/২৫০)
রোজা ও ফিদিয়ার ইচ্ছাধিকার : রমজানের রোজা যখন প্রথম ফরজ হয়, তখন মুমিনদের রোজা রাখা ও ফিদিয়া দেওয়ার ইচ্ছাধিকার দেওয়া হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘(তোমাদের ফরজ করা হয়েছে) রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা যাদের সাতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদয়া—একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর রোজা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর যদি তোমরা জানতে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)
অবকাশহীন ফরজ : এরপর রোজা ফরজ করা হয় কোনো প্রকার অবকাশ না রেখে। ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস। এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
সময় সীমায় পরিবর্তন : তাফসিরে ইবনে কাসিরে উল্লেখ করা হয়েছে, রমজানের রোজা যখন ফরজ হয়, তখন রাতের বেলা এশার নামাজ বা ঘুমের আগ পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-সম্ভোগ অনুমতি ছিল। এশার নামাজ বা ঘুমের পর পানাহার ও স্ত্রী-সম্ভোগ নিষিদ্ধ হয়ে যেত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আল্লাহ সময় সংক্ষিপ্ত করে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার সময় নির্ধারণ করেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ জানেন যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হয়েছেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করেছেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সঙ্গে সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কোরো। আর তোমরা পানাহার কোরো যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা থেকে উষার শুভ্র রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)
| ধর্মীয় সংস্কৃতি | Neutral |
প্রথম আলো | ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত নিরসনে ইসলামের শিক্ষা | ইসলাম ধর্ম | সমগ্র সৃষ্টিজগতের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান ইসলামের লক্ষ্য। কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনগণ পরস্পর ভাই
ভাই; সুতরাং তোমরা ভ্রাতৃগণের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’ (সূরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১০)।
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মুসলমান মুসলমানের ভাই। তাই তোমরা পরস্পরকে হিংসা কোরো না, ঈর্ষান্বিত হয়ো না, কারও পেছনে লাগবে না; এবং তোমরা এক আল্লাহর দাস হয়ে যাও এবং হয়ে যাও একে অপরের ভাই।’ (বুখারি: ৫৬৩৮)।
দ্বীন বা ধর্ম কী? দ্বীন বা ধর্মের উদ্দেশ্য কী? হাদিস শরিফে আছে: ‘কল্যাণ কামনাই দ্বীন।’ (বুখারি ও মুসলিম)। কারও কল্যাণ চাইলে
তার সংশোধনের জন্য যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, তাতে থাকতে হবে মহব্বত (প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা), আযমত (সম্মান করা), হিকমত (কৌশল অবলম্বন করা), খিদমাত (সেবা প্রদান করা)।
নবী করিম (সা.) মুসলিম উম্মাহকে একটি মানবদেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এটা সেই তুলনার সঙ্গেও সাদৃশ্যমান, যেখানে উম্মাহকে একটি প্রাসাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে তোলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন: ‘প্রত্যেক মুসলমান একে অন্যের ভাই, কেউ কারও ক্ষতি করে না বা অন্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।’ (বুখারি)।
মানবভ্রাতৃত্বের পাশাপাশি ইসলাম বিশ্বাসের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আল-কোরআনে এক মুসলমানকে অন্য মুসলমানের বন্ধুরূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে এই বলে যে ‘মুমিন নর ও মুমিনা নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজে আদেশ করে, মন্দকাজে নিষেধ করে এবং নামাজ কায়েম করে ও জাকাত আদায় করে। সর্বোপরি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করে; অচিরেই আল্লাহ তাদের প্রতি রহম করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা পরাক্রমশালী, মহা কৌশলী।’ (সূরা-৯ তাওবাহ, আয়াত: ৭১)।
অহিংসা, মৈত্রী ও শান্তি হলো মহানবী (সা.)-এর মহতী দর্শন। ধৈর্য, সহনশীলতা, সমবেদনা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি এবং ক্ষমা, দয়া, স্নেহ, মায়া, মমতা, প্রেম, প্রীতি ইত্যাদি ছিল তাঁর মহান আদর্শ। পরোপকার, কল্যাণকামিতা ও ত্যাগ-তিতিক্ষা ছিল তাঁর কর্মালংকার। আর এটাই হলো ইসলাম। হাদিস শরিফে আরও আছে: ‘রাসুল (সা.) বলেন, যে সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আমাদের কিবলাকে অনুসরণ করে, আমাদের মতো নামাজ (স্বীকার) করে ও আমাদের (মুসলমানদের) জবাই করা প্রাণী আহার করে (হালাল মনে করে); তবে সে মুসলিম, তার জন্য তা-ই, যা মুসলমানের জন্য এবং তার বিরুদ্ধেও তা-ই, যা মুসলমানের বিরুদ্ধে।’ (বুখারি শরিফ)।
মতবিরোধের ক্ষতি ও শান্তি–শৃঙ্খলার অবনতির পরিণাম কুফর-শিরকের চেয়েও ক্ষতিকর; এটা বোঝা যায় আল্লাহ তাআলার নবী ও রাসুল হজরত হারুন (আ.)-এর অবস্থান থেকে। হজরত মুসা (আ.) আল্লাহর নির্দেশে ৩০ দিনের জন্য তুর পাহাড়ে যান তাওরাত কিতাব আনার জন্য। সেখানে তিনি আল্লাহর আদেশে ৪০ দিন অবস্থান করেন। এ সময় তাঁর ভাই হজরত হারুন (আ.)-কে কওমের কাছে রেখে যান। পূর্বনির্ধারিত ৩০ দিনের বেশি আরও ১০ দিন বিলম্ব হওয়ার সুবাদে ছামেরি নামের এক জাদুকর সোনা দিয়ে গো-বাছুর তৈরি করে। বনি ইসরাইল এই গো–বাছুরের পূজা শুরু করে দেয়। নবী হারুন (আ.) এই মারাত্মক বিকৃতি সম্বন্ধে বারণ করলেও কঠোরতা অবলম্বন করেননি। হজরত মুসা (আ.) ফিরে এসে তাঁর সম্প্রদায়ের ওই গোমরাহির কথা জেনে তাঁর ভাইকে বললেন: ‘হে হারুন! তুমি যখন দেখলে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, তখন তোমাকে কিসে নিবৃত্ত করল আমার পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে? তবে কি আমার আদেশ অমান্য করলে?’ (সূরা-২০ তহা, আয়াত: ৯২-৯৩)। উত্তরে হারুন (আ.) বললেন: ‘হে আমার সহোদর! আমার দাড়ি ও চুল টেনো না। আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে তুমি বলবে, তুমি বনি ইসরাইলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং তুমি আমার কথা পালনে যত্নবান হওনি।’ (সূরা-২০ তহা, আয়াত: ৯৪)। এখানে লক্ষ করা যায় যে হারুন (আ.) প্রধান নেতা ফিরে না আসা পর্যন্ত দলের
ঐক্য ধরে রাখার নিমিত্তে কওমের গোমরাহির মতো কাজেও কঠোরভাবে বাধা না দিয়ে ঐক্য বজায় রেখেছেন, যাতে কেউ বলতে না পারে যে তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করেছেন।
দ্বন্দ্ব-সংঘাত বন্ধের শান্তিপূর্ণ উপায় এবং প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের সুন্নতি পদ্ধতি উত্তম কর্ম দ্বারা প্রতিবিধান করা। আল্লাহপাক নবী-রাসুলদের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম প্রচার করিয়েছেন। তাঁরা যদি শৌর্য-বীর্যে বলীয়ান হতেন অথবা রাজশক্তিতে শক্তিমান হতেন, তাহলে বলা যেতে পারত ইসলাম শক্তির বলে প্রচার-প্রসার লাভ করেছে। কিন্তু আল্লাহ ধনসম্পদহীন নবীদের দ্বারা দুনিয়ার বুকে ইসলাম জিন্দা রেখেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ভালো ও মন্দ সমান হবে না (হতে পারেও না); তুমি প্রতিরোধ করো (মন্দকে) যেভাবে উত্তম; তবে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা রয়েছে; সে–ও যেন পরম বন্ধু হবে।’ (আল-কোরআন, পারা: ২৪, পৃষ্ঠা: ৪৮১ / ১৯ হা. , সূরা-৪১ হা মীম সাজদাহ/ফুচ্ছিলাত, আয়াত: ৩৪)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন, ‘তোমরা মন্দকে প্রতিরোধ করো যা উত্তম তার মাধ্যমে; আমি নিশ্চিত জানি যা তারা সংজ্ঞায়িত করে।’ (সূরা-২৩, মুমিনুন, আয়াত: ৯৬)।
ইসলাম চায় পৃথিবীতে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হোক। এ জন্য যুদ্ধের বিকল্প অনুসন্ধান করে। যেখানে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা যায়, তা দূর করতে যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ উপায় খোঁজে; যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে মীমাংসা করতে চায়। এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পরিপন্থী কোনো কাজ পছন্দ করে না এবং সেগুলো দূর করতেও চরমপন্থা গ্রহণ করে না। এ থেকে আরও একটি কথা প্রমাণিত হয়, ইসলামি শরিয়ার সব বিধিবিধানই বিশ্ববাসীর জন্য শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর।
প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ না করে সন্ধিতে আবদ্ধ হওয়া মহানবী (সা.)-এর শান্তিকামিতার আরও একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ। তিনি শান্তি স্থাপনের জন্য হুদাইবিয়ার সন্ধি করেছেন; এ ছাড়া আরও বহু সন্ধিতে আবদ্ধ হয়েছেন। বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) সারা জীবন এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে গেছেন।
ইসলাম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। ইসলাম কখনোই অনর্থক দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে সমর্থন করে না। তাই শান্তির দূত রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহের মুসলমান, ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিকসহ নানা ধর্মের ও নানা বর্ণের লোকদের নিয়ে একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করলেন, যা জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার মানবিক ও ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। মদিনায় বসবাসরত সব গোত্রের মধ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে মদিনা সনদ নামে পরিচিত; এটি একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। এ চুক্তির নানামুখী উদ্দেশ্যের একটি ছিল যুদ্ধের পরিবর্তে পরস্পরের শান্তিপূর্ণ অবস্থান। এ চুক্তির আরও উদ্দেশ্য ছিল অত্যাচারিত-নিপীড়িতকে সাহায্য করা এবং চুক্তিভুক্ত সব পক্ষের মান, মর্যাদা ও ধর্মবিশ্বাসের অধিকার সংরক্ষণ করা। ইসলাম যে শান্তি চায়, তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো এই মদিনা সনদ। ‘মদিনা সনদ’ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনে বিরাট পরিবর্তন সাধন করে। এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নৈরাজ্য, সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করে যুদ্ধবাজ গোত্রগুলোর মধ্যে সংঘাতের পরিবর্তে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধন।
সংঘাত এড়ানো ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ হলো কারও অনুভূতিতে আঘাত না করা। সে যে ধর্মের বা যে মতেরই অনুসারী হোক না কেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহকে ছেড়ে যাদিগকে তারা ডাকে, তাদিগকে তোমরা গালি দিয়ো না।’ (সূরা-৬ আনআম, আয়াত: ১০৮)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন; মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসিকি এবং হত্যা করা কুফরি। | ধর্মীয় সংস্কৃতি | Negative |
দৈনিক ইনকিলাব | এক মাদ্রাসা থেকে দশ লাখ হাফেজ
| ইসলাম ধর্ম | পাকিস্তানের একটি মাদ্রাসা থেকেই পবিত্র কোরআনের হাফেজ হয়েছেন অন্তত দশ লাখ শিক্ষার্থী। ওয়াকাফ উল মাদারিস নামের মাদ্রাসাটি ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে এই মাদ্রাসা থেকে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী সফলভাবে পবিত্র কোরআন মুখস্ত করেছেন।
স্টার্টাপ পাকিস্তানের খবরে বলা হয়েছে, শুধু ২০১৯ সালে মাদ্রাসাটি থেকে ১৪ হাজার ছাত্রীসহ ৭৮ হাজার জন পবিত্র কোরআনের হাফেজ হন।
খবরে বলা হয়েছে, মাদ্রাসাটি চার বছরের কম বয়সী শিশুদের ভর্তি করে। তারা মাত্র দুই বছরের মধ্যে পবিত্র কুরআন মুখস্ত করে। কুরআন মুখস্থ ছাড়াও এই পাকিস্তানি মাদ্রাসার ছাত্ররা ইংরেজি, উর্দু, গণিত ইত্যাদি বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান স্টাডিজ এবং বিজ্ঞান।
ওয়াফাক উল মাদারিসের প্রতিনিধি ক্বারী হাফিজ জলন্ধরি পাকিস্তানে বার্ষিক হাফিজ-ই-কুরআনের সংখ্যা সৌদি আরবের সাথে তুলনা করেছেন।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে, আরবি পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা না হলেও সৌদি আরবের তুলনায় পাকিস্তানের বেশি শিশু কুরআন মুখস্থ করছে। তিনি তুলে ধরেন যে সৌদি আরবে প্রতি বছর মাত্র পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী হাফেজে কুরআন হয়।
ক্বারী হাফিজ জলন্ধরী উল্লেখ করেছেন যে ওয়াফাক উল মাদারিসের প্রচেষ্টা সৌদি সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশটি মাদ্রাসাটির প্রশংসা করেছে এবং এটিকে পুরষ্কার দিয়েছে। | ধর্মীয় প্রতিবেদন | Positive |
দৈনিক ইনকিলাব | সিরিয়া থেকে পরিবারসহ ইরাকে ফিরেছে ৫০ আইএস সদস্য
| ইসলাম ধর্ম | ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের ৫০ সদস্য এবং তাদের পরিবারের ১৬৮ সদস্যকে শনিবার সিরিয়া থেকে ইরাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। একজন ইরাকি কর্মকর্তা একথা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, ইরাকি কর্তৃপক্ষ সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) কাছ থেকে ইসলামিক স্টেটের ৫০ জন সদস্যকে গ্রহণ করেছে। খবর এএফপি’র। এসডিএফ কার্যত এই এলাকায় কুর্দিদের সেনাবাহিনী এবং তারা ২০১৯ সালে তাদের সিরিয়ার ভূখ-ের শেষাংশ থেকে ইসলামিক স্টেট গ্রুপ যোদ্ধাদের বিতাড়িত করার যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে। কর্মকর্তারা আরো জানান, ‘তাদের ব্যাপারে তদন্ত করা হবে এবং তারা ইরাক বিচারের মুখোমুখি হবে।’ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার হাসাকেহে থেকে তাদের আটক করা হয়েছে। ইরাকি কর্মকর্তা আরো বলেন, আইএস-গ্রুপ সদস্যদের ১৬৮ জন আত্মীয়কে সিরিয়ার আল-হল ক্যাম্প থেকে ইরাকের মসুলের দক্ষিণে আল-জাদা ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয়েছে, সেখানে তাদের মানসিক চিকিৎসা দেয়া হবে। তারা বলেন, ‘আমরা তাদের উপজাতি নেতাদের কাছ থেকে প্রতিশোধের মুখোমুখি না হওয়ার আশ্বাস পেলে তাদের বাড়িতে পাঠানো হবে।’ কুর্দি-নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার আল-হোল ক্যাম্পে সন্দেহভাজন আইএস ও পরিবারের সদস্যসহ প্রায় ৫০ হাজার লোক বসবাস করে। তাদের মধ্যে বাস্তুচ্যুত সিরিয়ান, ইরাকি উদ্বাস্তু এবং সেইসাথে প্রায় ৬০টি দেশের ১০ হাজারের বেশি বিদেশী রয়েছে। মার্চ মাসে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আল-হোলে আটক বিদেশীদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানান। ইরাক সফরের সময় একটি বিবৃতিতে গুতেরেস বলেন, ‘শিবিরের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ১২ বছরের কম বয়সী এবং বাসিন্দারা ‘তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত, দুর্বল এবং প্রান্তিক।’ গুতেরেস বলেন, আমার বলতে দ্বিধা নেই যে আজকের বিশ্বে বিদ্যমান সবচেয়ে খারাপ শিবিরটি হলো আল-হোল, যেখানে মানুষের জন্য সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এবং সেখানে আটকে থাকা লোকরা বছরের পর বছর ধরে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।’ ২০২১ সালের মে থেকে, শত শত পরিবারকে আল-হোল থেকে ইরাকের আল-জাদাতে স্থানান্তরিত করা হয়েছ, যাদের অনেকে পালিয়ে যাচ্ছিল। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাকের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণকারী অতি-উগ্রবাদী গোষ্ঠীতে যোগদানকারী যোদ্ধাদের আত্মীয়দের ইরাকে প্রত্যাবাসন নিয়ে বিরোধিতাও রয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ইরাকি কর্তৃপক্ষ আল-জাদা বন্ধ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এএফপি। | ধর্মীয় প্রতিবেদন | Positive |
কালের কন্ঠ | হজ শেষে রওজা শরিফ জিয়ারতে দেড় লাখ মুসল্লি | ইসলাম ধর্ম | পবিত্র হজ পালনের পর মদিনায় পৌঁছেছেন লক্ষাধিক হাজি। তারা মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করবেন এবং পবিত্র মসজিদে নববীতে নামাজ পড়বেন। গত বুধবার পর্যন্ত এক লাখ ৪২ হাজার ৫৮৮ জন হজ করে মদিনায় যান বলে জানিয়েছে সৌদি বার্তা সংস্থা।হজ ও ভিজিট কমিটির পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, হজ শেষ করে গতকাল বুধবার মোট ১৭ হাজার ২৫৮ জন মদিনায় পৌঁছেন। ৩৯৫ ফ্লাইটে মদিনার হিজরাহ স্টেশনে এসেছেন ১৫ হাজার ১৫৯ জন। তাদের মধ্যে হারামাইন হাইস্পিড ট্রেনের ৩৯৫ ট্রিপে করে ১৭৯৭ জন পৌঁছেন। এদিকে ৩৬ হাজার ৯৬৩ জন নিজ দেশের উদ্দেশে চলে যান।
জেনারেল প্রেসিডেন্সি জানায়, গত ২৫ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ৪২ লাখ ৫২ হাজারের বেশি লোক পবিত্র মসজিদে নববীতে জিয়ারত করেছেন।মসজিদে আগত মুসল্লিদের জন্য স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবা, স্বেচ্ছাসেবাসহ প্রয়োজনীয় সব সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। মুসল্লিদের মধ্যে দুই লাখ ৩২ হাজার ৯৪টি জমজম পানির বোতল এবং রোজাদারদের মধ্যে চার লাখ ২৬ হাজার ৪৫৭টি খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হয়। তা ছাড়া মসজিদ প্রাঙ্গণে ৪৬ হাজার ১৩৮টি উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। পবিত্র মসজিদে নববীর স্বেচ্ছাসেবা বিভাগ জানায়, জেনারেল প্রেসিডেন্সির পক্ষ থেকে পবিত্র মসজিদে ছয় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।জিলহজ মাসে মসজিদে আগত মুসল্লিদের নানা ধরনের সেবা দিয়েছেন। এদিকে সৌদি সরকারের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনেকে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করেন। তারা মুসল্লিদের পথনির্দেশনা, ভিড় নিয়ন্ত্রণ, খাবার বিতরণ, রোগীদের জন্য যানবাহন ব্যবস্থাপনা, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতাসহ নানা ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেন। | ধর্মীয় প্রতিবেদন | Positive |
কালের কন্ঠ | ‘ফিলিস্তিনি শিশুদের জীবন কি মূল্যহীন’ | ইসলাম ধর্ম | গাজায় যুদ্ধ ও রক্তপাত বন্ধসহ সব ধরনের সংঘাতের বিস্তার প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি। গতকাল মঙ্গলবার কাতারের শুরা কাউন্সিলের উদ্বোধনী বক্তব্যে জোরালোভাবে এ আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের জীবনের কোনো মূল্য নেই, শিশুদের জীবন যেন কারো কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।’ আল-থানি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার একমাত্র উপায় হলো ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির বাস্তবায়ন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা, যা এখন পর্যন্ত এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।আন্তর্জাতিক রেজল্যুশন অনুসারে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করে ন্যায়সংগত ও ব্যাপক শান্তি প্রতিষ্ঠা ছাড়া আর কোনো সমাধান নেই।’ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি প্রসঙ্গে কাতারের আমির বলেন, ‘আমরা বলব, যথেষ্ট হয়েছে। ইসরায়েলকে হত্যাযজ্ঞ চালানোর নিঃশর্ত সবুজ সংকেত দেওয়া উচিত নয়। চলমান অবরোধ, দখলদারি, বসতি স্থাপনের বাস্তবতা উপেক্ষা করা যায় না।ফিলিস্তিনি জনগণ থেকে পানি, ওষুধ ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করা পুরোপুরি অবৈধ। আমরা কারো দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করব না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের পেছনে থাকা সবাইকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, এরপর কী ঘটতে যাচ্ছে? যুদ্ধ কি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে? এরপর ফিলিস্তিনিরা কোথায় যাবে? যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়; বরং এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও হতাহতের সংখ্যা কেবল বাড়বে। এখন যা ঘটছে তা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চলমান পরিস্থিতিতে ধর্মীয় ও পার্থিব কোনো রীতি-নীতি ও মূল্যবোধের তোয়াক্কা করা হয়নি। ক্রমবর্ধমান এই সহিংসতা বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে এক নজিরবিহীন অভিযান পরিচালনা করে। এর পর থেকে গাজায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। সংঘর্ষের শুরুতেই দুই শতাধিক ইসরায়েলি নাগরিককে বন্দি করে হামাস। | ধর্মীয় প্রতিবেদন | Positive |
কালের কন্ঠ | তুরস্কের যে মসজিদের ওপর পাখি বসে না | ইসলাম ধর্ম | উসমানীয় যুগের ঐহিতাসিক মসজিদগুলোর অন্যতম শামসি পাশা মসজিদ। তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের ইসকুদা অঞ্চলে তা অবস্থিত। ১৫৮১ সালে বসফরাস প্রণালীর তীর ঘেঁষে নির্মিত হয় এ মসজিদ। মসজিদটি নির্মাণে উসমানীয় আমলের গভর্নর শামসি পাশা বিশেষ সহযোগিতা করেন এবং এর নকশা অঙ্কন করেন বিখ্যাত স্থাপতি মিমার সিনান।তিনি ৯০ বছর বয়সে তা নির্মাণ করেন।ঐতিহাসিক এ মসজিদের অন্যতম বিশেষত্ব হলো, এর ওপর পাখি দাঁড়ায় না। কারণ তা বসফরাস প্রণালী ও মারমারা সাগরের সংযোগস্থলে নির্মিত হয়েছে। উসমানীয় সুলতান সুলাইমান কানুনির যুগে নির্মিত মসজিদটি ঘিরে তুর্কি জাতির মধ্যে বংশপরম্পরায় বিস্ময়কর নানা কথা প্রচলিত রয়েছে।তুর্কি জাতির ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সেনাপতি শামসুদ্দিন পাশা তৎকালীন স্থপতি মিমার সিনানের কাছ থেকে একটি অদ্ভুত আবদার করেন। তিনি তাঁকে এমন একটি মসজিদ নির্মাণ করতে বলেন, যার ওপর পাখি দাঁড়াতে পারবে না। যেন মসজিদের ছাদ ময়লাযুক্ত হয়ে না পড়ে। এরপর বুদ্ধিসম্পন্ন মিমার সিনান ইস্তাম্বুলের তীরবর্তী ইস্কুদার অঞ্চলটি নির্বাচন করেন।এর কারণ হিসেবে মনে করা হয়, অঞ্চলটি প্রবহমান বাতাসের জন্য পরিচিত। স্বাভাবিকভাবে প্রচণ্ড বাতাসে পাখিদের চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে মসজিদের দেয়াল ও মিনারের ওপর দাঁড়ানো পাখিদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই মসজিদটির ছাদ কোনো ময়লাযুক্ত হয় না এবং এর গম্বুজ ও মিনার খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের তা পরিষ্কার করার প্রয়োজনও হয় না।মসজিদের আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এর ভেতর বায়ু চলাচলের জন্য বিশেষ ধরনের আউটলেট রয়েছে। তুরস্কে এ ধরনের ব্যবস্থা একমাত্র এ মসজিদেই রয়েছে। এর মাধ্যমে মসজিদে সমুদ্র থেকে পানি প্রবেশ করে এবং বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ছাড়াই তাতে প্রাকৃতিক বায়ু চলাচল করে।মসজিদের বাম পাশে উসমানীয় সেনাপতি শামসি আহমেদ পাশার সমাধি রয়েছে। তা ছাড়া মসজিদের ভেতরে একটি মাদরাসা রয়েছে। বর্তমানে তা সরকারি গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উসমানীয় যুগে এখানে ইসলামী পাঠ প্রদান করা হতো। প্রতিদিন পর্যটকরা মসজিদটির স্থাপত্য সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হন। | ধর্মীয় শিক্ষা | Neutral |
দৈনিক ইনকিলাব | কুরআন মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে আনে
| ইসলাম ধর্ম | মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের সহজ ও সুন্দরতম মাধ্যম হল কুরআন মাজীদ। অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা, অন্যের তিলাওয়াত শোনা, আয়াতের অর্থ, ভাব ও মর্ম নিয়ে চিন্তা ফিকির করা- এসবই বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করে। আল্লাহর পরিচয় লাভ ও তাঁর প্রতি আপনত্ব অনুভবে সাহায্য করে। কারণ, কুরআন আল্লাহর কালাম। তাঁর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি প্রেরিত বার্তা। যেখানে তিনি পরম মমতায় বান্দাকে সম্বোধন করেছেন। উপদেশ দিয়েছেন। কল্যাণের পথ নির্দেশ করেছেন। মন্দ ও ক্ষতিকর বিষয়ে সতর্ক করেছেন। নবী ও রাসূলদের গল্প বলেছেন। সাহাবায়ে কেরামের ঘটনা উল্লেখ করেছেন। পূর্বের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর কর্ম-পরিণতি ও উত্থান-পতনের ইতিবৃত্ত জানিয়েছেন। সর্বোপরি ইহ-পরকালীন জীবনে সফলতা লাভের পথ ও পন্থা বলে দিয়েছেন। এসব এত সহজ ও সাবলীলভাবে পেশ করেছেন যে, সবাই বুঝতে পারে। এত চমৎকার শব্দ, বাক্য ও শৈলী ব্যবহার করেছেন যে, সবাই তার মাধুর্য অনুভব করতে পারে।
কুরআন হল ‘রূহ’। কুরআনের বহু জায়গায় আল্লাহ তাআলা নিজের পরিচয় দিয়েছেন। এরপর বলেছেন, হে বান্দা, ইনি ‘তোমার’ রব। অর্থাৎ এই মহামহিম অত্যুচ্চ গুণাবলির অধিকারী সত্তার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক বড় গভীর ও মজবুত। তিনি তোমার স্রষ্টা। তোমার প্রতিপালক। তোমার অতি আপন।
এভাবে বান্দাকে তার আসল পরিচয়ের সূত্র ধরিয়ে দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের রহস্য। এরপর নানাভাবে তাকে উৎসাহিত করেছেন কুরআন পড়তে। উদ্বুদ্ধ করেছেন কুরআনের বিভিন্ন আয়াত নিয়ে ভাবতে। কুরআনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে। কুরআনকে বুকে ধারণ করে লাভবান হতে।
যেমন সূরা শূরার এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন : এভাবেই আমি ওহীর মাধ্যমে আপনার প্রতি নাযিল করেছি এক ‘রূহ’ আমার নির্দেশে। এর আগে আপনি জানতেন না- কিতাব কী, ঈমান কী। কিন্তু আমি একে বানিয়েছি এক নূর, যার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চাই হেদায়েত দান করি। (সূরা শূরা : ৫২)।
এখানে আল্লাহ তাআলা কুরআনকে মানব জাতির ‘রূহ’ বা প্রাণ বলেছেন। বুঝিয়েছেন, কুরআনহীন মানব জীবন প্রাণহীন মানুষের মতো, মৃত। এ প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তির বুকে কুরআনের কোনো অংশ নেই, সে যেন বিরান ঘর। (জামে তিরমিযী : ২৯১৬)। অর্থাৎ অপরিচ্ছন্ন, আবর্জনাময়, ভীতিকর মানব সে। আলো বাতাসহীন, বসতিহীন, কীট পতঙ্গের আবাস তার বুক। কিন্তু এই বুকে যখন কুরআন প্রবেশ করে, বুক আলোকিত হয়। জীবন উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয়। সজীব সতেজ হয়। জীবন্ত ও প্রাণবন্ত হয়। আর বিরান মৃত জীবনের সঙ্গে তো প্রাণবন্ত জীবনের কোনো তুলনা হতে পারে না।
একথাও আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন : যে ব্যক্তি ছিল মৃত এরপর আমি তাকে জীবন দিয়েছি, তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করেছি, যার সাহায্যে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে, সে কি ওই ব্যক্তির মতো হতে পারে, যে অন্ধকারে পরিবেষ্টিত, যা থেকে সে বের হতে পারে না? (সূরা আনআম : ১২২)।
এছাড়াও সূরা ইবরাহীমের শুরুতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন : এটি এমন কিতাব, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে আনতে পারেন, তাদের রবের নির্দেশে। সেই সত্তার পথে, যিনি পরাক্রমশালী প্রশংসার্হ। (সূরা ইবরাহীম : ১)। | ধর্মীয় শিক্ষা | Positive |
দৈনিক ইনকিলাব | হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদত
| ইসলাম ধর্ম | রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসনাতাউ ওয়া ফিল আখিরাতে হাসনাতাউ ওয়া কিনা আজাবান্নার’, অর্থাৎ ‘হে আমাদের রব, তুমি আমাদেরকে পৃথিবীতে কল্যাণ এবং পরকালে কল্যাণ দান করো।’ এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, ইসলাম শুধু মানুষকে বেহেশতের পথই দেখায়নি, ইসলাম মানুষকে সর্ববিধ পার্থিব উন্নতির পথও দেখিয়েছে। আল্লাহ মুসলমানদের এ কালের শান্তি ও পরকালে মুক্তি অর্জনের পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন। বেশির ভাগ মুসলমানই আমরা মনে করে থাকি যে, আমরা যেসব ইবাদত-বন্দেগি করে থাকি, সেসব ইবাদতের প্রতিদান শুধু মৃত্যুর পরবর্তী জীবনেই ভোগ করা যায়, এ পার্থিব জীবন বা এই দুনিয়ার জীবনে তেমন কোনো সুবিধাদি পাওয়া যায় না। এ রকম ধারণা সত্য না অযৌক্তিক তা আলোচনাসাপেক্ষে পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের মুক্তি ব্যতীত ইবাদতের যাবতীয় প্রতিদান বা উপকারিতা মানুষ এ পৃথিবীতেই ভোগ করে থাকেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ পাক নিজেই ঘোষণা করেছেন- ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে, তারাই কৃতকার্য’। (সূরা নূর : ৫২)।
এ আয়াত দ্বারা আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে কৃতকার্যের কথাই বুঝিয়েছেন। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ ওয়াদা করেন- ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎ কর্ম করে, আল্লাহ তাদের ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদের অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন’। (সূরা নূর : ৫৫)। অন্য এক আয়াতে বলা হচ্ছে- ‘যে সৎ কর্ম করে সে নিজের উপকারের জন্যই করে আর যে অসৎ কর্ম করে তা তার ওপরই বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই জুলুম করেন না’। (সূরা হামিম সেজদা : ৪৬)। কাজেই ইবাদতের উপকারিতা শুধু মৃত্যুর পরেই পাওয়া যাবে, এমনটি নয়।
‘ইবাদত’ শব্দটি এসেছে আরবি ভাষার ‘আবদুন’ শব্দ থেকে। আবদুন শব্দের অর্থ গোলাম এবং ইবাদত শব্দের অর্থ গোলামি করা। অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে নিয়ে তাঁরই আনুগত্য করা। আল্লাহ বলেন- ‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা শুধু আমারই আনুগত্য করবে’। (সূরা জারিয়া : ৫৬)। মানুষের পুরো জীবনের যাবতীয় কাজ আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী করা বা না করাই হচ্ছে ইবাদত। পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে- ‘তোমরা আনুগত্য করো এক আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের, আর যদি তোমরা তা থেকে বিমুখ হও তাহলে জেনে রেখো আল্লাহ কাফেরদের ভালোবাসেন না’। (সূরা আল ইমরান : ৩২)। ইবাদতের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, তবে মানুষের কল্যাণ সাধন হচ্ছে ইবাদতের পারিপার্শ্বিক কর্তব্য। এ দুই উদ্দেশ্যে যেকোনো ভালো কাজ করার নামই ইবাদত। ইবাদতের পরিষ্কার একটি ধারণা পাওয়া যায় সূরা আল বাকারায়। বলা হয়েছে- ‘সৎ কর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎ কাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং সমস্ত নবী-রাসূলগণের ওপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য। আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে-রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী, তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেজগার’। (সূরা বাকারা : ১৭৭)।
ইবাদত দুই প্রকার। হক্কুল্লাহ আর হক্কুল ইবাদ। হক্কুল্লাহ হচ্ছে সেই ইবাদত, যা আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। যেমন- তাওহিদ, রোজা, নামাজ, হজ, কোরবানি এবং হক্কুল ইবাদ, যা বান্দার সাথে সংযুক্ত যেমন- জাকাত, পিতা-মাতার অধিকার, নিকটাত্মীয়ের অধিকার, প্রতিবেশীর অধিকার, এতিম, ফকির-মিসকিনের অধিকার এবং সমস্ত মুসলিম ও অমুসলিমদের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত ইবাদতগুলো বান্দার সাথে সম্পৃক্ত ইবাদতগুলো কার্যকরী হওয়া বা নিশ্চয়তার পূর্বশর্ত। কেননা কেউ যদি প্রথম পর্যায়ের ইবাদত অর্থাৎ হক্কুল্লাহর ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক না হয়, তবে তার দ্বারা দি¦তীয় পর্যায়ের ইবাদত অর্থাৎ বান্দা সম্পর্কিত ইবাদত আশা করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ কেউ যদি আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে না পারে, তাহলে তার পক্ষে দ্বিতীয় পর্যায়ের ইবাদতের নিশ্চয়তা প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়ে। যদি কেউ এ দু’ধরনের ইবাদতই সম্পন্ন করে থাকে, তাহলে সেই ইবাদতগুলোই মানবকল্যাণের তাৎপর্য বহন করবে।
তাওহিদ হচ্ছে প্রথম ইবাদত, যা আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত। আল্লাহ ঘোষণা করেন- ‘হে মানুষ সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো ইলাহ নেই’ (সূরা হুদ : ৬১)। পবিত্র কুরআনের সূরা ইখলাসে বলা হয়েছে- ‘বলুন, তিনি আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়, তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তিনিও কারো থেকে জন্ম নেননি এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ একজনও নেই’। (সূরা ইখলাস : ১-৪)। এই তাওহিদ বা একত্ববাদের স্বীকৃতি প্রদানের ফলে বান্দার ওপর অত্যাবশ্যক হয়ে যায় নবী-রাসূল, বেহেশত-দোজখ, কেয়ামত, আখেরাতসহ সব কিছুর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। যখন এসবের প্রতি মানুষ বিশ্বাস স্থাপন করবে তখন মানুষের ভেতরে এক ধরনের জবাবদিহিতার ভয় জন্মাবে, যাতে করে মানুষ নিজের থেকেই নিজে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং যা ইচ্ছে তা করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা মানুষ তখন ভাববে যে, আল্লাহর নির্দেশিত পথের বাইরে গেলে তাকে হাশর, মিজান, কবর, ফেরেশতা, জাহান্নাম ইত্যাদির সম্মুখীন হতে হবে। এই চেতনা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হলেই মানুষ মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়ে উঠবে। আর মানুষ যদি আল্লাহর তৈরি এসব বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করা থেকে বিরত থাকে এবং যা ইচ্ছে হয় তাই করতে থাকে, তাহলে আল্লাহর কোনো লাভ বা ক্ষতি হবে না। যা হওয়ার তা সবই হবে বান্দার জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘যে সৎ কর্ম করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং যে মন্দ কাজ করে তার শাস্তি সেই ভোগ করবে’। (সূরা হামিম : ৪১)। আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসের দ্বারা মানুষ নিয়ন্ত্রিত হলে সমাজ নিয়ন্ত্রিত হবে। সমাজে ভারসাম্য ও স্থিতি থাকবে এবং এই ভারসাম্য ও স্থিতির মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরে শান্তি ও শৃঙ্খলা বিরাজ করবে।
ইবাদত হিসেবে নামাজের স্থান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ ও তার বান্দার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একমাত্র ইবাদত হচ্ছে নামাজ। কুরআন মজিদে অসংখ্যবার নামাজের ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন- ‘নামাজকে প্রতিষ্ঠিত করো, জাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহর রুজ্জুকে সম্মিলিতভাবে ধারণ করো, এর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ নামাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে পড়া হয়ে থাকলেও নামাজের অবদান সম্পূর্ণভাবে মানুষ ভোগ করে থাকে। পবিত্র কুরআন ঘোষণা করছে- ‘অবশ্যই নামাজ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে।’ তাহলে দেখা যাচ্ছে, নামাজি ব্যক্তির দ্বারা কোনো প্রকার খারাপ কাজ সংঘটিত হচ্ছে না, যাতে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বা নামাজির দ্বারা মানুষ কষ্ট পেতে পারে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এখানেও নামাজ পড়ার কারণে মানুষ ব্যক্তিগতভাবে সততা অর্জন করছে এবং তার সততার সুফল সে নিজে ভোগ করছে, সেই সাথে তার সমাজও ভোগ করছে। আধ্যাত্মিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে সিয়াম বা রোজা। রোজার মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন বৈধ কামনা-বাসনা, লোভ-লালসা, অহঙ্কার, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিজেকে বিরত রেখে আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জন করে। এটিও আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত ইবাদত। রোজা রাখার কারণে মানুষ যখন বৈধ জিনিসের প্রতি লালসা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি থেকেও নিজেকে সংযত রাখে; নিজে সংবরণ করে, তখন তার কাছে অবৈধ ভোগ-বিলাস হয়ে পড়ে গৌণ ও তুচ্ছ। বৈধ জিনিস চরিতার্থ করলে সমাজকে বা অন্য মানুষকে কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না, কিন্তু অবৈধ বস্তু চরিতার্থ করলে তার দ্বারা অন্য মানুষের দুঃখ ও কষ্ট বহুগুণে বেড়ে যায়, যা রোজার বিধানে বিশ্বাসী ব্যক্তির দ্বারা করা সম্ভব নয়। আল্লাহ ঘোষণা করেন- ‘অবশ্যই রোজা তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববতী লোকদের ওপর করা হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া বা পরহেজগারিতা অর্জন করতে পারো।’ এখানে তাকওয়া অর্জনের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর ভয়ে অন্যায় কর্ম থেকে বিরত থাকা। তাহলে অন্যায় কর্ম থেকে বিরত থাকলে উপকৃত হবে কে? উপকৃত হবে রোজাদার নিজে এবং সমাজের অন্যসব মানুষ। কাজেই রোজার মাধ্যমে যদি প্রত্যেক মানুষ তার আত্মার পরিশুদ্ধতা অর্জন করতে পারে, তবে সেই মানুষগুলো সমাজে সোনার মানুষে পরিণত হবে এবং এসব সোনার মানুষের কাছ থেকে যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে, সেসব সুযোগ-সুবিধা আল্লাহ পাক গ্রহণ করেন না, তার সমুদয় সুবিধা গ্রহণ করেন সমাজের সব স্তরের জনসাধারণ। জাকাত, হজসহ সব ধরনের ইবাদত যা বান্দার সাথে সম্পৃক্ত তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের কল্যাণ সাধন; সেই সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। জাকাতের অর্থ বিলি-বণ্টন ব্যবস্থা মানুষের তথা সমাজের দারিদ্র্য কমিয়ে আনে। মানুষের মধ্যে সমতা ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যতা রক্ষা করে শ্রেণী বৈষম্য কমায়। ধনী-দরিদ্রের মধ্যে অহঙ্কারের ব্যবধান হ্রাস করে। আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয় ধনীদের সম্পদে দরিদ্রদের অধিকার রয়েছে।’ জাকাতের কোনো অর্থ-সম্পদই আল্লাহ গ্রহণ করেন না, এর সমুদয় অর্থ-সম্পদ জাকাত প্রদানকারী ব্যক্তির (অগ্রাধিকার ভিত্তিতে) নিকটাত্মীয় এবং চার পাশের মানুষই গ্রহণ করে থাকেন। এখানেও জাকাতের অর্থ-সম্পদ সবই সাধারণ মানুষদের বিলিয়ে দেয়া হয়, আল্লাহ উদ্দেশ্য মাত্র।
হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সাথে সাথে বিশ্বমুসলিম ভ্রাতৃত্বের সৌহার্দ্য সাম্য ও পারস্পরিক মতবিনিময়ের দ্বারা মুসলিম উম্মাহর অগ্রগতি ও উন্নতির পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়। হজের আত্মত্যাগে মানুষ একে অন্যের সাহায্যকারীর শিক্ষা অর্জন করে। আল্লাহর রাসূলদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে রাসূলের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নিজেদের সমাজে ফিরে আসেন। এই ফিরে আসা হাজীরা সমাজের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করার চেষ্টা করেন। এখানেও আল্লাহর কোনো উপকার হয় না, উপকার হয় মানুষের, মুসলিম উম্মাহর।
পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা, নিকটাত্মীয়দের প্রতি গুরুত্বারোপ, অনাথ, এতিম, ফকির-মিসকিনদের প্রতি দায়িত্ববোধ, প্রতিবেশীদের খোঁজখবর করা ও বিপদাপদে আন্তরিকতার সাথে পাশে থাকা এবং সমাজের সব মুসলিম ও অমুসলিমের মানবিক প্রত্যাশার প্রতি যতœশীল হওয়ার মতো বান্দা সম্পর্কিত ইবাদতের প্রতিফলও মানুষই ভোগ করে থাকেন। এখানেও ইবাদতকারী ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম পালন করার মাধ্যমে, পিতা তার সন্তানের কাছ থেকে, সন্তান পিতার কাছ থেকে; স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে, স্বামী স্ত্রীর কাছ থেকে; প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর কাছ থেকে, এতিম-অনাথ তার নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে পরস্পর উপকৃত হয়। এভাবে পারস্পরিক সম্পৃক্ত এসব ইবাদত প্রত্যেক মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি হয়ে যায়। মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে একে অন্যের সাথে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত। সবাই সবার কাছে কোনো না কোনোভাবে দায়বদ্ধ কিংবা সহযোগিতা প্রত্যাশী। বান্দাসংশ্লিষ্ট ইবাদতের মাধ্যমে এই দায়বদ্ধতার দায়িত্ব থেকে মুক্তি অর্জন এবং সুশৃঙ্খল মানবিক অধিকার সচেতন টেকসই সমাজব্যবস্থার প্রবর্তনই এসব ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য। যদিও প্রতিটি ইবাদত আল্লাহর উদ্দেশ্যে সম্পন্ন হয়ে থাকে, তবুও এর অন্তর্নিহিত সব সুবিধা মানুষই উপভোগ করে থাকেন। যেমন কোনো মৃত ব্যক্তির জন্য আয়োজিত দোয়াখায়ের অনুষ্ঠানে প্রস্তুতকৃত খাদ্যসামগ্রী মৃত ব্যক্তি গ্রহণ করেন না, সব খাদ্য অনুষ্ঠানে আগত মেহমানেরাই ভোগ করে থাকেন, মৃত ব্যক্তি উপলক্ষ মাত্র। এভাবেই আল্লাহ শুধু দেখতে চান বান্দা তার আদেশ-নিষেধ ঠিকমতো পালন করছেন কি না। আল্লাহ বলেন- ‘তাদের গোশতও আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, তাদের রক্তও না কিন্তু তাঁর কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া’। (হজ-৩৭)। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন- ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন; যেন পরীক্ষা করে দেখতে পারেন কাজকর্মে তোমাদের মধ্যে কে সর্বোত্তম; তিনি মহাশক্তিমান ক্ষমা দানকারী’। | ধর্মীয় শিক্ষা | Positive |
কালের কন্ঠ | চীনের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মসজিদ | ইসলাম ধর্ম | চীনের সর্ববৃহৎ মসজিদ মসজিদে ঈদগাহ। স্থানীয় উচ্চারণ ‘ইদ কাহ’। ১৪৪২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত মসজিদ কাশগর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। মসজিদের মোট আয়তন ১৬ হাজার আট শ বর্গমিটার।মসজিদের মূল প্রার্থনা কক্ষে একসঙ্গে দুই থেকে তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। আর পুরো মসজিদ কমপ্লেক্সের ধারণক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার। মসজিদ নির্মাণে মৌলিক ধর্মীয় উপাদানের সঙ্গে স্থানীয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটেছে। ঈদগাহ মসজিদকে মনে করা হয় প্রাচীন উইঘুর স্থাপত্যের চমৎকার নিদর্শন ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক।এ মসজিদ দ্বারা উইঘুরে ইসলামী সংস্কৃতি ও স্থাপত্যরীতির প্রভাব অনুভব করা যায়। ‘দ্য চায়না ডিসকভারি ওয়েবসাইট’-এর ভাষ্য মতে, মসজিদটি প্রকৃতপক্ষে আরব সেনাপতি ও ইসলাম প্রচারক ইবনে কুতাইবার সমাধি ছিল (সম্ভবত উমাইয়া সেনাপতি কুতাইবা বিন মুসলিম উদ্দেশ্য। যিনি অত্র অঞ্চল বিজয়ে নেতৃত্ব দেন এবং খোরাসানের প্রশাসক নিযুক্ত হন)। কাশগর রাজ্যের শাসক সাকসিজ মির্জা ১৪৪২ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন।প্রাচীনকালে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রচারে ঈদগাহ মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খ্রিস্টীয় ১৬ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ঈদগাহ মসজিদ সম্প্রসারণ করা হয়। তখন বিপুলসংখ্যক মুসল্লি জুমার জামাতে অংশগ্রহণ করত। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে গুলেরেনা নামের একজন মুসলিম নারী পাকিস্তান যাওয়ার পথে মারা যান। স্থানীয় মুসল্লিরা মসজিদ সম্প্রসারণে তার পরিত্যক্ত সম্পদ ব্যবহার করে।
এ ছাড়া একজন ধনাঢ্য উইঘুর মুসলিম নারী ছয় শ একর ভূমি মসজিদকে দান করেন। ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। তখন একটি গেট এবং ভেতরে খাল খনন করা হয়। মসজিদের সর্বশেষ সংস্কার হয় দাওগুয়াং সাম্রাজ্যের সময়ে। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সংস্কার কার্যক্রম শেষ হয়।ঈদগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সটি সাতটি অংশে বিভক্ত। তা হলো গেট, মিনার, সাধনা কক্ষ, সভাকক্ষ, উঠান, অতিরিক্ত প্রার্থনা কক্ষ ও মূল প্রার্থনা কক্ষ। মসজিদ নির্মাণে জমকালো শৈলীর পরিবর্তে উজ্জ্বল রং ও সাধারণ শৈলী ব্যবহার করা হয়। মসজিদের প্রধান প্রবেশপথ পূর্ব দিকে অবস্থিত। তবে পশ্চিমেও একটি প্রবেশপথ আছে। মুসল্লিদের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণ সূর্যাস্ত দেখতে এবং অবসর কাটাতে ঈদগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে আসে। উজ্জ্বল হলুদ রঙের গেটের দুই পাশে রয়েছে দুটি মিনার। মসজিদের অভ্যন্তর ভাগের নকশায় মুসলিম রীতি অনুসারে ফুল-পাতা-লতার ব্যবহার দেখা যায়।
ধনুকাকৃতির দরজাগুলোর ৪.৭ মিটার উঁচু এবং ৪.৩ মিটার চওড়া। মিনার দুটির উচ্চতা প্রায় ১৮ মিটার। উভয়টিতে ইসলামী কারুকাজ ও ফুলেল নকশা রয়েছে। মিনারের শীর্ষদেশে আছে অর্ধচন্দ্র। ১৬ মিটার উঁচু গম্বুজের নিচে রয়েছে অষ্টভুজ আকৃতির হল। উত্তর পাশের পাথর বাঁধানো পথ ধরে হাঁটলে পাওয়া যাবে ২০ একরের সুবিশাল উঠান। যেখানে রয়েছে সবুজ বাগান,দৃষ্টিনন্দন গাছ ও পরিষ্কার পানির পুকুর।উইঘুর মুসলমানের কাছে ঈদগাহ মসজিদ যেমন তাদের সোনালি অতীতের সাক্ষী ও প্রতীক, তেমনি তা বহু নির্মমতারও সাক্ষী। যেমন ৯ আগস্ট ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে উইঘুর নেতা তৈমুর বেগকে শহীদ করে তাঁর মাথা ঈদগাহ মসজিদে প্রদর্শন করা হয়েছিল। একইভাবে ১৯৩৪ সালে মার্চে উইঘুর আমির আবদুল্লাহ বুগরাকে শহীদ করে তাঁর মাথা ঈদগাহ মসজিদে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে ঈদগাহ মসজিদে একাধিকবার নামাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। | ধর্মীয় প্রতিবেদন | Positive |
প্রথম আলো | শুভ বড়দিন আজ | খ্রীষ্টান ধর্ম | ফুল, নানা রঙের বেলুন, নকশা করা কাগজ ও জরি ব্যবহার করে কয়েক দিন ধরেই সাজানো হচ্ছিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালার গির্জা। শুধু এই গির্জা নয়, দেশের সব গির্জার ভেতরেই গত কয়েক দিন উৎসবের প্রস্তুতি চলছিল। গির্জায়–গির্জায় বর্ণিল সাজে সেজেছে ক্রিসমাস ট্রি। এত সব আয়োজন ২৫ ডিসেম্বর ঘিরে। এই দিনটি (আজ) খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশে এই উৎসব বড়দিন (ক্রিসমাস ডে) নামে পরিচিত।
অন্য বছরের তুলনায় এবার বড়দিনের আয়োজনে চাকচিক্য কম। বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর অনাড়ম্বরভাবে বড়দিন উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট আজকের দিনে বেথলেহেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার জন্য যিশুখ্রিষ্ট জন্ম নিয়েছিলেন।
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা আজ সারা দিন আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্যাপন করবেন। দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন।
গত দুদিন ঢাকার কাকরাইলের সেন্ট মেরিস গির্জা, তেজগাঁওয়ের হলি রোজারি গির্জা ও আসাদগেটের সেন্ট ক্রিস্টিনা গির্জা ঘুরে দেখা যায়, অন্য বছরের তুলনায় এবার জাঁকজমক কম। যাজকেরা বলছেন, বড়দিনের যেসব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের বাইরে লোকসমাগম হয়, সে ধরনের উদ্যাপনে খ্রিষ্টভক্তদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কিছু কিছু আনুষ্ঠানিকতাও বাতিল করা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কেউ গির্জায় প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রার্থনা চলাকালেও সার্বক্ষণিক মাস্ক পরে থাকতে হবে।
বড়দিন উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সুখী-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। বিদ্যমান সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে আরও সুদৃঢ় করতে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, বড়দিন দেশের খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ্য সম্প্রীতিকে আরও সুদৃঢ় করবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বর্তমানে বিশ্ব বিপর্যস্ত। তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবারের বড়দিন পালনের আহ্বান জানান। বড়দিনে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী জনসাধারণের শান্তি, কল্যাণ এবং সমৃদ্ধি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীসহ দেশের সব মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি। | ধর্মীয় উৎসব | Positive |
বাংলাদেশ প্রতিদিন | ইজতেমায় কোনো পক্ষ বা বিভাজন থাকা উচিত নয় : র্যাব মহাপরিচালক
| ইসলাম ধর্ম | র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, নিজেদের মধ্যে বিভাজন থাকলে ইজতেমায় আগ্রহ হারাবে মানুষ। তাই ইজতেমায় কোনো পক্ষ বা বিভাজন থাকা উচিত নয়।
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ। এ উপলক্ষে বুধবার বেলা ১১টার দিকে ইজতেমা ময়দানের পাশে র্যাবের কন্ট্রোল রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন তিনি।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, এবারের ইজতেমা আয়োজনে জঙ্গি বা কোনো উগ্রবাদী সংগঠনের হুমকি নেই। সকল গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
র্যাব শুধু নিরাপত্তাই নয়, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাও দেবে। এ ছাড়া তুরাগ নদীতে টহলের জন্য র্যাবের স্পিডবোট থাকছে। ৯টি অবজারভেশন পোস্ট, ৯টি ওয়াচ টাওয়ার সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। পুরো ময়দান পর্যবেক্ষণের জন্য আকাশ পথেও টহলে র্যাবের হেলিকপ্টার চলছে। তাছাড়া র্যাবের বোম্ব স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড ও স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করছে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য রয়েছে একটি মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও দুটি উপ-নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এবারের ইজতেমা নির্বিঘ্নে শেষ করতে র্যাবের পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে র্যাব সব সময় প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি। | ধর্মীয় প্রতিবেদন | Neutral |
ভোরের কাগজ | মাদ্রিদে শারদীয় দুর্গোৎসবে প্রবাসীদের মিলনমেলা
| হিন্দু ধর্ম | নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে পালিত হলো বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গা পূজা।
বাঙালিঅধ্যুষিত লাভাপিয়েসে নির্মিত অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পাঁচ দিনব্যাপী এই দুর্গোৎসব মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) শেষ হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এ ধর্মীয় উৎসবে বাংলাদেশি ছাড়াও নেপাল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রবাসীও অংশ নিয়েছেন।
এবার দুর্গা পূজা উপলক্ষে মাদ্রিদের বাঙালিঅধ্যুষিত এলাকা লাভা পিয়েসের পাশে খেসুস ই মারিয়া রোডস্থ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন হলরুমে পূজা মণ্ডপ তৈরি করা হয়।
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এ পূজামণ্ডপ আরাধনার পাশাপাশি ছিল প্রবাসীদের মিলনমেলা। ঢাকঢোল ও শঙ্খ বাজিয়ে চলেছে উলুধ্বনি। দুর্গাপূজাকে ঘিরে মাদ্রিদে বাঙালিঅধ্যুষিত এলাকা যেন পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে আয়োজিত এই পূজার সব তিথি নির্ঘণ্ট মেনে এই পূজা পালন করা হয়। অন্যবারের মতো এবারও ছিল নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব বয়সের মানুষই সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন এই অনুষ্ঠানে।
আর এই অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন এখানকার বয়োজ্যেষ্ঠরা। পূজাকে ঘিরে বিরাট আয়োজন হলেও কোথাও যেন একটা ঘরোয়া ছোঁয়া ছিল। আয়োজন করা হয় ভোগেরও।
হাসিমুখে গোটা আয়োজনের দায়িত্ব ভাগ করে নেন সবাই। এরইসঙ্গে প্রাণখোলা আড্ডায় মেতে ওঠেন সবাই। দেশ থেকে অনেক দূরে সারাটা বছর জুড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা থাকেন নানা কাজের ব্যস্ততা।
শুধুমাত্র এই সময়টাতেই একসঙ্গে মেতে ওঠেন এখানকার বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সব কাজ ভুলে সবাই মেতে ওঠেন আনন্দে। তারপর ফিরে যাওয়া আবার সেই দৈনন্দিন জীবনে। স্পেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আসেন এই পূজাতে।
মাদ্রিদ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চক্রবর্তী উৎসবমুখর পরিবেশে প্রবাসে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করতে পেরে খুবই উৎফুল্ল।
এসময় তারা বলেন, দেশের মতো আনন্দঘন পরিবেশ না থাকলেও এখানে আমরা নিজেদের মধ্যেই এ উৎসবকে ভাগাভাগি করে নিয়েছি।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ।পরিদর্শনকালে তিনি সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকায় এ বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর উক্তি 'ধর্ম যার যার, উৎসব সবার'- উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যা পৃথিবীর খুব কম দেশেই আছে।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব মোহতাসিমুল ইসলাম। সর্বজনীন দুর্গাপূজা পরিষদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় বাংলাদেশ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি আল মামুন, সাবেক সভাপতি এস আর আই এস রবিনসহ রাজনৈতিক, সামাজিক, কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ এবং সাংবাদিক প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্পেনে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত শ্রী দিনেশ কে পাঠনায়েন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন হলরুমে বড় সর্বজনীন দুর্গাপূজা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, দশমীই মূলত দুর্গাপূজার প্রধান অনুষঙ্গ।
তবে দেবী দুর্গার বিদায় অর্থাৎ স্বামী গৃহে গমনের পাঁচদিন পরেই লক্ষ্মীপূজার মধ্য দিয়ে আবার পিতৃগৃহে ফিরে আসবেন। মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি যেমন কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য।ভারতের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই সুন্দর পূজা আয়োজনের প্রশংসা করেন।
এ সময় সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চক্রবর্তী, উপদেষ্টা উত্তম মিত্র, মান্না চক্রবর্তী, শ্যামল তালুকদার, গৌরিক প্রভাত চক্রবর্তী, শ্যামল দেব নাথ, শংকর রায়, তাপস দেব নাথ, পলাশ শাহা, সুব্রত মল্লিক, শান্তনু দাস, আদ্রি সেন, মোহন লাল মজুমদার, সুমন রায়, শিমুল ঘোষ, চমন দাস, দিলিপ সূত্রধর, উত্তম ভূইয়া, লক্ষণ মণ্ডল, কমল মণ্ডল, প্রাণধন চক্রবর্তী, শংকর পোদ্দার, আরিন্দ্রজিত চক্রবর্তী, রাখাল দেব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। | ধর্মীয় উৎসব | Positive |
ইত্তেফাক | চাঁদকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণার দাবি ভারতীয় ধর্মগুরুর | হিন্দু ধর্ম | সম্প্রতি ভারতের চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করেছে। বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে সফল চন্দ্র অভিযানের আনন্দে ভাসছে পুরো দেশ। এরই মধ্যে চাঁদকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণার দাবি উঠেছে। আর এই অদ্ভুত দাবিটি করে বসলো দেশটির এক ধর্মগুরু।ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভার জাতীয় সভাপতি স্বামী চক্রপানি মহারাজ। এই ধর্মগুরু তার বিতর্কিত নানা মন্তব্যের জন্য বেশ পরিচিত। ধর্মগুরুর দাবি, চন্দ্রযান-৩ অবতরণ করার পর এবার চাঁদকে হিন্দু রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করা হোক এবং যে স্থানে চন্দ্রযানের সফট ল্যান্ডিং হয়েছে, সেই জায়গাটিকে রাজধানী ঘোষণা করা হোক।
রোববার (২৭ আগস্ট) চক্রপানি মহারাজ এ বিষয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানান। তার দাবি, অন্য কোনও ধর্ম চাঁদের মালিকানা দাবি করার আগে, ভারত সরকারের এই দাবি করা উচিত। এমনকি এক লোকসভায় তিনি এ বিষয়ে প্রস্তাব এনে তা পাসেরও দাবি জানান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিওতে চক্রপানি মহারাজ বলেন, ‘ভারতীয় সংসদ চাঁদকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করুক। শিব শক্তি পয়েন্ট, যেখানে চন্দ্রযান-৩ অবতরণ করেছিল তাকে রাজধানী ঘোষণা করা হোক। যাতে কোনও জিহাদি মানসিকতা সেখানে পৌঁছাতে না পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও সন্ত্রাসবাদী যাতে চাঁদে পৌঁছতে না পারে তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’ | ধর্মীয় প্রতিবেদন | Neutral |
বাংলাদেশ প্রতিদিন | কোটা খালি রেখেই শেষ হলো হজ নিবন্ধন | ইসলাম ধর্ম | চার দফা সময় বাড়ানোর পর শেষ হয়েছে এ বছরের হজ নিবন্ধন। মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন ৮৩ হাজার ১৫৫ হজযাত্রী।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধন শেষে এখনো কোটা খালি রয়েছে ৪৪ হাজার ৪৩টি। এ বছর বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করে দেয় সৌদি আরব। এর মধ্যে সরকারিভাবে হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন চার হাজার ২৬০ জন। বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন। সবমিলিয়ে মোট নিবন্ধন করেছেন ৮৩ হাজার ১৫৫ জন। বাকি ৪৪ হাজার ৪৩টি কোটা ফেরত যাবে।
তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, শেষদিনে অনেকে নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু তাদের পেমেন্ট পেন্ডিং (অপেক্ষমাণ) রয়েছে। এ সংখ্যা যোগ করলে আরও হাজার দুয়েক কমবে। তারপরও ৪০ হাজারের মতো কোটা সৌদি আরবকে ফেরত দেওয়া হবে।
এবার হজের নিবন্ধন শুরু হয় ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর, যা ১০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রত্যাশিত সাড়া না মেলায় প্রথম দফায় সময় বাড়ানো হয় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়। তৃতীয় দফায় ২৫ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ায় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতেও হজ নিবন্ধনে কাঙ্ক্ষিত সাড়া না মেলায় শেষ দফায় ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়। | ধর্মীয় প্রতিবেদন | Negative |
প্রথম আলো | আসুরিক শক্তির বিরুদ্ধে সুরের লড়াই
| হিন্দু ধর্ম | দেবী দুর্গার ধর্মীয় মাহাত্ম্যের প্রথম উল্লেখ দেখা যায় শ্রীশ্রীচণ্ডীতে। সেখানে যে ধর্মীয় কাহিনি আছে, তাতে বলা আছে: রাজা সুরথ রাজ্য হারিয়ে আর সমাধি বৈশ্য ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে তাঁদের পরিবার-পরিজন কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়ে মনের দুঃখে গৃহত্যাগী হলেন। রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য কেউই কারও পূর্বপরিচিত নন। মনের দুঃখে তাঁরা দিগ্বিদিক ঘুরছিলেন। ঘুরতে ঘুরতে একসময় দুজনের দেখা হলো মেথস মুনির আশ্রমে। সেখানেই তাঁদের কথা হয়। দুজনেই তাঁদের দুঃখ ও যন্ত্রণার কথা পরস্পরকে বলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁরা দুজনেই দুঃখ-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে মা দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করলেন। সময়টা ছিল বসন্তকাল। চণ্ডীতে বলা আছে, মা দেবী দুর্গা তাঁদের আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে দেখা দিলেন এবং তাঁদের শোকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিলেন। এই হলো দেবীপূজার মাহাত্ম্য।
শ্রীশ্রীচণ্ডীতে যে মেথস মুনির আশ্রমটির কথা বলা আছে, আশ্রমটির অবস্থান যেখানে থাকার কথা উল্লেখ আছে শ্রীশ্রীচণ্ডীতে, সেটি এখনো আছে নবগ্রামের বোয়ালখালী থানার করলডেঙ্গা গ্রামের করলডেঙ্গা পাহাড়ে। আশ্রমটি তেমনভাবেই আছে। বিশ্বাসীদের মতে, আগে এই অঞ্চলটি বেশ দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল ছিল। এই স্থানের পর্যটনের গুরুত্ব অনেক। তাই কয়েক বছর ধরে এই স্থানের পর্যটন গুরুত্ব, ধর্মীয় গুরুত্ব উপলব্ধি করে, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের খানিকটা সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে।
আমি মনে করি, দেবী দুর্গার ধর্মীয় মাহাত্ম্য অনুযায়ী দেবী দুর্গার আবাহনের এই স্থানটির যথাযথ সংস্কার জরুরি। একই সঙ্গে নানা ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যটন করপোরেশন স্থানটিকে দর্শনার্থী, তীর্থযাত্রীদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। তাহলে বাংলাদেশ-ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে বহু দর্শনার্থী, তীর্থযাত্রী স্থানটি পরিদর্শনে আসতে পারবে। এতে বাংলাদেশ পর্যটন খাতটি আরও সমৃদ্ধ হবে।
বসন্তকালে দুর্গাপূজা হবে, এমনটাই যখন বলা আছে শ্রীশ্রীচণ্ডীতে, তখন এ ঘটনার ব্যতিক্রম দেখি রামায়ণে। রামায়ণে উল্লেখ আছে, রামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধারের জন্য দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেছিলেন। আর সময়টা ছিল শরৎকাল। তাই পরবর্তী সময়ে যখন শারদীয় দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রচলন হয়, তখন এই পূজাকে আমরা বলি শারদীয় দুর্গোৎসব। সেই সঙ্গে অকালবোধন পূজা।
আমরা যদি শ্রীশ্রীচণ্ডীর মাহাত্ম্য বা রামচন্দ্রের অকালবোধন পূজার উদ্দেশ্যের দিকে তাকাই, দেখতে পাই দেবী দুর্গার আরাধনা, শক্তিরই আরাধনা। রাজা সুরথ আর রামের সময় আর পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও তাঁরা একই দেবীর পূজা করেন শক্তি সঞ্চয়ের জন্য। আর সেই শক্তিটি হলো শুভশক্তি। যে শক্তি আসুরিকতার বিরুদ্ধে, সব অসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
আদিম যুগের পরবর্তী সময়ে যখন প্রস্তর যুগের সূচনা হলো, দেখলাম মানুষ পাথর দিয়ে বিভিন্ন জিনিস সৃষ্টি করে মনের ভাব প্রকাশ করতে শুরু করল। তার পরবর্তী সভ্যতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইট ও মাটি দিয়ে তৈরি জিনিসের প্রচলন শুরু হলো। তখন যে ভক্তিবাদের উন্মেষ ঘটেছিল, সেখানে মাটি দিয়ে তৈরি দেবীরই আরাধনা করতে শুরু করল মানুষ।
আমরা মিসরীয় সভ্যতা, মহেেঞ্জাদারো সভ্যতা, হরপ্পা বা ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, ভারত সভ্যতা, অথবা মধ্যপ্রাচ্যের সভ্যতার দিকে যখন তাকাই, সেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে দেখতে পাই, সব সভ্যতাতেই বাসনকোসনের সঙ্গে মাটির তৈরি মূর্তিগুলোও পাওয়া গেছে।
এ দেশে মা দেবী দুর্গার মাটির তৈরি প্রতিমা গড়ে পূজার প্রচলন শুরু করেন রাজশাহীর তাহিরপুরে রাজা কংস নারায়ণ। সেটাও আজ থেকে প্রায় সাত-আট শ বছর আগের কথা। এর আগে দেবী দুর্গার মাটির মৃণ্ময়ী রূপের প্রচলন হতে দেখা যায়নি। রাজা কংস নারায়ণ প্রতিমা গড়ে যে পূজা করেছিলেন, সেখানে তৎকালীন সময়ে নয় লাখ টাকা খরচ করা হয়েছিল।
বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে যেসব রাজা-মহারাজা ছিলেন, তাঁদের একাংশ ছিলেন প্রজাদের প্রতি নিষ্ঠুর। আরেকাংশ প্রজাবৎসল। প্রজাবৎসল রাজারা যে শুধু প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন তা-ই নয়, প্রজাদের সঙ্গে মিলে তাঁরা দুর্গোৎসবের আয়োজনও করতেন। রাজারা এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই প্রজার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করতেন। এই উৎসবে রাজা-প্রজা, ধনী-নির্ধন—সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতেন। ফলে রাজা আর প্রজার মধ্যে নৈকট্যের জন্ম হতো। এটি ছিল ভয়ের সংস্কৃতির বিপরীতে একটি সৌহার্দ্যের সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা। আর এই ধারাটা চলে এসেছে প্রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ কাল পর্যন্ত।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন রাজা-মহারাজাব্যবস্থা থাকল না, তখন দেখা গেল, সাধারণ বাঙালি একজোট হয়ে দুর্গাপূজা করছে। সেই সময় থেকেই দুর্গাপূজা সর্বজনীনতার রূপ নিল। তখন দুর্গাপূজা রাজার আঙিনা থেকে বেরিয়ে সাধারণের আঙিনায় চলে এল।
বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। বাঙালির জীবন ইতিহাসে দেখা যায়, বাঙালি কখনো কারও ওপর আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেনি। চিরকাল তারা আগ্রাসিত হয়েছে। এর কারণে বাঙালির জীবনে দুঃখ এসেছে, বিপর্যয় এসেছে, হাসি-কান্না-বেদনার দিন এসেছে। পরবর্তী সময়ে এই কান্না, দুঃখ, বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য নতুন করে প্রাণোদ্যম ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছে উৎসবের মাধ্যমে। সেটা আজও অব্যাহত। বাংলার যেমন ষড়্ঋতু আছে। আছে সেই ঋতুগুলোর বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্য আর কোথাও দেখা যায় না। আর প্রতি ঋতুতেই বাঙালির উৎসব আছে। উৎসবকে কেন্দ্র করে বাঙালির বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি আছে। সংকীর্ণতা ভুলে বাঙালি পরিসরে একাকার হওয়ার চেষ্টা করে এ অঞ্চলের জনগণ। এ জন্যই আমরা বলি, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ।
প্রত্যেক বাঙালির যার যার ধর্ম আছে। ধর্মাচার আছে। কিন্তু সব ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মাচারের পাশাপাশি ধর্মীয় উৎসব আছে। এখান থেকে আমরা উচ্চারণ করতে পারি: ধর্ম যার যার উৎসব সবার। চট্টগ্রামে যে পাড়ায় আমি থাকি, তার নাম দেওয়ানজি পুকুরপাড়। এই এলাকায় মূলত হিন্দু সংখ্যালঘুদের বাস। এই পাড়ার নিকটতম প্রতিবেশী ছিল আজকের বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানদের পরিবার। একবার সরস্বতী পূজা উপলক্ষে পাড়ায় যে কমিটি হয়েছিল, সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী। বর্তমানে তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান। আবার কলাবাগানে যে সর্বজনীন দুর্গোৎসব হচ্ছে, এই উৎসবের সূচনা ও আয়োজনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন সেই এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। তঁারাই এলাকার হিন্দুদের একত্র করে এই উৎসবের আয়োজনে উৎসাহিত করেছেন। সেই থেকেই কলাবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব হয়ে আসছে। এটা খুব বেশি দিনের কথা নয়।
আমরা লক্ষ করি, শারদীয় দুর্গাপূজা হিন্দুধর্মাবলম্বীরা করে। গৌতম বুদ্ধের জন্মদিনে বুদ্ধপূর্ণিমা বা খ্রিষ্টের জন্মদিনে ক্রিসমাস ডে করে, সবই আবহমানকাল থেকে বাঙালির সংস্কৃতির একটি রূপ।
আরেকটি ব্যাপার উল্লেখযোগ্য, মা দুর্গার যে কাঠামো, রাষ্ট্র ও সমাজকে প্রতিফলন করে এ কাঠামো। আসুরিক শক্তির প্রভাবে যখন স্বর্গ থেকে দেবতারা চ্যুত হয়ে গেলেন, তখন তাঁরা আসুরিক সংস্কৃতির হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য মা দুর্গার আরাধনা করলেন। দেবতাদের মিলিত আরাধনার মাধ্যমেই তো মা দুর্গার আবির্ভাব। দেবতাদের যাঁর হাতে যা ছিল, তা-ই কিন্তু মায়ের হাতে স্থান পেল। রাষ্ট্র ও সমাজেরও তেমনি আসুরিক শক্তি আছে। আসুরিক অত্যাচারে মানুষ যখন ভয়ে থাকে, যখন উৎপীড়নের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হয়, তা থেকে উত্তরণের জন্য বাঙালি যুদ্ধ করে। ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে বাঙালি যখন যূথবদ্ধ হয়ে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে, এই অবয়বটি মা দুর্গার কাঠামোতে আছে।
অসুরের সঙ্গে মা দুর্গার যে লড়াইটি হয়েছিল, তাতে আসুরিক শক্তির পরাজয় ঘটেছিল। দেখা যায়, যখনই আসুরিক শক্তির পরাজয় ঘটল, সেখানে যে সমাজকে দেখি, লক্ষ করি জ্ঞানের প্রতীক সরস্বতী, ধনের প্রতীক লক্ষ্মী, জনগণের প্রতীক গণেশ আর বীরের প্রতীক কার্তিক। তার মানে জনতা, জনগণ, ধ্যানজ্ঞান ও বীরের মধ্য যে রাষ্ট্রকাঠামো, এটা হলো শান্তি-সৌহার্দ্য বিনির্মাণের রাষ্ট্র ও সমাজকাঠামো।
এই কাঠামো বিনির্মাণের জন্যই তো ঐক্যবদ্ধ বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ করেছে। কিন্তু এই স্বপ্নের বাংলাদেশ স্বাধীনতার চার দশক পর আজও আসেনি। আসুরিক শক্তি আজও সমাজে বর্তমান। পাশাপাশি শুভশক্তিও অবস্থান করছে। তাই আসুরিক শক্তির সঙ্গে শুভশক্তির বারবার সংঘর্ষ হচ্ছে, লড়াই হচ্ছে। তাই সময়ের বিচারে শারদীয় পূজা এখনো প্রাসঙ্গিক। ভবিষ্যতেও থাকবে। এই পূজার মাহাত্ম্য কখনো শেষ হওয়ার নয়। | ধর্মীয় শিক্ষা | Positive |
End of preview. Expand
in Dataset Viewer.
README.md exists but content is empty.
Use the Edit dataset card button to edit it.
- Downloads last month
- 37